Writeup by Dr. Dhires Chowdhury, Expert and renowned Doctor and Assistant Secretary, GSI West Bengal…
Fellow, Key person behind the organization “Banchbo” & Editorial Board Member IBG NEWS
১৯ শে মার্চ এর রবিবার কাটলো সুন্দরবনে বাঁচবো বিকশিত স্কুলে। উপলক্ষ স্কুলের তৃতীয় তলে লাইব্রেরী র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। স্কুল সংলগ্ন এলাকার নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য মূলত রেফারাল লাইব্রেরী। সাথে বিকশিত স্কুলের ছোট ছোট শিশুদের জন্য তাদের উপযোগী গল্প বইয়ের সম্ভার। এই প্রয়াসে আমরা পাশে পেয়েছি অ্যাকলারিস উইলিস টাওয়ার্স ওয়াটসন কোম্পানিকে। তারই সাথে উদ্বোধন হলো এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর প্রকল্প বাঁচবো স্বয়ং সম্পূর্ণ প্রকল্প। আর্শিয়া র সাথে যৌথ উদ্যোগে।
উদ্বোধনে পেলাম পবিত্র বাবু Pabitra Sarkar, সুজয় বাবু Sujay Kumar Chanda র মতন বিশিষ্ট বেশ কয়েকজন মানুষজনকে। আসার কথা ছিলো বিশ্বজিৎ স্যারের ও (দি নেওটিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচর্য) কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। এত কষ্ট করে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে প্রত্যন্ত এই জায়গায় ওঁনারা শুধু এলেন তাই নয়, ভীষণ উপভোগ করলেন। মন থেকে। ভাগ করে নিলেন আনন্দ সবার সাথে। শুধুমাত্র উপস্থিতি নয়, সারগর্ভ অনুপ্রেরণা দায়ক বক্তব্য পেশ নয়, পবিত্র বাবু তাঁর ৮৭ বছরের দরাজ গলায় গাইলেন দুটি গান, সুজয় বাবু গাইলেন একটি। এরই সাথে উপভোগ করলেন আমাদের শিশুদের পরিবেশন। বারবার উৎসাহ দিলেন, কখনো বা গানের সাথে গলা মিলিয়ে। স্কুলের পাশের বাড়ির গ্রাম্য মহিলার রান্না তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন। নিজেদের উৎসাহেই ডেকে নিয়ে এসে পরিচয় করলেন রাঁধুনি ভবানী পড়ুয়া র সাথে। শুধুমাত্র ওঁনারাই নয় এসেছিলেন আমাদের অন্যতম সদস্য প্রাক্তন বিজ্ঞানী সুভাষ হাজরা ও প্রাক্তন অধ্যাপিকা জয়শ্রী Jayashree Hazra হাজরা, ব্যাংকের প্রাক্তন উচ্চ আধিকারিক উমা রঞ্জন ভট্টাচার্য, আরক্তিম বাবু সহ তিনজনের টিম অ্যাকলারিস এর পক্ষ থেকে এবং অঞ্জন বাবু সহ সেকেন্ড বিবেকানন্দ ব্রিজ টোলওয়ে কোম্পানির তিন প্রতিনিধি, এলাকার বিশিষ্ট কিছু মানুষ। প্রত্যেকেই উপভোগ করলেন মনোগ্রাহী অনুষ্ঠান বিশেষ করে এক্কেবারে ছোট ছোট শিশুদের মন ছুঁয়ে যাওয়া পরিবেশণ।
এনারা একটি কথাই বারবার বলছিলেন এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত সুন্দর গোছানো স্কুল, এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা, ছেলেমেয়েদের এত সুন্দর করে বড় করে তোলা। উচ্ছসিত প্রশংসা করছিলেন এই প্রয়াসের। সেই সব শুনে সত্যিই বলছি গর্বে বুক ভরে উঠছিলো। মনে হচ্ছিলো বারবার আমাদের সবার পরিশ্রম সার্থক। তবে এর বেশিরভাগ কৃতিত্ব ই প্রাপ্য কুহুর নেতৃত্বে স্কুলের শিক্ষিকাদের। পবিত্র বাবু তাঁর বক্তব্যে একটা কথা উল্লেখ করেছেন বারবার চিরাচরিত স্রোতের বিপরীতে যাওয়া মুষ্টিমেয় মানুষের দলে পড়ি আমরা। জানিনা স্যার এত বড় প্রশংসার প্রাপ্য আমরা কিনা। কিন্তু আপনাদের মতন মানুষদের আশীর্বাদের হাত আমাদের মাথায় আছে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, বল, সাহস, অনুপ্রেরণা আর অবশ্যই আত্মশ্লাঘা র বিষয়ও বটে। পাশে থাকবেন এভাবে…এটাই যে আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় সম্মান। আর কিছু চাইনা…
তবে প্রতিবারের মতনই এবারেও সুন্দরবনে আসা প্রায় তিনদিনের জন্য। সত্যি বলছি সুন্দরবনে ব্যস্ততা কলকাতার থেকেও যেন বেশি। শুক্রবার রাতে সুশীল আর মামাবাবুকে Samir Kumar Dasgupta সাথে নিয়ে পৌঁছানো, পরের দিন শনিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত প্রায় একনাগাড়ে ৭৮ জন রোগীকে দেখা। তারই মাঝে একই সাথে নার্সিং ট্রেনিং ছাত্রীদের হাতেকলমে শেখানো। এই ক্যাম্প প্রতি মাসে চলা জেরিয়াট্রিক ওপিডি র অঙ্গ হিসেবে। ভালো লাগছে দিনে দিনে এই ক্যাম্পে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধুমাত্র তো পরামর্শই নয়, বিনামূল্যে ওষুধ, ইসিজি র ব্যবস্থা। ফ্রি বলে সময়ের কোনো কমতি নেই। আমার রোগী দেখতে এমনিই বেশ খানিকক্ষণ সময় লাগে। দেখা, আলাপচারিতা সব মিলিয়ে। এটা মূলত শিখেছি এ কে রায় চৌধুরী স্যারের Apurba Roychowdhury থেকে। স্যার একটা কথা বারবার বলেন ফ্রি বলে কোনো ঘাটতি যেন না হয়। চেষ্টা করি স্যার, তবে আপনার মতন হয়তো অতটা ধৈর্য্য নেই। ভালো লাগছে নদী পেরিয়ে বেশ দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন দেখাতে। শুনে আনন্দ পাই যখন বলেন ডাক্তার বাবু এখন অনেকটাই ভালো আছি… শরীরের উপর ধকল গেলেও এসবে দিনের শেষে যে তৃপ্তি লাভ করি, সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আমার সাথে সমান তালে সাথ দেয় সুশীল Sushil Sharma, প্রত্যেককে ধৈর্য্য নিয়ে ওষুধ বুঝিয়ে দেওয়া। আর সাথে থাকে মানসী দি, বাবলুদা। এবারেও ক্যাম্প শেষ করে লাঞ্চ করতে করতে বিকেল পাঁচটা। এরই ফাঁকে পরের দিনের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি র জন্য অপূর্ব Apurba Ghosh র সেদিন চলে আসা, আর সন্ধ্যায় এসে পৌঁছানো কুহু Kuhu Sen Chowdhury, পিউ Prianka Ghosh, কুণাল Thē Kîñg Küñál Kùmâr আর এবারের বিশেষ প্রাপ্তি অমিতাভ Amitava Banerjee। আর হ্যাঁ, রোববার সকালে এসে গিয়েছিলেন তপন কাকু Tapan Sen, অসীম কাকু Ashim Pain আর শ্যামল Shyamal Bhuniya। শ্যামল এসে সম্মানিত হলো “Performer of the Year 2022” সম্মানে। ওর জন্য সারপ্রাইজ রাখা ছিলো, তাই আগে থেকে জানানো হয়নি। জঙ্গল মহল থেকে এসে আজ এই উচ্চতায় ওর পৌঁছানো। আমরাও খুব গর্বিত ওর জন্য, ওদের। অর্থাৎ খুকুমণি, লক্ষ্মীদি, উমাদের জন্য। এখনও অনেকে এসেছে যাদের ট্রেনিং চলছে।
আর এভাবেই ব্যস্ততার মাঝেও সুন্দরবন সব সময় টানে। মনকে ভালো করে, একরাশ শুদ্ধ বায়ু, চোখ জুড়ানো সবুজ আর উৎসাহ নিয়ে ফিরে আসা কলকাতায়…
সুন্দরবন বাঁচবো বিকশিত স্কুলের অনুষ্ঠানে ডঃ পবিত্র সরকারের সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত সারগর্ভ বক্তব্যের অন্যতম অংশ বিশেষ:
“…আপনারা জানেন যে আমরা অনেক সময় দুঃখ করি যে পৃথিবীটা স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে চারপাশে যে ধরনের মিডিয়া এবং বিজ্ঞাপন, বিশ্বায়ন, নব্য উদারবাদ এ সমস্ত চলছে তার ফলে মানুষকে শেখানো হচ্ছে যে চাও, চাও। হিসেব করো যে তোমার কি চাই? কি না পেলে তোমার চলবেনা। তাই নিজের দিকে তাকাও। উন্নিশো নব্বই এর পর বিশ্বায়নে এই শিক্ষাটা আমাদের সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার একটা পাল্টা লড়াই আছে। আমাদের সমাজ বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন যে থিসিস থাকলে তার একটা অ্যান্টি থিসিস তৈরি হয়। তাহলে যে দিকে মানুষের প্রবণতা ঝাঁকে ঝাঁকে যেদিকে যায়, স্রোত যেদিকে যায় তার উল্টো স্রোতে চলার কম হলেও কিছু মানুষ দেখা যায়। ধীরেশ ও তার দলবল হচ্ছে সেই মানুষের গোষ্ঠী। আমরা কিছুই করতে পারিনা, আমরা শুধু ওদের পাশে দাঁড়িয়ে ওদের কাঁধে হাতটা রাখি, আর কিছু না। আসল কাজটা ওরা করে এবং এই দেখেই আশা হয় মানুষের এখনও ভবিষ্যত আছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মুখে যখন তাকাই, ওদের কথা ভাবি যে আমাদের দেশে ওরা নাগরিক হিসেবে বড় হয়ে উঠবে, কোন দেশে! যে কথা বলা হলো, আমাদের উপাচার্য মশাই (অধ্যাপক ডঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ, উপাচার্য, দি নেওটিয়া ইউনিভার্সিটি র প্রেরিত শুভেচ্ছা পত্রে) চিঠিতে লিখলেন যে নিরক্ষর দেশ, দরিদ্র দেশ, একটা অস্পষ্ট ভবিষ্যতের দিকে আমরা এগিয়ে চলেছি, ভুল শিক্ষা, ভুল জ্ঞান, ভুল দর্শন, ভুল বিশ্বাসের দিকে। সেখানে পাল্টা লড়াই করবার লোকও আছে…”