খুশির উৎসব ঈদ সকলকে জানাই ঈদ মোবারক
ফারুক আহমেদ
রোযা ভাঙার দিবস হচ্ছে ঈদুল ফিতর। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো ঈদুল ফিতর আর দ্বিতীয়টি হলো ঈদুল আযহা। মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ঈদের দিন সকালে প্রথমে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদের নামাজ পড়তে যান। ঈদের নামাজ সবার জন্য আবশ্যিক। নামাজের পর সবাই একসাথে হয়ে কোলাকুলি করেন।
ঈদের নামাজের আগে গরিবদের ফেতরা মিটিয়ে দিতে হয়। সকলের ঈদ খুশির বার্তা বহন করে তাই গরিবদুঃখীদেরকে যাকাত দিতে হয় সমর্থন আছে যাদের।
ঈদের দিনে সেমাই, লাক্সা, বিভিন্ন মিঠাই, খুরমা সবচেয়ে প্রচলিত খাবার। এবং বিশেষ আরো অনেক ধরনের খাবার ধনি গরিব সকলের ঘরে তৈরী করেন। এ উৎসবের আরো একটি রীতি হল আশেপাশের সব বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। এবং প্রত্যেক বাড়িতেই হালকা কিছু খাওয়া। এ রীতি পৃথিবীর বহু মুসলমান মেনে থাকেন।
মুসলিম-প্রধান দেশে ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব। ঈদ উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরে সন্ধ্যাবেলা কেনাকাটা ও খাওয়া দাওয়া চলে। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোশাক কেনা হয়। পত্র-পত্রিকাগুলো ঈদ উপলক্ষে ঈদ সংখ্যা নামে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো ঈদের দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকদিন বিশেষ অণুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করে সকলকে মুগ্ধ করে। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সাধ্যমত বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়।
শহরগুলো হতে ঈদের ছুটিতে প্রচুর লোক নিজেদের আদি নিবাসে বেড়াতে যান। এ কারণে ঈদের সময়ে রেল, সড়ক, ও নৌপথে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়।
দেশ ও বিশ্ব জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি। সংবাদমাধ্যমেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের খবর প্রচারের সময় আমরা সমদৃষ্টির পরিচয় দেখতে পাই না। এ এক ট্রাজেডি।
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। এই সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদ। কিন্তু শারদ উৎসবের সংবাদ যেমন প্রচার পায়, তার ছিটেফোঁটা সংবাদ ঈদ উৎসবকে ঘিরে হয় না কেন? শারদ উৎসবকে ঘিরে যত শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয় তাতে চোখ রাখলে দেখতে পাই, ঈদ সংখ্যাগুলোতে সংখ্যাগুরুদের অবাধ প্রবেশ ঘটলেও, শারদ সংখ্যাগুলোতে মুসলমান লেখক কবি সাহিত্যিকদের নাম প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। ব্যতিক্রমী দু’এক জনের নাম মাত্র দেখতে পাই।
ঈদের দিন পশ্চিমবাংলায় শুধু মাত্র একদিন সরকারি ছুটি থাকে কেন? এই বঞ্চনা ও বৈষম্য দূর করতে সরকার বাহাদুর সরকারি ছুটি অন্তত দুই অথবা তিন দিনের জন্য বরাদ্দ করুক। মুসলমান সম্প্রদায়ের এটা বিনীত অনুরোধসহ আবেদন। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, বিশ্বিবদ্যালয় সহ অন্য সব প্রতিষ্ঠান নির্দেশ জারি করে পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করুক। প্রতি বছর একটু সযত্নে সজাগ হয়ে ঈদের আগের দিন ও ঈদের পরের দিন কোনও পরীক্ষা রাখা না হলেই ভালো হয়। পরীক্ষার রুটিন করার সময় শিক্ষা গুরুরা একটু যেন সজাগ হয়ে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন। কারণ রোজার ঈদ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। যেমন ধরুন এবছরের রোজার ঈদ হলো ৫ জুন। ৪ জুন চাঁদ দেখা যায় তাই ৫ জুন ঈদের নামাজ হলো।
আর যদি ৫ জুন ঈদের চাঁদ দেখা যেতো তাহলে ঈদের নামাজ হতো ৬ জুন। রাজ্যের ও দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা নেওয়া হবে ৪, ৬ জুন বা ৭ জুন। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই নিধারিত তারিখ পরিবর্তন করেছে।
৩০ শতাংশ সংখ্যালঘুরদের মধ্যে মুসলমানদের যোগ্য দাবী পূরণ করতে সরকার বাহাদুর এগিয়ে এলে খুশির উৎসব সবার মনে সহজেই আনবে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা।
দূরদূরান্ত থেকে বহু মুসলিম ঈদের নামাজ পড়ার জন্য এবং ঈদের উৎসব পালন করতে ঘরে ফেরেন এবং সকলের সঙ্গে মিলেমিশে আনন্দে মেতে উঠেন। তাই শুভবুদ্ধির মানুষেরা একটু সহনশীল মনে বিষয় টা গুরুত্ব দিয়ে বোঝার শক্তি অর্জনের চেষ্টা করবেন এই আশায় বুক বাঁধেন ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায়।
সম্প্রীতির মেলবন্ধন জরুরি। আমরা পরিবর্তন চাই মননে ও কার্যক্ষেত্রে। আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই। বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে আমরা সংখ্যাগুরু সমাজের মানুষদের উদার আহ্বান জানিয়ে গর্ববোধ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমরা আজও ব্রাত্যই থেকে গেলাম কেন?
আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সেই আমাদের দুঃখের সমভাগী।
মুর্শিদাবাদ জেলার আমতলা গ্রামের মাস্টার পাড়ার ঈদগাহে নামাজ শুরু হয় ৭.১৫-তে নামাজ পড়ার সময়কার ছবি তুলেছেন রিয়াম্ভিতা মন্ডল।
লেখক: ফারুক আহমেদ
গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।
কথা ৭০০৩৮২১২৯৮