পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমির উদ্যোগে পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র , ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দার্জিলিং জেলার মহিষমারীতে ৩ – ১২ই জানুয়ারী ১০ দিনের মুখোশ তৈরির এক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছে রোজ সকল ১১ টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত |
‘রাজধারী মুখোশ নৃত্য’ বা ‘লঙ্কা গান’ এটি একটি সুপ্রাচীন নৃত্যকলা যা উত্তরবঙ্গের তারাই অঞ্চলের রাজবংশী জনজাতির সাংস্কৃতিক একটি বিশেষ অঙ্গ | ১৯২৫ সালে খড়িবাড়ির ওয়ারিশজোত বস্তিতে এই রাজধারী মুখোশ নৃত্যের পালা শুরু করেন চৌরঙ্গি ঠাকুর | শুধু উত্তরবঙ্গেই থেমে থাকিনি , বিহারের ঠাকুরগঞ্জ এবং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালেও এই পালাগান জনপ্রিয় লাভ করে |
এই নৃত্য কলায় মুখোশ একটি গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে | এই পালায় প্রতিটা চরিত্র কে ফুটিয়ে তুলতে প্রত্যেকটি চরিত্রের মুখোশ খুবই প্রয়োজন | আর এই মুখোশ তৈরিতে প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণ, পারদর্শিতা এবং অবশ্যই প্রয়োজন অর্থের |
কিন্তু বর্তমানে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং অর্থের অভাবে এই সুপ্রাচীন নৃত্য কালা আজ হারিয়ে যেতে চলছে | এই পরিস্থিতে এই প্রাচীন রাজবংশী জনজাতির সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমি পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র , ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দার্জিলিং জেলার মহিষমারীতে ৩ – ১২ই জানুয়ারী ১০ দিনের এক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছে যেখানে এই রাজধারী মুখোশ নৃত্যের সাথে যুক্ত বিভিন্ন চরিত্রগুলি যেমন রাবন , মহিরাবান , ভিবিষন , সুপনখা , ত্রিশুলা , রাক্ষসী, বালি, সুগ্রীব , অংগত , হনুমান , গোরল কালি , বাঘ , ধাইকুকজি , বুড়ি , বেকা সিপাই , বারিয়ান ধীর , জামুবান এই সকল চরিত্রের মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে | প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে রোজ সকল ১১ টা থেকে বিকাল ৪টে পর্যন্ত | এই বিষয়ে একটি লিখিত ও ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রস্তুত করা হবে যেটি আকাদেমির নিজস্ব সংগ্রহশালায় সুরক্ষিত রাখা থাকবে , যার ফলে আগামী প্রজন্ম এই অমূল্য সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করতে পারবে |
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সঙ্গীত ও দৃশ্যকলা আকাদেমির সচিব ড. হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায় জানান “রাজ্য আকাদেমি ১৯৫৫ সাল থেকেই রাজ্য জুড়ে যে নানান সাংস্কৃতিক উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলিকে ডকুমেন্টেশনের মাধ্যমে সংরক্ষণের কাজ করে চলেছে আগামী প্রজন্মের জন্য | আশা রাখি এই সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারের কাজ ও সংরক্ষণের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্মকে রাজ্যের অনেক অজানা সংস্কৃতিক সম্পদের খোঁজ পেতে সাহায্য করবে” |