যস্যাঃ পরতরং নাস্তি……………….
ডাঃ রঘুপতি ষড়ংগী।
ব্রহ্মবিদ্যাম্ তস্যাম্ রমতে ইতি ভারতঃ। সবুজ এই গ্রহের যে অঞ্চলে ব্রহ্ম এবং তার অনন্ত প্রকাশ নিয়ে নিত্য ধ্যান-ধারণা-
আলোচনার অবকাশ মিলে তার নামই ভারতবর্ষ। সনাতন ভারতবর্ষ মানেই অনন্তের পূজারী। কখনো সেই অনন্ত শৈব, কখনো তিনি শাক্ত আবার কোথাও তিনিই পরম-বৈষ্ণবী। অর্থাৎ যুগ-যুগ ধরে মানুষে-মানুষে সেই মহামিলন এর সুর। অনন্ত-রূপী ব্রহ্মের মুখে যখন আপনি দশভূজা’র মুকুট পরিয়ে দিলেন তিনি হয়ে গেলেন দুর্গা। দূর্গা বেদমূলা।
ঋগ্বেদ এর ১০ম মন্ডলের ১০ম অনুবাক্ এ যে “দেবী-সূক্ত” রয়েছে তা দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে ই। উপনিষদে পাই, ” নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্য “…… অর্থাৎ দুর্বল-চিত্ত ব্যক্তির দ্বারা জগতের কোনো কল্যাণ সাধন করা সম্ভব হয় না। কথিত আছে, আলেকজান্ডার সারা পৃথিবীর অধীশ্বর হওয়ার বাসনা নিয়ে সুদূর গ্রিস থেকে ভারত-ভূখন্ডের কাছাকাছি এসেছিলেন কিন্তু কোনো এক দুর্গামূর্তি’র হাতের এই সব অস্ত্র দেখে আর এগোতে সাহস করেন নি। তাঁর ধারণা হয়েছিল, ভারতবাসীরা নিশ্চই এইসব জানা-অজানা অস্ত্রের ব্যবহার জানে। তাই তো তন্ত্র-মতের দুর্গা ‘অনন্তবীর্যা’….. অসীম শক্তির আধার। তিনি মানুষের জড়- জীবনের সব ধরনের দুর্বলতাকে দূর করে ….” পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী”…. পরম মুক্তিদাতা।
গৌড়-বঙ্গ, আসাম সহ সুবিশাল এই উত্তর-পূর্ব ভারত চিরকালই ছিল শক্তিপীঠ। পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিবর্তনে, বিশেষতঃ চৈতন্যদেব এর আগমনের পরে এই সব অঞ্চলে বৈষ্ণবীয় ধারার প্রাধান্য দেখা গেছে। আজও বৃন্দাবনে প্রবেশ করার মুখেই পাবেন দেবি কাত্যায়নী বা দুর্গার মন্দির। উল্লেখ আছে, টানা এক মাস ব্রত উদযাপন করে ব্রজাঙ্গনারা দেবি দুর্গার কাছে প্রার্থনা করেছিলেনঃ
” কাত্যায়নী যহামায়ে
মহাযোগিনাধীশ্বরী।
নন্দগোপসুতং দেবি
পতিং তে কুরুতে মমঃ।।”
…. হে মা দুর্গা! শ্রীকৃষ্ণকে আমাদের পতি রূপে বরণ করতে তুমি প্রসন্ন হও । একসময়ে বাংলাদেশের প্রতি ঘরের চণ্ডীমন্ডপে হোত দুর্গা বা চণ্ডীর নিত্য সাধনা,পূজা-পাঠ। তৎকালীন শাক্ত-পীঠ নবদ্বীপে মুকুন্দ এবং পুণ্যবন্ত এর চণ্ডীমন্ডপে টোল খুলে রাধা-কৃষ্ণ সম্পর্কিত ভাব-ভক্তির পাঠ দিতেন স্বয়ং চৈতন্যদেব। ইতিহাস থেকে জানা যায়, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে রাজশাহী জেলার রাজা কংস নারায়ণ প্রায় নয় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সাড়ম্বরে দেবি দুর্গার পূজা করেছিলেন। মহাভারতে ( ভীষ্ম-পর্ব) এসে দেখি, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঠিক আগে সখা অর্জুনকে যুদ্ধজয় এর জন্য হৈমবতী দুর্গার কাছে প্রার্থনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃত্তিবাসের রামায়ণে ও সেই একই পরম্পরার বিরাম নেই………….
” রাবণস্য বিনাশায় রামস্য অনুগ্রহায় চ অকালে বোধিতা দেবী “। বৌদ্ধ-তন্ত্রেও সরস্বতী রূপে সেই শক্তির সাধনা, পরোক্ষে সেই দেবী দুর্গার আরাধনা। “Introduction to Buddhist Esotericism বই তে দেখা যাচ্ছে, সনাতন ধর্মের “কালী-তারা -মহাবিদ্যা”র মতোই “উগ্রা-মহোগ্রা-উচ্চ বজ্রা-কালী-সরস্বতি”র উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাঙলার একটি মঙ্গল-কাব্যই আছে দেবী দুর্গার নামে…….. ‘দুর্গামঙ্গল’। বৈষ্ণব-পদকার বিদ্যাপতি তাঁর “দুর্গাভক্তি-তরঙ্গিনী” কাব্যে কী অপূর্ব শিল্প সুষমায় এঁকেছেন মায়ের রূপ ! তিনি দেবী’র বর্ণনা করছেন….
” কণক-ভূধর-শিখর-বাসিনী
চন্দ্রিকা চয় চারু-হাসিনী
দশন-কোটি বিকাশ বঙ্কিম
তুলিত চন্দ্র কলে ।”
……. সোনা দিয়ে মোড়া পাহাড়ের চূড়াতে মায়ের স্মিত হাসি চাঁদ কেও যেন লজ্জা দেয়। মায়ের হাসিতে এক একটি দাঁতের ঝিলিক কে অমাবস্যার পরে এক-এক কলা উজ্জ্বল চাঁদের সাথে তুলনা করেছেন কবি। এ তো গেল মা-দুর্গা’র ঐতিহ্যের ইতিকথা। যৌগিক পরম্পরায়…… ” যস্যাঃ পরতরং নাস্তি সৈষা দুর্গা প্রকীর্তিতাঃ “…. যিনি নিত্য, স্থান- কাল-পাত্র এই বিচারের উর্ধে যে শাশ্বতঃ তত্ব তিনিই আসলে দুর্গা। মহালক্ষ্মী রূপে যিনি আমাদের ধন-দাত্রী, মহা-সরস্বতী রূপে তিনি আমাদের প্রজ্ঞা ও সুমেধা প্রদায়িত্রী, দুর্গা রূপে তিনিই এই দেহ রূপ দুর্গের রক্ষাকর্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরই কাছে মাতৃ-ভক্তের চিরদিনের প্রার্থনা…….” রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি “…. মা, আমাদের রূপ-সাফল্য-যশ দাও, আর মন থেকে কাম-ক্রোধ-লোভ আদি শত্রুদের বিনাশ করো।
সে যাই হোক্, পুরাণ বা ইতিহাস যাই বলুক, দুর্গা আমাদের বাড়ির মেয়ে, একান্তই আদরণীয়া। সমস্ত শক্তির উৎস জ্ঞানে কুমারী বা নারীদের শ্রদ্ধা-সম্মান এবং সম্ভ্রম দেখানোর যে শিক্ষা তার ই নাম দুর্গা। তাই তো, প্রতিমায়-উপমায়, রূপকে-প্রতিকে, চিত্রে-কল্পে, অনুপ্রাসে-অলঙ্কারে…… এমন কি, “পথের-পাঁচালি”র কিশোরী ও সেই দুর্গা ! এ নামের এমনই মহিমা।
Dr. Raghupati Sharangi, is better known as a people’s doctor around Coochbehar. His followers believe him like doctors with “Midas Touch”.
He is originally from a remote village in the erstwhile Midnapore district. He loved homeopathy from his childhood and took his passion in order to the profession. He got a degree in Homeopathic Medicine from the University of Calcutta with the highest marks in the exam. After service with a homeopathy college in Kolkata, he took the government service in North Bengal and started his crusade against the pain and agony of disease through Homeopathy.
At present, he is associated with a health center under Coochbehar District with West Bengal Government Health Unit.