রাজ্যের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতে এখনই চাহিদা মতো মাস্ক গ্লাভস তুলে দেওয়া উচিত
এম রাজশেখর (২৩ মার্চ ‘২০):- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের এক শ্রেণীর আধিকারিকদের অপরিণামদর্শিতার কারণে ভারতে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’-এর তৃতীয় চরণে সবথেকে বেশি সংক্রমিত হতে পারেন রাজ্যের তৃণমূল স্তরের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীরা। যদিও এ বিষয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই স্বাস্থ্য বিভাগের। থাকবেই বা কেনো এঁরা বেশিরভাগই তো চুক্তি ভিত্তিক কর্মচারী।
গতকাল সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী-র আহ্বানে একদিনের জনতা কার্ফিউ-এর পরে যখন দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের উদ্দেশ্যে হাততালি, কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হচ্ছিল তখন প্রায় নীরবে আতঙ্কের সাগরে ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছিলেন রাজ্যের হলুদ ও গোলাপি শাড়ি পরিহিতা কয়েক হাজার এএনএম নার্স।
ভারতে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ বা ‘কোভিড ১৯’-এর তৃতীয় চরণে যখন এই মারণ ভাইরাস ভাইরাসবাহী দেহ থেকে সমাজে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা, তখন চিকিৎসকদেরও আগে এই হলুদ ও গোলাপি শাড়ি পরিহিতা নার্সদেরই যেতে হবে সম্ভাব্য ভাইরাসবাহী রোগীদের কাছে। অথচ প্রশাসনিক ব্যর্থতায় এঁদের অনেকেই এখনো অবধি কোনো ধরণের মাস্ক, গ্লাভস বা স্যানিটাইজার পাননি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে কোনো রকম ঢাল বা রক্ষাকবচ ছাড়াই সরকার তৃণমূল স্তরের এই স্বাস্থ্য কর্মীদের এক অসম লড়াইয়ে নামিয়ে দিলেন। এর ফল যে এই নার্সদের পরিবার, রাজ্য তথা দেশের কাছে কী সংবাদ বয়ে আনবে তা একমাত্র আগামী ভবিষ্যতই বলতে পারবে।
এই প্রসঙ্গে গত ১৯ মার্চ ইউনাইটেড অক্জিলারি নার্সেস (২ এএনএম আর) এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন ডব্লিউ বি-র আহ্বায়িকা স্বপ্না ঘোষ তাঁর সামাজিক মাধ্যমে
জানিয়েছিলেন, “সম্মাননা পাওয়ার চাইতে তৃণমূল স্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীরা বোধহয় পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের দাবী রাখে।”
ওই একই পোস্টে নিজের বক্তব্য জানাতে গিয়ে স্বপ্না ঘোষ-এর জনৈকা সহকর্মী সুদেষ্ণা ঘটক অধিকারী মন্তব্য করেছেন, “আমি গতকাল ব্লকে রিকোয়েস্ট করেছিলাম অন্ততঃ আশাদিদিদের ও এএনএম-দের জন্য একটা করে দিতে তাও পাইনি।”
এই কথা একশো শতাংশ ঠিক যে এই মুহুর্তে অন্য কোনো দেবদেবী নয় মুমূর্ষু জনতার সামনে চিকিৎসক ও নার্সরাই থাকবেন সচল ভগবান হয়ে। কিন্তু এই জীবন্ত ভগবানদের জন্যই যদি সরকার চিন্তাভাবনা না করেন তাহলে এর ফল হতে পারে ধ্বংসাত্মক।
এই কথা ভুললে চলবে না যে ইতালির ব্যক্তি পিছু পরিচ্ছন্নতা ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কাছে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা ব্যবস্থা কিছুই নয়।
যেখানে হাজার রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও আজ ইতালির ২০ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা নিজেরাই মহামারীর শিকার সেখানে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজারহীন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল স্তরের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীরা এই মহামারীর সাথে কতক্ষণ লড়বেন !
সব থেকে বড়ো কথা সরকারের ভুলে গেলে চলবে না এঁদেরও পরিবার আছে, তাঁদের কাছে এঁদেরও প্রাণের দামও আছে। এঁদের প্রাণ নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলা ঠিক নয়।
রাজ্যের তৃণমূল স্তরের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীরা কবে সবাই মাস্ক, গ্লাভস পাবেন এই বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, “সবাই জানেন এই মুহুর্তে রাজ্যের হাতে বেশি মাস্ক, গ্লাভস নেই। মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দুটো সংস্থাকে দুই লাখ মাস্ক বানাবার নির্দেশ দিয়েছেন, মাস্ক হাতে এসে গেলেই সারা রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী তা বিতরণ করা হবে।”
কবে মাস্ক সরকারের হাতে আসবে, কবে সেই মাস্ক তৃণমূল স্তরের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীরা পাবেন তা সবই ভগবান জানেন।
কিন্তু স্থির ভাবে চোখ বন্ধ করে একটু ভাবলেই বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। মুখ্যমন্ত্রী সরকারী আধিকারিকদের আদেশ দিয়েছেন- কম হলেও কিছু সংখ্যক মাস্ক ও আপাদমস্তক ঢাকা পোশাক নামজাদা কয়েকটা বেসরকারী সংস্থাকে দেওয়া হোক অথচ তাঁরই সরকারের বেতনভূক চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীদের বিষয়ে তিনি এখনো তেমন কোনো সদর্থক ভূমিকা নেননি।
শেষে শুধু একথাই বলা যায়, এই মুহুর্তে তৃণমূল স্তরের চুক্তি ভিত্তিক স্বাস্থ্য কর্মীদের চাহিদা মতো মাস্ক, গ্লাভস ও স্যানিটাইজার না দিলে শুধু এই হলুদ বা গোলাপি শাড়ি পরিহিতা মহিলা নার্সরাই নয়, তাঁদের পরিবার ও গ্রামীণ সমাজের বৃহত্তর অংশে ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার।