কোরোনা আবহে ১৩ কিলোমিটার যেতে এম্বুলেন্স নিচ্ছে ১৩ হাজার
হীরক মুখোপাধ্যায় (১২ জুলাই ‘২০):- কোরোনা আবহে মাত্র ১৩ কিলোমিটার পথ যেতে এম্বুলেন্স নিচ্ছে ১৩ হাজার টাকা। অবাক হওয়ার কিছু নেই সম্প্রতি এই ঘটনা সামনে এসেছে।
গত ১০ জুলাই বারাসাত আমতলা মোড়-এর কাছ থেকে জনৈক বর্ষীয়ান ব্যক্তিকে রাত ১০ টা নাগাদ দমদম নাগেরবাজার সংলগ্ন আইএলএস হসপিটাল-এ নিয়ে যেতে হয়। রোগীকে হাসপাতালে নামাবার পর এম্বুলেন্স চালক ভাড়া বাবদ ১৩ হাজার টাকা চেয়ে নেন।
পাঠকদের জেনে রাখার জন্য বলছি এই এম্বুলেন্স কিন্তু ওই বেসরকারী হাসপাতালের ছিলনা।
নভেল কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কিত রোগ কোভিড ১৯-এর প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই মুহুর্তে কোরোনা রোগীকে সাক্ষাৎ ‘কামধেনু’ জ্ঞান করে যে যেভাবে পারছে রোজগার বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল থেকে কোরোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা ছাড়া পেয়ে আসার পর তাদের কত খরচ হলো সে সম্পর্কে জানলে খোদ প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীও মাথা ঘুরে তৎক্ষনাত অজ্ঞান হয়ে পড়বেন।
অবস্থার গতিপ্রকৃতি যে জায়গায় রয়েছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী যদি সবিশেষ তথ্য পান তাহলে তাঁর মুখ দিয়ে পরবর্তী ‘মন কী বাত’ যে কী বেরবে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও আগাম বুঝে উঠতে পারবেনা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়তো বলেই বসবেন, “আমি অপারগ, আমার থেকে প্রশাসনিক ক্ষমতা আপনারা নিয়ে নিন।”
রাজ্য প্রশাসনের হাতে যেমন গোয়েন্দা বিভাগ আছে তেমনই শাসকদলের হাতে আছে নিজস্ব দলীয় কর্মীকুল। মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন কোরোনা রোগীকে কোনো বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলেই এই মুহুর্তে আগে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হচ্ছে।
রাজ্য সরকার আগেই বলে রেখেছে, ‘কোনো অবস্থাতেই লালারস পরীক্ষার খরচ ২,৩৫০ টাকার বেশি যেন নেওয়া না হয়।’
বেসরকারী হাসপাতাল ফেরত অনেক রোগীই আক্ষেপ করে বলছেন, ‘ও সব বলতে হয় বলে সরকার বলেছে, ওসব কথার কোনো ভিত্তি নেই।’
সরকার আগেই ঘোষণা করেছে, ‘কোনো বেসরকারী হাসপাতালই রোগী দেখা অর্থাৎ ভিজিট পিছু চিকিৎসকদের জন্য ১ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবেননা।’
কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল মাত্রই জানেন এই ভিজিট এক এক বেসরকারী হাসপাতালে এক এক রকম, কোথাও ২ হাজার টাকা তো কোথাও ৩ হাজার টাকা।
বেসরকারী হাসপাতালে কোরোনা রোগীদের যে ডর্মিটরিতে রাখা হচ্ছে তার শয্যা ভাড়া শুনলে অনেক গরিবগুর্বোর মৃত্যু হতে পারে। সাধারণ কেবিন ও বাতানুকূল কেবিন, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর-এর দৈনন্দিন ভাড়া না শোনাই ভালো। একবার এই খরচের বহর সম্পর্কে জানতে পারলে অতিবড়ো সুস্বাস্থ্যর অধিকারী ব্যক্তিরও নিমেষে হৃদস্পন্দন বন্ধ হতে পারে।
বিষয়টা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রোগীকে ৭ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার পর টু স্টার ক্যাটাগরির কোনো বেসরকারী হাসপাতালও হাসতে হাসতে কম করে ৭ লাখ টাকার বিল হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।
তাহলে বুঝেই দেখুন রাজ্যের ফাইভ স্টার ক্যাটাগরির বেসরকারী হাসপাতালগুলো কী হারে বিল করছে !
আপনারা অনেকেই ভাবতে পারেন অত নামকরা সব বেসরকারী হাসপাতাল, চিকিৎসাও তো হয় রাজকীয় রকম, সুতরাং খরচ না হয় একটু হলো তাতে কী !
না তাতে তেমন কিছু নয়। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওইসব ফাইভ স্টার ক্যাটাগরির বেসরকারী হাসপাতালের নামীদামি চিকিৎসকেরাই বলছেন, “এই রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনো বেরয়নি, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় কোভিড ১৯ রোগীকে আমরা প্রতিদিন ২ টো প্যারাসিটামল (৬৫০ মিগ্রা), ১ টা করে এজিথ্রোমাইসিন (৫০০ মিগ্রা), ২ টো করে ভিটামিন সি ট্যাবলেট (৫০০ মিগ্র) ও ১ টা করে এন্টাসিড দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছি।”
জাতীয় সমীক্ষা বলছে ভারতের বেশিরভাগ কোরোনা রোগীই এই সামান্য চিকিৎসাতেই সুস্থ হচ্ছেন।
তবে জটিলতা দেখা দিলে কিছু রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।
আর রোগী একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় চলে গেলে তাকে আইসিইউ বা পরবর্তী পর্যায়ে ভেন্টিলেটরে রাখতে হচ্ছে, যদিও এই সংখ্যাটা খুব কম।
তবে মজার বিষয় অধিকাংশ সাধারণ মানুষ জানেননা আইসিইউ আর ভেন্টিলেটর-এর মধ্যে ফারাকটা কোথায়, তার উপর রোগীর নিকট আত্মীয় যখন রোগীর সামনেই যেতে পারছেন না সুতরাং সোনায় সোহাগা !
রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে না ভারতের অন্যান্য রাজ্য এগিয়ে এই অর্বাচীন বক্তব্যে না গিয়েও বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারী হাসপাতালগুলো যে কোনো ভাবে কোরোনা রোগীদের বিলের টাকা বাড়াতে অনেকটাই এগিয়ে।
#Ambulance_Service #Unexpected_Fair #Corona_Positive_Patient #Private_Hospital #High_Billings #Novel_Corona_Virus #Covid19 #Corona_Pandemic #Kolkata #West_Bengal #Hospital_News #Health_News #Health_Scenario #Health_Hazzard