জাগো দশপ্রহরণধারিণী…

0
957
Ashoke Majumdar
Ashoke Majumdar
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:10 Minute, 16 Second

জাগো দশপ্রহরণধারিণী…

অশোক মজুমদার

এবার দেবীপক্ষের সূচনা হল মেয়েদের প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে। তাদের ওপর চলে আসা যৌন নিগ্রহ, লাঞ্ছনা, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন দেশের মেয়েরা। মি টু আন্দোলনের সুবাদে সামনে আসছে দীর্ঘদিন ধামাচাপা পড়ে থাকা পুরুষদের নানা কেলেঙ্কারির কাহিনি।
MeToo কে আমি আন্দোলনই বলছি কারণ এটা একটা সামাজিক প্রতিবাদের চেহারা নিয়েছে। হ্যাশট্যাগ যেন হার্শ ট্রুথ। দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদী মহিলাদের ক্ষোভের আগুন। বোর্ড রুম, রেকর্ডিং রুম, স্টুডিও, অফিস, খেলার মাঠ ছাড়িয়ে তা এখন পৌঁছে গেছে নিউজ রুমে। MeToo আন্দোলনে এখন সারা দেশ তোলপাড়। সমাজের উঁচু তলার ক্ষমতাবানদের যৌন স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে এত বড় দেশজোড়া প্রতিবাদ এর আগে আমাদের দেশ দেখেনি। অভিযোগের আঙুল উঠেছে নানা পাটেকার, অলোক নাথ, চেতন ভগত, অভিজিৎ, গৌরাঙ্গ দোশী, অর্জুন রনতুঙ্গা, এম জে আকবরের মত ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে।

মেয়েদের প্রতিবাদের সামনে বেশিরভাগ অভিযুক্ত পুরুষদের এতটা গুটিয়ে যেতেও আগে আমরা দেখিনি। Me Too আন্দোলনের একটা বড় সাফল্য যে এটাকে বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করছে, সাজানো ঘটনা বলে উড়িয়ে দিচ্ছে না। অভিযুক্তদের কেউ কেউ বেশ স্মার্ট ঢঙে বলছেন, অনেকদিন আগের ঘটনা তাই মনে নেই। কেউবা বলছেন, উনি আগে বলেননি কেন? আবার কেউবা বলছেন, আমি ওভাবে ভাবিইনি। যেন তাদের ভাবা না ভাবা বা মনে থাকা বা না থাকার ওপর ঘটনাটার সত্যতা নির্ভর করে! ১০ বছরেরও আগের ঘটনা হলে যেন কোন অপরাধ বৈধ হয়ে যায়! এর মধ্যে সবচাইতে বেশি অভিযোগ উঠেছে ছোট পর্দার অভিনেতা অলোক নাথ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। এদের দুজনকেই আমরা টিভির পর্দায় এবং খবরের কাগজে নানা ব্যাপারে মানুষকে জ্ঞান দান করতে দেখেছি…

আমার এটা খুব ভাল লাগছে যে দেশের মেয়েরা তাদের ওপর হওয়া নিগ্রহের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। বিখ্যাত অভিনেতা থেকে ডাকসাইটে সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সবাই অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হচ্ছেন। সমাজ ও প্রতিষ্ঠানকে এই প্রতিবাদীদের কথা শুনতে হবে এবং দোষীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্প্রেডশিট, স্ক্রিনশটস, প্রাইভেট কনভারসেশনে একের পর এক আছড়ে পড়ছে MeToo আন্দোলনের ঢেউ। মন্তব্য, ছবি আর প্রচারের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে নিজেদের মত করে ব্যবহারের প্রতিযোগিতায় এখন সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম।

আমাদের রাজ্যে সবাই একটু বেশি সাবধানী, জল মেপে, চারদিক দেখেশুনে পা ফেলেন। এখানেও অভিযোগের দুএকটা বুদবুদ উঠছে না এমন নয় কিন্তু তা এখনও তেমন কোন বড় আকার নেয়নি। তিরিশ বছরেরও বেশি সময় জুড়ে সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার সূত্রে আমি নিজেও জানি বাংলা MeToo আন্দোলনের একটা উর্বর জায়গা। কর্মসূত্রেই সিনেমা, থিয়েটার, সাহিত্য, সাংবাদিকতার জগতে অনেক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়। অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও আছে। বহু মহিলাদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠিত পুরুষদের এমন সব অপকীর্তির কাহিনী আমি শুনেছি যা তাদের সযত্নে লালিত ভাবমূর্তির সঙ্গে মেলে না। ময়দান থেকে মিডিয়া, সিনেমা থেকে সাহিত্য সর্বত্র এই কীর্তিমানরা ছড়িয়ে আছেন। রাজনীতি, প্রতিষ্ঠান, ট্যাঁকের জোর সর্বোপরি আমাদের সাহসের অভাবের কারণেই এরা করে খাচ্ছেন। আমি মনেপ্রাণে চাই এই নামগুলো সামনে আসুক, কোন সাহসিকা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে এদের মুখোশ খুলে দিক। তাদের যেন চিরদিন ভিতরে ভিতরে মরমে মরে যেতে না হয়। মি টু তাদের সেই সাহস দিয়েছে।

নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি আমি। মাকে দেখেছি উদয়াস্ত পরিশ্রম করে সংসার চালাতে। মা খুব বেশি লেখাপড়া জানতো না কিন্তু মেয়েদের ওপর নানারকম লাঞ্ছনার ঘটনায় খুব কষ্ট পেতো। অন্যদিকে আমার স্ত্রী নিবেদিতা উচ্চশিক্ষিতা, কর্মরতা মহিলা, আরও অনেক মহিলাদের মত পুরুষদের হাতে লাগাতার নারী নিগ্রহের ঘটনা তাকেও পীড়িত করে। আমাদের দেশে অসংখ্য মনের দুঃখ মনে রেখেই জীবন কাটিয়ে দেওয়া মহিলাদের মধ্যে এরাও রয়েছেন। এরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে পারেন না। MeToo আন্দোলনে একের পর এক মেয়েদের মুখ খোলার ঘটনা এদের প্রতিবাদের শক্তি দিয়েছে। একারণেই MeToo কে মনের গভীর থেকে সমর্থন জানাচ্ছেন এরা।

প্রায় এক বছর আগে মার্কিন মূলুকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি এবং তার পরবর্তীকালে রায়া সরকার নামে এক গবেষকের ওপর একশ্রেণীর শিক্ষাবিদদের যৌন নিগ্রহের ঘটনাকে প্রকাশ্যে আনা থেকে MeToo আন্দোলনের সূচনা। তারপর থেকে সমাজের উঁচু তলার অনেক মানুষের মুখোশ খুলে দিয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম বাহিত এই প্রতিবাদ। অবশেষে তার ঢেউ ভারতেও আছড়ে পড়ল। এই প্রতিবাদের পাশে আমাদের সবাইকে দাঁড়াতে হবে। এটা কিন্তু মোমবাতি মিছিলের তুলনায় অনেক কঠিন। কারণ যাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তিনি অনেক প্রভাবশালী, তাদের একটা ভাবমূর্তিও রয়েছে। যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও উদারপন্থী বলে বহু বিজ্ঞাপিত। বিজেপির মত একটা নীতিনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের সদস্য। কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে আইন মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ কেউই এব্যাপারে মুখ খোলেন নি। একমাত্র মানেকা গান্ধী বলেছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি হোক। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা কেউই ফেরার নন। এমন মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে এবং তা প্রমাণ করতে সাহস লাগে। এটা ভাবতে ভাল লাগছে আমাদের দেশে আলোকপ্রাপ্ত মহিলারা এখন অভিযোগ তোলার সাহসটুকু অর্জন করেছেন। MeToo তাদের সেই সাহস দিয়েছে। এই প্রতিবাদের ফলে বিভিন্ন কাজের জায়গায় মহিলাদের নানা অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবা হচ্ছে।

অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্তের ফাটানো বোমাটি এমন লাগাতার বিস্ফোরণের চেহারা নেবে তা আমরা কেউই ভাবতে পারিনি। এতে আর কিছু না হোক যৌন নিগ্রহের ঘটনায় জড়ানোর আগে প্রভাবশালীরা দুবার ভাববেন। অভিযুক্তরা শাস্তি পেলে তা প্রতিবাদীদের মনে সাহস যোগাবে। আইনের প্রতি আস্থা বাড়বে মানুষের। ক্ষমতাবানরাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন এই ব্যাপারটা নিয়ম হবে না। মানুষ বুঝবে অপরাধী যত ক্ষমতাবানই হন না কেন তিনি আইনের উর্ধ্বে নন। আমরা অনেকেই ধরে নিয়েছিলাম মেয়েদের কেরিয়ার গড়া মানে যাবতীয় অন্যায়ভাবে সুযোগ নেওয়াকে প্রশ্রয় দেওয়া। এই আন্দোলন সেই ভুল ধারণাকে ভেঙে দেবে। পুজোর আগে দেশজুড়ে মেয়েদের আত্মশক্তির উদ্বোধন দেখে আমার দশপ্রহরণধারিণীর জেগে ওঠার কথা মনে হচ্ছে। মি টু, হ্যাঁ আমিও এই লড়াইয়ে তাদের পাশে আছি।

Collected By : Faruque Ahamed

About Post Author

Antara Tripathy

Chief Editor & CEO of IBG NEWS (09/Aug/2018-Present), Secretary of All Indian Reporter's Association,West Bengal State Committee. Earlier Vice President of IBG NEWS (01/Jan/ 2013-08/Aug/2018). She took over the charge from the Founder Editor of the Channel.
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here