“লাভ ইন কাশ্মীর” কবিতা পাঠে কবি সুবোধ সরকার
ফারুক আহমেদ
লাভ ইন কাশ্মীর” কবিতা পাঠে কবি সুবোধ সরকার।
মুখোমুখি গৌতম ভট্টাচার্য এবং কথাসূচনায় থাকছেন বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সন্ধে ৬টা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বুধবার বাংলা আকাদেমি সভাঘর।
আয়োজক কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন।
কবি সুবোধ সরকার-এর একক কবিতা পাঠ জ্বলন্ত কাশ্মীর নিয়ে।
কবি সুবোধ সরকার-এর কবিতা পড়লেই বা কবিতা পাঠ শুনলেই আমরা কাশ্মীরের মানুষ কেমন আছেন তা বুঝতে পারি।
কবি সুবোধ সরকার লিখেছেন একটি কবিতায় “কান্না তাকে বাঁচিয়ে রাখে
কান্না তাকে বাঁচায়
ভূস্বর্গের মধুরতম খাঁচায়।
সকালবেলার আলো যখন
দরজা খুলে ঢোখে
ফুঁপিয়ে ওঠে চোখ
দেখেছি আমি বহু খারাপ লোক
কিন্তু আমি ভালবেসেছি তাকে
কান্না যাকে বাঁচায়
আমার কাছে কান্না আর কী চায়?”
সুবোধ সরকারের কবিতায় এ এক অন্য কাশ্মীর। যেন কাশ্মীর নামক একটা অপূর্ব
জেলখানার ভেতর বসে এক তরুণী কাঁদছেন। জেলখানার বাইরে তার দেশ। এখান থেকেই শুরু কবিতা। ভালবাসার কবিতা। প্রেমের কবিতা। কেননা সুবোধ সরকার মনে করেন এটা এমন একটা সময় যখন ভালবাসাই হল একমাত্র রাস্তা।
গোটা বিশ্ব এখন কাশ্মীর নিয়ে ভাবিত।
“কাশ্মীর প্রসঙ্গে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার বলতে যা বোঝায়, কাশ্মীরে তা এখন বিপন্ন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন।
ডমিনিক রাব বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমাজের একটা সার্বিক দায়িত্ব আছে। আমরা অবশ্যই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখব এবং অধিকারগুলো রক্ষিত হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর রাখব।’
তাঁর মতে, কাশ্মীর সমস্যা ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বিষয়। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও শিমলা চুক্তি মেনে সেই সমস্যা তাদেরই মেটাতে হবে। কিন্তু কাশ্মীরের মানবাধিকারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক।
পার্লামেন্টে লেবার, কনজারভেটিভ, এসএনপি এমপি’রা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের পরে উপত্যকার পরিস্থিতি নিয়ে সোচ্চার হন। লেবার এমপি হিউ গ্যাফনি বলেন, কাশ্মীরে ওষুধের সঞ্চয় কমছে। হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপত্যকায় ৯০ শতাংশের বেশি ওষুধপত্র আসে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে।
আরেক লেবার এমপি পল ব্লমফিল্ড জানতে চান, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে জাতিসঙ্ঘ ও কমনওয়েলথের মাধ্যমে ভারতের উপরে চাপ বাড়ানো হবে কি না।
কনজারভেটিভ এমপি শেরিল গিলান বলেন, তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের অনেকেই কাশ্মীরের জনবিন্যাস পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
গ্লাসগোর এমপি অ্যালিসন থিউলিস স্কটল্যান্ডের কাশ্মীরিদের উদ্বেগের কথা জানান।
৩৭০ ধারা বিলোপ প্রসঙ্গে কনজারভেটিভ এমপি বব ব্ল্যাকম্যানের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, ‘লোকজনকে আটক, নির্যাতন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করা নিয়ে প্রচুর খবর ঘুরছে। ভারতের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে মান্যতা দিয়েও ‘মানবাধিকার রক্ষা’র বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে।’
এদিকে, গত বুধবার (বুধবার) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিনকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও প্রভাব খাটানোর বিরুদ্ধে ভারত এবং রাশিয়া।’ কাশ্মীর ইস্যুতে এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এদিনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গত বুধবার দু’দিনের রাশিয়া সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে মোদি ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখেল গণমাধ্যমকে জানান, কাশ্মীর পদক্ষেপের যৌক্তিকতা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ওই ইস্যুতে রাশিয়া দৃঢ়ভাবে ভারতের সঙ্গে রয়েছে বলেও বিজয় গোখলে জানান।”
বিশ্ব মানবিকতা দিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাশ্মীর বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
কাশ্মীরের মানুষের অধিকার সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ব মানবিকতা দিবস উপলক্ষে বিগত (সোমবার) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার বার্তায় মমতা ওই মন্তব্য করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ বিশ্ব মানবিকতা দিবস। কাশ্মীরের মানুষদের অধিকার পুরোপুরিভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। আমরা সবাই কাশ্মীরের মানবাধিকার ও শান্তির জন্য প্রার্থনা করি।’
মানবাধিকারের প্রশ্নে তিনি কোনও দিনই আপোশ করেননি, এমন বার্তা দিতে চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মানবাধিকার রক্ষা আমার হৃদয়ের অত্যন্ত কাছের বিষয়। ১৯৯৫ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং লক-আপে মৃত্যুর প্রতিবাদে আমি ২১ দিন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছি।’
‘মমতা কী কাশ্মীরকে পুরোপুরি ভারতের অঙ্গ হিসেবে দেখতে চান না?’
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট বার্তার তীব্র নিন্দা করেছে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি। দলের রাজ্যসভা এমপি স্বপন দাশগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী বলতে চাচ্ছেন, সেটা একটু স্পষ্ট করে বললে ভালো হয়। উনি কী কাশ্মীরকে পুরোপুরি ভারতের অঙ্গ হিসেবে দেখতে চান না? যদি না চান, তা হলে স্পষ্ট করে বলে দিন। সবারই বুঝতে সুবিধা হবে যে, তিনি ঠিক কী চাচ্ছেন।’
রাজ্য বিজেপি নেতাদের মতে, কেবলমাত্র ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কথা মাথায় রেখে মমতা এ ধরনের মন্তব্য করছেন।
‘মমতা সঠিক বক্তব্য তুলে ধরেছেন’ এ প্রসঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ বিগত (সোমবার) রেডিও তেহরানকে বলেছিলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরেছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে এজন্য অভিনন্দন জানাই। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেই বিষয়ে তিনি জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসেবে আমরা চাই কাশ্মীরবাসী শান্তিতে বাস করুক। কাশ্মীরে শান্তি ফিরুক। কাশ্মীরে মানবাধিকার রক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিক।
তিনি আরও বলেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার মুখে নয়, কাজে করে দেখাক। কাশ্মীরের মানুষের নিরাপত্তা, সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন যাতে বজায় থাকে, সঠিকভাবে তারা যাতে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ এব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসুক।’ “