ব্রিটেনকে ছাপিয়ে গিয়ে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়েছে: কিছু প্রেক্ষাপট
নতুন মাইলফলক সমূহ
জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত আজ দ্রুততম অর্থনৈতিক বৃদ্ধির দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
স্মার্টফোন ডেটা ব্যবহারকারীর নিরিখে ভারত আজ বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যার নিরিখে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
বিশ্ব খুচরো ব্যবসা সূচকে বিশ্বে ভারতের স্থান আজ দ্বিতীয়।
ভারত বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি ব্যবহারকারী দেশ।
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম উপভোক্তা বাজার।
ভারতে ‘উদ্ভাবনী সূচক’-এর ক্রমতালিকা উন্নত হয়েছে।
এ বছর ভারত ৬৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৫০ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানী করেছে। সমস্ত রকম চ্যালেঞ্জকে জয় করে ভারত ৪১৮ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩১ লক্ষ কোটি টাকার পণ্যদ্রব্য রপ্তানী করে নতুন রেকর্ড করেছে।
গত ৮ বছরে ১০০টিরও বেশি অযুত ডলার কোম্পানী তৈরি হয়েছে এবং প্রতি মাসে নতুন নতুন কোম্পানী যুক্ত হচ্ছে। গত ৮ বছরে এইসব নতুন সৃষ্ট এইসব কোম্পানীগুলি মূল্যমান আজ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ১২ লক্ষ কোটি টাকার সমান।
২০১৪র পর নতুন ১০ হাজার স্টার্টআপ তৈরি করতে প্রায় ৮০০ দিন লেগেছিল। সম্প্রতি এই ইকো সিস্টেমে আরও নতুন ১০ হাজার স্টার্টআপকে সংযুক্ত করতে লেগেছে ২০০ দিনেরও কম সময়। গত ৮ বছরে কয়েকশো স্টার্টআপ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ স্টার্টআপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে। এই স্টার্টআপগুলি বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি তা ছড়িয়ে রয়েছে ভারতের ছোট ছোট শহরগুলিতেও।
অধিকন্তু প্রায় ৫০টিরও বিভিন্ন রকমের স্টার্টআপ বিভিন্ন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এগুলি দেশের সব রাজ্যজুড়ে এমনকি সাড়ে ৬০০রও বেশি জেলাতেও ছড়িয়ে রয়েছে। এই স্টার্টআপগুলির ৫০ শতাংশই রয়েছে টু-টিয়ার এবং থ্রি-টিয়ার শহরে।
ডিজিটাল বিপ্লব হচ্ছে গতির এক উদাহরণ স্বরূপ বছরের পর বছর ধরে ভারত যা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ২০১৪ সালে আমাদের দেশে ব্রডব্যান্ড গ্রাহক যেখানে ছিল কেবল সাড়ে ৬ কোটি, আজ সেই সংখ্যা ৭৮ কোটি ছাপিয়ে গেছে।
২০১৪ সালে এক জিবি ডেটা ব্যবহারের জন্য খরচ পড়তো প্রায় ২০০ টাকা। আজকে তার দাম নেমে এসেছে দাঁড়িয়েছে ১১ থেকে ১২ টাকায়।
২০১৪ সালে দেশে ১১ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ছিল। আজ দেশজুড়ে যে অপটিক্যাল ফাইবার তার দৈর্ঘ্য ২৮ লক্ষ কিলোমিটার।
সরকার উৎপাদন ভিত্তিক ভর্তুকি পিএলআই প্রকল্প চালু করেছে ভারতে ম্যানুফ্যাকচারিং বৃদ্ধিতে যার মূল্য প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা।
গত ৭-৮ বছরে ভারত সরকার সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে একবার টিপেই ডিবিটি-র মাধ্যমে (প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর) টাকা পাঠিয়েছে। ডিবিটি-র মাধ্যমে পাঠানো এই টাকার পরিমাণ ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।
একে অপরের সহায়ক এ রকম মাল্টিমোডাল সংযোগের ওপর আমরা এখন জোর দিচ্ছি। সাগরমালা, ভারতমালা, পর্বতমালা, বন্দর কেন্দ্রিক উন্নয়ন।
ভারত আজ সামাজিক এবং দৈহিক পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ প্রত্যক্ষ করছে। নতুন শিক্ষানীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সহমতের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে নতুন স্বাস্থ্যনীতি রূপায়ণের কাজ এগিয়ে চলেছে। আজ রেকর্ড সংখ্যক নতুন বিমান বন্দর ভারতে তৈরি হচ্ছে যাতে উড়ানপথে ছোট ছোট শহরগুলিকে সংযুক্ত করা যায়। মেট্রো সংযোগ গড়ে তোলার যে পরিমাণ কাজ আজ ভারতবর্ষে হচ্ছে তা অতীতে কখনও হয়নি। রেকর্ড সংখ্যক নতুন মোবাইল টাওয়ার ভারতে বসানো হচ্ছে এবং ফাইভ জি ভারতের দরজায় কড়া নাড়ছে। আজকের ভারতে রেকর্ড সংখ্যক গ্রাম অপটিক্যাল ফাইবারে সংযুক্ত হচ্ছে।
দেশের মানুষের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। যে সুশাসনের জন্য যে কোন প্রযুক্তিকেই নিয়ে আসা হোক না কেন তা দেশের মানুষের দ্বার গৃহীত হবে এবং প্রশংসিত হবে। জনগণের প্রতি এই যে আস্থা তা প্রত্যেকের সামনেই দৃশ্যমান হয়ে রয়েছে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট ডিজিটাল বিনিময় প্ল্যাটফর্ম ইউপিআই-এর মধ্যে অর্থাৎ সংযুক্ত পেমেন্ট সহায়ক। বিশ্ব ডিজিটাল বিনিময়ে ৪০ শতাংশই হচ্ছে ভারতবর্ষে। আজ আমরা দেখছি যে হকার থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় ১০-২০ লক্ষ টাকার বিনিময় অনায়াসে হচ্ছে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির আওতায় প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা দেশের ১১ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ দেশের ৩ কোটি দরিদ্র মানুষ তাদের পাকা নতুন বাড়ি পেয়েছে যেখানে তারা বসবাস করছে। আজকে ৫০ কোটিরও বেশি দেশের দরিদ্র মানুষের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা পয়সার চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে।
আজ দেশের ২৫ কোটিরও বেশি দরিদ্র মানুষের দুর্ঘটনা জনিত বিমা এবং প্রত্যেকের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মেয়াদী বিমা রয়েছে। আজ দেশের প্রায় ৪৫ কোটি দরিদ্র মানুষের জনধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রী হকার আত্মনির্ভর নিধি অর্থাৎ পিএম এসভিএ নিধি-র আওতায় দেশের ৩৫ লক্ষ হকার আর্থিক সাহায্য পেয়েছে।
মুদ্রা যোজনার আওতায় দেশজুড়ে ছোট উদ্যোগপতিদের ২০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ঋণ প্রাপকদের মধ্যে ৭ কোটি এমন উদ্যোগপতি রয়েছেন যারা প্রথমবার ব্যবসা শুরু করেছেন এবং নতুন উদ্যোগপতি হয়ে উঠেছেন। মুদ্রা যোজনার সাহায্যে ৭ কোটিরও বেশি মানুষ এই প্রথমবার স্বনির্ভর কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন। ৭০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে মহিলা উদ্যোগপতিদের।
‘জরুরি ঋণ সীমা নিশ্চয়তা প্রকল্প’ লক্ষাধিক ছোট শিল্পসংস্থাকে সাহায্য করেছে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে প্রায় দেড় কোটি মানুষের এই প্রকল্পে কাজ বাঁচানো গেছে।
এমএসএমই অর্থাৎ অণু, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি সংস্থাকে সর্বতো সাহায্য!
এমএসএমই ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে গত ৮ বছরে সরকার বাজেটে সারে ৬০০ শতাংশেরও বেশি বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে।
১১ কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই কারনবশতই দেশে সর্বাধিক কর্মসংস্থান যোগাতে এমএসএমই এতোখানি গুরুত্বপূর্ণ।
ফলে ১০০ বছরে সব থেকে বড় সঙ্কট যখন আঘাত হানলো আমরা সিদ্ধান্তই নিয়েছিলাম ছোট উদ্যোগকে বাঁচানো এবং তাদেরকে নতুন শক্তি দেওয়ার। ইর্মাজেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম অর্থাৎ জরুরি ঋণ সীমা নিশ্চয়তা প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকার এমএসএমই ক্ষেত্রে সাড়ে তিনশো কোটি টাকা দিয়েছে।
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী এর ফলে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ কাজ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।
সহজে ব্যবসা করা
এখন দেশ বদলাচ্ছে। ওই সমস্ত শ্রম আইনে সরলীকরণ এবং সংশোধন করা হচ্ছে। একথা মাথাই রেখে ২৯টি শ্রম আইনকে ৪টি সাধারণ শ্রমবিধিতে রূপ দেওয়া হয়েছে।
৩০ হাজারের বেশি বাধ্যবাধকতাকে কমিয়ে এনে দেড় হাজারের বেশি আইন বাতিল করে এবং কোম্পানী আইনের বিভিন্ন সংস্থানকে অনপরাধিকরণ করে এটা নিশ্চিত করা গেছে যে ভারতে কোম্পানীগুলি কেবলমাত্র সংখ্যাতেই বৃদ্ধি নয় নতুন সাফল্যের শিখর স্পর্শ করতে পারে।
এখন জিএসটি-র ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিভিন্ন করের বেড়াজালকে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই সরলীকরণের সুফল দেশ প্রত্যক্ষ করছে। প্রত্যেক মাসে জিএসটি সংগ্রহ ১ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে যাচ্ছে এটা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক দেশ
আমরা এখন নীতিগত স্থিতিশীলতা, সমন্বয় এবং সহজে ব্যবসা করার ওপর জোর দিচ্ছি। ইতিপূর্বে পুরনো আইন এবং হাজারো বাধ্য-বাধকতাকে আমরা বাতিল করে দিয়েছি। সংস্কারের মধ্যে দিয়ে ভারতকে শক্তিশালী করে একটি রাষ্ট্রের চেহারা দিতে চেয়েছি আমরা। এতে করে এক দেশ এক কর জিএসটি এক দেশ এক গ্রিড, এক দেশ এক মোবিলিটি কার্ড, এক দেশ এক রেশন কার্ড এগুলি এই সমস্ত প্রচেষ্টায় আমাদের দৃঢ় এবং স্বচ্ছ নীতির ফল স্বরূপ।
উদ্ভাবনী এবং উদ্যোগী সক্ষমতার নতুন ইন্টারফেস
‘সরকার একাই সবকিছু জানে এবং সরকার একাই সবকিছু করবে’ এই কর্মসংস্কৃতিকে পিছনে ফেলে দেশ এখন ‘সবকা প্রয়াস’ (প্রত্যেকের প্রচেষ্টা) এই নতুন উদ্যম নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে আজকের ভারতে নতুন নতুন ইন্টারফেস তৈরি হচ্ছে। যেমন বিআইআরএসি-কে সক্ষমতা প্রদান করা হচ্ছে। স্টার্টআপগুলির জন্য স্টার্টআপ ইন্ডিয়া প্রচারই হোক না কেন, মহাকাশ ক্ষেত্রের জন্য ইন-স্পেস, প্রতিরক্ষা স্টার্টআপের ক্ষেত্রে আইডেক্স, সেমিকনডাকটারের জন্য ভারতীয় সেমিকনডাকটার মিশন, যুব সম্প্রদায়কে উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উৎসাহ যোগাতে স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথন, জৈব প্রযুক্তি স্টার্টআপ এক্সপো, সম্মিলিত উদ্যমের প্রয়াসের প্রসারের মধ্যে দিয়ে এবং উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলিকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে সরকার শিল্প ক্ষেত্রে সর্বোৎকৃষ্ট মাথাগুলিকে একসাথে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত প্রয়াসের মধ্যে দিয়ে দেশ বিরাটভাবে উপকৃত হচ্ছে। গবেষণা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প এই সমস্ত ক্ষেত্রেই এক আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে। বাস্তবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সরকার প্রয়োজনীয় নীতি পরিবেশ এবং পরিকাঠামো যুগিয়ে যাচ্ছে।
যুব সম্প্রদায় প্রত্যেকটা প্রতিবন্ধকতাকে ঠেলে ফেলে ক্রমাগত সংস্কারের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে বেসরকারী শিল্প ক্ষেত্রের জন্য খুলে দেওয়া, মহাকাশ শিল্পে বেসরকারী অংশগ্রহণ, আধুনিক ড্রোন নীতি রূপায়ণ, ভূসমলয় তথ্য নির্দেশিকা তৈরি, টেলিকম-তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ‘যে কোন জায়গা থেকে কাজ’-এর প্রসার ঘটিয়ে সরকার প্রত্যেকটি লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। ভারতে বেসরকারী ক্ষেত্রের জন্য সহজে ব্যবসা করার সব থেকে ভালো পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য যাতে করে দেশের বেসরকারী ক্ষেত্রও দেশবাসীর জীবনযাত্রার স্বাচ্ছন্দ্যে একই রকম ভাবে সাহায্য করতে পারে।