
বিএসএফের হাতে এসেছে বড় সাফল্য, সীমান্তে ৩ কোটি টাকার ৪৫ টি সোনার বিস্কুট পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ল চোরাকারবারি
(জেলা-উত্তর ২৪ পরগনা)
বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীন ১৪৫ ব্যাটালিয়নের আইসিপি পেট্রাপোলের সজাগ জওয়ানরা ৪৫ টি সোনার বিস্কুট সহ একজন চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করে আবারও তাদের অভিপ্রায় স্পষ্ট করেছে যে সীমান্তে জওয়ানরা সতর্ক থাকলে চোরাকারবারিদের পরিকল্পনা নস্যাৎ হবেই। জব্দ করা সোনার ওজন ৫২৪২. ৯১০ গ্রাম এবং যার মূল্য আনুমানিক ৩,০৭,৪৪,৪২৪/- টাকা। চোরাকারবারিরা বিএসএফ জওয়ানদের ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত আসা একটি খালি ট্রাকের হোস পাইপের কাছে তৈরি গহ্বরে ওই সোনার বিস্কুটগুলি লুকিয়ে আনার চেষ্টা করছিল ।
উল্লেখ্য যে, ২৫ আগস্ট, ২০২৩ তারিখের সকাল ০৪১৫ টায়, প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে, আইসিপি পেট্রাপোলের কর্মীরা যানবাহন চেকিংয়ের সময় আইসিপি বেনাপোল থেকে আসা একটি সন্দেহজনক ট্রাক (রেজি নং WB–৪১E ৯৫৯৫)কে অনুসন্ধানের জন্য আটকায়। তল্লাশির সময়, জওয়ানরা ট্রাকের হোস পাইপের কাছে তৈরি একটি গহ্বর থেকে পারদর্শী টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং কাপড়ে বাঁধা ২১ টি সোনার বিস্কুট উদ্ধার করে। এরপর বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের কর্মীরা দ্রুত সোনার বিস্কুট ও ট্রাকটি জব্দ করে এবং ট্রাক চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। ধৃত ট্রাক চালকের পরিচয় সম্রাট বিশ্বাস, পিতা শঙ্কর বিশ্বাস, গ্রাম পিরোজপুর, জেলা উত্তর ২৪ পরগনা বলে জানা যায়।

এরপর, যখন জব্দ করা ২১ টি সোনার বিস্কুট এবং ট্রাক চালককে সমস্ত কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টম অফিস পেট্রাপোলের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছিল, তখন সেই ট্রাকে আরও সোনার বিস্কুট লুকিয়ে রাখার বিষয়ে বিএসএফ জওয়ানরা নিশ্চিত তথ্য পান। এরপর কোম্পানি কমান্ডার তৎক্ষণাৎ এক সিভিল মেকানিককে ডেকে ট্রাকের ইঞ্জিন খুলে তল্লাশি করেন, যেখানে সোনার বিস্কুট আলাদাভাবে লুকিয়ে রাখার খবর জানা গিয়েছিল। প্রায় ১৪৪০ টার দিকে ট্রাকের ইঞ্জিন খুললে আরও ২৪ টি সোনার বিস্কুট টেপে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এভাবে ট্রাক থেকে মোট ৪৫টি সোনার বিস্কুট জব্দ করা হয়। ৪৫ টি সোনার বিস্কুট এবং জব্দ করা ট্রাকের আনুমানিক মূল্য ৩,১২,৪৪,৪২৪/- টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বিশ্বাস জানায়, সে উত্তর ২৪ পরগনার পিরোজপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। সে জানায় যে সে ট্রাক চালক হিসেবে কাজ করে এবং নিয়মিত রপ্তানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে যায়। সে জানায়, গত ২১ আগস্ট একটি ট্রাকে স্পঞ্জ আয়রন বোঝাই করে বাংলাদেশে গিয়েছিল। ২৫ আগস্ট ভারতে ফেরার সময় বেনাপোল, বাংলাদেশ পার্কিং এলাকায় সুমন মন্ডল, গ্রাম -বেনাপোল, জেলা যশোর তার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাকে ওই ৪৫ টি সোনার বিস্কুট দেয়। সে আরও জানায়, সুমন মণ্ডলের নির্দেশে ভারতে এসে ওই সোনার বিস্কুটগুলো গোপালনগর গ্রামের সলাম মণ্ডলের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। সে আরও জানায় যে,ভারতে ফেরার সময় আইসিপি পেট্রাপোলের প্রধান ফটকের কাছে পৌঁছে যানবাহন তল্লাশির সময় বিএসএফ তাকে ৪৫ টি সোনার বিস্কুটসহ ধরে ফেলে। এছাড়া, বিএসএফ-এর গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে যে সালাম মণ্ডল- গ্রাম গোপালনগর, সামাদ মণ্ডল- পিতা আখর মণ্ডল- পেট্রাপোল এবং কুতুবদিন কারিকর- পিতা মাকেল কারিকর- পেট্রাপোল, জেলা উত্তর ২৪ পরগণার বাসিন্দা এবং তারা সবাই সোনা চোরাকারবারি। এই সমস্ত চোরাকারবারীরা আজগর শেখ, গ্রাম জয়ন্তীপুর, থানা পেট্রাপোল, জেলা উত্তর ২৪ পরগনার জন্য কাজ করে। আজগর শেখ ভারতে সোনার প্রধান সরবরাহকারী।
আটক চোরাকারবারীকে জব্দকৃত সোনাসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পিএন্ডআই, কাস্টম অফিস, কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শ্রী এ কে আর্য, ডিআইজি, জনসংযোগ আধিকারিক, বিএসএফ, সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার জওয়ানদের এই সাফল্যে খুশি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিএসএফ চোরাকারবারিদের প্রতিটি ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে তাদের ফাঁদ শক্ত করেছে। ওই কর্মকর্তা চোরাকারবারিদের পরামর্শ দিয়েছেন, বাকি চোরাকারবারিরা যেন চোরাচালানের পথ ছেড়ে মূল স্রোতে যোগ দেয়, অন্যথায় ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে রাখা কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। তিনি সীমান্তে বসবাসকারী লোকদের বিএসএফ-এর সীমা সাথী হেল্পলাইন নম্বর ১৪৪১৯ এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত আরও একটি নম্বর ৯৯০৩৪৭২২২৭ জারি করেছে যাতে সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত তথ্য হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ বা ভয়েস মেসেজ করে পাঠানো যাবে। সঠিক তথ্য প্রদানকারী ব্যক্তিকে উপযুক্ত পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হবে এবং তার পরিচয় গোপন রাখা হবে।