এই বাঙলাতেই কিন্তু জন্ম নিস বোন –
by ড ধীরেশ চৌধুরী
এই বাঙলাতেই জন্মাস বোন তুই আবারও,
তা নাহলে ওই জানোয়ার গুলো যে আরও পার পেয়ে যাবে,
ওই পিশাচ গুলোর যে আরও সাহস বাড়বে
তুই কি চাস সেটা বোন?
নিশ্চিত চাস না,
আর তাই তুই আবারও জন্ম নিস এই বাংলায়…
তুই জন্ম না নিলে ওই ভীরুর জাত, কুলাঙ্গার গুলো যে বুক ফুলিয়ে আবারও দাপিয়ে বেড়াবে,
আবারও কোনো তিলোত্তমা র এই পরিণতি হবে এই বাংলায়,
আবারও কিছু ধান্দাবাজ, স্বার্থান্বেষী মহল ক্ষমতার জন্য ওই ইতর গুলোকে পুষতে সাহস পাবে,
তুই জন্ম না নিলে যে আমরা পুরুষেরা যারা তোকে বোনের মতন দেখি, দিদির মতন দেখি, মেয়ের মতন দেখি তাদের আরও লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাবে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে,
তুই কি চাস বোন সেটা?
নিশ্চিত চাস না,
আর তাই তুই আবারও জন্ম নিস এই বাংলায়…
তুই জন্ম না নিলে যে ওই মানুষগুলো আরও ভাবতে শিখবে ‘ফেলো কড়ি মাখো তেলের’ মতন কিছু পয়সা দিয়ে, কিছু স্মৃতি সৌধ বানিয়ে তোকেও বিস্মৃতিতে মুছে ফেলা যাবে,
ওই সব মূর্খের দল জানে না তুই ইতিমধ্যেই জন্ম নিয়ে নিয়েছিস বাংলার লক্ষ লক্ষ কন্যার মধ্যে, মা বোনদের মধ্যে,
ওই সব আকাটের দল জানে না রাজপথে পা মেলানো লক্ষ লক্ষ মেয়ের পদ যুগলের মধ্যেই রয়েছে তোর পদ যুগল,
সাথে আরও লক্ষ লক্ষ পা মেলানো পুরুষেরা আসলে তোর দাদা, ভাই, বাবা, কাকা,
ওদের ধারণারও বাইরে বাংলার তথা এদেশের আরও লাখো রাগে ফোঁসা ঘরে আবদ্ধ অশক্ত দিদা দাদুদের মধ্যে তুই ছড়িয়ে আছিস,
তুই কি চাস বোন এত লোকের এই লড়াই, এই প্রতিবাদ নিস্ফলে যাক?
রাজপথে পা মেলানো তিন বছরের ওই মেয়েটার ভবিষ্যত অনিশ্চিত হোক, নষ্ট হয়ে যাক,
নিশ্চিত চাস না,
আর তাই তুই আবারও জন্ম নিস এই বাংলায়…
মাতঙ্গিনীর এই বাংলা, প্রীতিলতার এই বাংলা, কাদম্বিনীর এই বাংলা,
তুই তো বোন ওদেরই পরম্পরা,
একই সাথে এই বাংলা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, রবি নজরুলের মতন খাঁটি পুরুষদেরও,
এই কয়দিনে তুই তো দেখলি যে ওই কুলাঙ্গারদের আর পুরস্কার ও ভাতায় শিরদাঁড়া বিকিয়ে দেওয়া বুদ্ধিজীবী প্রজাতির লোকগুলো আসলে অতীব মুষ্টিমেয়!
তবে কেন হার মানবি? কেন ছেড়ে দিবি?
লড়াকু বোন জানি তোর ছিলো না কোন ডর – ভয়,
তাই তো প্রতিবাদ করেছিলি বুক উঁচিয়ে,
নিশ্চিত তবে চাস না ওরা জিতুক!
আর তাই তুই আবারও জন্ম নিস এই বাংলায়…
তুই চেয়েছিলি একজন নির্ভীক, দরদী, সাহসী, স্বচ্ছ ডাক্তার হতে,
ওরা তোকে বা তোদের মতন লোকেদের যে ভীষণ রকম ভয় পায়,
তাই তো তোকে বাঁচতে দিলো না, মেরে দিলো,
কিন্তু মূর্খের দল জানে না আজ থেকে এই বাংলার, এই দেশের ডাক্তারদের গলায় ঝোলা প্রত্যেকটা স্টেথস্কোপের মধ্যে তুই বেঁচে আছিস, বেঁচে থাকবি,
যদি তুই নিজেকে খুঁজে পেতে চাস মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে বাংলার প্রত্যেকটি সাচ্চা বুকে,
তোর এই পরিণতির জন্য ক্ষমা করে দিয়ে এই দাদার একটা আর্তি রাখিস বোন,
তুই কিন্তু আবারও জন্ম নিস এই বাংলায়…
© ডাঃ ধীরেশ।
১৫ই আগষ্ট, ২০২৪।
আমারই সহ নাগরিক ও সম পেশার ভাই/দাদা (বয়স জানা নেই) ডাঃ অর্পণ চক্রবর্তী একটা ভীষণ হৃদয় স্পর্শী কবিতা লিখেছেন “আর ফিরিস না এই বাংলায়”। খুবই সময়োপযোগী একটি বলিষ্ঠ লেখা। কিন্তু একটু দ্বিমত পোষণ করছি এই ভাবনার সাথে। কেন ফিরবে না এই বাংলায়? এই ভাবে ছেড়ে দিলে আমাদের সোনার বাংলা আরও দুর্বৃত্তদের বাংলায় পরিণত হবে। এটা কিছুতেই হতে দিতে পারিনা আমরা। তাই আমি বলি আবারও জন্ম নিক এই বাংলায়। বুঝিয়ে দিক যতই যা করো, পালিয়ে যাওয়া নৈবচ। ভাবনার আঙ্গিক আলাদা হলেও আমাদের দুজনেরই লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু একই। তাই আমার লেখাটিকে বরং বিরোধিতা না ভেবে সম্পূরক ভাবার অনুরোধ রইলো।
কবিতার সাথে প্রদত্ত ছবিটি এঁকেছে আমার বন্ধু সুশীল শর্মার ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী বিজিতা। সাম্প্রতিক ঘটনা ওর কোমল মনকেও কিভাবে নাড়া দিয়েছে ছবিটিই তার প্রমাণ। তাই মনে হলো আমার লেখাটার সাথে প্রাসঙ্গিক এর থেকে ভালো ছবি আর হতে পারেনা। আমার কন্যাও দেখলাম প্রভাবিত হয়ে একটি ছবি আঁকছে। এটাই বোধহয় প্রাপ্তি আজকের এই বিশেষ দিনে…
ড:ধিরেশ চৌধুরী একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক এবং সমাজ কর্মী। সমাজের বার্ধক্য জনিত রোগের চিকিৎসক o প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা পূরণের সহযোগী যোদ্ধা।