আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য-সুন্দর
ড. রঘুপতি সারেঙ্গী
বৌদ্ধ ধর্মে চার টি “আর্য-সত্য” কঠোর ভাবে মেনে চলতে হয় (चत्वारि आर्यसत्यानि)। কী সেইসব সত্য গুলো ?
অনিত্যম্ অনিত্যম্ সর্বম্ অনিত্য
ক্ষণিকম্ ক্ষণিকম্ সর্বম্ ক্ষণিকম্
শূণ্যম্ শূণ্যম্ সর্বম্ শূণ্যম্
দুঃখম্ দুখঃম্ সর্বম্ দুখঃম্।
এই ৪টি। শ্রীমৎ ভাগবত পুরাণে এসেও দেখি সেই একই সত্য…. পৃথিবীলোক কে বুঝানো হয়েছে, “দুঃখালয়ম্ অশাশ্বতম্”। আর চির-সুখের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেই ‘চিন্ময়-গোলক’।
মনে-মনে, এই প্রশ্ন টিই নিয়ে হাজির হয়েছিলাম সদ্যপ্রয়াত বিশ্বের পঞ্চম মৌলিক জগদ্-গুরু শ্রী কৃপালুজী মহারাজ এর কাছে। উনার সর্বধর্ম-সমন্বয়ী সিদ্ধান্ত জানালো, “পৃথিবীতে না সুখ আছে, না দুঃখ আছে।” বড়ো অদ্ভুত কথা…….. তাই না ?
চলুন, একটু তাত্বিক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আমরা বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি। শুরুতেই বিবেকানন্দ এর কথা মনে আসছে। মিশনের ব্রহ্মচারীরা ও একদিন তাঁকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। তাঁর নির্লিপ্ত উত্তর টা ছিল এ রকমঃ
“He who runs away from the samsara, spends time in the caves of the Himalayas to meditate and die, has missed the way. He who plunges headlong in to the vanities and foolishness of life in the samsara, lives, earns to make ends meet or flourish, also has missed the way.” তখন সবাই প্রশ্ন করলো তাহলে ” What is the way?”
স্বামিজী বললেন, Only way is “Divinize the life itself’.
নিজে সংসার করলেন না অথচ কর্মময় সংসার ছেড়ে হিমালয়ের নির্জন গুহাতে বসে তপস্যা করার পরামর্শ দিচ্ছেন না। আবার, “যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ… ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ”…. চার্বাক দর্শনের এই ঐশ্বর্য-সুখে, বিলাস-ব্যাসনে ডুবে থেকেও জীবন কাটাতে বাধা দিচ্ছেন। পথটি কী, তবে?
“জীবনে চলার প্রতিটি পদক্ষেপে ঈশ্বর কে খুঁজে পেতে হবে।”
তাঁর এই কথাতেই পরিস্কার যে ঈশ্বর আছেন এবং এখানেই আছেন।
কৃপালুজী বলতেন, ” ঈশ্বর যে পরিমানে তোমার মন্দিরে আছেন ঠিক সেই পরিমানে তোমার স্নানের ঘরেও আছেন।” খুঁজে বের করার দায়িত্ব টুকুই আমার। কেশব নাগ এর বই এর প্রথমে দিকে প্রশ্নমালা ধরে শুধু অংকের পর অংক থাকলেও বইয়ের শেষে উত্তর-মালা ও থাকে। অংক কষে, শেষে পৃষ্ঠা উল্টে দেখে নিতে হয়, অনেকটা সেরকম গোছের। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, বই তে একটি “বিবিধ ‘প্রশ্নমালা” থাকে যেখানে প্রতিটি গনিত ই একটু না একটু পৃথক। জীবনের সমস্যাগুলো ও অনেক টা তাই। প্রত্যেকের জীবনেই আলাদা। এতো সব বৈপরীত্য এর মাঝে সবার লক্ষ্য কিন্তু একটাই…. দুঃখের অবসানে পরমানন্দ প্রাপ্তি।
তার মানে, আপাতঃ এই ‘অনিত্যম্’ এর মধ্যেই ‘নিত্যম্’ ও আছে। চিনিতে-বালিতে মিশে আছে, পিঁপড়ে পৃথক করতে পারে। দুধে-জলে মিশে থাকলে রাজ হাঁস তা আলাদা করতে পারে। রামকৃষ্ণ দেবের কথায় বললে, “গোলমালের ভিতরেই মাল আছে।” তাই, ‘গোল’ টাকে ছেড়ে ‘মাল’ টাকে নিতে জানতে হবে।
ঈশোপনিষদ্ এর ঋষি বলছেনঃ ” ঈশা বাস্যম্ ইদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ “…….সারা জগৎটা ই ঈশ্বর দিয়ে মোড়া, অর্থাৎ ঈশ্বর ছাড়া কিছুই নেই। এই যে Cover, একেই uncover করা শুধু নয়, বিচার-বুদ্ধি দিয়ে discover করাটা যে আমাদেরই কাজ, তাই না? এটাই জৈন ধর্মের “বিবেকঃ”…. the ultimate, realistic achievement. “বিবিক্ পৃথকীকরণে”। সনাতন বিজ্ঞান ও বলছে, ” অনিত্য দৃশ্যেষু বিবীক্ষ্যনিত্যম্ “। প্রায় দেড়-হাজার বছর আগে আদি শঙ্করাচার্য্য লিখছেন…’চন্দন আগরবালে’….. সুগন্ধী চন্দনকে কাদাতে পুঁতে রেখেছেন। বের করলেই কী তার সুগন্ধ পাবেন? না। তবে কী করতে হবে ? আচার্য্য শঙ্কর লিখছেন, ” স্বরূপ নিঘর্ষণেন “…. অর্থাৎ ঘষে ঘষে কাদা কে তুলে দিলেই হবে না, কাদাটি কেও দূরে ফেলে দিতে হবে, তাহলেই চন্দন কাঠের স্বভাবসিদ্ধ-গন্ধ স্থায়ী হবে। আমরাও মূল্যবান বস্তুকে মাঝেমধ্যে ধুয়ে মুছে সাফ করি কিন্তু প্রয়োজন ফুরোলে, আবারও কাদাতে ই ছুঁড়ে দিই।
এক মহাত্মার মুখে শোনা, একটি ছোট্টো গল্প শুনিয়ে লিখার ইতি টানবো। এক দম্পতি বেরোচ্ছেন, বন্ধুর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে। গিন্নী কর্তাকে ভেকে বললেন, ” অফিসের মোজা বদলে, হাতে-পা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে এই নতুন মোজা দু’টো পরো। বডি-স্প্রে ও রইলো। তোমার মোজাতে যা দূর্গন্ধ, পাশে বসাই দায়।”
কথামতো, কর্তা-মশাই ও ফিটফাট হয়ে বেরোলেন। শোফাতে বসার কয়েক মুহূর্ত পরেই গিন্নীর মুখ কেমন বেঁকা হতে শুরু করেছে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে, ফিসফিস্ করে বললেন, ” তোমায় নতুন মোজা জোড়া টা পরে আসতে বলি নিই ?”
” আরে, ওটা ই তো পরে এসেছি।”
” বললেই হবে ?”
“আশ্চর্য্য ! এই ….দেখ তো।”
” থাক থাক। প্যান্ট তুলে এতো দেখাতে হবে না। বলি….তাহলে, এতো দুর্গন্ধ কোত্থেকে আসছে ?”
একটু থেমেই কর্তা বললেন, ” ও….হো ! আসলে, চেঞ্জ করে ওই নোঙরা মোজা দুটো, এই পাঞ্জাবি’র পকেটেই রুমাল ভেবে, ভরে নিয়েছি।”
কাল্পনিক কর্তা’র এই ভুলটাই বাস্তবিক ভাবে আমরা করে চলেছি।
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.