জয় গণতন্ত্রের জয় – ভোট যুদ্ধে মোদী বনাম মমতা
বাস ট্রেন ট্রাম থেকে পাড়ার আড্ডা সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু একটিই বিষয় তা হলো লোকসভা ভোট।
আর হবে নাই বা কেন বৃহত গণতান্ত্রিক দেশে জনগনের নির্বাচনিক অধিকার বলে কথা। তবে ভোট নির্বাচনিক অধিকার না যুদ্ধ তা বলা বেশ মুশকিল। কারন সব দলই নিজের নিজের স্ট্রাটেজিতে সজ্জিত ;তবে এখানে আসল যুদ্ধটা তৃণমূল র বিজেপির মধ্যে। আর এখন যুদ্ধ জয় প্রচারের স্টাটেজিতে হবে নাকি কাজের নিরিখে সেটাই বিচার্য বিষয় ।
মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ভোটের প্রচারেও এসেছে নানান অভিনবত্ব। কখনো দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক সভায় নেতাদের তির্যক ভাষার ব্যাবহার, আবার কখনো দেওয়াল লিখনে ফুটে উঠছে কবিতার বিষেশত্ব, কখনো বা টেলিভিশন চ্যানেলের কিংবা ইন্টারনেটর মাধ্যমে সরাসরি জনগনের কাছে নিদিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ভোট দেওয়ার আবেদন।
তবে সত্যি কি সাধারণ মানুষের কাছে ভোট প্রচারের অভিনবত্ব গুরুত্বপূর্ণ নাকি দেশের নেতা নেত্রীরা মানুষের জন্য কে কতটা কাজ করছেন সেটা বোঝা বেশি জরুরী । সে উত্তর বোধ হয় সবারই জানা তাই বার বারই মমতা ব্যানার্জী ও মোদী দুজনেই কাজের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন মানুষের সামনে ।
মমতা ব্যানার্জীকে রাজনৈতিক সভা গুলিতে মানুষের সামনে তুলে ধরতে দেখা যাচ্ছে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, কিষানমান্ডির ও নির্মল বাংলার মত বিভিন্ন সফল প্রকল্পগুলকে । এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য কন্যাশ্রী যার জন্য তিনি জাতিসঙ্গের আন্তজাতিক পুরস্কার পেয়েছেন ।
ঠিক তেমনই নরেন্দ্র মোদীর গলাতেও শোনা যাচ্ছে একই সুর তিনিও মানুষের তুলে ধরছেন আবাস যোজনা, জীবনযোতি বীমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, বেটি বাঁচাও বেশি বেটি পাড়াও যোজনা, মিশন ইন্দ্রধানুশ, আয়ুষ্মান ভারত, ন্যাশনাল নিউট্রেশন মিশনের মত আর ও অনেক কাজের পরিসংখ্যান তুলেছেন যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
এই সমস্ত কাজের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মানুষ কতটা সুযোগ সুবিধা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন বা হননি তার বিচার অবশ্য মানুষই করবেন . কাজের নিরিখে ভোট যুদ্ধে কে এগিয়ে মোদী না মমতা ?
যদিও ভারত এক অভাগা দেশ যেখানে নির্বাচনে ভালোর সাথে মন্দকেও গ্রহণ করতে হয় যদি সংখ্যা জোগাড় না হয় । সুস্থ গণতন্ত্র তখনি পাওয়া যাবে যখন সব দলের সেরা দের নিয়ে সরকার হবে, যে দেশ কে নেতৃত্ব দেবে গুনের ভিত্তিতে জাতি ধর্ম বর্ণ বা লোকসভার আসন সংখ্য়ায় নয় ,সরকার হবে সম্পূর্ণ যোগ্য লোকেদের এবং সৎ লোকেদের দ্বারা পরিচালিত ।
তাই এক দিদি এক মোদী নয় দরকার ৫৪৫টি যোগ্য মানুষ যাদের একজনও ক্রিমিনাল নন । কাজের মানুষ এবং যিনি মানুষ কে চেনেন ,জানেন ও বোঝেন । শুধু মাত্র ক্ষমতা দখলের সংক্রিন্ন লড়াই জেতা নয় “A true statesman like leadership” চাই | যাদের কানা পঞ্চা, হাতকাটা সেলিম বা রবার্টের টেরর দরকার পরবে না EVM বা পেপার কিংবা হৃদয়ে থাকবে নিশ্চিত ভোট । আছে দিন বা এগিয়ে বাংলা লিখতে হবে না দেয়ালে, মানুষ বুঝবে অন্তরে । “Either Govern or Step Down” তা সে কেন্দ্র বা রাজ্য বা লোকাল বডি যাই হোক । বোকা বানানোর দিন শেষ না মানুষ আরো একবার বোকা বনল? তা আগামী দিন বলবে ।
কতদিন আর অতীত কে ধার করে গান্ধী,সুভাষ বা আজাদ কে খুঁজবো ? এবার তো একজন তাঁদের মতো নেতা বা নেত্রী দিন । যাকে অনুসরণ করা যাবে নির্ভয়, সারদা নারোদা বা ব্যাপমের বেড়াল বেরোবে না ঝোলা থেকে । যাঁকে অনুসরণ করতাম বলে ভবিষ্যতে মাথা উঁচুই থাকবে । ২৪সের ছাতি ৪২ হয়ে যাবে, নিস্কলঙ্ক থেকে যাবে বিশ্বাস ।
এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটু না হয় ধ্যৈর্য ধরা যাক 23 মে পর্যন্ত । কে বলতে পারে প্রেসিডেন্ট ওবামার মতো কেউ বলবে “Best is yet to come” । নাকি আমড়া গাছে আমের মতো আশ্চর্য ফল দেখবে ভারতবাসী তা বিধাতাই বলতে পারবেন ।
তবে বর্তমানে দিদি বনাম মোদী মাতিয়ে রাখবে বোকাবাক্স আর ততোধিক বোকাদের আগামী দেড় মাস । তবু বিশ্বাস গণতন্ত্র জিতবে আর মানুষ পাবে আগামী দিনের নেতা কে(?) ।
সংবিধান পরিবর্তনের সময় এসেছে রাজনীতিকদের নুন্নতম যোগ্যতা প্রমান দরকার এবং প্রমান হলে তবে কোনো দলের প্রাথমিক সদস্য পদ পাবে । আর ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার মতো ক্রেডিবিলিটি কার্ড থাকতে হবে। অযোগ্য লোকেদের প্রার্থী করলে সেই দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে । প্রতিশ্রুতি আর ভোটের ইস্তাহার সফল না হলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সহ যাব্বজীবন শাস্তি হবে । নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে হবে কঠোর বাস্তবোচিত ।
না হয় দু চারটে বোকা সাংবাদিকের মাথা ফাটল, না হয় চৌত্রিশ বছর রক্তপাতের নায়করা শান্তির বাণী শোনালো, না হয় বোকা(?) উত্তরাধিকারী নিশ্চিত আয়ের প্রলোভন দিলো, না হয় জয় শ্রীরাম শুনে রামের পাতাল প্রবেশ হলো , তবু জয় গণতন্ত্রের জয় ভোট যুদ্ধে মোদী বনাম মমতা বনাম রাহুল আর গোটা দেশ সম্ভবত আর একবার FOOL ।
তথ্য সূত্র, লেখা : মেরী পাল
ছবি : সুমন মুন্সী