“নতুন সূর্য আলো দাও, আলো দাও…….. “
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
বেদ এ সূর্যদেব এবং অগ্নি অভিন্ন তত্ত্ব। এনাকে ‘বিষ্ণু’ মানা হয়েছে কারণ ইনিই রয়েছেন আমাদের চারি পাশের জানা-অজানা এইসব সৃষ্ঠি ও তার বৈচিত্র্যের মূলে। বর্তমান বিজ্ঞান ও আজ ঠিক এই ধারণা ই পোষণ করে। দেখুন, জল আর তার শীতলতা যেমন অভিন্ন, চাঁদ আর তার জোছনা যেমন পৃথক নয়, ঠিক তেমনি ভাবে সূর্য থেকে তার চ্ছটাকে আলাদা ভাবা ঠিক নয়। এই ‘চ্ছটা’ থেকে মুখে মুখে ‘ছট্’ শব্দ এসেছে। তাহলে, ছট্-পুজো আসলে বৈদিক দেবতা, সূর্যের ই পূজো। দৃশ্যমান এই জ্বলন্ত- নারায়ণ এর কাছে পৌঁছানো আপাত অসম্ভব জ্ঞানে, চ্ছটাতে ই তাঁর দেবত্বের আরোপ। ঠিক যে কারনে, সূর্যদেব পুরুষ- বাচক শব্দ হোলেও বিহার, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ড সহ নেপাল এর তরাই অঞ্চলে অ-গুনিত ভক্ত-সন্তান এর কাছে ছট্ বা “ছোটি-মাইয়া” কিন্তু দেবী।
স্বীকার করতেই হয়, আজকের দিনে ছটপুজো এই ক’টি রাজ্যে বন্দী না থেকে, গন্ডি বাড়িয়ে ভারতের প্রায় সব রাজ্যে পৌঁছে গেছে। প.ব. এর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এই পুজোর আবেগ কে সম্মান জানাতে, সরকারি ভাবে ২দিন ছুটি ঘোষণা করেছেন। শিলিগুড়ি শহরে ড্রোন দিয়ে লক্ষ্য-নজর রাখতে হচ্ছে জনসাধারণের ওপরে।
ভেবে অবাক লাগে, বর্তমান সভ্যতার সেই কোন্ ঊষা-লগ্ন থেকে সূর্যের উদ্দেশ্যে পুজো-পাঠ, স্তুতি- প্রার্থনার পরম্পরা চলেছে সারা বিশ্বজুড়ে ! গ্রিসের সূর্য, ‘অ্যাপেলো’ কে বুঝাতে প্রখ্যাত লেখক, Pinder লিখছেন, “fire breathing horses across the sky.”
রোম এ সূর্যদেব ” Sol invectus “। আফ্রিকাতে ইনি পূজিত হন ‘Liza’ হিসাবে, ইরাণ এ ইনি ‘Mitras’, আবার ইনকা দের কাছে ইনিই ‘Inti’। মিশরবাসীরা তো ছিল সূর্যের ই উপাষক। আমাদের ‘ঊষা’ (ভোরের যূর্য) এদের কাছে ‘Ray’।
সনাতন ধর্মের মানুষের বিশ্বাস, সারথি অরূণা’র সাতটি ঘোড়াতে টানা রথে চেপে, অনন্তকাল ধরে বিরামহীন গতিতে আকাশ পথে ভ্রমণরত থাকেন সূর্যদেব । তাঁর সাত টি ঘোড়া আসলে চ্ছটাতে থাকা সাতটি আলাদা রঙের রশ্মির দ্যোতক।
ঋক্ বেদ এ অর্যমা, উরুক্রম, ত্বষ্টা, ধাতা, পূষা, জাতবেদা, বিধাতৃ, বিবস্বান, ভগ, মিত্র, শত্রু, সবিতৃ ইত্যাদি বিভিন্ন নামে ইনি বিশেষিত। শৈব-ধর্মে সূর্য শিবের অষ্ট-মূর্তি’র অন্যতম। পূরাণ এর “পঞ্চ-দেবতার” অন্যতম ও সূর্যদেব। মহাভারত এ দেখা যাচ্ছে, দুর্বাশা মুনির বরে কুন্তীদেবী সূর্যদেব কে আহ্বান করে কর্ণ কে পুত্র রূপে পেয়েছিলেন। মার্কন্ডেয় পূরাণ অনুযায়ী, সূর্য-পুত্র বৈবস্বত মনু ইক্ষাকু বংশের শ্রষ্টা। এর থেকে এসেছে সূর্য-বংশ… যে বংশে জন্মেছেন স্বয়ং প্রভু রাম। বৈষ্ণবদের রাধারাণী ও বৃন্দাবনে সূর্য দেবতার পুজো করেছিলেন বলে কথিত আছে। তাহলে, এই ছট- পুজোর আড়ালে থাকা, “সূর্য-দেব”……..…..কে ইনি ?
ঋক্ বেদ এর ১ম মণ্ডল এর ৫০তম সূক্তের ৪র্থ মন্ত্রে ঋষি বলছেন, “তরণির্বিশ্বদর্শতো জ্যোতিষ্কৃদসি সূর্য।
বিশ্বমা ভাসি রোচনম্।।”…… হে দেব! আপনি এই ভব-সাগরের উদ্ধারকারী। জীবগনের দর্শণ-যোগ্য।
জ্যোতিষ্ক দের শ্রষ্টা। আপনি স্বয়ং প্রকাশ এবং সবার প্রকাশক।
তাহলে, শ্রদ্ধা-নিষ্ঠা ভরে ছট-পুজোর মধ্য দিয়ে কী স্তুতি-প্রার্থনা ই বা করা হচ্ছে তাঁর উদ্দেশ্যে ?
১০ম মন্ডল এর ৩৭তম সূক্তের ১০ম ঋক এ রয়েছে,
” শং নো ভব চক্ষমা শং নো অহ্না শং ভানুনা শং হিসা শং ঘৃণেন। যথা শমঝঞ্ছসমদ্দুরোণে তৎ সূর্য দ্রবিণং দেহি চিত্রম্।।”…… হে সূর্যদেব ! আপনার কিরণ জীবের জন্য সুখকর হোক। আপনার সৃষ্টি করা দিন, আপনার চ্ছটা’র শীতলতা, আপনার দেওয়া উত্তাপ আমাদের জীবনের পথে মঙ্গলময় হোক।
সত্যিই তো, বিশ্ব-উষ্ণায়ন এর এই চরম মুহুর্তে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর জীব-কুলকে রক্ষা করার ক্ষমতা সূর্যদেব ছাড়া, আর কার ই বা আছে !
তাই, দিকে-দিকে আওয়াজ উঠুক,” ছোটে মাইয়া কী জয় হো !”
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.