পরকীয়া আর অসামাজিক নয়, ঘরে ঘরে এক নতুন যৌবনের কবিতা ?
শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে অভয়া শ্রীকান্ত নতুন করে লিখতেন কিনা ভাবার বিষয় বা গৃহদাহ কি পেত সেই অজানা কুহকের ডাকের দুর্নিবার আকর্ষণ । কারণ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের টানা পোড়েন কমছে। বাঙালী জাতি ক্রমশ সাবালক হয়ে উঠছে যৌনতা আর ততটা কলঙ্কজনক নয় বোধ হয় । আইন আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে এবার ধীরে ধীরে সমাজও বিষয়টি কে গুরুত্ব দেয়া বন্ধ করছে, বরং পরকীয়া এখন নতুন স্টেটাস সিম্বল ।
আধুনিক জীবনের ভোগ্যপণ্যের নিদর্শন দামি মোবাইল ,গাড়ি ,এলইডি টিভি সবই চাই, অর্জনের যোগ্যতা নাই থাক, ভোগের রাস্তায় দুপয়সা এলে ক্ষতি কি ? তাই বেশ্যা বৃত্তি এখন ম্যাসাজ সেন্টাররের আড়ালে বা এসকর্ট সার্ভিসের নামে নতুন এক স্টেটাস সিম্বল ।
বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠান আর জরুরী নয় একসাথে যৌন জীবন উপভোগ করার জন্য । খুললাম খুল্লা প্যায়ার করেঙ্গে হ্যাম দোনো ,হ্যাম কো দুনিয়া সে কেয়া । এই মনোভাব এখন স্টাইল স্টেটমেন্ট বেহায়াপনার উদাহরণ নয় ।
উপরের বিষয় নিয়ে এবার পুজোর আড্ডায় আলোচনা হচ্ছিলো কিছু পরিচিত ও সমাজ সচেতন মানুষের সাথে , বেশ কিছু তথ্য ও তত্ত্ব জানা গেলো এই সামাজিক নতুন আঙ্গিকের ।
আলোচনায় উঠে এলো কিছু পরিবর্তিত আর্থসামাজিক ব্যাবস্থার কথা । চল্লিশ বছর আগের এক বিয়ের সম্বন্ধের প্রসঙ্গ তুলে এক বৌদি বললেন তাঁর দিদির বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিলো মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ছেলের জন্য সেই সময় ৬০-৭০ হাজার মাইনে ,ছয়মাস কাজ ছয়মাস ছুটি, বিদেশে ভ্রমণ এক স্বপ্নের জীবনের হাত ছানি ,কিন্তু তাঁর বাবা রাজি হননি । কারণে বলেছিলেন মেয়ের নষ্ট হওয়ার পথ তিনি হতে দেবেন না । মেয়ে নষ্ট হবে কেন না স্বামীর দীর্ঘ অনুপস্থিতি তাকে ব্যভিচারিণী করে তুলবে।
সুরেশ দা আর এক গল্প বললেন তাঁদের পাড়ার এক পরমা সুন্দরী বৌদি দাদার নানা জায়গা ঘুরে মার্কেটিঙের কাজ মাসের মধ্যে ১০-১৫ দিন বাড়ির বাইরে থাকতে হয় আর সেই সুযোগে স্বামীর বন্ধুদের এক অংশ তার দেখা শুনোর দায়িত্ব নিত । দাদার কোনো অভাবই বৌদি অনুভব করতে পারতো না । সেই বন্ধু কে জিজ্ঞাসা করলে জবাব দিত অসহায় মানুষের সেবায় তিনি লিপ্ত । মুচকি হেসে বলতো একা মানুষ কে বাজার হাট করে দেবে , কেই বা অসুখ হলে দেখবে ? ছিদ্রানেষী প্রশ্নও করতো তাই বলে রাতেও ?এর পর যদি কেলেঙ্কারী হয়, ঘী আর আগুন পাশাপাশি থাকলে কি মাথার ঠিক থাকে কারো ? জবাব শুনে সকলে থ “খাবো আমি বিল দেবে দাদা”। তা সত্যি বিল দাদাই দিলো গর্ভপাত সহ সামাজিক লজ্জা ঢাকতে ডিভোর্স যার আর্থিক এককালীন জরিমানা দিয়ে মুক্তি ।
সময়টা বিশ বছর আগে কল সেন্টার এ চাকরি নিয়ে কয়েকটা মেয়ে এলো বাড়ি ভাড়া খুঁজতে কোনো মালিক একা মেয়ে কে ভাড়া দেবে না পাচ্ছে কোনো কেলেঙ্কারি হয় বাড়িতে উঠতি বয়সের ছেলে আছে না । “সাড়ে চুয়াত্তর” হতে কতক্ষন ?
এবার এক ধাক্কায় ২০১৯ এ গল্প চলে এলো বিষয় অসামাজিক আর সামাজিক বেশ্যা কাদের বলে ? সোনাগাছি কি এখন ঘরে ঘরে ? প্রশ্ন করলেন এক সদ্য রিটায়ারের দোড়গোড়ায় দাঁড়ানো দাদা । হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন ? লজ্জায় প্রথমে বলছিলেন না, পরে নাম প্রকাশ্যে আনবো না বলায় বললেন , স্মার্ট ফোনে কিছু পর্ণ সাইট দেখছিলেন একান্তে “নুড হাউস ওয়াইফ অফ কলকাতা ” একটা লিংকে দেখলেন তাঁর অফিস কলিগের স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সাথে আপত্তি জনক অবস্থায় । যৌবন এখনো যায়নি আর উদ্দাম যৌন ক্রিয়ার ছবি পোস্ট করেছে কোনো গোপন ক্যামেরায় নয়,বরং রীতিমতো পর্ণ স্টারের স্টাইলে । অত্যন্ত লজ্জার সাথে সহকর্মীকে জানালেন ও ছবি দেখালেন ভেবেছিলেন রাগের বিস্ফোরণ হবে ,কিন্তু প্রতিক্রিয়া হলো উল্টো । সহকর্মী বললেন ওনাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং পরিষ্কার কেউ কারুর পার্সোনাল স্পেসে দখল দেননা । ব্যক্তি স্বাধীনতার চরম উদাহরণ ।
এই বলে প্রশ্ন করলেন আচ্ছা ভাই আমাদের যৌবনে একটা অপরাধ বোধ কাজ করত । ভালো ছেলে মেয়ে মানে কমিটেড ট্যু এ রিলেসন । আর এখন কি ভালো রোজগার হলেই সাতখুন মাফ । তবে কেন সোনা গাছির হতভাগাদের বেশ্যা বলে গালি দেবে ? ওদের কেন অসামাজিক বলবে ? যারা ঘোমটার নিচে খ্যামটা নাচে তারা তবে কি ?
একটা গল্প বললো সমীর, পেশায় কম্পাউন্ডার এক নামকরা স্ত্রীরোগ বিশেষগ্যের । দাদা আগে গর্ভপাত করতে আস্ত অবিবাহিত বেশি এখন বৌদিরা বেশী আসেন দাদাকে ছাড়াই । আর গর্ভপাতের ইনস্ট্যান্ট বড়ি বেশি খায় । এক মহিলার কথা বললো তাকে ওরা নাম দিয়েছে সেক্যুলার বৌদি মানে সেক্যুলার বেশ্যা কেন এই নাম প্রশ্নও করায় জানালো এক অদ্ভুত কাহিনী ।
উচ্চ শিক্ষিতা আধুনিক রুচিশীলা এক জন তার যৌন জীবনের মূল আকর্ষণ নানা জাতের নানা ধর্মের পুরুষ কে তার শয্যা সঙ্গী করা । এবং গর্বের সাথে বলেন কার সাথে সময় কাটিয়ে বেশি আনন্দ পান । কোনো সংকীর্ণতা নেই যে, কেউ চাইলেই শুতে পারে তার সাথে, শুধু আগের পুরুষদের থেকে আলাদা হতে হবে । বাড়িয়ালা গর্বিত, ভাড়া চলতি ভাড়ার দ্বিগুন দেন যে ! আর মাঝে মাঝে ফাউ মেলে বৌ বাড়ি না থাকলে । কেউ আঙ্গুল তুলে কিছু বললে উল্টে জ্ঞান দিয়ে দেন সেই নাগর বৌদির হয়ে । পাড়ার বহু ছেলের প্রথম যৌন জ্ঞান এর হাতেখড়ি এই বৌদির হাতে । বৌদি বলছি বটে কিন্তু দাদা প্রতি ছয়মাসে বদলে যায় । এতো সত্ত্বেও মৌমাছির অভাব হয়না বা পুলিশের ঝামেলা হয়না, কারণ পুলিশও বৌদির বিশেষ বন্ধু যে । পেশায় ইনটেরিয়র ডিসাইনার বলে পরিচয় দেন আর বহু ঘরের ইন্টেরিয়র ভাঙ্গায় সিদ্ধ হস্ত । শুধু দেশি নয় বিদেশী বন্ধুও প্রচুর যারা মাঝে মাঝেই দেশের ক্লান্তি কাটাতে চলে আসেন । এই বৌদি মাঝে নাঝেই আসেন সমীরের চেম্বারে গর্ভপাত করতে । একদিন প্রশ্ন করেছিলাম গর্ভ নিরোধক ব্যবহার করেন না কেন? উত্তরে বলেছিলো কোন জাতের মরদ কত কম সময় প্রেগ্নেন্ট করে দিতে পারে সেটা জানাই তার নেশা !!!
নবীন (নাম পরিবর্তিত ) বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি করে মাথা নিচু করে বললো দুপুরে ডেলিভারি করতে ভয় করে ,স্বামী ঘরে না থাকলেই অনেকে কুপ্রস্তাব দেয় । আগে ছেলেরা নিশ্চিন্তে ঘুরত এখন কিন্তু ছেলে মেয়ে সকলেই যৌন হেনস্তার শিকার হয় । হয়তো সংখ্যায় মেয়েদের ওপর অত্যাচার বেশি কিন্তু দ্রুত সেই ফারাক মুছে যাচ্ছে । আতঙ্কের বিষয় হলো শিশু যৌন অত্যাচারও সমান হারে বাড়ছে ,শিক্ষকদের হাতেও হেনস্থা হতে হচ্ছে । সমাজ উন্নতির দিকে দ্রুত এগোচ্ছে । টিন এইজ প্রেগনেন্সি আর আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের সমস্যা নয় , কলকাতায় এখন আন্ডার এইজ কনডম গ্রাহক বাড়ছে ।
এক প্রাইভেট শিক্ষক জানালেন এখন অনেক বাড়িতেই পড়াতে যেতে ভয় করে । কেন ? উত্তর দিলেন , কেমন পড়ালাম তার ওপর আর টিউশনি টেকেনা বরং বিছানায় আনন্দ কেমন দিলাম সেটাই মাইনে আর টিউশনির নিশ্চয়তা দেবে, আমি পারিনা অসামাজিক হতে তাই বিতাড়িত হয়ে যাই । ম্যানি ব্যাগে টাকা না থাকে চলবে কনডম কিন্তু মোস্ট ইম্পরট্যান্ট ।
অতিরিক্ত স্ট্রেসফুল জীবন অধিক সময় বাড়ির বাইরে আর আইনের বিপদ দূর হয়ে যাওয়া ইত্যাদি পরকীয়াকে ইনস্ট্যান্ট নুড্লসের মতো সহজ করে দিয়েছে । বিশ্বাস ভরসা আর ভালোবাসা দিয়ে গড়া সংসার ক্রমশ ডাইনোসরাসের মতো প্রাচীন উপকথা বলে মনে হচ্ছে । ইঁদুর দৌড়ে দৌড়োতে গিয়ে মানুষ ক্রমশ চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে ।
সারাদিন অফিসের চাপের পর বাড়ি ফিরে যদি অশান্তির কালো মেঘ ঘনায় তবে ঘরের বাইরে সে শান্তি খুঁজে নেবে । উল্টোদিকে সারাদিন একজনের অপেক্ষায় থাকার পর যদি সে মানুষ ঘরের মানুষ না হয়ে অন্য দুনিয়ার মানুষ হয়ে ফেরে, তবে জ্বালা মেটাতে ঘরের বাইরে পা ফেললে কি তাকে দোষ দেয়া যায় ?
সম্পর্কের শিথিলতাই পরকীয়ার জন্ম দেয় আর সম্পর্ক হীন সম্পর্ক দিনের শেষে শুন্য হাতেই ফেরাবে । ক্ষণিকের মোহ আর নিবিড় ভালোবাসার আলিঙ্গন কোনটা বেছে নেবেন সিদ্ধান্ত আপনার আর তার দায় ও আপনার ।
যথেচ্ছচারই আপনার জীবনের মন্ত্র হলে কোনো শিশুকে পৃথিবীতে আনবেন না , আপনার অশালীন জীবন তার জীবন কে কলুষিত করবে কেন ? অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন এইডস ও অন্য যৌন রোগের কারণ , কেন করদাতার টাকায় আপনার চিকিৎসা হবে যখন আপনার অসামাজিক জীবন এই রোগের কারণ ? সামাজিক অবক্ষয় না সমাজবদ্ধ জীবন কোনটা বেশী প্রয়োজন তা সমাজই ঠিক করুন ।