শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (দশম ভাগ) – চন্দ্রার চাইনিজ ফুড ও কোজাগরী পূর্ণিমার গোপন ষড়যন্ত্র
সুমন মুন্সী,কলকাতা
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ নবম ভাগ, দশম ভাগ,একাদশ ভাগ)
“সেদিন চৈত্র মাস তোমার দুচোখে দেখেছি আমার সর্বনাশ”, বেশ রোমান্টিক মুডে কথা গুলো বলতে বলতে “কলাপাতায় কলরব” বান্দ্রা ইস্টের সব চেয়ে জনপ্রিয় মাল্টি কুজিন রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন পরিচালক পার্থ সারথি সর্দার।
“কলাপাতায় কলরব”, স্ত্রী চন্দ্রাবতীর ভেঞ্চার আর পার্থ তার সাইলেন্ট পার্টনার । পার্থ মুম্বাইয়ের ব্যাস্ততম চিত্র পরিচালক । শেষ ছয়টা সিনেমা সুপার ডুপার হিট, তাও নিউ কামারদের নিয়ে ছবি। কাজের জায়গায় সিরিয়াস, কিন্তু চন্দ্রার কাছে এলেই দুস্টু মিষ্টি সিনেমার হিরো।
সকাল ১১টা কিচেন রেডি করছে, সেলিম আর জয়দেব এক্সপার্ট কুক। এ ছাড়া আরো ৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজ করে। গোটা ১২ জন সার্ভ করার ছেলে আর মেয়ে আছে । ১০০ সিটের রেস্তোরা , ফাইভস্টার ইন্টেরিয়র আর আম্বিয়ান্স । ১২:৩০ থেকে কাস্টমার আর হোম ডেলিভারি চালু হবে । খুব ব্যাস্ততা, চান্দ্রা নিজে কোয়ালিটির ব্যাপারে খুঁতখুঁতে । তাই অল্প দিনেই, আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা । NARI এসোসিয়েশন থেকে অ্যাওয়ার্ড পেলো পরপর দু বছর ।
চন্দ্রা হেসে বললো,”তার মানে নেক্সট ফিল্ম এ বচ্চন সাহেব কনফার্ম করেছেন” ।
পার্থ অর্থপূর্ণ হাসি হাসলেন ,”খুব খিদে পেয়েছে,কি খাওয়াবে বোলো?”।
চন্দ্রা বললো,” রোস্টেড চিকেন ওর চিকেন বাটার মশলা উইথ নান চলবে?”
“কেন আমার চন্দ্রাবতীর কাছে আর একটু বেশি কিছু পাওয়া যাবে না আজ?”, সর্দার বাবুর চোখের ভাষা চন্দ্রা বোঝে, আজ সত্যি ওর সর্বনাশ । আর এই সর্বনাশ সব মেয়েই চায় বারবার হোক তার প্রিন্স চার্মিংয়ের সাথে । কিছু সর্বনাশ, বড় কাঙ্খিত, বড় সুখের।
“দুস্টুমি গুলো তোলা থাক এখন, বাড়ি গিয়ে দেখা যাবে।” ,কপট রাগ দেখিয়ে বললো চন্দ্রা ।
“অগত্যা, নান আর বাটার চিকেন খাই, খাবার তোমার পরশ সেজে সেই তো পুরস্কার”, হেসে বসে পড়লো সর্দার সাহেব।
চন্দ্রা কিচেনে ছুটলো, ঝাল কম দিয়ে বাবুর মনের মতো না দিলে, নেড়েচেড়ে পালাবে, সারা দিন হয়তো খাবেই না। আজ ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে বচ্চন সাহেবের কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে গেছিলো।

পার্থ আইবিজি নিউজ এর একটা ফিল্ম রিভিউ দেখছিলো ওয়েব সাইট থেকে। এই ওয়েব চ্যানেলটা আলাদা খুব বেশি খবর দেয় না, কিন্তু কোনো অকাজের খবরও থাকে না ।
এমন সময় দুইজন চাইনিজ ও দুজন পাঠান দেখতে গেস্ট এলো। চন্দ্রা হেসে রিসিভ করলো। যদিও ৪৫ মিনিট বাকি, তবু ওনারা রিকোয়েস্ট করে বসলেন। নিচু স্বরে কথা বলতে লাগলো চারজন ।
একবার আড়চোখে দেখলেন লোক গুলোকে, কাসাভের সেই দিনটা ভেবে আঁতকে উঠেছিলেন। ২৬/১১ বেদনার আর আতঙ্কের দিন মুম্বাই তথা সারা ভারতের। টেরোরিস্ট নয়, আসল অপরাধী যেসব লোক দেশের ভিতর থেকে দেশের ক্ষতি করে, টেরোরিস্টদের সাহায্য করে।
বারবার ওদের কথার দিকে মন আকর্ষণ করছে সর্দার সাহেবের । কিন্তু এভাবে অন্যের কথা শোনা ব্যাড ম্যানার্স ।
আবার নিউস দেখতে লাগলেন । সামনেই ভারত পাকিস্তান ম্যাচ টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ । ভারত ওয়ার্ল্ড কাপে কখনো পাকিস্তানের কাছে হারেনি। কিন্তু এবার নাকি অনেক টাকা লেগেছে, কে জানে শোনা কথায় বিশ্বাস করতে নেই।
ওরা দুজন চিকেন নুডলস,বোনলেস চিলি চিকেন আর বিয়ার অর্ডার দিলো, পাঠান দুজন তান্দুরী রুটি আর চিক্কেন টিক্কা মশলা, ৪ প্যাকেট ফ্রাইড রাইস ও মাঞ্চুরিয়ান চিকেন বোনলেস পার্সেল অর্ডার দিলো ।শেষে পাঠান দুজন সোডা শিকানজি অর্ডার দিলো।
প্রথম অর্ডারই ৫০০০টাকার ওপর বিল, চন্দ্রা খুশ । কাছে আসতেই সর্দার বললেন, “আমি লাকী বয়, কেমন অর্ডারের বন্যা হলো”।
চন্দ্রা হেসে সেলাম দেখালো ।
পার্থর খাবার এসে গেলো, চন্দ্রা নিজে ইন্সট্রাকশন দিয়ে বানিয়েছে, জব্বর হয়েছে । এমন সময় পার্থর ফোনে কল এলো সুরজিৎ সিংহের এখনকার সেরা গাইয়ে ।
“পার্থদা কাল রেকর্ডিং ২ঘন্টা পরে করতে হবে, ১০:৩০ এ ল্যান্ড করে মাহবুব ষ্টুডিও যেতে সময় লাগবে।”, বললেন সুরজিৎ ।
“ওকে ষ্টুডিও কে বলে দিচ্ছি ,২:০০ শার্প । ইজ ইট ওকে?”, প্রশ্ন করলো পার্থ।
ফোনটা রেখে খেতে যাবে, এমন সময় কানে এলো কিছু কথা পাশের টেবিল থেকে ।
“মিস্টার লী, উই মাস্ট রিমুভ লামা ফ্রম পেলিং টিবেটিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজে মনাস্ট্রি। হি ইজ ক্রিয়েটিং লটস অফ ট্রাবল। ওই ক্যান নট ক্যারাক হিম উইথ মানি ওর আর্মস। অলসো ক্রিয়েট নয়েস ইন লাদাখ এন্ড সিকিম বর্ডার। গভর্নমেন্ট উইল বি কনফিউসড।”, বললো নীল টিশার্ট পরা চাইনিজ ভদ্রলোকটি ।
“অলরেডি ফিঙ্গার ৪ টু ৮ নিয়ার প্যানগং লেক নয়েস ক্রিটেড, সো এজ ডোকলাম, উই নো আওয়ার জব মিস্টার চ্যাং”, বললো সামার স্যুট পড়া চাইনিজ। বেশ তাহলে নীল জামা মিস্টার চ্যাং।
“কেয়া ও কিতাব মিলেগা মিস্টার লী?”, অ্যাস কালারের পাঠান স্যুট পরা লোকটি জিজ্ঞাসা করলো ।
“রেহমান ভাই, জারুর মিলেগা”, বললেন চ্যাং। মিস্টার চ্যাং মিস্টার লী কে ইংলিশ আর চাইনিজ এ প্রশ্ন ট্রান্সলেট করে দিতেই, লী সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো ।
রেহমান এবার অন্য জনকে বললো “খুদাবক্স ইনশাআল্লাহ অব দিল্লি দূর নাহী”।
এমন সময় পর পর দুটো কল এলো সর্দার সাহেবের ফোনে। কথা শেষ করে খেয়াল করলো পাশের টেবিল ফাঁকা হয়ে গেছে।
এদিক ওদিক চেয়ে চন্দ্রা কে বললো, “লোকগুলো কোথায় গেলো?”।
চন্দ্রা বললো, “৫২৭৫ বিল ছিল ৬০০০ টিপস সহ দিয়ে গেলো,৩X ২০০০,বুঝলেন মশাই”। বলে পায়রার পেখমের মত মেলে ধরলো।
“চন্দ্রা নোট গুলো চেক করে দেখতো?”, সন্দিগ্ধ গলায় সর্দার বাবু বললেন।
চন্দ্রা কি বুঝলো কে জানে, মেশিন কাউন্টিং করলো। কিন্তু কোনো ফেক নোট নেই।
মিউজিক ডিরেক্টর সুমন্ত মুখার্জী ফোন করেছিলেন , একবার ডাকছেন কিছু লিরিকস চেঞ্জ করতে হবে। সর্বনাশ কাল রেকর্ডিং, আজ এই কথা ।
পড়ি মরি করে ছুটলেন সুমন্তদার লোয়ার পারেল রোডের বাড়িতে। লতাজির বাড়ির কাছেই সুমন্তদার ফ্লাট ।
চন্দ্রা হেসে বাকি চিকেন প্যাক করে ফ্রীজে রেখে দিলো রাতে দেবে, না হলে বাচ্ছাদের মতো মন খারাপ করবে । একটা আস্ত পাগল ।
সারাদিনের কাজের ব্যাস্ততার মধ্যে দুজনেই ভুলে গেলো সেই চারজনের কথা।
রাত ১০:৩০ ডিনার করতে বসে চন্দ্রা যখন চিকেন গরম করে দিল, তখনি পার্থ বলে উঠলেন “দেখেছো ভুলেই গেছিলাম”, বলেই জিব কাটলেন ।
এর পর বিস্তারে যা শুনেছিলেন চন্দ্রা কে বললেন।
তারপর বললো “তুমি সেদিন তোমার আর এক পার্থর কাছে এই লামা সংক্রান্ত কিছু শুনেছিলে না। দুজনে এক লোক হলে বেশ চিন্তার কথা”।
চন্দ্রা ঘড়ি দেখলো ১১:১৫ কোজাগরী পূর্ণিমার আগের রাত বাইরে চাঁদ ঝলমল করছে । কথাটা পার্থ সমাজপতিকে জানানো দরকার , কিন্তু এতো রাতে, বিরক্ত করবে?
পার্থর ফোন বন্ধ অগত্যা হোয়াটস আপ মেসেজ করলো, বিল্টু, পার্থ আর উত্তরা কে ট্যাগ করে কলেজ গ্রপে ।


এদিকে পেলিংয়ের হোটেলে ফিরেই সবাই ফ্রেশ হয়ে, টি আর চিকেন পাকোড়া অর্ডার দিলো ।
ছেত্রীদা হোটেলের বেল বয় কে জপিয়ে জেনে নিয়েছে মোনাস্ট্রির বিদেশী গেস্ট এলে ওদের হোটেলই ওঠেন। তখন লামারা মাঝে মাঝেই আসেন । ম্যানেজার টিবেটিয়ান ছেলে মনাস্ট্রি স্কুলে পড়েছেন ইত্যাদি ।
বাচ্ছারা বায়না ধরলো ছেত্রী আংকেল লেপার্ডের গল্প বলো । ছেত্রীদা “রুদ্রপ্রয়াগের চিতা” করবেটের সেই বিখ্যাত গল্পটা বলতে লাগলেন। The Leopard of Rudraprayag was a male man-eating leopard গল্প পার্থর পড়া, কিন্তু ছেত্রীদা এমন ভাবে বলতে লাগলেন ,সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগল। প্রকৃত গুণী ও বড় মনের মানুষ এই ছেত্রী দম্পতি । বাচ্ছা গুলো আবার পার্থ আংকেল আর আন্টির ফ্যান।
৮:৩০ ডিনার করে সবাই শুতে চলে গেলো আজ বড় স্ট্রেস গেছে সবার ।
বাচ্ছাদের নিজেদের ঘরে পাঠিয়ে দিলো, একটা ৪ বেড রুম চারজন বাচ্ছা এক সাথে, সবাই একসাথে এনজয় করবে বলে, এটাই ওদের পছন্দ ।
ছেত্রী আর পার্থ দুইজনেরই দুটি করে মেয়ে । ছেত্রী দার দুই মেয়ে পার্থর মেয়েদের থেকে এক বছর করে বড় । তাই দিদি গিরি আর শাসন চলে।
মান অভিমান চলে, কিন্তু বন্ধুত্ব পাকা ।
সবাইকে বিদায় দিয়ে সংযুক্তা যখন এলো রাত তখন ৯:৪৫।
পার্থ ততক্ষনে রাত পোশাক পরে শোয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে রোজ বই পড়ে সেই ছেলেবেলার থেকে অভ্যাস। সুমনের বাড়িতে একটা ছোটোখাটো লাইব্রেরী ছিল গল্পের বইয়ের, তারপর নাগেরবাজারের ধীরেন্দ্র স্মৃতি পাঠাগার, এই ছিল ওর বইয়ের দুনিয়া ।
কিছুক্ষন পরে সংযুক্তা এসে বইটা আস্তে করে বন্ধ করে দিলো। ঘন হয়ে কাছে সরে এসেছে সে, বাইরে ব্যালকনি থেকে চাঁদের আলোতে উপত্যকা আরো মায়াবী দেখাচ্ছে।
সংযুক্তার নিঃস্বাস ঘনঘন পরছে । আস্তে করে বুকে মাথা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কাল কোজাগরী পূর্ণিমা মনে আছে? নিরামিষ খাবে কাল”।
পার্থর বুকে আলতো করে হাত বুলোতে থাকে সে ।
“আচ্ছা পার্থ তোমার মনে আছে কবে প্রথম দেখা?”, বললো সংযুক্তা ।
“কোজাগরী পূর্ণিমার দিন তোমার জেঠুর বাড়িতে লক্ষী পুজোর ভোগের প্রসাদ খেতে গেছিলাম, তখন এমএসসি ফাইনাল ইয়ার। সেই কবেকার কথা, কিন্তু আজও মনে আছে। তুমি জিজ্ঞাসা করলে “আর খিচুড়ি দেব?” আমি হাঁ করে তাকিয়ে শুধু দেখছিলাম তোমায়, আর তুমি দিয়েই গেলে শেষে , পাশের থেকে মা বললেন পার্থ আর খাস না শরীর খারাপ করবে । দুজনেই লজ্জায় পরে গেছিলাম “। পার্থর গলায় প্রথম দিনের সেই ভালোলাগা ঝরে পড়লো নতুন করে ।
সংযুক্তা আরো ঘন হয়ে সরে এলো পার্থর বুকের ভিতরে । এটা তাঁর একার রাজত্ব এখানকার সেইই রানী। এই মানুষটা তাঁর একান্ত আপনার, যার কাছে রিক্ত নিঃস্ব হয়ে সব কিছু উজাড় করে দিলে, সেই দেয়া হয়ে ওঠে হাজার গুন্ বেশী ফিরে পাওয়া।
পার্থ নিজের হাতের বাহুডোরে আরো নিবিড় আলিঙ্গনে আঁকড়ে ধরে, সংযুক্তাকে। ঠিক যেমন করে পৃথ্বীরাজ ছিনিয়ে নিয়েছিল সংযুক্তকে । যুগে যুগে সংযুক্তা তাঁর মনের মানুষের বহুডোরে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে।
২০বছরের সফল দাম্পত্যের পর আজ আবারও ,সেই কোজাগরী পূর্ণিমার রাত। দুটি মনপ্রাণ যখন পূর্ণ বিশ্বাসে ভালোবাসায় কাছে আসে, সেই যুগল অনুভূতির মুহূর্তের বন্ধনে সৃষ্টি এগিয়ে চলে নিজের গতিতে। আজ রিম্বি নদীর সেই ভেজা হাতের স্পর্শের কথা ভেবে, দুজনেই আবার শিহরিত হলো, হারিয়ে গেলো একে অপরের মাঝে ।
পরম তৃপ্তির লগ্ন একসময় সময়ের দাবি মেনে আবার ফিরে এলো,হোটেলের ঘরের বর্তমানে। আসতে আসতে পার্থ উঠে গেলো টেবিলের কাছে, ইলেকট্রিক পট এ টি ব্যাগ নিয়ে চা বানালো । তারপর কাপ হাতে গিয়ে বসলো বারান্দায় ।
রানী সংযুক্তা তখন তার স্বপ্নের পাওয়া সেই দিনটা, আর আজকের এই রাতের মধুমিলনের স্মৃতিকে চোখ বন্ধ করে বারে বারে অনুভব করছে, আর অষ্টাদশীর সে লজ্জা জড়ানো প্রথম দেখার মুহূর্তকে মনে মনে খুঁজে নিচ্ছে ,বার বার ।
একবার দুবার বিছানায় এপাশ ওপাশ করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো পার্থর কাছে, রাত পোশাকে এই চাঁদনী রাতে আবার সংযুক্তাকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিলো পার্থ । আস্তে করে সে এসে বসলো পার্থর কোলে ।মাথা এলিয়ে দিলো পার্থর কাঁধে।
পার্থর মোবাইলে একটা গান বেজে উঠলো “এই রাত তোমার আমার, ওই চাঁদ তোমার আমার”, হেমন্ত মুখার্জীর অমর সৃষ্টি ।
কি করে যে সময় কেটে গেলো , হটাৎ দেখে রাত একটা বাজতে যায়।
“চলো ওঠো”,পার্থ বললো ।
“উহু, আর একটু থাকি”, আবেশ জড়ানো গলায় বললো সংযুক্তা ।
নিজের কাশ্মীরি শালের ভিতরে সংযুক্তাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিলো পার্থ। বেশ শীত করছে এবার এতক্ষন বোঝেনি ঘোরের কারণে ।
সম্পূর্ণ দুটো অচেনা মানুষ কোন জাদু বলে এমন বাঁধনে জড়িয়ে যায় ,যে, আলাদা করে নিজের আর কোনো ভালোলাগা থাকে না। বেঁচে থাকাটাই যেন আর একজনের খুশির জন্য। ঠিক একই অনুভূতি অপরজনের মনেও যখন দোলা দেয়, সেটাই হয়ে ওঠে লক্ষী নারায়ণের সংসার ।
কি যেন সুমন বলেছিলো কলেজে, “তোর বৌকে তোর এক্সপ্রেশনের একটা ডিকশেনারী দিয়ে দিস, বেচারির তোকে বুঝতে সুবিধা হবে”।
দেখা হলে সুমনকে বলবো সংযুক্তার ডিকশনারী লাগেনা, সে চোখ বন্ধ করেও পার্থর মনের কথা বুঝে যায়। কোনো সংযুক্তরই ডিকশেনারী লাগেনা যদি তাঁর পৃত্থিরাজ মনের মানুষ হয় ।
নিজের মনেই হেসে ফেলে পার্থ ।
“কি হলো, হাসলে যে”, সংযুক্তা প্রশ্ন করলো ।
“কিছুনা বেটাকে পেলে, বুঝিয়ে দেব সুমন বাবু আপনি ত্রিকালজ্ঞ নন। বিল্টুর ভাষায় ‘হয়, হয়, তুমি জানতি পারোনা’।”, বললো পার্থ ।
মোবাইল বেজে উঠলো, আরডি সুরে অমিত কুমারের সেই বিখ্যাত বালিকা বঁধুর গান,” বাড়ে আচ্ছে লাগতে হয়”।
আবার দুজনে ডুবে গেলো সুরের মূর্ছনায়, পরম আবেশের বন্ধনে । ঠিক যেমনটি সিনেমায় হয়।
আরব সাগরের তীরেও, এমনই আর এক প্লাবনে ভেসে যাচ্ছে আর দুটি প্রাণ। ভালোবাসা কোনো সীমা মানেনা, পাহাড় কি সাগর সব ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়াই আবেগের প্রথম শর্ত।
সুমন বলতো শেষবেলার প্রেম ভয়ঙ্কর বাঁধ ভাঙা প্লাবন নিয়ে আসে। শরীর মনের এই প্লাবনে, কে কবে, নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে। সবশেষে বলতো সেই কবেই রবিঠাকুর বলেছেন:
"দোহাই তোদের, একটুকু চুপ কর্।
ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর।”
কিংবা “For God’s sake hold your tongue, and let me love. ~ John Donne “
রবিঠাকুর এবং শেষের কবিতা:
“Blow gently over my garden
Wind of the southern sea.
In the hour my love cometh
And calleth me.
চুমিয়া যেয়ো তুমি
আমার বনভূমি,
দখিন-সাগরের সমীরণ,
যে শুভখনে মম
আসিবে প্রিয়তম–
ডাকিবে নাম ধরে অকারণ।”
মনে মনে অমিত আর লাবণ্যের প্রেম ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দুজনকেই, কিন্তু কেউ সেই ভেসে যাওয়াকে আটকাতে চায় না কখনো । সাক্ষী থাকে শুধু কোজাগরীর চাঁদ।
(ক্রমশ)
*** কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র ***