আমরাউৎসব প্রিয় আস্তিক
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা,১০.০৯.২০২৪
এ সময়ের আগে একটা সময় ছিল যখন অন্য স্ট্রিমের মতো আমাদের ডাক্তারি ছাত্রদের কাছেও কলেজ একটা মন্দির ছিল।
সে মন্দিরে ঈশ্বরের পুজো শেখানো হতো না। হিপোক্রিট ওথ-এর সঙ্গে সঙ্গে শিখতে হতো, শিক্ষক আমাদের বাবা মা’র সমতুল্য। তাঁদের অশ্রদ্ধা করা যায় না। তাঁদের তিরস্কার মাথা নিচু করে শুনতে হয়।
আমাদের ছাত্র প্রজন্মের সঙ্গে তাঁদের শিক্ষক প্রজন্মের একটা দূর্লঙ্ঘ অদৃশ্য প্রাচীরের ব্যবধান ছিল। যদিও সেই ব্যবধান পেরিয়েও তাঁদের ব্যক্তিত্বের ভালবাসা বইত আমাদের দিকে। আর আমাদের নিরন্তর শ্রদ্ধা তাঁদের দিকে।
কখনও তাঁদের আমাদের সঙ্গে সুরা পান করতে হয়নি বা আমাদের হতে হয়নি তাঁদের ভোগ্যবস্তু।
আমাদের শেখানো হতো, প্রথমে মানুষ হয়ে তারপর ডাক্তার হব যখন তখন মানুষের জীবন থাকবে আমাদের হাতে।
সুতরাং আমরা তাঁদের জীবনদানের ঈশ্বর, ভালবাসার ঈশ্বর, ভয়ভক্তির নয়।
ফলে শিক্ষাটা খেলা খেলা করে বা পিছনের দরজা দিয়ে শেখার কথা ভাবলেও আমরা হবো সমাজের ঝুঁকি ও জাতির লজ্জা।
শেখানো হতো, ডাক্তারের কাছে যাঁরা অসহায় হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন সেসব নবজাতক থেকে মৃত্যুপথযাত্রী পর্যন্ত সকলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন বাঁচার আশায়। সুতরাং তাঁদের সারিয়ে তোলাটা আমাদের কাছে ঈশ্বরের আরাধনা করে সিদ্ধিলাভ।
আমাদের কাছে কোনও নারী বা কোনও পুরুষ আর্ত, শারীরিক ভাবে আকর্ষণীয় ভাবার শিক্ষা ছিল না। সেটা আমাদের মতো তাঁরাও ঠিক বুঝতেন।
এরকম ভাবে মুষ্টিমেয় কয়েকজন অমানুষ তৈরি হওয়া ছাড়া আমরা বেশির ভাগ ছাত্র তখন ডাক্তার হয়ে উঠতাম সমাজকে সারাতে। আমাদের মস্তিষ্ক আর হৃদয় দিয়ে।
হ্যাঁ, আমরা ডাক্তার যাঁরা তাঁরা এখনও মনে প্রাণে আস্তিক। চিকিৎসা আমাদের আর্তের প্রতি নৈবদ্য আর আর্ত আমাদের ঈশ্বর।
যুগ পাল্টালেও কিছু সত্যি ধ্রুবকের মতো চিরকাল সত্যি থাকে। আজকের এই ‘যৌবন জোয়ার ‘ এর যুগেও আমরা ঠিক সেভাবেই ডাক্তারিটা শিখতে বা করতে পছন্দ করি যেভাবে পথ দেখিয়ে গেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় অতীত প্রজন্ম।
শুধু অমানুষের সংখ্যা বাড়ছে ধীরে ধীরে। বেড়েই চলেছে। তারা জানেই না মানুষ না হয়ে ডাক্তার হওয়া যায় না।
তবে আমরা এককাট্টা। আমাদের বিশ্বাস ও আস্তিকতায়। আমাদের আদর্শে ও জেদে।
সঙ্গে এখন এ ‘যৌবন জলতরঙ্গের’ যুগে নিজেদের রক্ষা করার ভাবনাটা যোগ হয়েছে এই যা। আর এ ব্যাপারে আমাদের অন্য কিছু ভাবাতে পারার অবকাশ নেই। সুযোগ নেই।
আমাদের উৎসব আলাদা। আলাদা আমাদের পুজো। আমাদের আচরণ মানুষের মতো। আমাদের যাঁরা বোঝেন না বা বুঝতে চান না, তারা শুনবেন না জেনেও তাঁদের উদ্দেশ্যেই কথাগুলো বললাম।