রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বেয়াদবী দেখলেই জুতিয়ে সোজা করুন
হীরক মুখোপাধ্যায় (২৪ অগস্ট ‘২০):- আজ থেকে বছর ১৫ আগেকার কথা, লোকসভা নির্বাচনের আগে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আন্দামান যেতে হয়েছিল। সেই বছর ওখানে ভারতীয় জনতা পার্টি-র এক সভায় বিজেপির সাংসদ মনোরঞ্জনবাবু-কে দলীয় সহকর্মীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগের মুখে বলতে শুনেছিলাম, “আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মী যদি আপনাদের সাথে অন্যায় আচরণ করে, তাহলে তাদের পিছমোড়া করে গাছে বেঁধে আমাকে খবর দেবেন।”
নেতারা অনেক সময় বাজার গরম করা এরকম অনেক কথা বললেও কাজে তার প্রায় কিছুই করেননা সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
বিশ্বব্যাপী এক সমীক্ষায় দেখা গেছে একজন আধজন নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বা আমেরিকার ফার্স্টলেডি পর্যন্ত জুতো খেয়েও শুধরননি। তাই কালবিলম্ব না করে নেতানেত্রীদের বেয়াদবী দেখলে আগে জুতিয়ে সোজা করুন, পরে অন্য কথা হবে।
আমাদের দেশে গ্রাম পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সমিতি-জেলাপরিষদ বা পৌরসভা-র জনপ্রতিনিধিগণ বা বিধায়ক এবং সাংসদরা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নিজস্ব নির্বাচনী ক্ষেত্রের মতদাতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ধন্যবাদ ও নমস্কার জানিয়ে আসার বদলে প্রথা রূপে নিজের রাজনৈতিক দল মারফত সংবর্ধনা পেয়ে থাকেন।
সোজা হিসেব বলছে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই নেতানেত্রীরা নিজেদের ভোল বদলাতে শুরু করেন। তবে নেতানেত্রীদের ভোল বদলানো আজকের নতুন কোনো বিষয় নয়। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের জয়ী প্রার্থীরা নির্বাচনের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার বেশিরভাগটাই তাঁরা পালন করেননা। দেশবিদেশের শিক্ষিত জনগণ ঠিক এই কারণে তাঁদের নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতানেত্রীর মুখ লক্ষ্য করে বারবার জুতো ছুঁড়েও মেরেছেন, কিন্তু দেখা গেছে জুতোর মুখে পড়েও এদের মধ্যে বেশির ভাগ নেতাই সংশোধিত না হয়ে উল্টে অপরিবর্তিতই থেকে যান।
স্মৃতি যদি বিড়ম্বনা না করে তাহলে জুতোর মুখে পড়া এরকম কিছু রাজনৈতিক নেতাদের কাহিনী শুনুন :
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির অসাধারণ বাগ্মী নেত্রী তথা কালীঘাট বিধানসভা ক্ষেত্রের নির্বাচিত বিধায়ক মণিকুন্তলা সেন একবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তাঁর নিজের পায়ের চটি খুলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়-কে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মেরেছিলেন।
মণিকুন্তলা সেন তাঁর আত্মজীবনীতে এই ঘটনার কথা নিজেই প্রকাশ করেছিলেন।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এক সাংবাদিক বৈঠক চলাকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ-কে লক্ষ্য করে জুতো ছুঁড়েছিলেন এক ইরাকি সাংবাদিক।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম-কে তাক করে জুতা নিক্ষেপ করেছিলেন এক সাংবাদিক।
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচনী প্রচারে বেড়িয়ে জুতোর মুখে পড়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গেলে সরাসরি জুতোর নিশানায় চলে আসেন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে দেরাদুন-এ নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলতে গিয়ে জুতোর মুখে পড়েন ভারতীয় কংগ্রেস দলের যুবরাজ রাহুল গান্ধী।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বর্জ পুনর্ব্যবহার শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক মহিলার ছোঁড়া জুতোর মুখে পড়েন আমেরিকার এক সময়ের ফার্স্ট লেডি তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিলারী ক্লিন্টন।
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী নিজের বাড়িতে বসানো ‘জনতার দরবার’-এ বসে নিজেই জনতার হাতে জুতো পেটা খান জিতনরাম মানশি।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা শতভাগ সত্যি যে মতদাতাগণ তাঁদের নিজেদের হিতের জন্য যাদের জনপ্রতিনিধি বানান, তাঁরা সাধারণ জনগণ বা মতদাতাদের স্বার্থকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজের হিতের জন্যই সর্বাগ্রে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলতঃ বিঘ্নিত হয় সামাজিক হিতের ধারণা।
একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে নেতার জন্য রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নেতা থাকলেও সাধারণ জনগণের জন্য কেউ নেই।
আর ঠিক সেই কারণে ভারতের জনগণ তাঁদের মঙ্গলের জন্য যাঁদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠান, তাঁরা সংসদ কক্ষে তাঁর নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রের উন্নতির জন্য যতটা চেঁচামেচি করেন, তার থেকেও বেশি চেঁচামেচি করেন লবিতে এবং মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে। অথচ দুর্ভাগ্যের হলেও শতভাগ সত্যি যে লবি এবং মহাত্মা গান্ধীর পাদদেশে শরীর প্রদর্শন এবং ভাষনবাজী করার জন্য তাঁদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়না।
দিনকাল যা হয়েছে তাতে সাধারণ মতদাতাদের হাত গুটিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে আর চলবেনা। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সুবিধার জন্য এখনই কিছু করতেই হবে। এখন শুধু নেতা মন্ত্রীদের তাক করে জুতা ছুঁড়লেই হবেনা, সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি জুতোতে হবে।
ভারতের প্রেক্ষাপটে তাকিয়ে দেখলেই বোঝা যায় ভারতীয় নেতারা কতটা অসৎ। স্বাধীনতা পরবর্তী জিপ কেলেঙ্কারি দিয়ে শুরু হয়েছিল জাতীয় কংগ্রেসের পথচলা। তারপর যে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারাই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে রেকর্ড করেছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু যাদব যদি গোখাদ্য মামলার কারণে পরিচিত হয়ে থাকেন তো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি সরকারের প্রধান বলে সর্বজনবিদিত।
দেশের বুকে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হোক চাই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রাচীর ভাঙার ঘটনাই হোক সবকিছুই সামাল দিতে ব্যর্থ আমাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলো।
সব থেকে লজ্জার কথা আমাদের এই জনপ্রতিনিধিদের সৌজন্যে একদিকে যেমন আমাদের ব্যাঙ্কগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুঠ করে কয়েকজন মানুষ বিদেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে সুখভোগ করছেন, তেমনই অন্যদিকে সাধারণ গরীব মানুষের সাথে প্রতারণা করে তাঁদের টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে যে বা যাঁরা অবাধে পঞ্জি স্কিম-এর নামে টাকা লুঠ করলেন, তাঁদের বেশিরভাগ এখনো অধরা।
তবে সব থেকে লজ্জার কথা আমাদের এমন সাংসদও আছেন, যাঁরা নিজেদের সাথে বিদেশে মহিলাদের নিয়ে গেলেও তাঁদের আর ফিরিয়ে আনেননি বা তাঁদের পরে আর খোঁজও পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এই সাংসদদের অনেকেই আন্তর্জাতিক নারী পাচার-এর মতো ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতেই পারেন।
তাই নিজের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার কারণে এখন প্রয়োজনে পায়ের জুতোকে অন্য কাজেও জোরদারভাবে ব্যবহার করার দিন সমাগতপ্রায়। এখন থেকেই যদি নেতেনেত্রীদের বেয়াদবী দেখলে জুতোনো না হয় তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ভারতীয়ই আর নিরাপদ থাকবেননা। তাই রাজনৈতিক নতেনেত্রীদের ভুলভ্রান্তি চোখে পড়লেই দেশ ও দশের স্বার্থে তাঁদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। প্রয়োজনে সংঘবদ্ধ ভাবে জুতিয়ে সোজা করুন।
#Power_Of_Commons #Proper_Application_Of_Shoes #Use_Of_Shoes_And_Sandels #Teach_A_Lesson #Corrupted_Politician #Public_Representative #Elected_Person #Indian_Democracy
Article Source: Special News.