ম্যাপ অফ মি (এমওএম) মজাদার এবং কার্যকরীউপায়ে আপনাকে আপনার সমস্যা সমাধান করার প্রশিক্ষণ দেয়।
লক ডাউনের সময়ে ভারতের যুবসমাজকে অনুপ্রেরণাদায়ী কিছু গল্পের মাধ্যমে সজাগ এবং চিন্তাশীল করে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজন।
উদ্যোক্তারা অত্যন্ত স্বতস্ফূর্তার সঙ্গে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। কখনও কখনও সমস্যাটি বোধগম্য হয়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচিত্র দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভবপর হয়। তবে শৈশব থেকেই আপনার মানসিক গঠন যদি কোনও সমস্যাকে দেখার দূরদৃষ্টি দেয়, তাহলে কি এই বিষয়টি আপনাকে আপনার সমাধান পেতে সহায়তা করবে? যদিও এটা দেখে সুদূরপ্রসারী বলে মনে হচ্ছে, তবে এটা সম্পূর্ণ সত্য এবং বাস্তবিক, আর এখন এটাই ঘটছে।
দুই দশক আগে প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা লিসা হেডল্যফ যুক্তরাজ্য থেকে এদেশে এসেছিলেন এটা অনুসন্ধানের জন্য যে ‘ভারতে কিভাবে শিশুরা স্কুলে যায়’- তার এই অভিযানের উত্তর তার কাছ থেকে পাওয়ার পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের ভারতীয় উদ্যোক্তা নির্মাণের জন্য তিনি একটি গোপন রেসিপিও ব্যক্ত করেছিলেন।
লিসা হেডল্যফ ভারতবর্ষের বিদ্যার্থীদের ও যুবকদের মধ্যে এক উদ্যোগ প্রকাশ করেছিলেন, যার মাধ্যমে তারা স্বক্রিয়তার সঙ্গে তাদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে। কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লিতে এবং সম্প্রতি কলকাতায় চালু হয়েছিল ‘ম্যাপ অফ মি’ নামে উদ্যোগ, যা শীঘ্রই বেঙ্গালুরুতে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের সম্বোধন করতে যাচ্ছে।
লিসা হেডল্যফের মতে ‘এমওএম’ হল একটি মোবাইল/ ডিজিটাল সেট, যা যুবক-যুবতীদের ও একবিংশ শতাব্দীর উদ্যোক্তাদের দক্ষতা শিখতে এবং তারা নিজেদের শহরে ব্যবসাজনিত নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়ে ওঠার পথ দেখায়। তিনি বলেন, ‘এমওএম তরুণদের জন্য, তাই এটি কিভাবে দক্ষতা এবং কিভাবে নিজ শহরে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যায়, কিভাবে আপনার চিন্তাভাবনার মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করা যায়, কিভাবে লাভদায়ী নতুন কিছু শুরু করা যায়, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর মানুষকে সহায়তা করা যায়। ‘এমওএম’ দুই ভিন্ন ধারার যুবসম্প্রদায়ের জন্য, ১৮-২৩ বছর বয়সের যুবকদের জন্য যাদের কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে এবং গণপরিবহণের মাধ্যমে যারা কর্মস্থলে যাতায়াত করে এবং এই ২৬টি পদক্ষেপ ১১ ও ১২ শ্রেণীতে পাঠরত যুবকদের আগামী জীবন পরিকল্পনার এক নতুন বিদ্যালয়।
ম্যাপ অফ মি-র কার্যকলাপঃ যদি আপনি ১৬-১৮বছর বয়সের মধ্যে থাকেন এবং জীবন পরিকল্পনার কাজ করতে আপনার স্কুলটি কি কি অন্বেষণ করতে পারে বা যদি কোনও সমস্যার সমাধান করতে চান, তবে আপনি ম্যাপ অফ মি-র ২৬টি পদক্ষেপ অনুসরণ করে নিজের জন্য তৈরি করতে পারেন একটি ব্যবসা অথবা উদ্যোগী অনলাইন বুলেট জার্নাল। এই ২৬টি পদক্ষেপ একটি সহজ পথ যার মাধ্যমে যুবসম্প্রদায় যে কোনো সমস্যা সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা এবং তার সমাধান খুঁজে বার করার দিশা দেখতে পাবে। শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, আপনার লক্ষ্যটি আপনার নিজের বুলেট জার্নালে আশ্চর্য্যজনকভাবে উদ্ভাসিত হয়। আপনি যে তথ্যটি পেয়েছেন তা সম্পূর্ণ সংরক্ষিত, সুসজ্জিত, এবং সেটি আপনার নিজের তৈরি করা পরিকল্পনার জন্য লগ করা হয়েছে।
অনলাইন থেকে অফলাইনে: লকডাউনের কারণে এই উদ্যোগটি বর্তমানে অনলাইন আছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পুণরায় শুরু হওয়ার পর আবার এটি পৌঁছে যাবে গন্তব্যে, যখন বিটি স্বেচ্ছাসেবকরা এবং স্কুল দলগুলি বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়ের যুবকদের কাছে এই অভিনব ২৬টি পদক্ষেপের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং প্রযুক্তিটি, উভয়ই একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার তৈরি করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাউকে বলতে সক্ষম করে তুলবে যে তারা কিভাবে সঠিক দিশা পেয়েছে।
তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতি আলোকপাত: ‘ম্যাপ অফ মি’-র মাধ্যমে যুবকরা জানতে পারবে শহরের পথচলতি খাবার থেকে শুরু করে পথ শিল্পকলা পর্যন্ত এবং আরও জানতে পারবে শহরের যুব উদ্যোক্তারা কিভাবে প্রত্যেকের জন্য সমস্যার সমাধান করে চলেছে, তারা এবিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধানও করে চলেছে। চ্যানেলটিতে তরুণ স্থায়ী উদ্যোক্তাদের নিয়ে একশটিরও বেশি বৈচিত্র্যময় গল্প রয়েছে, এর বেশিরভাগই তরুণীদের নিয়ে।
লকডাউন আশীর্বাদস্বরূপ
স্বাভাবিকভাবে লকডাউনে তরুণরা কিছুটা অবসাদে ভুগছে। ‘এমওএম’ আশা করে যে এই ধরনের অনুপ্রেরণাদায়ী গল্পের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে এবং নতুন কিছু শেখাতে উৎসাহিত করবে। ‘এমওএম’ নিয়মিত অনলাইনে, বিনামূল্যে, নতুন সামগ্রী বিতরণ করছে, যা আপনি কুইজের সঠিক উত্তরের মাধ্যমে পুরস্কারস্বরূপ জিতে নিতে পারেন – সাইকেল, হেলমেট অথবা ব্যাগপ্যাক – যা স্কুল বা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন।
অতীত এবং বর্তমান সাফল্যঃ এটাই তাঁর সাফল্যের প্রমাণ এবং দৃষ্টিকোণ। লিসা ভারতে বহু বছর অতিবাহিত করার মাধ্যমে স্বল্প আয়ের গোষ্ঠীর তরুণদের মধ্যে উদ্যোগী দক্ষতার বিকাশ করেছেন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সমাধান তৈরি করতে বিহারের এক হাজার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফলাইনের মাধ্যমে গ্রাফিক উপন্যাসগুলি পৌঁছে দিয়েছেন এবং অনলাইন অথবা টেলিভিশনের মাধ্যমে নতুন প্রকাশিত ‘ম্যাপ অফ মি’ পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছেন। শিশুদের টুকরো টুকরো খবর পরিবেশনা এবং স্কুল টিভিতে তাদের চিন্তাশক্তি, ব্যবসায়িক দক্ষতা ব্যবহার করে প্রত্যেক তরুণের জন্য তারা কি করতে পারে তা সম্পর্কে বাধ্যতামূলক বিবরণী প্রকাশ করেছে।