মানুষের কল্যাণে মুক্তি সূর্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফারুক আহমেদ
মানুষের কল্যাণে তিনি হয়ে উঠেছেন মুক্তি সূর্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাদের গর্ব। তিনি বাংলার গর্ব। আমাদের ভারতের গর্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলার মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়া ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। আমরা আবারও দেখলাম করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাতে মানুষকে সচেতন করতে তিনি পথে নামলেন। ২১ দিন লকডাউন চলছে দেশ জুড়ে। সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য তিনি সর্বদাই বিনয়ীভাবে পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। যখনই সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবিক হয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। এটা তাঁর মহত গুণ। লকডাউনের সময়ে কেউ যেন অভুক্ত না থাকেন তার জন্য তিনি সরকারি নির্দেশ দিলেন। নিজে গ্রাম ও শহরের অলি গলিতে গিয়ে সাধারণ মানুষের হাতে চাল-ডাল-আলু-বিভিন্ন সামগ্রী তুলে দিলেন।
বিভিন্ন ভবঘুরে ঠিকানাহীন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিলেন।
রিক্সা চালক থেকে কৃষক ও মজদুর কেউ অসুবিধার মধ্যে পড়লে তাদেরকে চিহ্নিত করে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন।
লকডাউন চলছে পুলিশকে আরও মানবিক হয়ে মানুষের জন্য সাহায্য করতে নির্দেশ দিলেন।
পশ্চিমবাংলার অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, প্রশাসনের আধিকারিক, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও প্রকাশনের আধিকারিক ও পুলিশের মানবিক ভূমিকা দেখে আমরা সত্যি গর্বিত।
বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সমাজসেবী সংগঠন মানুষের জন্য কাজ করতে এগিয়ে এলেন। পতাকা ও জিডি হসপিটালের কর্ণধার মোস্তাক হোসেন থেকে শাহরুখ খান কে নেই মানুষের পাশে।
রতন টাটা থেকে আজীম প্রেমজী।
সর্বভারতীয় নবচেতনা থেকে শিস নীরবে মানুষের সেবায় এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সমস্ত নেতা কর্মী থেকে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করলেন।
এই প্রথম দেখলাম সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থনকারী ও নেতা-নেত্রীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মানবিক দায়িত্ব পালনে মুগ্ধ হয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন।
সর্বদল বৈঠকে সব রাজনৈতিক দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশকে সঠিক রাস্তা দেখাতে এগিয়ে এলেন।
বিপদের সময়ে প্রকৃত মানুষ ও বন্ধু চেনা যায়। এই মুহূর্তে বাংলার মানুষের কল্যাণে পরম বন্ধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বিগত চৌত্রিশ বছরের বামশাসনের অনিয়মকে একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাংলাকে নতুন জীবন দেওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজ নিপুণভাবে সামলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি ত্রিস্তরীয় কয়েটি পঞ্চায়েত, দু’টি বিধানসভা ও পৌরসভার নির্বাচনে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। প্রথম সরকারে আসার পর সন্ত্রাস, সারদাকাণ্ড, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড ইত্যাদি ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষ পঞ্চায়েত ও অনৈতিক জোট নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে পালটা চাল দেবেন। কিন্তু গ্রামবাংলার মানুষ কার্যত সেই আশায় জল ঢেলে মমতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন।
পৌরসভা ও উপনির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত যে, সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে জানে এই তৃণমূল সরকারই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম সরকারে আসেন তখন তাঁর সামনে জে-দুটি মূল সমস্যা হাজির হয়েছিল তা হল জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদ। মাওবাদ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জঙ্গলমহল ও পাহাড় সহ রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদ। জঙ্গলমহলের জন্য তিনি আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করেন। তাদের পূনবাসনের ব্যবস্থা নেন। জঙ্গল মহলের জন্য পৃথকভাবে পুলিশ ও হোমগার্ড নিয়োগ করেন। দু’টাকা কিলোদরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
জঙ্গলমহলের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেল। পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করলেন। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন বাজেটে। আবার তারা পৃথক রাজ্যের দাবি জানালে তা-ও কঠোর হাতে দমন করেছেন। নবান্ন ও মহাকরণ থেকে জেলায় প্রশাসনিক মহল সর্বত্র তিনি কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। যতই সমালোচনা হোক না কেন, তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে বিডিও, এসডিও, ডিএম, জেলা সভাধিপতিদের মুখোমুখি বসে সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের পথ বাতলে দেন। সম্প্রতি কল্যাণীতে প্রশাসনিক বৈঠকের সময় দেখেছি এক খুদে শিশু আড়াই বছরের কন্ন্যা রাইসা নুরও বাবার কোল থেকেই দিদি ওই তো দিদি বলে ছুটে যেতে চাইছে দিদির কোলে।
সকল শ্রেণির মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন আকাশ স্পর্শ করছে।
২০১৯ লোকসভার জন্য তিনি যখন যেখানে জনসভা করতে গিয়েছিলেন সেই জনসভার মাঠ জনপ্লাবনে ভরে উঠেছিল।
দেশের ও দশের কল্যাণে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের নিকট দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চালু করেছেন বঙ্গসম্মান। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তার জন্য তৎপর হয়েছেন। কৃষি ঋণ মুকুব করেছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তিনি জেলায় জেলায় আরও হাসপাতাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিপিপি মডেল স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ এই রাজ্যে প্রথম।
সখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নে বামশাসকেরা ছিলেন নির্বিকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু উদ্যোগী হলেন। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি অনেক মুসলমান গোষ্ঠীকে ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চাকরিক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন।
বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, কবরস্থান, ঈদ্গাহ সংস্কারের জন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সক্রিয় করে তুলেছেন। রাজ্যে হজ টাওয়ার ও হোস্টেল নির্মাণ করেছেন। সংখ্যালঘু সঙ্কটকে তিনি গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার এত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন। পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এতো বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। ফলে সামগ্রিক বিচারে এই উন্নয়নকে সার্থক বলা যায় অনায়াসেই। যা চৌত্রিশ বছরে সম্ভব হয়নি, তা মাত্র এই কয়েক বছরে সম্ভব নয় কখনওই – এই বোধ আমাদের থাকা দরকার।
বিরোধীদের অনৈতিক জোট যে মানুষ বরদাস্ত করেনি, তার প্রমাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বামসরকারের রাজত্বে সংখ্যালঘুদের হাতে না মেরে ভাতে মারা হয়েছিল। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান, সবদিক থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। মমতা-সরকার এই বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে। বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজিপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। কারণ সংখ্যালঘুদের ভোট যাদের দিকে যাবে তারাই সরকার গড়বে।
জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় সংখ্যালঘুদের সঙ্কট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। জ্যোতি বসুর শাসনকালে মুসলিমদের জন্য চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন জনাব হাসানুজ্জামান, তাতে জ্যোতি বসু বলেন, ‘জনাব হাসানুজ্জামান কি মুসলমানদের জন্য কারাগারেও সংরক্ষণ চাইছেন।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার জমানায় বলেছিলেন, ‘মাদ্রাসা-মক্তব হল সন্ত্রাসবাদ আখড়া।’ এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন।
মনে রাখতে হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বহুগুণে ধ্বংসাত্মক আর শক্তিশালী। সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতি মুসলমানদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, জহরলাল নেহুরু একথা স্পষ্ট করে লিখেছিলেন। এর সত্যতা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে। সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে যারা জিতেছে লোকসভা ভোটে বা বিধানসভা ভোটে, ভাল কাজ করলেও তাদের অনেককেই প্রার্থী করা হয় না বা আসন বদল করা হয়। কখনও-বা ঠেলে দেওয়া হয় হেরে যাওয়া আসনগুলিতে। মুসলিম প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় সুচতুরভাবে।
সাধারণ মানুষ কিন্তু রাজনীতির এসব প্যাঁচ পয়জার বোঝে না। তারা চায় প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। যেমন মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবী দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন সচেতন মানুষ। যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিকটা হলেও সে দিকে অগ্রসর হতে পেরেছেন। তাঁর দলের মহাসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষাপ্রসারে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। বেশ কয়েকটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেকগুলি নতুন কলেজ খুলেছেন।
বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস-এর দিকে থাকা মুসলিম ভোটে থাবা বসাতে চাইছে, রাজ্যের মানুষের মুখে মুখে অনৈতিক জোট নিয়ে জোর চর্চা চলেছিল ওইসমশ। বাম-কংগ্রেস নেতারা বারবার ছুটে যাচ্ছিলেন ফুরফুরাতে। কোন দল কতটা সমর্থন পাবে তা ভাবার বিষয় ছিল।
বাংলার সাধারণ মানুষ বোকা নয়, তারা এখন বুঝতে পারেন। কে বা কারা রাজ্যের মানুষের ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত কল্যাণ চান।
বিগত ৩৪ বছর বাংলার মানুষ দেখেছেন সংখ্যালঘুদের চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোন চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যের ২৩ টা জেলায় বামফ্রন্টের পার্টি সম্পাদক আছেন, কিন্তু কোনও মুসলিমকে আজও সম্পাদক পদে বসাতে পারেননি বাম কর্তারা। বামফ্রন্টের কর্তারা বলেন, তারা নাকি অন্যদের থেকে অসাম্প্রদায়িক। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কখনও মুসলিম আধিকারিককে বসাতে পারেননি, কেন এই প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এই কালো ইতিহাস বাংলার মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে না। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কয়েকজনকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনেও বসিয়েছেন। বাম সরকার যা কখনও ভাবতেই পারেনি।
বামফ্রন্টের কর্তারা শুধু ভোটের সময় ভোট লুঠ করতে আর লেঠেল বাহিনী করে মুসলিমদের এবং দলিতদের এগিয়ে দিয়েছে সুচতুরভাবে। মারছে মুসলিম, মরছে মুসলিম আর মরছে দলিতরা। বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি তাদের চালাকি ও অত্যাচারের কথা।
সম্প্রতি রাজ্যসভাতে যাকে পাঠানো হয়েছে তিনিও ভট্টাচার্য। বাম ও কংগ্রেসের জোট বন্দ্যোপাধায় ও ভট্টাচার্য থেকে বেরিয়ে আসতেই পারিনি। সংখ্যালঘু ও দলিতদের কথাও ভাবতে হবে।
অপ্রত্যাশিত দেশভাগের ফলে সাবেক বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজ পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। মানসিক অস্বস্তিকাতরতায় আচ্ছন্ন মুসলমান জাতিস্বত্বা এই প্রায় সাড়ে সাত দশকে কোন অবস্থানে তার হালচাল হদিশ করার অভিপ্রায় নিয়েই এই লেখার প্রয়াস।
স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলায় জীবন বিকাশের হরক্ষেত্রে বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মুসলমানদের নানামতে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ‘গণতান্ত্রিক সাম্যতাহীন’ নির্লজ্জ স্বার্থসিদ্ধি আর নানাবিধ ধান্ধাবাজির সওয়ালে দাবার বড়ে হিসেবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে এই নিঃসহায় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মাদারি নাচের উপাদান করে তুলেছে, তার একটি নির্মোহ আর অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ মারফত বিভাগ পরবর্তীকালের হরেক কিসিমের কারসাজির উৎসকেন্দ্রকে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ বাবদে প্রশ্নাতীতভাবেই নিঃস্পৃহ থাকিনি। নির্মোহ থাকার চেষ্টাও করছি। খোলসা করে বলা দরকার, সত্য নির্মম, সেক্ষেত্রে কাউকে রেয়াত করার প্রশ্নই ওঠে না। সে সুযোগও নেই, কেননা কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী এই ধর্মবিশ্বাসী সমাজ ‘সিউডো সেক্যুলার’, নরম ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের সমস্ত রকমের ফন্দি আর ফিরিক অনুধাবনের পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশবিভাগের পর তারা অন্তবিহীন সমস্যায় আক্রান্ত, জর্জরিত এবং তারা রাজনৈতিক সমাধান কোন পদ্ধতিতে সম্ভব তার তত্ত্বগত, কৌশলগত আর পরিস্থিতি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বিগত দুই বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে। কোনও ‘ললিপপ’ আজ তাদের তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়।
অতলান্তিক সমস্যা আর অস্তিত্বের সংকটগুলো অতিক্রম করে কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবে তার পূর্ণ একটি ছকও সংখ্যালঘু মনে ক্রিয়াশীল।
বিগত বাম শাসনের অহমিকা, ঔদ্ধত্য, ভণ্ডামি আর দুর্নীতির গহ্বরে নিমজ্জিত তস্কর শাসকগোষ্ঠীর বলির পাঁঠা হতে তারা আর আগ্রহী নয়। বাম জামানায় প্রশাসনিক বদমাইশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সমাজ এখনও সচেতন আছেন। তারা ভুলে যায়নি জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় সংখ্যালঘুদের সংকট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। সর্বদিক থেকে তাদের হাতে না মেরে ভাতে মারার সেই সুকৌশল আজও ভোলার নয়। এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষ ও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন।
যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- এর দল বিধান চন্দ্র রায়ের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সকলকেই চমকে দিয়ে ২১১টা আসনে জয়ী হয়েছে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মিটিং-মিছিল করে জোটের মুখে ঝামা ঘসে ও চুন-কালী মাখিয়ে তাদের পতন সুনিশ্চিত করেছে বাংলার মানুষ।
যেসব ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে তা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষ চান প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় অবশ্য স্বর্ণযুগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেকগুলো কলেজ খুলেছেন।
রাজ্যের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকদের মধ্যে অন্যতম ফিরহাদ হাকিম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা নিষ্ঠার সঙ্গে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করছেন। আপদে-বিপদে রাজ্যের মানুষের পাশে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নগর উন্নয়নে ফিরহাদ হাকিম-এর শুভ উদ্যোগ প্রাণিত করছে শহরবাসীকে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম তিনি কলকাতার মেয়ের হলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ হয়েও।
আশার কথা, মানবীয় চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক সর্বোপরি আম-জনতার মধ্যে থেকে সচেতন অংশটি বাম শাসনের প্রশাসনিক বদমাইশি সম্পর্কে নিরন্তন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকদের ভাবনাচিন্তাকেও তুলে ধরেছিলাম আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ সংকলনে ‘কংগ্রেস ও বাম শাসনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক’ গ্রন্থে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশে যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত তাদের বোধদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। যার ফলে বাম শাসনের অবসান ঘটাতে আমরাও এগিয়ে এসেছিলাম। পরন্তু সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে- স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক হয়ে যাওয়া বামফ্রন্টের রাজাবাবুরা এতদিনে যে সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজাংশের উপস্থিতিকেই স্বীকার করতো না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন সংখ্যালঘুদের কাছে। সংখ্যালঘুরা চান সমদৃষ্টি সমাজ বিকাশ। তাঁরা সময়ের বিচার করেছেন এবং বিপুল ভাবে জয় দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফিরিয়ে এনেছেন। লোকসভা নির্বাচনেও তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন বলেই তৃণমূল কংগ্রেসের জয় এসেছে ২২ টি আসনে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন বৈষম্য না করে উন্নয়ন করা যায়। বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করতে হয়।
সামনে পৌরসভা ও বিধানসভা নির্বাচন তাই সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য বিভেদমূলক আইনের বিপক্ষে মানুষকে সচেতন করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশকে সঠিক রাস্তা দেখাতে এগিয়ে এলেন।
প্রশান্ত কিশোর তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করতে যে কৌশল অবলম্বন করছেন তাতে বুমেরাং হওয়ার সম্ভবনা প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। প্রশস্ত কিশোরের টিমের জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার সুনিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। বরং ওই টাকা সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য খরচ করলে বেশি উপকৃত হবে তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ প্রশান্ত কিশোর উগ্র হিন্দুত্বকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা বাংলা এখানে সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে আন্দোলন করছেন সচেতন মানুষ। বিজেপির বিরুদ্ধে গর্জে উঠে আন্দোলন করছেন। বিগত পঞ্চয়েত নির্বাচনে ভুলের জন্য বাংলায় বিজেপি ১৮ সিটে সহজে জয় পেয়েছে।
বাংলার মানুষ কতটা ভুল করেছিল বিজেপিকে ভোট দিয়ে তা এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারলেন। নয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিল করতে জোরালো ভূমিকা পালন করছেন সচেতন বাঙালি ও দেশবাসী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তরিক চেষ্টা করছেন, বাংলার মানুষের সার্বিক কল্যাণে তিনি বদ্ধপরিকর থেকে কাজ করতে। তাঁর আন্তরিক চেষ্টার যে উদ্যোগ লক্ষ্য করেছি তাতে তিনি অনেক অংশেই সফল হয়েছেন। পাহাড় ও জঙ্গলমহল হাসছে। করোনা ভাইরাস থেকে বাংলার মানুষকে রক্ষা করতে বড় ভূমিকা পালন করছেন।
উচ্চশিক্ষায় এবং চাকরিতে সংরক্ষণের ফলে চরম উপকৃত হচ্ছে বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ। এই সুফল অন্য সরকারের রাজত্বে অধরা ছিল। সিপিএম-এর ক্ষমতায় থাকার সময় যে রাজনৈতিক খুন-ধর্ষণ-তোলাবাজি-ঘরছাড়া করা অতিমাত্রায় চলত তা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষের পাশে মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প ৬৩টি দেশকে পিছনে ফেলে সেরার শিরোপা অর্জন করল। সব মিলিয়ে ৫৫২টি নাগরিক পরিষেবা প্রকল্পের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রকল্প হিসাবে জাতিসংঘ প্রথম পুরস্কারে পুরস্কৃত করল পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর স্বপ্নের ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পকে।
রাজ্যে কন্যাসন্তানদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে ২০১৩ সালে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পটি চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাম থেকে শহর, প্রত্যন্ত এলাকায় ৩৯ লক্ষ ছাত্রী এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে ইতিমধ্যেই। ‘কন্যাশ্রী’র জন্য ইউনিসেফ রাজ্যকে আগেই পুরস্কৃত করেছে। নেদারল্যান্ডের দ্যা হেগ শহরে জাতি সংঘের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরস্কৃত হয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ৬৩টি দেশের মোট ৫৫২টি প্রকল্পের মধ্যে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পটি প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে নিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা জয়ী হয়ে সকলের মনে দাগ কাটে। বিশেষভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষকে আলোকিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানুষের কল্যাণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বহু প্রকল্প বিশ্বের বহু দেশকে পথ দেখাল।
দেশের মধ্যে বাংলা বহু প্রকল্পে কাজের দিকে প্রথম হয়েছে এবং পুরস্কার পেয়েছে।
মানুষের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিবেক সদাজাগ্রত। বাংলার মানুষ জানেন ও বুঝতে পারেন কে বা কারা তাদের আসল বন্ধু। নিজের দলের লোকও যদি অপরাধ করেন তাকে রেয়াত করেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সর্বদাই মানুষের পাশে থেকে সার্বিক কল্যাণে তিনি বদ্ধপরিকর হয়ে কাজ করছেন এবং রাত দিন এক করে দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে তিনিই একমাত্র ভরসা।
বামফ্রন্টের আমলে চৌত্রিশ বছরের শেষের দিকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে যা অগ্রগতি হয়েছে তা ড. আবদুস সাত্তার-এর হাত ধরে। সংখ্যালঘুদের কল্যাণে প্রকৃত অর্থে বিপুল পরিমাণে যিনি কাজ করেছেন তিনি হলেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ওই সময় চাকরিতে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব ছিল ৮ শতাংশ যা অন্যদের সময় নেমে এলো ২ শতাংশে। সার্বিক বিচারে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়-এর পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এখন একমাত্র আশার আলো। এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের কল্যাণে আলোর দিশা। তিনিই সেরার সেরা মুখ্যমন্ত্রী এই মুহূর্তে দেশের মধ্যে।
তৃণমূলের ‘বিরাট কোহলি হয়ে উঠেছেন তিনি। যে কোনও পরিস্থিতিতেই যে সেরা প্লেয়ার, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ২০১৬-তে রাজ্যের ক্ষমতায় মমতার প্রত্যাবর্তনের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন তিনি। বাংলার যুবশক্তির মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি। ২০১৬ নির্বাচনে তৃণমূল যুব দলের সেই অধিনায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব সম্প্রদায় শপথ নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার কুর্সিতে ফের অধিষ্ঠিত করবেন। তা করেও দেখিয়েছেন। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পিছনে অনেকেই দারুণ ‘খেলেছেন’। কিন্তু ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকায় চষে বেড়িয়ে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন। বাংলার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দাপিয়ে বেড়িয়ে তুলে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিগত পাঁচ বছরে রাজ্যের উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাওয়ার কথা। বামফ্রন্টের আমলে পিছনের সারিতে চলে যাওয়া এই বাংলাকে যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী আবার সামনের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের কথা বাংলার ঘরে ঘরে পাঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মমতার সাফল্য, মমতার আগামীদিনের কর্মসূচী প্রচারের মূল দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সেইমতো তাঁর যুববাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে যেতে, মানুষকে বোঝাতে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে যে উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে মমতার জয় সুনিশ্চিত করে তোলার পিছনে অভিষেকের অবদান কারও থেকে কম নয়। তাঁর দূর্বার ডাকেই তৃণমূলের হাত শক্ত করতে সমর্থনের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। তাই তো যতই জোট গড়ে সিপিএম-কংগ্রেস মানুষকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিল, অত্যাচারী সিপিএমকে আর নয়, বাংলার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে যার হাত ধরে তাঁকেই বাংলার কুর্সিতে দরকার।
যুব সংগঠনই দলের ভবিষ্যৎ। যুব সংগঠনের বৃদ্ধি না হলে, নতুন মুখ উঠে না এলে, যে-কোনও দলেই পচন ধরে। আর মানুষের পাশে, মানুষের কাছে গেলে, দলে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হতে বাধ্য। দলীয় সদস্যপদ নবীকরণ হওয়া মানেই দলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা। সেই সরল সাধারণ মন্ত্রই যুব নেতা হিসাবে রাজ্যের প্রতিটি যুব শাখার অন্দরে প্রবেশ করিয়ে দিতে পেরেছেন অভিষেক। বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন তৃণমূল যুব সভাপতি। নেত্রীর দেখানো পথই তাঁর এগিয়ে চলার সোপান। তাই তো যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই দলের মূলমন্ত্র। বলেছিলেন দলের অন্দরে অশান্তি-বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত নয়। চূড়ান্ত করে দিয়েছিলেন যুবনেতা-কর্মীদের চলার পথ। তাঁর নির্দেশনামার প্রথমেই ছিল, মানুষের জন্য কাজ। বলেছিলেন, মানুষের জন্য জীবনপাত করুন, স্বার্থসিদ্ধি মানব না। রাজ্য সরকারের কর্মসূচি ও সাফল্যের কথা বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হবে। যুব সংগঠনের মাধ্যমেই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা গ্রামেগঞ্জে, শহর-শহরতলির অলি-গলি, তস্য গলিতে ছড়িয়ে পড়বে। রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মধ্য দিয়ে যদি এই বার্তা মানুষের মনে প্রবেশ করানো যায়, তাঁর প্রভাব পড়বে বহুগুণ। দলের প্রতি, দলনেত্রীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকবে। দল বাড়বে। সরকারের উন্নয়নমুখী কাজের প্রচারে যোগ দিতে ভিন্ন ভিন্ন দল থেকে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করবেন। তাঁদের দলে অন্তর্ভূক্তির জন্য ছাঁকনির কাজ করার গুরুদায়িত্ব নিতে হবে যুবকর্মীদের। আরও একটা বড় কাজ, ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলা। কেননা ছাত্র সংগঠনের পরের ধাপই যুব সংগঠন। ছাত্র নেতা-কর্মীদের যুবস্তরে নিয়ে আশার ও তৈরি করার দায়িত্ব তো যুবনেতা-কর্মীদেরই। অভিষেক প্রথম থেকেই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, মূল সংগঠনের সঙ্গে নীতিগত ফারাক বা কোনও সংঘাত তিনি চান না। এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে সর্বস্তরে। মনে রাখতে হবে যুব সংগঠন দলের ডানহাত। এ হাত শক্ত হবে, দল ততটাই মজবুত হবে। কিন্তু মূল সংগঠনের সঙ্গে স্বার্থ-সংঘাত থাকা মানে দল নড়বড়ে হয়ে পড়া। যুব শাখার একটা বিশেষ দায়িত্ব থাকে। দলীয় নীতি মেনে সেইসব কাজের মাধ্যমেই দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রাজ্যের উন্নয়নের প্রচারে মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসে,এক দুই বা তিন বলে কিছু নেই। দলের শীর্ষে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর নীচে আছেন কর্মীরা। আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেত্রীর কর্মযজ্ঞকে সফল রূপায়ণে সহায়তা করব। সেই ব্রত নিয়েই তিনি এগিয়ে চলেছেন।
গ্রামের উন্নয়নে তাঁকে দলনেত্রী যেভাবে কাজে লাগাতে চান, সেইমতোই তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিলেন। গ্রামে বিগত দিনে যে উন্নয়নের ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা তিনি তুলে ধরছেন তাঁর যুববাহিনীর মাধ্যমে। বলছেন ভবিষ্যৎ কর্ম যজ্ঞের কথাও। ২০১৬ বিধানসভা ভোটে মাথাচাড়া দিয়েছিল অনৈতিক জোট। তাঁকে সমূলে উৎখাত করা গিয়েছে। এবার ভোটেও কর্মীদের উদ্ভূত যে-কোনোও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন তিনি। বলেছেন, অসন্তোষ থাকলে দলের মধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নিতে। যুব সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি আদর্শ যুবনেতার পরিচয় বহন করতেই আগ্রহী। তিনি চান দুর্যোগ বা ঝড় প্রকৃত কাণ্ডারির মতো শক্ত হাতে হাল ধরতে। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও হাল ধরলেন। স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যবাসীকে উপহার দিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। এবং তিনি যুবাদের অনুপ্রেরণার উৎস।
সামনপ পৌরসভা ও বিধানসভার ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল ভাবে জিতিয়ে আনতে তিনি প্রধান সেনাপতি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে তিনি সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। হ্র্যাট্রিক করতে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তীকালে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার প্রতি প্রান্তে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় পদক্ষেপও নিচ্ছেন তিনি।
বাংলার কল্যাণে ও দেশের কল্যাণে যুবসম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিদির যোগ্য উত্তরসুরি হয়ে উঠেছেন।
অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারেনি দেশবাসী। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি। আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন একদিন নদীর ভাঙনে তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই।
আমরা বঞ্চনা চাই না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সে-ই আমাদের দুঃখের সমভাগী।
দিল্লির দাঙ্গা হাঙ্গামার কান্ডারীদের কঠোর সাজা হোক। এ সংকট মানবতার সংকট, ভারতীয় চেতনার সংকট, সম্প্রীতির ঐক্যের যে দীর্ঘ লালিত সাধনায় যে ভারতাত্মা সারা পৃথিবীর বুক জুড়ে প্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিল, এই সংকট তার সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে ঘৃণা অসহিষ্ণুতা বিদ্বেষের বিভেদের বিষাক্ত ছোবলে ভারতাত্মাকে ক্ষত-বিক্ষত করছে, কালিমালিপ্ত করছে। এ হিন্দুর ধর্ম নয়, এ ভারতের ধর্ম নয়, এ মানুষের ধর্ম নয়, এ মুসলমানদের ধর্ম নয়, এ হল দাঙ্গার ধর্ম, এ হল ধ্বংসের ধর্ম এবং এটাই হল আসল দেশদ্রোহিতার ধর্ম। যারা এই দাঙ্গা করছে, যারা বলছে, গোলি মারো শালোঁ কো, তারা ভারতের সাধনাকে ধ্বংস করছে, তারাই আসল দেশদ্রোহী। এদের চিহ্নিত করে বয়কট করুন এবং প্রশাসনের হাতে তুলে দিন। যারা আইন হাতে তুলে নেওয়ার আওয়াজ তোলেন তাদের সাজা হোক।
২০১৪ ও ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি। তারপর থেকে দেশে কয়েক শত মানুষের রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ গিয়েছে তার সুবিচার আজও অধরাই থেকেছে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মুসলিম পরিবার ঘরছাড়া হয়েছেন। দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার বলি হয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে বহু দিল্লিবাসী মুসলমান। মুসলমানদের উপর ক্রমাগত আঘাত হানছে বিভেদকামী শক্তি।
ভারতীয় মুসলমানদের আতঙ্কিত ও অস্তিত্বের সংকট দূর করতে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের উদারচিন্তার বহু গুণী মানুষ।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শান্তি-শৃঙ্খলা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাধারণ মানুষ বড় ভূমিকা পালন করছেন। আলো দেখিয়ে লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ছেন সাহায্যের হাত নিয়ে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ভারত জিতবেই এটাই ভরসা।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক উদার আকাশ।