ড:#পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা,২৭.০৬.২০২০
‘আমি যা বলছি তাই ফাইনাল’!….ছোট কথা! কিন্তু হৃদয় থেকে বেরিয়ে এই জংলী গাছের অহং এর শিকড় আমিত্বের গভীর পর্যন্ত গেঁথে গেছে।এর আঘাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় নেই।এ হৃদয় গড়পড়তা আটপৌরে বাঙালির হৃদয়।
এরা সবাই নেতা হতে ভালোবাসে যাতে এদের কথাই শেষ কথা হয়।নেতৃত্বের বিস্তার , রাজনৈতিক স্তরের সরকার গঠন থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া গরিব পরিবারের ছোট ছোট ইউনিট পর্যন্ত বিস্তৃত।অশিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত,শিক্ষিত,পন্ডিত,অতি পন্ডিত কারো এই মানসিকতা থেকে মুক্তি নেই যদি তারা গড়পড়তা ক্লাবে নাম লিখিয়ে থাকে।
বড় মন্ত্রীর ছোট মন্ত্রীকে,বড় বাবুর ছোট বাবুকে,বড় দারোগার ছোট দারোগাকে,বড় জা’য়ের ছোট জা’কে এমন কি বড় পুঁচকের ছোট পুঁচকেকে ধমকানো হলো এই ঘরানার মূল কর্ম সংস্কৃতি।এই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে সেই এস ওয়াজেদ আলি’র ভারতবর্ষের সময় থেকে না হলেও খুব কম দিনও নয়।এই বোকা বোকা কর্তৃত্ব দখলের ফিউডাল লড়াইয়ে কেউ কোনোদিন জেতে না,জেতেও নি।ফাঁকতাল থেকে ছোট বড় সামাজিক গোষ্ঠীর অহেতুক ইগো’র যুদ্ধে সব ক্ষেত্রে কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়,শান্তি বিঘ্নিত হয়,নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়।তবুও যৌবনের সাম্যবাদ ও বিপ্লবের ফ্যান্টাসি ছুঁয়ে মধ্যবয়স বা তার একটু আগের থেকেই এরা সব সগৌরবে ঝাঁকের কই।
উদারমনস্কতা,স্বভাবসুলভ বিনয়, মেনে নেওয়া,ভালোর কাছে ভালোটা নেওয়া,নিজের ভুল শুধরে নেওয়া এসব ‘চারিত্রিক দুর্বলতা’ গড়পড়তা বাঙালির মধ্যে নেই।কারণ, অস্তিত্বের সংকটের ভয় ।উদাহরণ একদম আপনার হাতের কাছে।কোনোদিন একজনকে ছেড়ে দ্বিতীয় নাপিতের কাছে চুল কাটতে যান। চুল কাটার আগে তার আগের নাপিতের চুল কাটার নিন্দে করতে কোনো ভুল হবে না।
না! না! শুধু নাপিত কেন? সব পেশা গোষ্ঠীই এই গুণে গুণান্বিত।কিন্তু যেহেতু নাপিত একটি অতি বেচারা সম্প্রদায়,সেই কারণে আপনজন মনে করে তাদের কথাই প্রথমে মুখে আনার সাহস করলাম।
এসবই চলে।চলে আসছে।এবং সবই, ‘আমি যা বলছি তাই ঠিক’ এর বিভিন্ন মোড়কে পরিবেশনা মাত্র।
‘দশে মিলি করি কাজ। হারি জিতি নাহি লাজ’।…এ বিচক্ষণ কথা আমাদেরই কোনো একজন স্বনামধন্য বাঙালির। তা হোক না! তাতে হয়েছেটা কি?কোন বাগজোলা খাল দিয়ে কত জল বয়ে গেছে তার জন্য?
লিখতে হয় লেখা।বলতে হয় বলা।কেউ বলেনি সে সব মান্য করতে!ব্যবহারিক জীবনে সফল প্রয়োগ করতে!
আমরা যা করেছি ঠিক করেছি।আমরা যা বলছি তাই!…এর থেকে মুক্তির আশা কম।আর ইচ্ছে? সে কি আর আছে? ‘তাকে তো শিয়ালে খাইয়াছে’!…