মৌলানা আজাদ ভাবনা পুরস্কার ২০১৮ পেলেন ড. হুমায়ুন কবীর, ফারুক আহমেদ ও এমদাদুল হক নূর
সংবাদদাতা, দেগঙ্গা, উত্তর ২৪ পরগনা: আজাদ চাইল্ড অ্যাকাডেমির উদ্যোগে মৌলানা আজাদ ভাবনা পুরস্কার ২০১৮ প্রদান করা হয় সাহিত্যিক ড. হুমায়ুন কবীর, উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নুরকে।
দেগঙ্গার বুড়িরহাট বাজারে অবস্থিত আজাদ চাইল্ড অ্যাকাডেমির উদ্যোগে মৌলানা আজাদ স্মৃতি মেলার আয়োজন করা হয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা থানার অন্তর্গত বুড়িরহাট বাজার, চাকলা রোডে অবস্থিত একমাত্র উচ্চমানের আদর্শ শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান “আজাদ চাইল্ড অ্যাকাডেমি।” এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ১১ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার ভারতবর্ষের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মদিবস উদযাপন উপলক্ষে বিদ্যালয় পার্শ্বস্থ প্রাঙ্গনে ২য় বর্ষ “মৌলানা আজাদ স্মৃতি মেলা-২০১৮” এর আয়োজন ছিল অভিনব। মেলার বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য ও বইমেলার আয়োজনে। উক্ত মেলাকে কেন্দ্র করে সারাদিন ব্যাপী মনোজ্ঞ ও নানান শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের সাহার্যার্থে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরে বহু মানুষ রক্তদান কর্মসূচিতে অংশ নেন, দুঃস্থ মানুষের সেবায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও চক্ষু পরীক্ষা শিবির ও চশমা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এলাকায় ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগকে প্রতিরোধ করার জন্য ডেঙ্গু সচেতনতা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
২০১৮ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ কৃতি ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও সংবর্ধনা, বর্ষ সেরা ছাত্র-ছাত্রী পুরস্কার প্রদান করা হয়।
সেমিনারে আলোচনা সভার বিষয় ছিল মৌলানা আজাদ ও জাতীয় শিক্ষা দিবসে আমাদের করণীয়।
“মৌলানা আজাদ ভাবনা পুরস্কার” প্রাপক রাজ্য পুলিশের ডি.আই.জি ও কথা সাহিত্যিক তথা সর্বভারতীয় নবচেতনার প্রেসিডেন্ট ড. হুমায়ুন কবীর সাহেব মহামূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার উপরে জোর দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের সহ অধিকর্তা এবং ড. হুমায়ুন কবীর আইপিএস সাহেবর সঙ্গে উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ এবং নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নুরকেও মৌলানা আজাদ ভাবনা পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।
উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টপেজ কলেজ অফ এডুকেশনের দুই কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও জাহিদুল সরকার।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজ করছেন আহসান হাবীব, আসাদুল ইসলাম, মৃণ্ময়ী সমীরণ নন্দী, শিক্ষক ও সাংবাদিক আকবর আলি প্রমুখ।
মৌলানা আজাদ স্মৃতি মেলার পক্ষ থেকে আজাদ চাইল্ড অ্যাকাডেমির কর্ণধর সাহাবুদ্দিন ফারুক, সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান।
এই অপূর্ব অনুষ্ঠান সার্বিকভাবে সুন্দর ও সাফল্যমন্ডিত করতে বহু মানুষের আগ্রহের বিষয় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিনের শুরুতে রবিবার ১১ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ফ্রন্টপেজ অ্যাকাডেমিতে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী সিংহ পুরুষ আজীবন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের রক্ষক মৌলানা আবুল কালাম আজাদের জন্মদিনে জাতীয় শিক্ষা দিবসে সংখ্যালঘুদের শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এ দিনের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইপিএস ড. হুমায়ুন কবীর। তিনি বর্তমান আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুসলিমদের অবস্থা ও নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনে নিজেদের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ, সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন সহ- সভাপতি মিজানুর রহমান,আনোয়ার হোসেন কাসেমী,নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক এমদাদুল হক নুর সহ অন্যান্যরা।
অসিম পাল জানালেন, জাতীয় শিক্ষা দিবস।
আজ যে ফিরোজ বখ্ত্-এর জন্মদিন। চমকে উঠলেন? আসলে ‘আবুল কালাম আজাদ’ এই নামের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে পিতৃদত্ত এই নামটা।
জন্ম তাঁর মক্কায়। বাবা ছিলেন বিদগ্ধ পন্ডিত এবং একজন গ্রন্থকার। আরবী ভাষায় তাঁর লেখা ১০ খন্ডের একটা বই মিশর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতি প্রেমিক এই মানুষটি দূর থেকে ভারতবর্ষকে ভীষণ ভালবাসতেন। এখানে নাকি ছ’টা ঋতু? আর সেই ঋতু চক্রের আবর্তে প্রকৃতি সেজে ওঠে অপরূপ শোভায়? সত্যি সে দেশ তো স্বপ্নের মত সুন্দর!
দূর থেকে এমন সব শুনতে শুনতে একদিন স্ত্রী আর পুত্রকে নিয়ে চলে আসলেন ভারতে। তাও আবার কলকাতায়। দুচোখ ভরে দেখতে লাগলেন প্রকৃতির রূপ রস গন্ধ।
আজাদ তখন দুবছরের। একবছর কাটতে না কাটতেই স্ত্রী হঠাৎ মারা গেলেন। সেই শোক ভুলিয়ে দিয়েছিল প্রকৃতি প্রেমে মশগুল ২৭ বছরের এই যুবকটিকে? তাই বুঝি ভালবেসে রয়ে গেলেন এই দেশে?
শিশু আজাদকে পারসী, ফার্সী, আরবী ভাষার সাথে সাথে গৃহ শিক্ষক রেখে বাংলা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তুললেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী আদর্শ আর দেশপ্রেমের মন্ত্রে আদর্শ ভারতীয় সুনাগরিক।
১৯০৫ সাল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের দামামা বাজছে। আজাদ জড়িয়ে পড়লেন বিপ্লবীদের সঙ্গে। সেই শুরু।
তাঁর রাজনীতিতে কোন ভন্ডামি ছিলনা।
বৃটিশ সরকার দেশ ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আজাদ ভীষণ মর্মাহত। দেশের বরেণ্য নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। ভারত ভাগ মানবেন না। গান্ধীজী রাজী ও হলেন_”দেশ ভাগ আমার লাশের উপর দিয়ে করো।” সেই গান্ধীজীও মেনে নিলেন। নেহেরু কথা দিলেন দেশ ভাগ কিছুতেই মানা যাবেনা। ভোল পাল্টালেন তিনিও।
একে একে সব্বার কাছে গেলেন। কিন্তু হায়…
তিনি ভবিষ্যৎ বাণী করে ছিলেন ‘ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলে সাম্প্রদায়িকতার বিষ নির্মূল হবেনা কোনওদিনই। আজ তার প্রতিফলন তো নিয়তই দেখছি।
তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থে নির্ভীক ভাবে লিখেছেন দেশভাগের যন্ত্রণা দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী এই মহাপুরুষের ১৩১তম জন্মদিবসে সকলকে অনুপ্রেরণা যোগায় এই অনন্য শিক্ষাগুরু মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।