
গণতন্ত্রের উৎসবে গণতন্ত্রের হত্যা
মেরি পাল , কলকাতা
ব্রিটিশদের শাষন ,তাদের অত্যাচার এবং পরাধীনতা থেকে ভারতবর্ষের মানুষকে মুক্ত করার জন্য , দেশের মানুষকে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার দেওয়া ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষুদিরাম বসু , নেতাজি , প্রফুল্লচাকি প্রমুখ অনেক মানুষ আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, কিন্তু জানিনা এখন পশ্চিমবঙ্গের এমন হতশ্রী অবস্থা দেখে আফসোস করবেন কিনা? পশ্চিমবঙ্গের গণতন্ত্র আজ শুধু বিপন্নই নয় বলতে হয় পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।
একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের সব থেকে বড় উৎসব হল ভোটদান, যার মাধ্যমে মানুষ তার নেতাকে নির্বাচন করে, কিন্তু আজ মানুষ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত ।. যা মানুষের সাধারণ অধিকার সেই অধিকারকেই পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী আনতে হচ্ছে ।
কারন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ভোট কর্মী প্রত্যেকে পুলিশের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে । যারা গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দায়িত্বে থাকেন তাদের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়া একটি গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে খুবই বিপদজনক। তবে এর জন্য পুলিশের দায় কোনঅংশে কম নয় সে বিষয় তারা কখনো ভেবে দেখেছেন বলে মনে হয় না ।
রাজনৈতিক দলগুলি গণতন্ত্রের উপর দাড়িয়ে আছে না সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মতো আগ্রাসী মনোভাবের দ্বারা চালিত চিন্তাভাবনার উপর, সে প্রশ্ন আজ সবার মনে, কারন ভোটকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলি যে রকম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ শুরু করেছে, তাতে, এই প্রশ্ন তুলতেই পারে সচেতন জনতা ।
রাজনৈতিক দলগুলি ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে আটকাতে ভয় দেখানো , বুথে পৌঁছানোর আগেই ভোটারদের মারধর করা , এমনকি ভোটারদের ঘরে আটকে রাখতেও পিছুপা হচ্ছে না , আর সেই ছবি তুলে ধরতে গেলে সাংবাদিকদের ও রোসের মুখে পড়তে হচ্ছে ।
রাজনৈতিক দলগুলির এই হিংসাত্মক কার্যকলাপ রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে সাধারণ মানুষ কখনো রাস্তা অবরোধ করেছেন আবার কখনো ভোট কেন্দ্রে তালা লাগাতে হয়েছে, কারন, তারা পুলিশের উপর আস্থা হারিয়েছেন। এমন চিত্রই কি হওয়ার কথা একটি গণতান্ত্রিক দেশে?
এই রাজ্যের এমন ইতিহাস নির্বাচন কমিশন আগে থেকেই জানা ছিল তাই তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে সুষ্ঠ , শান্তিপূর্ণ ভোট করানো আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তারপরেও শান্তিপূর্ণ ভোট করানো সম্ভব হয়নি। . জানি না এরাজ্যে কখনো অন্যান্য রাজ্যের মত শান্তিপূর্ণ ভোট দেখতে পাবে কিনা সাধারণ মানুষ ।
তবে একথাও বলতে হয় সুষ্ঠ ভোট করানোর দায়িত্ব যে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের তাতো নয় সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলির ও। যতদিন না রাজনৈতিক দলগুলি তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করে মানুষকে তাদের সাধারণ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে, ততদিন বোধ হয় পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভোট সম্ভব নয় ।
জানি না পরবর্তী তিন দফা ভোটে মানুষ গণতন্ত্রের উৎসব আনন্দের সাথে পালন করতে পারবে নাকি আবারও গণতন্ত্রের হত্যায় মর্মাহত হতে হবে ।
Joseph de Maistre সেই বিখ্যাত উক্তি “Every nation gets the government it deserves.” এবং ‘In a democracy, people get the government they deserve and they deserve what they get.’ ।
২০০ বছর আগে করা এই উক্তি যেন ভেঙে পরা বাংলার তাত্বিক দৈনতাকেই আরো প্রবল ভাবে প্রশ্ন করে “পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?” । বাংলার সোনার ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছা করে “কথা কও,কথা কও অনাদি অতীত “।