গণমাধ্যমকে জাতি ও সম্প্রদায়ভিত্তিক খবর প্রকাশ এড়িয়ে চলার জন্য বললেন উপ-রাষ্ট্রপতি
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৩০ এপ্রিল, ২০১৯
জনজীবনে জাতিগত বিষয় ও অর্থের ক্রমবর্ধমান ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপ-রাষ্ট্রপতি শ্রী এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু নির্বাচন চলার সময় জাতপাত-ভিত্তিক খবর প্রকাশ না করার জন্য গণমাধ্যমগুলিকে পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন দিল্লিতে আজ ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর নামাঙ্কিত সম্মেলন কেন্দ্রে প্রথম ডঃ রাজারাম জয়পুরিয়া স্মারক বক্তৃতায় উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, সাধারণ মানুষ চারটি ‘সি’ – ক্যারেক্টার (চারিত্রিক গুণাবলী), ক্যালিবার (সক্ষমতা), ক্যাপাসিটি (দক্ষতা) এবং কন্ডাক্ট (আচরণ)-এর ভিত্তিতে তাঁদের জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন করুক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, কিছু মানুষ এই চারটি ‘সি’কে অশুভ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছেন এইভাবে – কাস্ট (জাতি), ক্যাশ (নগদ অর্থ), ক্রিমিনালিটি (অপরাধ) এবং কমিউনিটি (সম্প্রদায়)।
প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্রে জাতপাত-ভিত্তিক পরিসংখ্যানের ওপর গণমাধ্যমের অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপের ব্যাপারে শ্রী নাইডু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যমগুলির গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক ও সাংসদরা কত প্রশ্ন করেছেন, জনজীবনের সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলি নিয়ে কতবার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন, জনকল্যাণের লক্ষ্যে তাঁরা কতখানি দায়বদ্ধ – এই সমস্ত বিষয়ের ওপর। সংসদ বা বিধানসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম কতবার বিঘ্নিত হয়েছে, তার ওপর গণমাধ্যমগুলিকে বেশি গুরুত্ব না দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন শ্রী নাইডু।
শ্রী নাইডু, জনজীবনে মূল্যবোধগুলির ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজনীতিকদের অবাধে দলীয় আনুগত্য ভঙ্গ করার কথাও উল্লেখ করেন। রাজনীতিকদের বারংবার দল পরিবর্তন ফ্যাশন হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, এ ধরণের ঘটনা গণতন্ত্রকে হাস্যকর করে তুলেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, ভারতের জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে যদি জ্ঞান ও দক্ষতার নিরন্তর মানোন্নয়নের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া যায়। সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র থাকতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করে শ্রী নাইডু বলেন, প্রতিটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্প সংস্থার যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে যাতে শিল্প সংস্থাগুলির চাহিদা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের সুবিধা প্রদান করা যায়।
চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের তুলনায় ভারতকে এক নবীন জাতি হিসেবে উল্লেখ করে শ্রী নাইডু বলেন, যুবসম্প্রদায়কে যথোপযুক্ত দক্ষতা প্রদান করে এবং সর্বাধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সুদক্ষ করে তুলতে পারলে ভারত সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি, নিজের জন্যও দক্ষ কর্মীবাহিনীর যোগান সুনিশ্চিত করতে পারবে। তিনি যুবসম্প্রদায়কে দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মপ্রার্থী করে তোলার পরিবর্তে কর্মদাতা হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের মেধা ও উদ্ভাবন হাব হিসেবে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার সময় ভারতের কাছে এসেছে। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর ক্রমপরিবর্তনশীল প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পরামর্শও দেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নৈতিক ও আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গি হ্রাস পাওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে শ্রী নাইডু বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার এমন এক মজবুত ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে যা সমাজে মানবিক মূল্যবোধগুলির পাশাপাশি নৈতিকতা ও আদর্শের প্রসারেও সহায়ক হবে।
বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যুক্ত সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উপ-রাষ্ট্রপতি শিল্প সংগঠনগুলিকে তাদের সদস্যদের স্বার্থে এক সুনির্দিষ্ট আচরণবিধি প্রণয়নেরও পরামর্শ দেন। বিশ্বের দ্রুত বিকাশশীল অর্থনীতি হিসাবে ভারতের উত্থানের কথা উল্লেখ করে শ্রী নাইডু বলেন, আগামী দেড় দশকের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সমস্ত দেশকে আর্থিক তথ্য বিশেষ করে, কর সংক্রান্ত পরিসংখ্যান আদানপ্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ফেরার অর্থনৈতিক অপরাধীদের সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রসঙ্ঘ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উপ-রাষ্ট্রপতি অভিমত প্রকাশ করেন।
ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক অসুখ-বিসুখের কথা উল্লেখ করে শ্রী নাইডু যুবসম্প্রদায়কে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সুষম এবং কালোত্তীর্ণ পরম্পরাগত আহার গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি তাঁদের শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখার ওপরও গুরুত্ব দেন।
অনুষ্ঠানে, জয়পুরিয়া গ্রুপ অফ এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনের চেয়ারম্যান শ্রী শিশির জয়পুরিয়া, গ্রুপের ডায়রেক্টর শ্রী এস কে মহাপাত্র, বিশিষ্ট শিল্পপতি সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।