সরকার ভাড়া না বাড়ালে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় পথ নেই : তন্ময় কুণ্ডু
এম রাজশেখর (৮ নভেম্বর ‘২০):- “পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভাড়ার টাকা না বাড়ালে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় কোনো পথ নেই,” বলে মন্তব্য করলেন জয়েন্ট কাউন্সিল অব লাক্সারি ট্যাক্সি এসোসিয়েশন (ডাব্লু বি)-র যুগ্ম সম্পাদক তন্ময় কুণ্ডু।
আজ কোলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “১২ বছরের পুরনো দৈনন্দিন ৪৭৫ টাকা ভাড়ার বদলে আজকের দিনের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দৈনন্দিন ১২০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ, ১ বছরের জন্য বিবিধ কর, পারমিট, ফিটনেস মুকুব করার দাবী সহ অন্য কিছু দাবী নিয়ে আমরা গত এপ্রিল মাসে পরিবহনমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী-কে জানালেও তাঁরা এখনো ভাবলেশহীন। এভাবে অনির্দিষ্টকাল কম ভাড়ায় চলা যায়না, আমাদেরও পরিবার আছে। এভাবে চললে আত্মহত্যা ছাড়া আমাদের সামনে দ্বিতীয় আর কোনো পথ খোলা নেই।”
কোরোনা আবহে প্রাণান্তকর অবস্থায় এসে পৌঁছেছেন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব লাক্সারি ট্যাক্সি এসোসিয়েশন (ডাব্লু বি)’-এর সদস্যগণ।
সংগঠনের সদস্যগণ তাঁদের মহার্ঘ্য গাড়ি সরকারী সংস্থায় ভাড়া খাটিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন তথা জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মতো এখানেও চলছে ঘোর মৎস্যান্যায়। একে তো রাজ্য সরকার পুরো মাসের জন্য গাড়ি ভাড়া নেয়না। সর্বনিম্ন ১০ দিন থেকে সর্বোচ্চ ২২ দিনের জন্য গাড়ি ভাড়া নিলেও সরকার ভাড়া দেয় ১২ বছরের পুরনো হারে। ফলে একপ্রকার মৃত্যুমুখে এসে দাঁড়িয়েছে এই সংগঠনের সদস্যগণ।
এই বিষয়ে সংগঠনের তরফ থেকে পরিবহনমন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী-র কাছে চিঠিচাপাঠি করলেও কোনো কাজে আসেনি।
আজ সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে, জয়েন্ট কাউন্সিল অব লাক্সারি ট্যাক্সি এসোসিয়েশন (ডাব্লু বি)-র যুগ্ম সম্পাদক তন্ময় কুণ্ডু জানান, “আমরা যে ধরণের গাড়ি সরকারের কাছে ভাড়ায় খাটাই ওগুলো কিনতেই খরচ পড়ে ৮ থেকে ১৪ লাখ টাকা।
এর উপর আছে বিবিধ রকমের কর, বীমা, দূষণমুক্ত থাকার শংসাপত্র, ক্যাব লাইসেন্স-এর মতো পুনঃ পুনঃ খরচ। অথচ সর্বনিম্ন স্তরে ১০ দিন বা সর্বোচ্চ স্তরে ২২ দিন পর্যন্ত সরকার আমাদের গাড়ী ভাড়ায় নেয়।
আজকের দিনে গাড়ীর জন্য একটা চালক রাখতে গেলেই দৈনন্দিন তাঁকে কমকরে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দিতে হয়। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে দৈনন্দিন গাড়ী ভাড়া বাবদ মেলে মাত্র ৪৭৫ টাকা।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা ব্যাঙ্ক বা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ী কিনেছেন। যাঁরা ঋণ করে গাড়ী কিনেছেন তাঁদের মাস গেলেই অনেক টাকা পরিশোধ করতে হয়। সরকার যে টাকা দেয় তাতে কিছুই হয়না, এভাবে চললে আমাদের সামনে আত্মহত্যা ছাড়া দ্বিতীয় পথ খোলা নেই।”
তন্ময় কুণ্ডু অনেক কথা বললেও যেকথা মুখ ফুটে বলতে পারেননি তা হলো, সরকারী আধিকারিকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে অনেক সময় নিখরচায় সরকারী আধিকারিকদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও গাড়ী ছাড়তে হয়।
কোরোনা পরিস্থিতিতে যখন একটা এম্বুলেন্স মাত্র ৮ কিলোমিটার যেতেও প্রায় ১৩ হাজার টাকা হেঁকেছে তখন অনেক সরকারী আধিকারিকদের অনুরোধে একদম বিনামূল্যে রোগী নিয়ে বা বাড়ির লোক নিয়েও ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরতে হয়েছে।
কিন্তু এতো কিছু করার পরেও সরকারী কর্মচারী বা আধিকারিকগণ যেভাবে ভাড়া করা গাড়ীর চালক বা মালিকদের সাথে ব্যবহার করেন তা যত কম বলা যায় ততই ভালো।
সামনেই আসছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১, এই পরিস্থিতিতে এই ধরণের অসন্তোষ যত বাড়বে রাজ্যের সত্ত্বারূঢ় দলের কাছে ততই বিপদ। এই অসন্তোষ অবিলম্বে নিরসন করা প্রয়োজন। অন্যথায় আপাত শুকনো পরিবেশেও আচমকা বজ্রপাত হলেও হয়ে যেতে পারে।