আজ গণেশ পুজো…
ড: ধীরেশ কুমার চৌধুরী
আমাদের ছোট বেলায় খুব একটা সার্বজনীন গণেশ পুজো হতে দেখিনি। এখন প্রচুর পুজো আর চাকচিক্য ও অনেক, ঠিক দুর্গাপূজা র মতন…
কিন্তু “গণেশ” নাম নিয়ে আমাদের চারপাশে যে সমস্ত মানুষেরা রয়েছেন তারা সবাই ভালো আছে তো!!!
কেউ কেউ হয়তো বলবেন সব কিছুতেই মশাই নেগেটিভ চিন্তাধারা, সত্যিতো, আনন্দ করা যাবেনা দুঃখ আছে বলে, আমিও তাই বলছি, কিন্তু তাহলে সার্বজনীন কথাটা উল্লেখ না করলেই ভালো, কারণ কথাটার ব্যাপ্তি যে বিশাল…
আগের লেখা কবিতা, এখনও প্রাসঙ্গিক বোধকরি…
‘গণশা’ –
বাবুকে এক কাপ চা দে সঙ্গে দুটো বিস্কুট,
ভাঁড়ে চা নিয়ে সামনে হাজির হারগিলে ছেলেটা,
সাথে সাথেই পাশ থেকে একজন
ওই ‘গণশা’ আমাকে একটা লিকার দিস।
কবিগুরু এক্সপ্রেসে ফিরছি
ট্রেনটা আর কিছু পরেই ঢুকবে হাওড়া,
হঠাৎ করেই তৎপর দুটো ছোকরা,
ঝাঁটা নিয়ে একটিতে করছিল সাফ,
আর একটি বলে উঠল
‘গণশা’ তাড়াতাড়ি পাশেরটায় চলে আয়।
সেদিনও ফিরছিলাম নর্থ থেকে বেশ রাতে,
ট্যাক্সির জানলা দিয়ে চোখে পড়ল
উল্টোডাঙ্গার ‘হঠাৎ বস্তি’ র কাছে ব্রিজের তলায়
সুখটান দিচ্ছে গাঁজায় তের কি চোদ্দোর এক কিশোর
দূর থেকে চেঁচিয়ে বলল কেউ
এই ‘গণশা’ শেষের টানটা রাখিস বোকা…।
মেট্রো ধরতে কবি নজরুলে যাব বলে
উঠেছি এক রিকশায়,
ভালো করে দেখি একি! রোগা প্যাটকা এক ছেলে
না পেরে জিজ্ঞেস করলাম
কিরে কদিন হল চালাচ্ছিস?
এই তো কাকু মাস ছয়, বাবাটা মরে যাবার পর,
তো হ্যাঁ রে কি নাম তোর?
কাকু গনেশ, সবাই ডাকে ‘গণশা’।
যাচ্ছিলাম বেশ, এবড়ো খেবড়ো রাস্তায়
হঠাৎ জুতোর সোল টা গেল খুলে,
ভাগ্য ভালো একটু এগিয়েই দেখি
একমনে জুতো সেলাই এ রত এক ছোকরা,
মনে মনে ভাবলাম নিশ্চিত এ রাস্তায়
আমার মতন প্রতিদিন ই তবে,
ঠিক সেই সময় কানে এল
কিরে ‘গণশা’ আমারটা পালিশ হয়ে গেছে?
এরকম আরও বহু,
রোগা, প্যাটকা, হাড়গিলে, কালু, বদমাশ,
চোর, মদুরে, নেশাখোর, পাতাখোর
বিশেষণের ‘গণশা’রা ছড়িয়ে চারপাশ।
এরা কেউই নাদুসনুদুস নয় সত্যি,
তবে গণেশ এর মতনই মা ন্যাওটা,
কিন্তু মা কে কাছে পাবে!
সেই ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে এরা কোন ব্যাটা?
ডাঃ ধীরেশ।
১৫ ভাদ্র, ১৪২৬।
আজ গণেশ চতুর্থী। বহু জায়গায় হচ্ছে গণেশ পুজো। আমাদের ছোট বেলায় এত গণেশ পুজোর চল ছিলনা। থাক সেসব কথা।
প্রচলিত আছে যে সব ঠাকুরের পুজোর আগে নাকি গণেশ পুজো করতে হয়। তবে গণেশ কে আমার বেশ সুইট লাগে। নাদুসনুদুস ভুঁড়ি খানা নিয়ে। এমনি তো দেখা যেত না, কিন্তু দূর্গা পুজোর ভাসানে ঠাকুর নামানোর পর যখন রাখা থাকত তখন দু একবার ওই মূর্তির ভুঁড়ি তে হাত বুলিয়েছি সেটা অনেকেই জানেন না। গণেশ নামটা বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই ছেলের নাম রাখেন গণেশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওটা হয়ে যায় লোকের মুখে ‘গণশা’ বিশেষ করে একটু তথাকথিত লো সোসিও ইকোনোমিক মানুষ জন। তবে এই প্রবণতা কমেছে একটু। আজকাল সব মডার্ন নাম। কিন্তু আমার আপনার চোখের সামনে ঘুরে বেড়ানো “গণশা” নামের সবারই তো সেই তথৈবচ অবস্থা। গণেশ পুজোর চাকচিক্য বেড়েছে দিনদিন। কিন্তু ওরা মলিন হচ্ছে আরও। সবদিক দিয়ে। আমরা উদাসীন।