করোনাভাইরাস সংক্রমন – আরোকিছু কথা – কিছু অপ্রিয় কিন্তু বাস্তব সত্যি
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়, ১৮ মে ২০২১,কলকাতা
●●করোনা ভাইরাস আমাদের দেশে কতদিন থাকবে?
●যতদিন আমরা তাকে আদর করে রাখব। যতদিন না আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার শপথ নেব।মূল অস্ত্র স্বাস্থ্যবিধি।ভ্যাক্সিন নয়।
●●স্বাস্থ্যবিধি কেন মানব যদি ভ্যাক্সিন নি?
●স্বাস্থ্যবিধি রোগ ঠেকিয়ে রাখে।ভ্যাক্সিন রোগ শরীরে জীবাণু ঢোকার পর লড়াই করে।প্রথমটা বেশি লাভজনক ও স্বস্তিদায়ক তাই।
●● দুটো ভ্যাক্সিনের ব্যবধান নিয়ে এত বিভ্রান্তি কেন?
●বিভ্রান্তি নয়।আপডেট।বিজ্ঞান ও তার তত্ত্ব সর্বদা পরিবর্তনশীল।সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে covaxin এর দুটো ডোজের মধ্যে ব্যবধান চার থেকে ছ সপ্তাহ এবং কভিশিল্ডের ক্ষেত্রে তা আট থেকে বারো সপ্তাহ হলে সবথেকে ভালো। এর কারণ হলো এ দুটো ভ্যাক্সিনের তৈরির পদ্ধতি ও কর্মপদ্ধতি আলাদা।এ নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা করব।সরকার বিশেষজ্ঞদের কথাটা বলেন।মন গড়া কিছু বলেন না।
●●ওয়েভ ব্যাপারটা কি?
●সহজ কথায়, আপাত রোগমুক্তির সময় মানব শরীরে ঘুমন্ত জীবাণু আরো শক্তিশালী হয়ে, প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে ফের রোগ হিসেবে ফিরে আসা। এর একমাত্র অবরোধ ও সমাধান স্বাস্থ্যবিধি পালন।সাথে ভ্যাক্সিন হলে ভালো।
●●একবার ভুগে ওঠার পরে আবার করোনা হতে পারে?
●নির্ঘাত পারে।রোগের পরে শরীরের করোনা এন্টিবডি যা ভবিষ্যৎ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তা দীর্ঘস্থায়ী নয়।চিরস্থায়ী তো নয়ই।এমনকি তিন মাস পরেও আবার আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণ আছে।
●●এমন তো শোনা যায় যে বহু মানুষের একসঙ্গে আক্রান্ত হবার কারণে গোষ্ঠী প্রতিরোধ বা হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়?
●তথ্যগতভাবে সেটা সম্ভব তখনই যখন দেশের অন্তত সত্তর ভাগ মানুষ সংক্রমিত হবেন।তাতে মৃত্যু হারও অনেক বেশি হবে।তা গ্রহণযোগ্য নয়।বরং গন ভ্যাক্সিনেশন এর উত্তর হতে পারে।আমাদের মতো জনবহুল দেশে যা সময়সাপেক্ষ। পরিবর্তে স্বাস্থ্যবিধি পালন মূল ভরসা।
●●আক্রান্তদের সবার সুষ্ঠু চিকিৎসাও তো করা যাচ্ছে না!
●আমাদের দেশে প্ৰতি দশ হাজার মানুষের জন্য পাঁচটা হাসপাতাল শয্যা বরাদ্দ।প্ৰতি 1456 রোগীর জন্য একজন মাত্র ডাক্তার( WHO রেকমেন্ডেশন প্ৰতি হাজার জনে একজন ডাক্তার)।এই পরিসংখ্যানেরও শহর গ্রাম পার্থক্য আছে। ভারতে মোট GDP’র মাত্র এক শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হয়।(2019)।এই পরিস্থিতি থেকে রাতারাতি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতি ব্যাপারটা কষ্টকল্পিত।
●●উন্নত দেশগুলোতে এমন অব্যবস্থা নেই কেন?
●কারণ তাদের জনসংখ্যা কম।তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং নাগরিক সচেতনতা বেশি।তাঁরা স্বাস্থ্যবিধি মানেন।
সেখানে সবকিছু নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর নেই।তাঁদের লড়াইকে তারা যৌথ লড়াই মনে করেন।
●●সরকারের কাজ কি তবে?
● মূলত মানুষের পাশে থেকে তাঁদের সচেতন করা।সাধ্যমতো মৌলিক পরিষেবা গুলো দেওয়া। অর্থনৈতিক অপ্রতুলতার কারণে আমাদের দেশের গনস্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের উপর নির্ভরশীল।অর্থাৎ রোগ হতে না দেওয়া বা প্রাইমারি প্রিভেনশন।রাতারাতি এর পরিবর্তন হবে না।
●●মানুষের কাজ কি?
●সচেতন,দায়িত্বশীল ও স্বশিক্ষিত হওয়া।একটি দলের অধিনায়ক ততখানি ভালো যতখানি ভালো সে দলের খেলোয়াড়েরা।সাবালক ও পরিণত আপনাকেই হতে হবে।সরকার তা করতে পারবেন না।
●●সরকার কতটা স্বচ্ছ?
●আমরা কতটা স্বচ্ছ? সরকার তো আমরা চালাই,নয় কি? তাঁরা তো মঙ্গলগ্রহ থেকে আসেননি!
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। তথ্য ও তত্ত্বগুলো বিশেষজ্ঞদের।লেখক কোনো রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী নন।)