তালিবানি আফগানিস্তান তোমার জন্য সহিষ্ণুতা নয়,মানবতা নয়?
সুমন মুন্সী, কলকাতা
গান্ধার শিল্পের দেশ আজ চেনি হাতুড়ি নিয়ে নতুন এক ইতিহাস গড়ে তুলছে তালিবানি সংস্কৃতির, যেখানে মানবতা বিপন্ন।
প্রত্যেকেরই নিজস্ব মতামত/মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। তাই তালিবানের নিজস্ব মত যাদের কাছে স্বাগত, তাদের কাছে প্রশ্ন রইলো কিছু । আজকাল সহিষ্ণুতার ধ্বজাধারী গণমাধ্যম গুলি যেমন এনওয়াইটি, ওয়াশিংটন পোস্ট, কুইন্ট, ওয়্যার, গার্ডিয়ান ইত্যাদিতে দুর্দান্ত মানবতার নিবন্ধের খবর নেই,আশ্চর্যজনকভাবে আজকাল তাঁরা নিশ্চুপ; আফগানিস্তানে সহনশীলতা এবং মানবাধিকার প্রয়োগের মহান প্রদর্শন সম্পর্কে তাঁদের উদারতা আমাদের অভিভূত করেছে।
আফগানিস্তানে নারীদের স্বাধীনতা এখন সর্বোচ্চ, যেন তারা নিজেরাই পর্দাপ্রথা মেনে নিয়ে শিক্ষার অধিকার ত্যাগ করলেন? এছাড়াও ভারতে অসহিষ্ণুতা ব্রিগেড থেকে কোন শব্দ/মন্তব্য নেই, হয়তো আফগান ভাষার ট্রান্সলেটর নেই, তাই বুঝতে পারছেন না কাবুল সহিষ্ণু না অসহিষ্ণু। তাদের সকলেই কিছু সময়ের জন্য তাদের বাক স্বাধীনতার অধিকার সমর্পণ করেছেন জারজ বিবেকের কাছে ।
বিশ্বের বড়দা আমেরিকা আজ জমি ছেড়ে পালাচ্ছে , কাবুল আর একবার ভিয়েতনাম হয়ে গেলো আমেরিকার ইতিহাসে । ইরাক ,সিরিয়া ,আফগানিস্তান সব জায়গায় শুধু ঐতিহাসিক ভুল আর মানুষের কান্না, কে দেবে এর দাম? সঞ্চিত সব ডলারও কম পরে যাবে মার্কিনদের এই ধংস যজ্ঞের হিসাব দিতে ।
যখন আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে হিন্দু ও শিখদের ভারতে আসতে সাহায্য করার জন্য CAA আনা হয়েছিল; কি অসীম আবেগঘন আবেদন করতেন, সকল গণমাধ্যমে হিন্দু সন্ত্রাস নিয়ে। একই লোক যারা এর বিরোধিতা করেছিল, দাবি করে সবাইকে বোকা বানিয়েছিল, যে এটি একটি সাম্প্রদায়িক আইন। এখন এক বছর পরে, যখন আফগানিস্তান ভেঙে পড়েছে,তখন যেন তাদের ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন গোলযোগ সইতে পারেন না। তখন একই লোকজন আবার,ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করছে,কেন তুমি হিন্দু ও শিখদের ফিরে আসতে সাহায্য করছ না এবং এখন তারা মুসলমানদেরও ফিরে আসতে বলছে শরিয়তি জান্নাতে ফিরদৌস ছেড়ে।
কিন্তু সেই সহিষ্ণুতার মাসিহাদের কটা কথা জিজ্ঞেস করি- মুসলিমরা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে কেন? তারা শরিয়া পছন্দ করে, সেখানে এটা আছে। তারা গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে, সেটাও সেখানে আছে। তারা জন গণ মন এবং বন্দে মাতরম গাইতে চায় না কারণ শরীয়াত বিরোধী, সেখানে এটি নেই। আপনি মূর্তি পূজায় বিশ্বাস করেন না, তাই বামিহান বুদ্ধ সহ, ইতিমধ্যে প্রতিটি মন্দির ধ্বংস করেছেন, তাই মূর্তিপূজা সেখানে নেই। আপনি বোরকা পছন্দ করেন, নারীশিক্ষা বিরোধী, এটাও চালু হলো । আপনি তিন তালাক পছন্দ করেন, এটা আছে। তাহলে আপনি তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তান থেকে পালাতে চান কেন? আপনাদেরই সকল নীতি যে দেশ, অক্ষরের অক্ষরে পালন করছে তা আপনার আদর্শ হওয়া উচিত। অসহিষ্ণু ব্রিগেডে কে কি আফগান তালিবানরা সম্মানিত নাগরিক করে ডেকে পাঠালে, তাদের যাওয়া উচিত নয় সেই স্বপ্নের স্বাধীনতার সমাজে?
এই একই বুদ্ধিজীবী কমিউনিস্টরা সবাইকে বোঝানোর জন্য খুব কঠোর পরিশ্রম করেছে, যে ট্রাম্প খারাপ এবং জো বাইডেন দুর্দান্ত, কিন্তু এখন তারা সবাই কোথায় লুকিয়ে আছে? স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং নারীবাদের নামে আপনাকে বারবার বোকা বানানোর দায়িত্ব তারা নেবে না। তারা পুরো প্রজন্মকে ব্রেইনওয়াশ করে এবং যখন এরকম কিছু ঘটে, তখন তারা পরিচিত ভিকটিম কার্ড খেলে, ঐতিহাসিক ভাবে ভুল করা যেন তাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার। মানুষকে এই দ্বিচারিতা খোলা মনে দেখতে হবে, বুঝতে হবে। আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে মুসলিম শারিয়া অধিকারের জন্য তথাকথিত সব সমর্থক কোথায়? কোথায় গেলো আমেনেস্টি সহ সব মানবাধিকার সংগঠন, সবাই কেন আজ নীরব? আফগান মায়ের কোল খালি হওয়া বা মায়েদের নির্যাতন কি শুধুই শরীয়াতের বিধান না মানবতার অপমান?
আমির খান,আপনি কি ঘুমিয়ে আছেন ভাই, জেগে দেখুন কি সহিষ্ণু বাতাবরণ আজ আফগানিস্তানে? তিনি কি এখনও ভারতে অনিরাপদ বোধ করেন? হয়তো সে আফগানিস্তানে নিরাপদ বোধ করবে? এবং জাভেদ আখতার এবং ভারতের জাগিরদার মনে করা ফার্স্ট ফ্যামিলি নীরব কেন এবং হায়দ্রাবাদের ওয়াইসি সাহেব কি বলবেন, এবার কাবুল ১৫ মিনিটের জন্য হাতে নিন না সাহেব ?
হতে পারে তাদের ‘সত্যিকারের’ মুসলিম সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে,তাদের শিশু ও মহিলাদের সেখানে পাঠানো উচিত? এবং তারপরে একটি সংবাদ সম্মেলন করুন বা কিছু টুইট পোস্ট করুন।,কি উন্নত মানবিক তালিবানি কাবুল এই বলে ।
গ্রেটা আর রিহানা কোথায় আর তাদের সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধুরাই বা কোথায়?
আমাদের তথাকথিত উদার ও নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য চিৎকার করেছিল, কারণ কথিত অপরাধীরা ছিল অমুসলিম। কেন তারা এখন মুসলিম অধিকারের জন্য চিৎকার করছে না? দরকারে বুদ্ধির গোড়ায় সুচিন্তার ধোঁয়া দিয়ে দেখুন, যদি মানবতা জাগে।
কেন কোনো মুসলিম দেশ তাদের আফগান মুসলিম ভাইদের বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না? কেন সবাই শরীয়াতের সুবিধা নিতে প্রথম বিশ্বের দেশ ছেড়ে কাবুল যাচ্ছেনা?
যদি আপনি মানুষের জন্য কথা বলতে না পারেন, তবে প্ররোচনা বন্ধ করুন । ভারত সবাই কে নিয়ে চলতে ভালোবাসে, যদি সে মনে প্রাণে আচরণে ভারতীয় হয় । ৭০ বছরের তোষণের ভ্রান্ত সেকুলার মত নয়, প্রকৃত মানবতা আসুক সারা দেশ জুড়ে। ধর্মীয় উন্মাদনার জিগির নয়, মানুষে মানুষে মিলন হোক শিক্ষায়,শিল্পে , সততার আদর্শে । তরোয়াল নয়, কথা বলুক কলম মানুষের হয়ে ।
কোনো মায়ের কোল যেন হিংসার শিকার না হয়, মানবতার জয় নিশ্চিত হোক বিশ্ব জুড়ে । তালিবান আফগানিস্তান ইতিহাসের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি?