অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই কি আগামীদিনে বাংলার রাজনীতির মানবিক মুখ – উত্তর খুঁজলেন ফারুক আহমেদ

0
677
Faruque Amamed Walking
Faruque Amamed Walking
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:27 Minute, 22 Second

“অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের মানবিক মুখ ~ ফারুক আহমেদ”

ফারুক আহমেদ

বামফ্রন্টের আমলে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এই বাংলাকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী আবার সামনের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগামী দিনের সব কর্মসূচী প্রচারের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাংলার মানুষের কল্যাণে জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো তাঁর যুববাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে বোঝাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে যে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের জয় সুনিশ্চিত করে তোলার পিছনে অভিষেকের অবদান কারও থেকে কম নয়। তাঁর দূর্বার ডাকেই তৃণমূলের হাত শক্ত করতে সমর্থনের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তাইতো, যতই তলে তলে জোট গড়ুক সিপিএম-বিজেপি, মানুষ বুঝতে সমর্থ হয়েছিল। বাংলার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যার হাত ধরে তাঁকেই বাংলার কুর্সিতে দরকার। যুব সংগঠনই দলের ভবিষ্যৎ। যুব সংগঠনের বৃদ্ধি না হলে, নতুন মুখ উঠে না এলে, যে-কোনও দলেই পচন ধরে। আর মানুষের পাশে, মানুষের কাছে গেলে, দলে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হতে বাধ্য। দলীয় সদস্যপদ নবীকরণ হওয়া মানেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা। সেই সরল সাধারণ মন্ত্রই যুব নেতা হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি যুব শাখার অন্দরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পেরেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর দেখানো পথই তাঁর এগিয়ে চলার সোপান। তাই তো যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই দলের মূলমন্ত্র। বলেছিলেন দলের অন্দরে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত নয়। চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন যুবনেতা-কর্মীদের চলার পথ। তাঁর নির্দেশনামার প্রথমেই ছিল, মানুষের জন্য কাজ। বলেছিলেন, মানুষের জন্য জীবনপাত করুন, স্বার্থসিদ্ধি মানব না। রাজ্য সরকারের কর্মসূচি ও সাফল্যের কথা বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। যুব সংগঠনের মাধ্যমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা গ্রামেগঞ্জে, শহর-শহরতলির অলি-গলি, তস্য গলিতে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে যদি এই বার্তা মানুষের মনে প্রবেশ করানো যায়, তাঁর প্রভাব পড়বে বহুগুণ। দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। দল বাড়বে। সরকারের উন্নয়নমুখী কাজের প্রচারে যোগ দিতে ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করবেন। তাঁদের দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ছাঁকনির কাজ করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে যুবকর্মীদের। আরও একটা বড় কাজ, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। কেননা ছাত্র সংগঠনের পরের ধাপই যুব সংগঠন। ছাত্র নেতা-কর্মীদের যুবস্তরে নিয়ে আসার ও তৈরি করার দায়িত্ব তো যুবনেতা-কর্মীদেরই।

অভিষেক প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, মূল সংগঠনের সঙ্গে নীতিগত ফারাক বা কোনও সংঘাত তিনি চান না। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সর্বস্তরে। মনে রাখতে হবে যুব সংগঠন দলের ডানহাত। এ হাত যত শক্ত হবে, দল ততটাই মজবুত হবে। কিন্তু মূল সংগঠনের সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত থাকা মানে দল নড়বড়ে হয়ে পড়া। যুব শাখার একটা বিশেষ দায়িত্ব থাকে। দলীয় নীতি মেনে সেইসব কাজের মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রচারে মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে এক, দুই বা তিন বলে কিছু নেই। দলের শীর্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নীচে আছেন কর্মীরা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেত্রীর কর্মযজ্ঞকে সফল রূপায়ণে সহায়তা করব। সেই ব্রত নিয়েই তিনি এগিয়ে চলেছেন। যে মন্ত্রে বিধানসভায়, পৌরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল জয় এসেছে, সেই একই মন্ত্রে এবার বিধানসভা নির্বাচনেও (২০২১) সচেতন নাগরিকগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২১১ থেকে বেশি আসনে জয় সুনিশ্চিত হয়েছে। বিভেদমূলক শক্তির পতন সুনিশ্চিত করতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের হয়ে গোটা বাংলা জুড়ে দিদির কথা উন্নয়নের কথা তুলে ধরেছেন।

গ্রামের উন্নয়নে তাঁকে দলনেত্রী যেভাবে কাজে লাগিয়েছেন, সেই মতোই তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বিপুল কাজ করছেন। গ্রামে বিগত দিনে যে উন্নয়নের ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা তিনি তুলে ধরছেন তাঁর যুববাহিনীর মাধ্যমে। বলছেন ভবিষ্যৎ কর্ম যজ্ঞের কথাও। বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে তিনি বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে অংশ গ্রহণকারী প্রার্থীদের হয়ে জোরালো প্রচার চালিয়ে মীরজাফরদের মুখে ঝামা ঘষে দিলেন। এবার ভোটেও কর্মীদের যে-কোনোও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, অসন্তোষ থাকলে দলের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। সাধারণ সম্পাদক ও সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আদর্শ যুবনেতার পরিচয় বহন করতেই আগ্রহী। তিনি চান দুর্যোগ বা ঝড়ে প্রকৃত কাণ্ডারীর মতোই শক্ত হাতে হাল ধরতে। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। যুবাদের অনুপ্রেরণার তিনিই উৎস। আবার রাজনীতিতেও সক্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।

২০২১ বিধানসভা ভোটেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে আনতে তিনিই ছিলেন প্রধান সেনাপতি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। হ্যাট্রিক করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তীকালে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার প্রতি প্রান্তে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। বাংলার কল্যাণে ও দেশের কল্যাণে যুব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই দিদির যোগ্য উত্তরসূরি। তিনিই আলোর দিশা হয়ে উঠছেন।

আসান্ন সমস্ত পৌরসভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আমরা জানি বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। তাঁরা জানেন বৈচিত্র্যময় ভারত হল নানা ভাষার ও নানা জাতের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দেশ হল ভারত। মিশ্র সংস্কৃতি আমাদের অর্জিত বৈভব, তা আমরা কখনোই নষ্ট হতে দেব না।

নয়া নাগরিকত্ব আইন, সিএএ, এবং এনআরসির বিরুদ্ধে উদার সহিষ্ণু ভারতের কোটি কোটি মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে, সংবিধানকে সামনে রেখে সভা-সমাবেশে, প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। বিভেদকামী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে জনতার এই একতা দেখে আমরা মুগ্ধ হই।

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হয়েছিল। মহম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, হিন্দু আর মুসলমান দুটি পৃথক জাতি, তাই দুটি আলাদা দেশ হওয়া দরকার। হিন্দু মহাসভার নেতা সাভারকারও একই নীতিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু ভারতের সংবিধান প্রণেতারা জিন্নাহ বা সাভারকারের পথ নেননি। তাঁরা ভারতবাসীকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর সেই সংবিধানকে অস্বীকার করে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে বাবাসাহেব আম্বেদকর পর্যন্ত সবার সেক্যুলার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্যা-এর নামে দ্বিজাতিতত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সরকার। সংখ্যার জোরে নয়া নাগরিকত্ব আইন সিএএ পাশ করেছে ঠিকই, কিন্তু বিভাজনের রাজনীতির ঘৃণ্য পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে বিজেপি সরকার কতটা সফল হবে তা কিন্তু সময় বলবে। কারণ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে রক্ষা করতে দেশবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার নেতারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছিলেন এবং দেশ বিভাজনের মূলেও ছিলেন তাঁরাই। আজ তাঁদের উত্তরসূরিরা আমাদের দেশপ্রেম শেখাচ্ছেন! এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কী হতে পারে!! যারা বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কখনও কল্যাণ করতে পারে না।

চিটিংবাজ ব্যবসায়ীরা দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পালিয়েছে। আর তাদেরকে ধরে আনতে বিজেপির সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কালো টাকা ফেরত আনতে পারেনি নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সাধারণ মানুষের একাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী এই প্রতিশ্রুতিও পূরণ করতে পারেন নি।

ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ফলে প্রতিদিন কত সাধারণ মানুষ নিঃশব্দে শেষ হয়েছেন এবং হচ্ছেন। নোটবন্দি থেকে জিএসটির মতো অবিমৃষ্যকারী পদক্ষেপে সারা দেশের অর্থনীতি আজ ধ্বংসের শেষ কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, কোন বক্তব্য নেই। ধর্মের বড়ি খাইয়ে গোটা দেশকে আজ ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে চলেছেন তিনি।

দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদী সরকার । বিগত ৪৫ বছরের পরিসংখ্যানে বেকারত্ব সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ দিন দিন দিশেহারা বোধ করছেন। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে উপযুক্ত রোজগারের সুযোগ সুবিধা থেকে অসংখ্য মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। এসবের প্রতিকারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার নিশ্চুপ।

দেশের নাগরিকদের হাজার সমস্যার সমাধান করতে না পেরে, অন্য দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে, গোটা বিশ্বের মানুষের সামনে সংবিধান বিরোধী নতুন নাগরিকত্ব আইন ও কৃষি বিল হাজির করে নরেন্দ্র মোদী সরকার কি বার্তা দিতে চাইছে তা বুঝতে হবে। বিভেদমূলক শক্তিকে রুখতেই হবে।

মানবিক চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক, সর্বোপরি আম-জনতার সচেতন অংশটি গেরুয়া শাসনের প্রশাসনিক বদমায়েশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকগণ তাঁদের ভাবনাচিন্তাকে তুলে ধরেছেন লেখালেখির সুবাদে। বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম ছিল ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন।

সংখ্যাগুরু সমাজের একটি অংশ, যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত, তাদের বোধোদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। ভারতের ঐতিহ্যের, পরম্পরার এবং সংহতির ঘোর বিরোধী গেরুয়া শাসনের অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছেন সচেতন পশ্চিমবাংলার নাগরিকগণ। সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে, ঘাড়ে-গর্দানে এক-হয়ে-যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের রাজাবাবুরা এতদিন যে সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের উপস্থিতিকেই স্বীকার করত না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে গিয়েছেন প্রান্তিকের কাছে ভোট ভিক্ষা চাইতে।

ইতিহাস বলে, বিজেপি’র মূল চালিকা শক্তি আরএসএস ও তার তৎকালীন দোসর হিন্দু মহাসভা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেনি। বরং ইংরেজদের পক্ষেই ছিল তারা। শুধু তাই নয়, দেশভাগের মূলে প্রকৃতপক্ষে ওই দুই সংগঠনের নেতাদের ভূমিকাই ছিল আসল। অথচ, সেই আরএসএস-জাত বিজেপি’র অধুনা নেতারা দেশভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখাতে কী না করছেন! বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ’র শাসনে ভারতের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে, তীব্র বেকারত্ব ও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ধাক্কায় দেশবাসীর নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হয়েছে। সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রায় কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করতে পারছেন না মোদি ও তাঁর দোসররা। কৃষি বিল নিয়ে আন্দোলন চলছে আজ-ও কৃষি বিল বাতিল করতে এগিয়ে আসছে না বিজেপির সরকার।

এই ব্যর্থতা থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে ধর্মকে হাতিয়ার করছেন গেরুয়া নেতারা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবাসীকে বিভক্ত করে নিজেদের আসন নির্বিঘ্ন রাখতে মরিয়া তাঁরা। সেই পরিকল্পনার আরও একটি অংশ হল বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে গ্রাস করে নেওয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের স্বপ্নে বিভোর তাঁরা। ওই স্বপ্ন সফল করতে তারা হাত বাড়িয়েছিল বাংলার দিকে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের দখল নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।

বাংলার যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর সবার প্রিয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রতি মানুষ আস্থা রেখেছেন এবং বাংলা থেকে বিজেপির পতন শুরু হয়েছে। আগামীতে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে এবং লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবে বিরোধী শক্তি। জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে জয় সুনিশ্চিত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন ভরসা। ২০২৩ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হাত থেকে শাসন ব্যবস্থা তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে আসার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। নানান রূপেই বাধা দিচ্ছে ত্রিপুরার বিজেপির সরকার।

সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে একটার পর একটা বিল এনেছে কেন্দ্র সরকার। ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রথম হবেন কি না তা সময় বলবে। তবে দেশবাসী দিদিকেই চাইছে বলেই ২০২৪ সালে মোদী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। জয় সুনিশ্চিত হবে বিরোধী জোটের। সকালের মুখে একটাই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে এখন দেশ বাঁচাতে দিল্লি দাপাবেন হাওয়াই চটি। বাংলার মানুষ ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাই পারে মোদী জামানার অবসান ঘটাতে।

গেরুয়া শিবিরের নানান অন্যায় আগ্রাসনকে রুখে দিতে বাংলার বহু সচেতন ব্যক্তিত্ব জোরদার লড়াই করছেন। লড়েছেন বহু সাধারণ মানুষও। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে তাঁদের এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব ওই সব অগ্রণী অংশের ভাবনাকে প্রণাম।

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় দেড়শো কোটি ভারতীয়দের অনন্যতা রক্ষায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। দেশের মানুষের কল্যাণে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। এটাই আশার আলো।

গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু বিভেদকামী রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে, বিভেদকামী শক্তির অবসান সুনিশ্চিত করতে একটাও ভোট দেবেন না সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারী দলকে।

অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও আমরা সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারিনি। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি।

আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাঁদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই।

আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সে-ই আমাদের দুঃখের সমভাগী।

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দলিত ও সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা অনেক বেশি ঘটছে। “লাভ জেহাদ” ও “গো রক্ষা”-র নামে অসহায় সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, যা চোখে দেখা যায় না। এই সব দৃশ্য প্রকৃত ভারতবাসীদের চোখে জল আনছে।

অপরিকল্পিত লকডাউনের ফলে স্বদেশে চরমভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। ক্লান্ত শ্রমিকরা রেললাইনে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তাও মোদী সরকার নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হতাশাজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

বিভেদকামী শক্তি জাতিবিদ্বেষ ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের প্রতি যে ঘৃণা ও অবজ্ঞা পোষণ করছে তার বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে ওনপারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করে একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। বিভেদকামী নীতির অশুভ প্রয়াস বন্ধ করতেই হবে। মুসলমানদের শত্রু বানানোর প্রচেষ্টা ও ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে জনগণের মধ্যে একতা থাকা জরুরি। হিন্দু সম্প্রদায়ের উদার মানুষজন কিন্তু সর্বদা ভারতের কল্যাণে এবং সংবিধান রক্ষা করতে মুসলমানদের আগলে রেখেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনেও ভারতকে সঠিক পথ দেখাবে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারতের শুভবুদ্ধির নাগরিকরা এগিয়ে আসছেন।

জাতীয় বিপর্যের মধ্যেও হতাশ হওয়ার কোনও কারণ দেখছি না। ভারত আকাশে একদিন মুক্তির সূর্য উঠবেই বিভেদকামী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিহত করতে। সেই মুক্তি সূর্য আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইমমাদের অনুরোধে প্রচার চলছে করোনা থেকে সাবধানে থাকতে। আমাদেরকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতেই হবে করোনা থেকে বাঁচতে। সাবধানে থাকতে হবে এবং সর্বত্র মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে, সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। করোনার জন্য বহু মানুষের প্রাণ হারিছেন ইতিমধ্যে। করোনা থেকে সাবধানে থাকতে পারলেই সবার মঙ্গল। করোনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ হোক। বাংলার মেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেশ পরিচালক হিসাবে দেখতে হলে বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতেই হবে দেশবাসীকে।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক উদার আকাশ।

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here