তামিলনাডুর তিরুচিরাপল্লির ভারতীদসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
“যে কোনও দেশের অগ্রগতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে”
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০২ জানুয়ারি, ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ তামিলনাডুর তিরুচিরাপল্লীর ভারতীদসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সমাবর্তনে ভাষণ দিলেন। তিনি কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদান করেন।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৪ – এ সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রথম আলাপচারিতা হিসেবে এই সমাবর্তন তাঁর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও প্রধানমন্ত্রী এবারই প্রথম যোগ দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণভাবে একটি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে একের পর এক কলেজ তার আওতায় আসে। ভারতীদসন বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। নামকরা একাধিক কলেজকে একত্রিত করে তৈরি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের সভ্যতা বরাবরই জ্ঞান ভান্ডারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রাচীন যুগের নালন্দা ও তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেন। কাঞ্চিপুরম, গঙ্গাইকোন্ডা, চোলাপুরম এবং মাদুরাইতেও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা আসতেন বলেও তিনি মনে করিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সমাবর্তনের ধারণাটিও প্রাচীন। এক্ষেত্রে তিনি তামিল সঙ্গমম – এর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন, যেখানে বিদ্বজনেরা একত্রিত হয়ে আলাপ-আলোচনায় যোগ দিতেন এবং বৃহত্তর সমাজে তাঁদের কাজের প্রতিফলন ঘটতো। এই রীতি আজও অব্যাহত। তরুণ শিক্ষার্থীরা এক সুবিশাল ঐতিহাসিক জ্ঞান ভান্ডারের অংশ।
দেশের বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবদানের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহিরাগতদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্যবিন্দু হ’ল দেশের জ্ঞান ভান্ডার। মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত মদন মোহন মালব্য এবং স্যর আন্নামালাই চেত্তিয়ারের হাতে বিংশ শতকে গড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ অবদান রেখেছিল। আধুনিক ও উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বিকাশের প্রাথমিক শর্ত বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বের আঙিনায় সম্ভ্রম আদায় করে নিচ্ছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার জন্য প্রধানমন্ত্রী তরুণ গবেষকদের কাছে আবেদন রাখেন। এ প্রসঙ্গে তিনি রবীন্দ্র নাথের বক্তব্য থেকে উদ্ধৃতি দেন। ২০৪৭ সাল নাগাদ বিকশিত ভারত গড়ে তোলায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ভারতের তরুণ সমাজ নতুন বিশ্ব গঠনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে অতিমারীর মোকাবিলা, চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্য এবং ২০১৪’য় মেধাস্বত্ত্বের সংখ্যা ৪ হাজার থেকে এখন প্রায় ৫০ হাজার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। ক্রীড়া, সঙ্গীত, শিল্প সবক্ষেত্রেই ভারতীয়রা বর্তমান বিশ্বে নজির তৈরি করে চলেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
বিগত ১০ বছরে ভারতের বিকাশের খতিয়ান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের সংখ্যা ৭৪ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫০ হয়েছে। বন্দরগুলির পণ্য আদান-প্রদানের ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে সড়ক তৈরি হচ্ছে দ্বিগুণ তৎপরতার সঙ্গে। স্টার্টআপ – এর সংখ্যা ১০০-রও কম থেকে বেড়ে প্রায় ১ লক্ষে পৌঁছেছে। বিশ্বের সামনে আসা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ভারত এখন যেভাবে পথ দেখাচ্ছে, তা অত্যন্ত আনন্দের বলে প্রধানমন্ত্রী মতপ্রকাশ করেছেন। জি-২০’র প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা, বিশ্বের সরবরাহ-শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করা – সব ক্ষেত্রেই ভারতীয়রা এখন অগ্রণী ভূমিকায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার যাত্রায় কোনও সমাপ্তি নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রণালীর পর মানুষ শিক্ষক হিসেবে পায় সামগ্রিক জীবনধারাকে। অর্জিত জ্ঞান ভান্ডারের পরিমার্জন এবং তাকে আরও উন্নত করে তোলা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অস্তিত্ব রক্ষায় এই বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তামিলনাডুর রাজ্যপাল তথা ভারতীদসন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শ্রী আর এন রবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী এম কে স্ট্যালিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ এম সেলভম প্রমুখ।