ভারতের ৭৪তম সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু প্রদত্ত ভাষণ

0
635
The President, Smt. Droupadi Murmu addressing at the Pradhan Mantri Rashtriya Bal Puraskar, award ceremony in New Delhi on January 23, 2023
The President, Smt. Droupadi Murmu addressing at the Pradhan Mantri Rashtriya Bal Puraskar, award ceremony in New Delhi on January 23, 2023
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:29 Minute, 44 Second

ভারতের ৭৪তম সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু প্রদত্ত ভাষণ

নয়াদিল্লি,জানুয়ারি২০২৩

প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,

নমস্কার!

  1. ভারত প্রকৃতপক্ষে এক প্রাচীনতম প্রাণময় সভ্যতার বাসভূমি। গণতন্ত্রের জননী রূপেই পরিচিত আমাদের দেশ। একটি আধুনিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে আমরা কিন্তু অপেক্ষাকৃত নবীন। স্বাধীনতার সূচনার বছরগুলিতে নানা ধরনের সমস্যা ও প্রতিকূলতার আমরা সম্মুখীন হয়েছিলাম। বিদেশি শাসনের অসংখ্য কুফলের মধ্যে যে দুটি সবথেকে বেশি আমাদের গ্রাস করেছিল তা হল দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা। তা সত্ত্বেও ভারতের মূল শক্তি ছিল অনবদমিত। আশা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আমরা এমন এক পরীক্ষা ও নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছি যা এক কথায় সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। নানা বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে দেশের এক বিশাল জনতা যেভাবে সেদিন আত্মপ্রকাশ করেছিল তা আজও নজিরবিহীন। আমরা এই কাজে সফল হয়েছিলাম যে বিশ্বাসটিকে সঙ্গে নিয়ে তা হল, যাই ঘটুক না কেন, আমরা সকলেই এক ও অভিন্ন; আমরা সকলেই ভারতীয়। একটি গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসেবে আমরা যে সাফল্য অর্জন করেছি তার কারণ হল ভাষা ও বিশ্বাসের বিভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা কোনদিনই পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি, সমস্ত কিছুই আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে। এটাই হল ভারতের প্রকৃত প্রাণসত্তা।

এই প্রাণসত্তার পরিচয় ছিল আমাদের সংবিধানেও যা আজ কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। যে সংবিধানের সূচনা হয়েছিল একটি সাধারণতন্ত্রের জীবনযাত্রার দিক নির্ণয়ের লক্ষ্যে তা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামেরই এক বিশেষ ফসল। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় আন্দোলন একদিকে যেমন ছিল আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের এক বিশেষ শক্তি, অন্যদিকে আমাদের নিজস্ব আদর্শকে নতুন করে পুনরাবিষ্কারের সুযোগও তা এনে দিয়েছিল। স্বাধীনতা ও ত্যাগ স্বীকারের সেই দশকগুলি শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক শাসন থেকে আমাদের মুক্ত হতেই সাহায্য করেনি, সেইসঙ্গে আরোপিত মূল্যবোধ এবং বিশ্বের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতেও আমাদের সাহায্য করেছিল। শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের যুগপ্রাচীন মূল্যবোধগুলি সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশের বিপ্লব ও সংস্কার প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরা প্রজ্ঞা ও আদর্শবাদের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছিলেন। আধুনিকমনস্ক ভারতের রূপকাররা বিদেশের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাকেও সাদরে গ্রহণ করেছেন। এই কাজে তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বেদ-এর একটি অনুশাসন থেকে : आ नो भद्राः क्रतवो यन्तु विश्वत: – অর্থাৎ, সর্বদিক থেকে মহান চিন্তাভাবনা আমাদের উজ্জীবিত করে তুলুক। এইভাবেই এক দীর্ঘ মননশীলতা পরিণতি লাভ করেছিল দেশের সংবিধানের মধ্যে।

বিশ্বের প্রাচীনতম এক প্রাণময় সভ্যতার মানবতাবাদী দার্শনিকতা এবং সেইসঙ্গে আরও সাম্প্রতিককালের ইতিহাসের নতুন নতুন মত ও চিন্তাভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক দলিলটি। ডঃ বি আর আম্বেদকর চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জাতির কাছে। সংবিধানের খসড়া রচনার জন্য যে কমিটি গঠিত হয়েছিল তিনি ছিলেন তারই নেতৃত্বে। এইভাবেই সংবিধানকে চূড়ান্ত রূপদানের কাজে তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আজ এই দিনটিতে বিচারপতি বি এন রাও-কেও আমাদের স্মরণ করা উচিৎ। কারণ, প্রাথমিক খসড়াটির রচয়িতা ছিলেন তিনিই। একইসঙ্গে সংবিধান রচনার কাজে যাঁরা সাহায্য করেছিলেন, সেই সমস্ত অন্যান্য বিশেষজ্ঞ এবং আধিকারিকদেরও আমাদের স্মরণ করা উচিৎ। সংবিধান রচনার লক্ষ্যে গঠিত অ্যাসেম্বলির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন ভারতের সমস্ত অঞ্চল ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। ১৫ জন মহিলাও ছিলেন সদস্যমণ্ডলীর মধ্যে।

তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাভাবনা যা প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের সংবিধানে, তা নিরন্তরভাবেই দেশের সাধারণতন্ত্রকে পথ দেখিয়েছে। খুবই দরিদ্র এবং নিরক্ষর একটি দেশ থেকে ভারত আজ রূপান্তরিত হয়েছে আত্মপ্রত্যয়ী এক জাতিতে যা বিশ্বমঞ্চে নিজের পরিচিতিকে তুলে ধরতে পেরেছে। যে সংবিধান প্রণেতারা আমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন, তাঁদের মিলিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছাড়া এই অবস্থায় পৌঁছনো ছিল এক কথায় অসম্ভব।

বাবাসাহেব আম্বেদকর সহ অন্যান্যরা আমাদের নৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি অনুসরণযোগ্য পথটিও দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব হল সেই পথ অনুসরণ করে আরও এগিয়ে যাওয়া। তাঁদের প্রত্যাশার প্রতি আমরা বহুলাংশেই সত্যনিষ্ঠ থেকেছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা অনুভব করি যে গান্ধীজির সর্বোদয়-এর আদর্শ তথা সকলের উন্নয়নের অনেক কাজই এখনও বাকি থেকে গেছে। তবুও বলব, সবক’টি ক্ষেত্রেই যেভাবে আমরা অগ্রগতির স্বাক্ষর রেখেছি তা যথেষ্ট উৎসাহব্যাঞ্জক।

প্রিয় নাগরিকবৃন্দ,

সর্বোদয়-এর মূলমন্ত্রে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে যে ক্ষেত্রটিতে আমাদের অগ্রগতি সর্বাপেক্ষা উৎসাহিত হওয়ার মতো তা হল দেশের অর্থনীতি। গত বছর বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উঠে এসেছে আমাদের ভারত। এই প্রসঙ্গে যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হল, ভারতের এই সাফল্য এসেছে এমন একটি সময়ে যখন সারা বিশ্বকেই গ্রাস করেছিল এক বড় ধরনের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। অতিমারীকালের চতুর্থ বছরেও বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই অর্থনৈতিক অগ্রগতি নানাভাবে ব্যাহত হয়েছে। কোভিড-১৯-এর সূচনাকালে ভারতীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও দেশের সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং আমাদের ধৈর্য্য ও সংযম সেই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে আমাদের সাহায্য করেছে। আমরা আবার নতুন করে যাত্রা শুরু করেছি উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে। দেশের অর্থনীতির অধিকাংশ ক্ষেত্রই এখন অতিমারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। দ্রুততম গতিতে বিকাশশীল বিশ্ব অর্থনীতির একটি অন্যতম দেশ হল ভারত। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ ও কর্মপ্রচেষ্টাই এই পরিস্থিতি সম্ভব করে তুলেছে। বিশেষত, আত্মনির্ভর ভারত গঠনের আহ্বান ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে আপামর জনসাধারণের মধ্যে। সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে সূচনা হয়েছে বেশ কিছু সুফলদায়ক কর্মসূচির।

খুবই সন্তোষের বিষয়, প্রান্তিক স্তরের মানুষদের আজ যুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির সঙ্গে। কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছেও। কোভিড-১৯-এর নজিরবিহীন প্রাদুর্ভাবের পরবর্তী সময়ে দেশে যখন অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যহত হয়েছিল, সেই সময় দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সরকার ২০২০-র মার্চ মাসে ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ কর্মসূচি রূপায়ণের কথা ঘোষণা করে। সরকার এভাবে এগিয়ে আসায় কাউকেই তখন অন্নকষ্টে থাকতে হয়নি। দরিদ্র পরিবারগুলির কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে এই কর্মসূচি রূপায়ণের মেয়াদকাল সাফল্যের সঙ্গেই বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে উপকৃত হয়েছেন দেশের প্রায় ৮১ কোটি সহ-নাগরিক। এই সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালেও তা অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করে আমাদের সরকার। এর আওতায় সুফলভোগীরা বিনামূল্যে তাঁদের মাসিক রেশন সংগ্রহ করতে পারবেন। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের দুর্বলতর স্তরের মানুষদের প্রতি সরকার তার দায়িত্বশীলতার যেমন পরিচয় দিয়েছে, সেইভাবেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল যাতে দুর্বল মানুষেরাও ভোগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করেছে।

দেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট মজবুত। ফলে, বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ শুরু করার পাশাপাশি তা আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হল, এমন এক পরিবেশ ও পরিস্থিতির সূচনা করা যেখানে দেশের সকল নাগরিক ব্যক্তিগত তথা সমষ্টিগতভাবে তাঁদের প্রকৃত সম্ভাবনার সুযোগ গ্রহণ করে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেন। এই উদ্দেশ্য পূরণে সঠিক ভিত গড়ে তোলার একটি মাধ্যম হল শিক্ষা। তাই, আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং সত্যানুসন্ধানের পথ খুঁজে পাওয়া – শিক্ষার এই দুটি লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়ে উঠবে জাতীয় শিক্ষানীতি। এই নীতির মাধ্যমে আমাদের সভ্যতার পাঠকে সমসাময়িক জীবনে প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, একুশ শতকের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। পঠনপাঠন প্রক্রিয়াকে আরও সম্প্রসারিত করতে এবং তাকে আরও গভীরে নিয়ে যেতে প্রযুক্তির ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে দেশের জাতীয় শিক্ষানীতিতে।

জীবনের পট পরিবর্তনে প্রযুক্তি কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে তা আমরা উপলব্ধি করেছি কোভিড-১৯-এর সূচনাকাল থেকেই। শহর ও মফঃস্বলের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে আনার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলার লক্ষ্যে ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে কাজে লাগানো হয়েছে। দূরদুরান্তের বহু প্রান্তেই এখন সম্প্রসারিত হয়েছে ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা। পরিকাঠামো সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের কাছেও এখন সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ও পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে সাফল্য অর্জন করেছি তা সকলের কাছেই এখন গর্বের বিষয়। মহাকাশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় যেক’টি দেশ পথ দেখিয়েছে, ভারত হল তার অন্যতম। এই ক্ষেত্রটিতে বহুদিনের অবহেলিত সংস্কার প্রচেষ্টা এখন শুরু হয়েছে। ফলে, মহাকাশ যাত্রার ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগগুলিকেও এখন স্বাগত জানানো হচ্ছে। ‘গগনায়ন’ কর্মসূচির মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠানোর প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। মহাকাশচারীদের বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটিই হবে ভারতের প্রথম মহাকাশযান। কিন্তু, আমরা যতই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাই না কেন, আমাদের মূল চিন্তাভাবনা কিন্তু মিশে থাকে মাটির সঙ্গেই।

ভারতের ‘মার্স মিশন’ কর্মসূচিতে ক্ষমতা যুগিয়েছে অসাধারণ মেধার অধিকারী মহিলাদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম। অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমাদের বোন ও কন্যাসন্তানরা কিন্তু পিছিয়ে নেই। নারী ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা এখন আর স্লোগানমাত্র নয়। কারণ, এই আদর্শগুলিকে সামনে রেখে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমরা এগিয়ে গিয়েছি অনেকটাই। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানে সামিল হয়েছেন দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। তাই, আমাদের কর্মপ্রচেষ্টার প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলা প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বিভিন্ন রাজ্য সফরকালে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে তথা বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারকালে তরুণীদের আত্মবিশ্বাস আমাকে মুগ্ধ করেছে। ভবিষ্যতের ভারতের রূপকার হয়ে ওঠার জন্য তাঁরা যে সর্বতোভাবে চেষ্টা করবেন, এ বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। দেশের জনসংখ্যার অর্ধ শতাংশের মতো প্রতিনিধিত্বকারী এই মহিলাদের যদি তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী জাতি গঠনের কাজে উদ্বুদ্ধ করা হয়, তাহলে অবিশ্বাস্যভাবেই আমরা আরও সাফল্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।

ক্ষমতায়নের একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তপশিলি জাতি এবং তপশিলি উপজাতি সহ প্রান্তিক স্তরের সম্প্রদায়গুলিকে সরকারি কর্মসূচি পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের প্রকৃত লক্ষ্য বাধা অতিক্রম করে উন্নয়নের জন্য তাঁদের শুধুমাত্র সহায়তাদানই নয়, সেইসঙ্গে তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জনও। বিশেষত, আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির কাছ থেকে পরিবেশ সুরক্ষা সহ বিভিন্ন বিষয়ে এমন কিছু উপযুক্ত শিক্ষা আমরা গ্রহণ করতে পারি যা সমাজকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সাহায্য করবে।

প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রশাসনের সবক’টি ক্ষেত্রে রূপান্তর এবং জনসাধারণের সৃজনশীল শক্তি উন্মোচনের লক্ষ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমের সঙ্গে তাকিয়ে রয়েছে ভারতের দিকে। বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে আমাদের ভূমিকা এক ইতিবাচক স্বাতন্ত্র্য এনে দিয়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতকে যেভাবে সম্মান জানানো হয়েছে তা আমাদের কাছে নতুন সুযোগ এনে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আরও দায়িত্বশীলও করে তুলেছে। বর্তমান বছরটিতে ভারত যে জি-২০ভুক্ত দেশগুলির নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তা আজ সুবিদিত। সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধের মূলমন্ত্রকে অবলম্বন করে ভারত এখন হয়ে উঠেছে শান্তি ও সমৃদ্ধির এক বিশেষ প্রতীক। এইভাবেই ভারতের জি-২০-র সভাপতিত্বকাল গণতন্ত্রের প্রসার ও বহুপাক্ষিকতাকে উৎসাহদানের পাশাপাশি উন্নততর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে এক উন্নততর বিশ্ব গড়ে তোলার সঠিক মঞ্চ ব্যবহারের সুযোগ এনে দিয়েছে। ভারতের নেতৃত্বে বিশ্বে সম-অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এক নিরন্তর বিশ্ব শৃঙ্খলা গড়ে তোলার পথ যে সুপ্রশস্ত হবে, এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ দেশেরই প্রতিনিধিত্ব রয়েছে জি-২০ গোষ্ঠীতে। সেইসঙ্গে, বিশ্বের মোট জিডিপি-র ৮৫ শতাংশই আসে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি থেকে। তাই, বিশ্ব সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও তার সমাধানের ক্ষেত্রে জি-২০ হয়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ মঞ্চ। বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আমার মতে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন হল সর্বাপেক্ষা বড় দুটি সমস্যা। ভূ-প্রকৃতির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চরম জলবায়ুজনিত পরিস্থিতির ঘটনাও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দারিদ্রসীমার ঊর্ধ্বে নিয়ে আসার জন্য আমাদের প্রয়োজন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কিন্তু, সেই সমৃদ্ধি সচরাচর এসে থাকে জীবাশ্ম জ্বালানির পথ ধরে। এটি আমাদের কাছে এক চিন্তার বিষয়। দুর্ভাগ্যবশত, অন্যান্যদের থেকে বিশ্ব উষ্ণায়নের কুফল বেশি মাত্রায় ভোগ করেন দরিদ্র সাধারণ মানুষ। তাই, বিকল্প জ্বালানির উৎস উদ্ভাবন ও তাকে জনপ্রিয় করে তোলার মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব। এই লক্ষ্যে ভারতের উদ্যোগ ও নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। সৌরশক্তি ও বৈদ্যুতিক যানের ব্যবহার বাড়াতে নীতিগতভাবে জোরদার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলির প্রয়োজন উন্নত রাষ্ট্রগুলির কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা যা প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং আর্থিক সহায়তার মধ্য দিয়েই পাওয়া যেতে পারে।

উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার জন্য এক নতুন প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপটে আমাদের অনুসরণ করতে হবে সুপ্রাচীন ঐতিহ্যগুলিকে। আমাদের মূল তথা প্রাথমিক অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি পুনরায় ভেবে দেখতে হবে। জীবনের বিভিন্ন মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রাচীন ঐতিহ্যের বিজ্ঞানসম্মত দিকটি আমাদের অনুভব ও উপলব্ধি করতে হবে। আমাদের আরও একবার জাগিয়ে তুলতে হবে এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি আমাদের সম্ভ্রম ও নম্রতার মানসিকতাকে। আমাদের সময়কালে মহাত্মা গান্ধী ছিলেন প্রকৃত অর্থেই এক গুরুস্থানীয় ব্যক্তিত্ব যিনি যথেচ্ছ শিল্পায়নের ফলে যে বিপর্যয় আসতে চলেছে তা তাঁর দূরদৃষ্টিতে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই, শিল্পায়নের নামে যথেচ্ছাচার থেকে বিরত হওয়ার জন্য তিনি বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

আমাদের পৃথিবী নামক এই গ্রহটি এখন প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে। তাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের জীবনশৈলীতে পরিবর্তন আনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সন্তানরাও যাতে সুখ ও আনন্দে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা আমাদের করে যেতে হবে। এজন্য যে পরিবর্তন আমাদের জীবনে নিয়ে আসা প্রয়োজন, তার অন্যতম হল খাদ্যাভ্যাস। আমি খুবই আনন্দিত যে ভারতের এক প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০২৩ বছরটিকে ‘আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ’ রূপে উদযাপনের কথা ঘোষণা করেছে। বাজরা এক সময় ছিল আমাদের খাদ্য তালিকায় এক অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। তা আবার নতুনভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে ফিরে আসতে চলেছে। বাজরার মতো মোটা দানাশস্যগুলি হল পরিবেশ-বান্ধব। এর উৎপাদন ও বৃদ্ধিতে জলের প্রয়োজন পড়ে স্বল্পমাত্রায়। তা সত্ত্বেও তার পুষ্টিমূল্য অসীম। জনসাধারণ যদি আরও বেশি করে বাজরাকে খাদ্যশস্য হিসেবে গ্রহণ করেন তা যেমন পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করবে, অন্যদিকে তেমনই সুরক্ষিত হবে মানুষের স্বাস্থ্যসম্পদও।

দেশের সাধারণতন্ত্রের আরও একটি বছর যেমন অতিক্রান্ত, তেমনই আরও একটি বছরের সূচনা হয়েছে। সময়ের এই ব্যবধানটুকু কিন্তু নজিরবিহীন পরিবর্তনেরও সাক্ষী থেকেছে। অতিমারীর প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে কিছুদিনের মধ্যেই পরিবর্তন এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এই তিন বছরে যখনই আমরা মনে করেছি যে ভাইরাসকে অবশেষে আমরা বিদায় জানাতে পেরেছি, তখনই কিন্তু তা আবার কুৎসিতভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তবে, আমাদের উদ্বিগ্ন বা শঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ, ঐ সময়কালে আমরা জেনেছি যে আমাদের নেতৃত্ব, দেশের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক, দেশের প্রশাসক তথা করোনা যোদ্ধারা এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সম্ভাব্য সকল রকমভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। আবার, এই সময়কালেই আমরা এটাও শিখে নিয়েছি যে অসতর্কতা নয়, সতর্কতাই হয়ে উঠবে আমাদের বেঁচে থাকার রক্ষাকবচ।

প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,

দেশের সাধারণতন্ত্রের উন্নয়নের ইতিহাসে দেশের সর্বস্তরের এবং সর্বপ্রজন্মের জনসাধারণ যেভাবে অবদানের স্বাক্ষর রেখেছেন তা যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে। দেশের কৃষক, শ্রমিক-কর্মী, বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়াররা তাঁদের মিলিত শক্তির সাহায্যে ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান, জয় অনুসন্ধান’-এর মন্ত্রকে অবলম্বন করে আমাদের দেশকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। এই ভূমিকা পালনের জন্য তাঁদের আমি প্রশংসা করি। জাতির অগ্রগতির পথে অবদানের জন্য দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ভূমিকাই প্রশংসনীয়। ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিশেষ দূত রূপে পরিচিত প্রবাসী ভারতীয়দের জানাই আমার অভিনন্দন।

সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে দেশের জওয়ানদের ভূমিকারও আমি বিশেষ প্রশংসা করি। তাঁরা সীমান্ত প্রহরার সঙ্গে সঙ্গে দেশের স্বার্থে যে কোনও ধরনের ত্যাগ স্বীকারের জন্যও প্রস্তুত। আধা-সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীগুলির বীর সেনাকর্মীরা দেশের সহ-নাগরিকবৃন্দের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তাই, তাঁদের ভূমিকারও আমি সপ্রশংস উল্লেখ করি। কর্তব্যের আহ্বানে সশস্ত্র বাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর যে বীর সেনানীরা তাঁদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের আমি সম্মান জানাই। দেশের সকল শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য জানাই আমার আশীর্বাদ। আমি আরও একবার সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আপনাদের সকলকেই জানাই আমার শুভেচ্ছা।

ধন্যবাদ,

জয় হিন্দ!

জয় ভারত!

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here