“অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো.”…
ডাঃ রঘুপতি ষড়ংগী
একটা কথা সেই কোন ছোট্ট-বলা থেকে শুনে আসছি, ” বেদ অপৌরষেয় “…. বেদ এর লেখক বলে কারোর নামের উল্লেখ কোত্থাও নেই….আছেন কেবল মন্ত্রদ্রষ্টা-ঋষি।
কিন্তু, বেদ তো আসলে আর পাঁচটা বই এর মতোই একটি বই। তবে, তার লেখক থাকতে বাধা কোথায়? দ্রষ্টাই বা কে, কী সেই বস্তু? ইট-কাঠ, ঘর-বাড়ি, পাহাড়-নদী কে দেখা গেলেও মন্ত্রকে কে কোথায় দেখতে পায়, বলুন তো? এদিকে, বেদ নিজেই জানাচ্ছেন, কোন্ মন্ত্রের দ্রষ্টা… নির্দিষ্ট ভাবে কোন ঋষি।
ভারতের “National-Cadence”…বা বলতে পারেন, “Rhythmic sequence of flow of Conscience” এর কোথাও ভুল…….এটাই বা কী করে সম্ভব? সেই কোন ৮—১২ হাজার বছর আগে, স্বাপদ-সঙ্কুল নির্জন গুহা-কন্দরে মিথ্যা ভাষণ দিতে, ঋষিরা বছরের পর বছর বসে থাকবেন, এটাই বা বিশ্বাস করি কীভাবে?
বৈদিক ঋষিরা জানতেন, সাধারণ মানুষ একদিন এ প্রশ্নের সমাধান চাইবে। ঠিক এই কারণেই হয়তো বেদাদি শাস্ত্রের সমস্ত বিদ্যা কে চার ভাগে বিভক্ত করে রাখা আছে….. যা’র প্রথমটির নাম, অণ্বীক্ষিকী।
‘অণ্বীক্ষিকী’ বলতে বুঝায়, যুক্তি ও বিচারাত্মক বিদ্যা। শক্ত-পোক্ত যুক্তিতে আধারিত দর্শন ই কেবল কাল-জয়ী হয় কিনা। তাই এরই আশ্রয়ে আসুন, আমরা ছুটে চলি সেই সত্যের সন্ধানে।
বিদেশ থেকে ঘুরে পরিব্রাজক বিবেকানন্দ ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছেন। ঘুরতে ঘুরতে একদিন ভোর-বেলা, অবিভক্ত ভারতের সিন্ধু নদ এর তট ধরে একাই হনহন্ করে হাঁটছেন। জনমানব-শূন্য পথ। পাখি ডাকছে। পূব-দিকটা তখনও ঠিক পরিস্কার হয় নি । হঠাৎ ঘন একফালি কুয়াশার মধ্যে চোখের সামনেই স্পষ্ট হয়ে উঠলো এক ঋষি’র অবয়ব। ঋষির মুখে স্পষ্ট শুনতে পেলেনঃ
“আয়াতু বরদে দেবী
ত্র্যক্ষরে ব্রহ্মবাদিনী
গায়ত্রীশ্ছন্দসাম্ মাতঃ
ব্রহ্ম-যোনী নমোস্তুতে।।”
স্বামিজী বুঝেছিলেন, সিন্ধু-নদের এই বালুময় তট ই একদিন বেদ-মন্ত্র প্রকটিত হওয়ার পবিত্র সেই স্থান কী না ! (উল্লেখ্য, বর্ষায় বেগবান সিন্ধু নদের সাথে উন্মত্ত ষাঁড়ের তুলনা রয়েছে ঋক্ বেদ এ।) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ এ আসুন।
ঋষি নিজের মুখে বলছেনঃ
” বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্ আদিত্যবর্ণং তমসঃপরস্তাৎ।”……. সৃর্যের মতো দিব্য-জ্যোতির্ময় বিশালাকার সেই দিব্য-পুরুষকে আমি জানতে পেরেছি। তিনি দেখে জেনেছেন না শুনে জেনেছেন….. তা পরিস্কার না করলেও, জানতে যে পেরেছেন, এতে কারোর কোনো সন্দেহ থাকার কথাই নয়।
ঈশোপনিষদ এর ঋষি বলছেনঃ “তদেজতি তন্নৈজতি তদ্দূরে তদ্বন্তিকে।”….. অর্থাৎ তিনি নিশ্চল আবার তিনি কখনো সচল হয়ে ওঠেন। তিনি বহুদূরেও থাকতে পারেন, আবার আপনার-আমার খুব কাছেও থাকেন। এই ধরনের দায়িত্বশীল মন্তব্য নিজের চোখে না দেখে, কেউ কখনো করতে পারেন? না, কোনো বেদজ্ঞ-ঋষি’র মুখে আসা সম্ভব ? এনারা তো কখনোই ভাবের আবেগে তাড়িত জন নন। এঁরা তো ত্যাগী-তপস্বী -তেজস্বী পুরুষ।
ঋক্ বেদের ঋষি স্পষ্ট জানাচ্ছেনঃ
” অপশ্যম্ গোপাম্ অনিপদ্মমানম্. (দৃশ্ ধাতুর লঙ্ প্রত্যয়’র উত্তম পুরুষের এক বচনে হয় ‘অপশ্যম্’) অর্থাৎ আমি দেখেছি, (মন্ত্র-রূপী) বিশ্রাম-হীন সেই ভগবান কে……… আমি নিজের চোখে দেখেছি।”
যজুর্বেদ এর অহিন্ ঋষির মুখেও সেই এই সরল স্বীকারোক্তিঃ ” অহিনস্ তৎ অপশ্যন্ নিহিতম্ গুহাসদ্। যত্র ভবতি বিশ্বম্ এক নীড়ম্।”……. মন্ত্রদ্রষ্টা বলছেন, আমি দেখলাম এমন এক গুহা (হৃদয়-কন্দর) যেখানে সারা বিশ্ব মিলে-মিশে একাকার হয়ে আছে। বিজলী-বাতি হীন সেই সময়ে নিরন্তর তপস্যা আর হোমাগ্নি’র আলোকে দৃষ্টির সামনেই প্রকটিত হতেন এইসব বেদ-মন্ত্র। অমিত মেধা-বান সেই সব ঋষি ও মহর্ষিরা এই সব সম্পদকে ধরে রাখতেন তাঁদের সুমেধা দিয়ে। পরবর্তীতে, পরম্পরা অনুযায়ী, ঋষি থেকে ঋষি-বালকে, শুনে-শুনেই প্রবাহিত হোত এইসব অধ্যাত্মিক সম্পদ। যদিও, যু্ক্তির দ্বারা কথাগুলি কোনোভাবে বুঝানো সম্ভব হোলেও বাস্তবে তা ছিল অতি কঠিন। কেন……? কারণটি সহজেই অনুমেয়।
যাঁরা ” জ্ঞানযজ্ঞেণ চাপ্যন্যে যজন্তো মামুপাসতে।”
জ্ঞান ও যজ্ঞের দ্বারা যাঁরা উপাসনা করেন কেবল তাঁরাই বেদ-মন্ত্র কে দেখার অধিকারী। চশমা কেনার পয়সা থাকলেই তো আর হবে না, দেখার জন্য উপযুক্ত চোখ থাকাটাও যে সমান জরুরী। আর এই অধিকার ঋষির অনুকম্পাতেই অর্জন করতে হয়।
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.