১ কোটি এলইডি স্ট্রিট লাইট ব্যবহার করে দেশের স্বার্থে বিদ্যুৎ সাশ্রয়
By PIB Kolkata
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ তথা নবীন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পোদ্যোগ প্রতিমন্ত্রী আর কে সিং
এক মজবুত, স্বনির্ভর ও স্থিতিশীল অর্থনীতির ভিত্তিই হল বিদ্যুৎ সাশ্রয়। বিদ্যুৎ সাশ্রয় সংক্রান্ত পদ্ধতির প্রসারে দেশব্যাপী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশের সুস্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে ভারত সরকার তার দৃঢ় অঙ্গীকারগুলি তুলে ধরেছে। আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী কর্মসূচি রূপায়ণ করছি। আমাদের অন্যতম উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপনের অন্যতম একটি উপায় হিসেবে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা। আমাদের এই উদ্দেশ্য, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী আমরা যে অঙ্গীকার করেছি তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
জাতীয় স্তরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তাতে ভারতের কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার লক্ষ্যে দৃঢ় সঙ্কল্পের কথাই প্রতিফলিত হয়। আমরা একইসঙ্গে অন্যান্য উন্নয়নমূলক লক্ষ্য পূরণের পথেও এগিয়ে চলেছি। আমাদের লক্ষ্য হল ২০৩০-এর মধ্যে জিডিপি-র হিসেবে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ৩৩ থেকে ৩৫ শতাংশ কমানো। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দরিদ্র ও পীড়িতদের রক্ষা করতে সারা বিশ্ব জুড়ে সহজ-সরল জীবনযাপনের পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ভারত যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাতে সহজ-সরল উপায়ে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহজ- সরলভাবে জীবনযাপন এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা জাতীয় স্তরে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছি।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে যে জাতীয় মিশন গ্রহণ করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য হল ১৯,৫৯৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো। একইভাবে, বার্ষিক ২ কোটি ৩০ লক্ষ টন জ্বালানি সাশ্রয় এবং প্রতি বছর ৯ কোটি ৮৫ লক্ষ ৫০ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন রোধ করা। এই উদ্দেশ্যগুলি অর্জনে আমরা এক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছি। উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে – গ্রাহক উপযোগী বিদ্যুৎ সাশ্রয় সংক্রান্ত মানদণ্ড তৈরি করা; ভারতের প্রথম সুপার এনার্জি সার্ভিস কোম্পানি – এনার্জি এফিশিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড-এর কর্মকাণ্ড আরও বৃদ্ধি করা; রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলির দক্ষতা বৃদ্ধি; দ্বিপাক্ষিক তহবিল গঠনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং ই-যানবাহন তথা স্মার্ট মিটারের মতো উদ্ভাবনমূলক সমাধানসূত্র
খুঁজে বের করতে আরও উৎসাহিত করা।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তাতে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সাশ্রয় সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। এর ফলে, উৎপাদন খরচ কমানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। বিপুল চাহিদার সময়ে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে আমরা রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থাগুলির দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছি। বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক এমন শিল্প সংস্থাগুলিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে উৎসাহ দিতে আমরা ‘পারফর্ম, অ্যাচিভ অ্যান্ড ট্রেড’ নামে এক কর্মসূচির সূচনা করেছি। এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হল সাশ্রয় হওয়া বিদ্যুৎ অন্য কোন সংস্থাকে সরবরাহ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া। বিদ্যুৎচালিত যানবাহন ও চার্জার ব্যবহারের প্রবণতা প্রায় সমস্ত রাজ্যেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইভাবে, বাড়িতে ও পরিবারে স্মার্ট মিটার বসানোর চাহিদাও বাড়ছে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে গৃহীত এই উদ্যোগগুলির পাশাপাশি আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হল স্ট্রিট লাইটিং বা রাস্তা আলোকিতকরণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে এক নজিরবিহীন মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে গেলে অত্যাধুনিক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ১ কোটি এলইডি আলো রাস্তায় লাগানো হয়েছে। এর ফলে, বার্ষিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৭১ বিলিয়ন কিলোওয়াট। এমনকি, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমেছে ৪৬ লক্ষ ৩০ হাজার টন। বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এই উদ্যোগের ফলে ব্যাপক বিদ্যুতের চাহিদার সময় ১,১১৯.৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি, ২ লক্ষ ৭০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের আলোকিতকরণ হয়েছে। সমগ্র এই কর্মযজ্ঞে ১৩ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
হয়েছে। নাগরিকদের আরও বেশি সন্তুষ্টির জন্য একাধিক সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। এই সমীক্ষাগুলি থেকে জানা গেছে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই এলইডি বাতি রাস্তায় লাগানোয় অনেক বেশি স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করেছেন। সমীক্ষায় আরও প্রকাশ, এ ধরনের আলো ব্যবহারের ফলে সড়ক নিরাপত্তার পাশাপাশি ব্যবসায়িক কাজকর্মও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এলইডি বাতি দিয়ে রাস্তা আলোকিতকরণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচিটি বিশ্বে এ ধরনের সর্ববৃহৎ উদ্যোগ। এই কর্মসূচির সাফল্যের পিছনে রয়েছে ‘পে-অ্যাজ-ইউ-সেভ’ মডেল বা আপনার বিদ্যুৎ খরচ অনুযায়ী মাশুল মেটানোর সুবিধা। এই মডেল শহরাঞ্চলের স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলিকে রাস্তা আলোকিতকরণ সহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে উৎসাহিত করেছে। এমনকি, এ ধরনের সংস্থাগুলির ওপর থেকে আর্থিক বোঝাও খানিকটা লাঘব হয়েছে। শহরাঞ্চলের ১,৫০০-রও বেশি স্বশাসিত সংস্থা এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে খরচ যেমন কমবে, তেমনই অতিরিক্ত রাজস্ব বাজেট তৈরি করার প্রয়োজন পড়বে না।
রাস্তায় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এলইডি বাতি ব্যবহারের ফলে সড়ক সুরক্ষা বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকদের মনে নিরাপদে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আস্থা বেড়েছে। রাস্তা আলোকিতকরণ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মসূচির আওতায় এলইডি বাতি লাগানো ও তার নিয়মিত দেখভাল তথা রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে। ভারত সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গুরুত্বের বিষয়টিকে স্বীকার করে নিয়েছে। এলইডি বাতি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে যে মাইলফলক অর্জিত হয়েছে তা কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে জাতীয় উদ্দেশ্যগুলি পূরণে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নেবে।
যে কোন পরিবর্তন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন আন্তরিক প্রয়াসের। আজ আমি ভারতের সমগ্র বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে প্রতিটি নাগরিককে নিজেদের দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানাই। আসুন আমরা শপথ নিই, কার্বন নিঃসরণ কমানোর যাবতীয় প্রয়াস অব্যাহত রাখতে এবং উন্নয়নের পথে যে সমস্ত বাধা রয়েছে সেগুলিকে দূর করতে।