ঐতিহাসিক গ্রন্থ মোস্তাক হোসেন: জীবন ও ঐতিহ্য আত্মপ্রকাশ বইমেলায়

0
816
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:9 Minute, 25 Second

ঐতিহাসিক গ্রন্থ মোস্তাক হোসেন: জীবন ও ঐতিহ্য আত্মপ্রকাশ বইমেলায়

বিশেষ প্রতিবেদন

ঐতিহাসিক গ্রন্থ ‘মোস্তাক হোসেন: জীবন ও ঐতিহ্য’ আত্মপ্রকাশ ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায়। সাতশো কুড়ি পৃষ্ঠার গবেষণা গ্রন্থে কলম ধরেছেন একশো সতেরো জন লেখক। পঁয়তাল্লিশ ফর্মার মূল্যবান গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক ফারুক আহমেদ।
উনিশশো সাতচল্লিশ সালের দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের অবস্থা ছিল একেবারেই করুণ ও সংকটাপন্ন। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কালের ধারাবাহিকতায় নানা পর্যায়ের কায়িক শ্রম ও ছোট পরিসরে ব্যবসা করে কেউ কেউ স্বল্পবিস্তর আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে শুরু করেন। তবে কেউ কেউ আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে শুরু করলেও শিক্ষাদীক্ষায় তাদের অবস্থান ছিল একেবারে তলানিতে। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটতে শুরু করে আশির দশকের শেষ দিক থেকে। আর এই পরিবর্তনের নিমিত্তে মহীরুহ হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন বাঙালির গর্ব অনন্য সমাজসেবক ও শিল্পপতি মোস্তাক হোসেন। মহৎপ্রাণ এই মানুষটি উদার হস্তে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ দিয়ে আধুনিক শিক্ষার প্রসারে মানবতার দূত হিসেবে এগিয়ে আসেন। দৃঢ় প্রত্যয়ে তাই বলতে হয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে মোস্তাক হোসেন-এর আর্থিক সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা পাওয়া মিশন স্কুলগুলো। তাঁর একক কৃতিত্ব ও সোনালি পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাঙালি অনগ্রসর শ্রেণী অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে প্রবেশ করেছে। এমনকী তাঁর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার কারণে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবশ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছেন। সে কারণে আজ বলতে হয়, পশ্চিমবঙ্গের অনগ্রসর শ্রেণীর আধুনিক শিক্ষাবিস্তারে বসন্ত এনে দিয়েছেন দানবীর মোস্তাক হোসেন। সমাজকর্মী ও দানবীর মোস্তাক হোসেনকে তাই অনুসরণ করে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে মানবকল্যাণের অগ্রযাত্রায়। সংগত কারণে কৃতজ্ঞতার দায়বোধ থেকে নয়া সমাজ নির্মাণের অগ্রনায়ক মোস্তাক হোসেনকে কুর্নিশ জানিয়ে সংগ্রহ যোগ্য গ্রন্থে কলম ধরেছেন ঋদ্ধ প্রাবন্ধিক গণ। মূল্যবান প্রবন্ধ সংকলনটি উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন পবিত্র সরকার।

শিক্ষার প্রসারে মোস্তাক হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। আজ একথা সকলেরই জানা, তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় একাধিক মিশন শিক্ষার জগতে আলোর জোয়ার আনতে সক্ষম হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, মিশন কেন্দ্রিক পড়াশুনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মোস্তাক হোসেন। তাঁরই উদ্যোগে মিশনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর শ্রেণীর শিক্ষার সার্বিক প্রসার ঘটেছে। জিডি স্টাডি সার্কল ও জিডি চ্যারিটেবল সোসাইটির তত্ত্বাবধানে ৬৫টির বেশি মিশন পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার প্রসারে ব্রতী হয়েছে। তিনি এই মিশনগুলিতে বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন গৃহনির্মাণ প্রকল্পে এবং ছাত্রছাত্রীদের অনুদান প্রকল্পে। এই মিশনগুলি ছাড়াও তিনি অন্য বহু বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য অর্থ অনুদান দিয়ে থাকেন। মাদ্রাসা, মক্তবেও তাঁর অনুদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার জগতে এই প্রসারের কারণে আজ বহু ছাত্র-ছাত্রী জায়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। গরিব দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচও তিনি বহন করেন। মেধাবী গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য তিনি জিডি স্টাইপেন্ড প্রদান করেন। শিক্ষার জগতে তাঁর এই বহুমুখী আন্দোলন জোয়ার এনে দিয়েছে—যার মাধ্যমে এবং অবশ্যই মোস্তাক হোসেনের সাহচর্যে ও অর্থানুকূল্যে অনুন্নত গ্রাম বাংলার গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে দ্রুত ধাবমান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জেলা ও রাজ্যের বহু পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা করেন।

মোস্তাক হোসেনের সাহিত্য
ভাবনা। ৫০২ পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হয়েও, ভারতের একজন অন্যতম শিল্পপতি হয়েও বহুধা কর্মধারায় ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি একজন লেখক হিসেবে পরিচিত। তাঁর স্বচ্ছ ভাবনাকে তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর তিনটি গ্রন্থে: ১. নিশান ও নিশানা, ২. গুহার ভেতর আলো, ৩. আলোর নীচে আঁধার। গ্রন্থগুলিতে তাঁর সমাজ ভাবনার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
সমাজের জন্য জাতির জন্য তিনি যা করেছেন তা অপ্রতুল নয়, একথা মেনে নিয়েই তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন: ‘যে আমার প্রতিবেশী, যে আমার গ্রামের বাসিন্দা, যে আমার দূর সম্পর্কের ভাই কিংবা ভাইপো, যে আমার সম্প্রদায়, সমাজ ও জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যে পাশে না থাকলে স্তিমিত হয়ে পড়ত পতাকা গোষ্ঠীর পতাকা, তারাই আমার এবং আমাদের ক্রমশ অচেনা ও দূরের বাসিন্দা হয়ে উঠছে। কাছাকাছি থাকি, তাদের দেহের ঘাম আমাদের সমৃদ্ধ করে, কিন্তু আমরা টের পাই না, তাদের ক্ষত ভরা অস্তিত্ব। স্পর্শ করি না পরিশ্রমী শ্রমিকের, আমারই অন্যতম সহোদর অগ্রজ কিংবা অনুজের দুঃখময় দুনিয়া। তারা এক অন্ধকার থেকে আরেক অন্ধকারে প্রবেশ করে। তাদের খিদেয় তৈরি হয় নতুন খিদে। তাদের অনিদ্রা ও যন্ত্রণায় বাড়তে থাকে স্থায়ী অসুখ। আমরা দিব্যি চোখ বন্ধ করে, মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। তাদের দুঃসহ বেঁচে থাকা, তাদের অজ্ঞানতা তাদের কুসংস্কার ও বিপদমগ্ন অচেতন অথবা স্তব্ধ হৃদয়কে কখনও উপলব্ধি করি না। এই ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলেছি। এর পেছনে পতাকা গোষ্ঠীর যদি কোনও ব্যর্থতা থাকে, তাহলে এর প্রধান সংগঠক হিসেবে এ আমারই ব্যর্থতা। ব্যথার আড়ালে যদি কোনও সামাজিক অক্ষমতা থাকে, এরও দায়ভার একান্তভাবে এই মোস্তাক হোসেনের।’ এই অকপট স্বীকৃতিই তাঁকে আরও মহান করেছে। তিনি একজন শিক্ষাদরদি মানুষ। তারই প্রতিধ্বনি শোনা যায় তাঁর ‘আলোর নীচে আঁধার’ গ্রন্থে। শিক্ষায় জাতির মেরুদণ্ড এই উপলব্ধি তাঁর অন্তরাত্মায়। তাই এই গ্রন্থে তাঁকে বলতে শুনি : ‘…. ইহলৌকিক শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিদ্যাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। যে বিদ্যা শুধু ব্যক্তিকে নয়, স্পর্শ করবে তার বংশকে, তার প্রতিবেশীকে, তার এলাকাকে, তার সম্প্রদায়কে, জাতিকে এবং সমগ্র মানব সমাজকে।’ শিক্ষা প্রসঙ্গে একজন শিল্পপতির এমনতর বক্তব্য নজিরবিহীন।

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here