বড়ো যদি হ’তে চাও ছোট হও তবে’
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
“সম্রাট্ সম্রাজৌ সম্রাজঃ
সম্রাজম্ সম্রাজৌ সম্রাজঃ.”
জ-কারান্ত পুংলিঙ্গ বাচক ‘সম্রাজ্’ শব্দ সংস্কৃত ব্যাকরণে রয়েছে। এই শব্দের ব্যবহার বেদ এ না থাকলেও উপনিষদ এবং পুরাণে ভুরিভুরি আছে।
” সম্রাট” শব্দের মানে হয় সমগ্র ভারতবর্ষের রাজাদের ওপর রাজধর্ম পালনকারী সেই সুযোগ্য পুরুষ যিনি “রাজসূয় যজ্ঞ” এর অনুষ্ঠান করে সবার আনুগত্য প্রাপ্ত হয়েছেন। সামরিক শক্তিতে বলবান, শত্রুবিজয়, প্রজাপালন, দেশের সমৃদ্ধি বৃদ্ধির সাথে সাথে নিত্য তপস্যা করা ছিল এঁদের স্বাভাবিক ধর্ম। মহা-মহা শত্রুদের যুদ্ধে পরাস্ত করে সম্রাট হয়েছিলেন মান্ধাতা। প্রজাপালনে বিশেষদক্ষতা দেখিয়ে সম্রাট হয়েছিলেন ভগীরথ। তপস্যাতে সিদ্ধ হয়ে সম্রাট উপাধি পেয়েছিলেন কার্তবীর্য্য। স্বাভাবিক শক্তিতেই সম্রাট হয়েছিলেন সম্রাট ভরত। আরও এমন অনেকেরই উদাহরণ দেওয়া যায়।
মহাভারতের আমলে ও দেখা যায়, বড়ো-বড়ো রাজাদের ‘সম্রাট’ হওয়াটা ছিল একপ্রকার আভিজাত্যের ভূষণ।
‘সভাপর্ব’ তে এসেও সেই একই ঘটনা। পঞ্চপান্ডব ফিরে এসেছেন হস্তিনাপুরে। নবরূপে তৈরি হয়েছে পৃথক রাজ-পাঠ। প্রথামতো ই বড়োভাই যুধিষ্ঠির রাজা হবেন। হোল ও তাই। কিন্তু,স্থলাভিসিক্ত হয়েই মহারাজের একটাই কামনা, জিজ্ঞাশা ও একটাই. কীভাবে শ্রেষ্ঠ হওয়া যায়। শ্রীকৃষ্ণ ধৌম্যমুনি সহ ভাইদের একে একে ডেকে জানতে চাইছেন।
কেউ বললেনঃ “গৃহে হি রাজানা শষ্যে শষ্যে প্রিয়ংকর ন ত সম্রাট্,” সম্রাট হওয়ার কী প্রয়োজন সবাই তো রাজা। যেন, সেই ” আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে…..” গোছের কথা।
তাঁদেরই আবার কেউ বললেনঃ
“অনারম্ভোকরো রাজা সীদতি।
দুর্বলস্যা অনুপায়েন পরিণাম অধিতিষ্টতি।”সব ধরণের আলস্য ত্যাগ করে কর্তব্য-কর্মে
গতি আনতে হবে আর, বৃহৎ শক্তির কাছে শক্তির আস্ফালন না করে সম্মান প্রদর্শন করাই উচিৎ।
কেউ জানালেনঃ ” কৃষ্ণে নয়ো ময়ি বলম্ জয়া পার্থো ধনঞ্জয়ঃ।” শ্রীকৃষ্ণের নীতি আছে, ভীমসেনের পেশীতে বল আর অর্জুনের স্বাভাবিক দক্ষতা আছে আপনার সাথে।
আর কী চাই ?
এ সবকিছু শুনার পরেও স্থির হোল রাজসূয় যজ্ঞ হবে। অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ-সৌরাস্ট্র-মগধ-কাশী-কোশল সহ সমগ্র রাজ্যে খবর গেল। হাজারে হাজারে ছোটো -বড়ো রাজা, রাজচক্রবর্তী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই রওনা দিল নব -নির্মিত মহলের উদ্দেশ্যে। এদিকে, আকবর এর ভারত আক্রমন কালে পাটলীপুত্র নগরে যেমন পরস্পর যুযুধান সব অঙ্গরাজ্যর শাষকেরা একজোট হয়েছিল, এক্ষেত্রেও তাই হল। পান্ডব-কৌরব সব ঝগড়া-বিবাদ সাময়িক ভুলে সবাই এক হয়ে গেলেন। এত বড় কর্মকান্ড রাজসূয় যজ্ঞ বলে কথা !
আলাদা আলাদা কাজের ভার পড়লো উপযুক্ত জন বিচার করে। দুঃশাসন এর ওপর পড়লো খাদ্য-তৈরি এবং পরিবেশন এর দায়িত্ব। অর্থের যোগান এবং এর ন্যায্য ব্যায় দেখবেন বিদুর। পুরো এই রাজ-কার্যের মাথায় বসানো হোল পিতামহ ভীষ্ম এবং গুরু দ্রোণাচার্য্যকে। ঠিক হল, ব্রাহ্মণ-পন্ডিত ও অতিথি অভ্যাগতদের স্বাগত করবেন অশ্বত্থমা। এতক্ষণ সব ঠিকঠাকই চলছিল।
বাধ সাধলো,,” আচার্য্যম্ ঋত্বিকম্ চৈব ষট্ অর্ঘ্যনিয়ম্ স্বয়ং সদা “.মানে, ব্রাহ্মণ,আচার্য,গুরু, শিষ্য, ঋত্বিক এবং আগত প্রিয়জনদের যে আজ শ্রদ্ধাভরে পা ধুইয়ে দিতে হবে। আর স্বেচ্ছায় না করতে চাইলে, কাউকেই যে হুকুম দিয়ে এ কাজ করানোর বিধান নেই ! ভীষ্ম এবং দ্রোণাচার্য উভয়েই গভীর চিন্তাতে পড়েছেন।
এমন সময়ে, তাঁদের মনের ভাব বুঝতে পেরে ” চরণস্খালনে কৃষ্ণ ব্রাহ্মণানাং স্বয়ং অভুৎ”.….। শ্রীকৃষ্ণ স্মিতহাস্যে এগিয়ে এসে বললেন, ” এইটুকু কাজের দায়িত্ব আমায় দয়া করে দিন। ” ভীষ্ম পিতামহ তখন সবদিক বিচার করে তাঁর পঞ্চ-ভ্রাতা’র উদ্দেশ্যে বললেন, ঠিকই আছে।
তবে, প্রথম পাদ্য-অর্ঘ্যটি পাবেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ই !
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.
Photo : Wikipedia