৭৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে মহিলাদের হাতেই পুজো গ্রহণ করছেন যশোরেশ্বরী কালী
নিজস্ব প্রতিনিধি (৬ নভেম্বর ‘২১):- সম্প্রতি মালদা-র এক মহিলা পুরোহিতকে নিয়ে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ যখন আদিখ্যেতা জনিত উদ্বাহু নৃত্যে মত্ত তখন জেনে রাখা ভালো, একটানা ৭৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র সাধিকাদের দ্বারাই নিত্য সেবাগ্রহণ করছেন ‘যশোরেশ্বরী কালী’।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাসদর বারাসাত-এর কলোনী মোড় থেকে বারাসাত ব্যারাকপুর রোড ধরে ব্যারাকপুরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেলেই ডানদিক পড়ে ‘যশোরেশ্বরী কালী মন্দির’ প্রাঙ্গণ।
লোকশ্রুতি অনুযায়ী উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় যতগুলো জাগ্রত কালীমন্দির আছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান বারাসাতের এই ‘যশোরেশ্বরী কালী মন্দির’।
“দেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে বকচরে ভৈরবী সাধিকার হাত ধরে তন্ত্রমতে ‘যশোরেশ্বরী কালী’ প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে বারাসাতে এই দেবী পূজিতা হন বৈষ্ণব মতে,” বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
এই মন্দিরের পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাস আর অলৌকিক ঘটনার হাতছানি।
মন্দির কর্তৃপক্ষের বয়ান অনুযায়ী, “বেনারসের কোনো এক মূর্তি নির্মাতা কষ্টিপাথর দিয়ে এই প্রতিমা নির্মাণ করেন। পরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে তিনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বকচর নিবাসী তন্ত্রসাধিকা কালীদাসী ভৈরবী-র হাতে এই মাতৃমূর্তি তুলে দেন।
১৯৪৬ সালে অবিভক্ত ভারতের নোয়াখালী-তে যখন দাঙ্গার সূত্রপাত হয়, সেই সময় বকচর থেকে বেনাপোল পেট্রাপোল পথ ধরে কালীদাসী ভৈরবী এই মাতৃমূর্তিকে বারাসাতে নিয়ে আসেন।
সেই থেকে গত ৭৬ ধরে এই মন্দিরে দৈনন্দিন পুজোপাঠ থেকে শুরু করে বিশেষ তিথির পুজো হোম সহ যাবতীয় কাজ করেন মন্দিরের সাধিকাগণ।”
বারাসাত পৌরসভা বা রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কোনোরকম সাহায্য না পেলেও, মানুষের শ্রদ্ধা ও ভক্তিকে সম্বল করে ‘যশোরেশ্বরী কালী মন্দির’ আপন মহিমায় বারাসাতের স্থানীয় ম্যাপে ইতিমধ্যে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছে।
“শুধু মৃন্ময়ী মায়ের আরাধনাই নয়, চিন্ময়ী মায়ের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য এই মন্দিরের সাধিকাগণ বাসন্তী পুজোর সময় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া স্থানীয় নরনারীদের হাতে বস্ত্রও তুলে দেন,” বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীবৃন্দ।