‘তবু অনন্ত জাগে’ : আব্দুল হাফিজের গভীর ভাবনার কবিতায়ন
আমিনুল ইসলাম
আব্দুল হাফিজকে আমি ফেসবুকে দেখে থাকি এবং এতদিন জেনে এসেছি শুধু বাচিকশিল্পী হিসেবে। তার ভরাট কণ্ঠের উচ্চারণ সাফল্যের সঙ্গে স্পর্শ করে কবিতাপিয়াসী শ্রবণেন্দ্রিয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়ে ঢুকে যায় সংবেদনশীলতার গভীরে। এখন পরিচয় ঘটলো তার কবিতাচর্চার সঙ্গেও। সদ্য সমাপ্ত অমর একুশে বইমেলা ২০২৪–এ ‘পুথিপ্রকাশ’ প্রকাশ করেছে তার কাব্যগ্রন্থ ‘তবু অনন্ত জাগে’। ফ্ল্যাপের লেখা পড়ে জানলাম, এটি তার দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘দ্রোহের প্রেম’। সেটি আমার পড়া হয়নি। সন্ধানও ছিলো না আমার কাছে। ‘তবু অনন্ত জাগে’ ছয় ফর্মার একটি বই। রবীন্দ্রনাথের একটি গান থেকে ধার নেয়া নামকরণটি। গানটি হচ্ছে:
‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।
তবু শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।
আব্দুল হাফিজের ‘তবু অনন্ত জাগে’ গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলো নানা কসিমের। সেটা যেমন ভাবনার বিচারে, তেমনি শৈল্পিকতার বিবেচনাতে। আব্দুল হাফিজ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। অধিকন্তু তিনি বিভিন্ন কবির কবিতা আবৃত্তি করে থাকেন। স্বাভাবিকভাবেই নানা সময়ের নানা কবির নানা ধরনের কবিতার সঙ্গে তার নিবিড় পরিচয় ঘটেছে। তার কাব্যবোধ গভীরভাবে জীবনঘনিষ্ঠ। তিনি সমাজসচেতন ও শান্তিবাদী কবি। ব্যক্তিজীবনে, সমাজজীবনে, রাষ্ট্রের সীমানায় ও আন্তর্জাতিক ভূগোলে ঘটে যাওয়া এবং ঘটমান নেতিবাচক ঘটনাবলি তাকে পীড়া দেয় গভীরভাবে। তার ভেতরে একধরনের ক্ষেভের সঞ্চার হয়। তার মানবতবাদী ও প্রেমপন্থী হৃদয়-মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতে চায়। সেই উদ্বেলিত চিত্ত নিয়ে তিনি নিজস্ব ধরনে কাব্যিক বয়ান রচনা করেন। সেই বয়ান অগ্নিভাষী নয় কিন্তু অন্তঃসলিলা ক্ষোভে দোলায়িত। এটাকে পরোক্ষ প্রতিবাদের ভাষা বলা যেতে পারে। আসলে তিনি জীবন দার্শনিকতার কবি। তার প্রতিবাদ, ক্ষোভ, প্রেম ইত্যাদি সবকিছুই জীবনকে কেন্দ্রে রেখে আবর্তিত। ফলে তার কোনো একটিমাত্র কবিতাকে তার বাহ্যিক ধরন দেখে রায় দেওয়া কঠিন কাজ। কিছু কিছু কবিতাতে তার দার্শনিকতা অনন্যসুন্দর শিল্প হয়ে প্রকাশ লাভ করেছে।
‘যারা শূন্য হস্তে উঠে পড়েছে জাহাজে
তারাই একদা হবে সম্পদশালী
তাদের ভান্ডার অসীমতায় ভরা।
তবুও জাহাজের নাবিক সিটি বাজিয়ে চলেছে
বাজতেই থাকবে অনন্তকাল অবধি;
নাবিক চাই না শূন্য পড়ে থাক জাহাজ
অথচ যাত্রীরা বধির হয়ে আছে আজ এখনো!’
(সিটি বেজে যায়)
সুখশান্তির জন্য মানুষের হন্যে হয়ে সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত ছুটাছুটি দেখে ক্লান্ত আব্দুল হাফিজ তাদের প্রকৃত শান্তির নির্ভুল খোঁজ দিতে চান অন্তরের সবখানি ভালোবাসা থেকে। অনেক সময় অনেক মানুষ সুখের কাননে পথ হারিয়ে ফেলে চলে যায় সুখহীনতার গন্তব্যে। না বুঝে অপ্রয়োজনে কতকিছু পাওয়ার জন্য সাধ ও সাধ্যে মধ্যে কুস্তিলড়াই বাঁধিয়ে দেয়। অথচ ওয়ানটাইম বলপেনের মতো ক্ষণস্থায়ী ও রিফিল-অযোগ্য একটিমাত্র জীবনে সুখী হওয়ার জন্য বেশিকিছু লাগে না। প্রকৃতির উঠোনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুখের উপকরণাদি যথাসময়ে যথার্থভাবে সনাক্তকরণে ভুল হলে মানুষ হারিয়ে ফেলে টেকসই সুখের সংজ্ঞা এবং ঠিকানা দুই-ই। আব্দুল হাফিজের গভীর অবলোকনে ধরা পড়েছে এসব ছবি। এবং অতঃপর তিনি তার সেই অন্তর্গত ও অন্তরঙ্গ অবলোকনকে কবিতা করে তুলতে চেয়েছেন । জীবনদর্শনকে কবিতা করে তোলার কঠিন কাজটি তিনি সহজে এবং সহজ সাবলীলতায় করেছেন, করতে পেরেছেন।
‘পাশেই তোমার জন্য
অপেক্ষায় থাকে
কোনো সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত
রংমহল সাজিয়ে।
শান্তির জন্য
স্বস্তির জন্য
এক একটি শিউলি ভোর
বা একটি স্নিগ্ধ সকালই যথেষ্ট।’
(শান্তির ইশতেহার)
আব্দুল হাফিজের প্রেমচেতনা তার বৃহত্তর জীবনচেতনারই অংশ। তিনি বিশ্বাস করেন যে, প্রেম ছাড়া জীবন উপভোগ্যতা-রিক্ত অর্থহীন যাপন মাত্র। আর প্রেম একটি সর্বাত্মক ও সামগ্রিক বিষয় যদিও তার নানান রূপ এবং নানান ধরনের অভিব্যক্তি আছে। প্রকৃতিপ্রেম, স্রষ্টাপ্রেম, প্রাণীপ্রেম, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, নর-নারীপ্রেম, সাহিত্যপ্রেম, শিল্পপ্রেম, সংগীতপ্রেম ইত্যাদি মানুষকে শেখায় জীবন ও জগৎকে ভালোবাসার সূত্র । তাই প্রেমহীন জীবন বয়ে বেড়ানো সাধ্য-অতিরিক্ত বোঝা মাথায় নিয়ে পথ চলার মতোই কঠিন বিড়ম্বনাময়। আর জীবন প্রেমময় হলে বাঁচতে ইচ্ছে করে স্বাভাবিক আয়ু অতিক্রম করে লাখো-কোটি বছর। আব্দুল হাফিজের কাব্যভাবনায় প্রেম একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
‘কিছু কথা জমে আছে
যা গল্প হয়ে ওঠেনি—
গল্প লেখার জন্য
কত পাখির গান শোনা বাকি আছে
পাখির কলকাকলিতে
হৃদয় ভরিয়ে দেবার জন্য।’
(আমি বাঁচতে চাই আরও বহু বছর)
সৃষ্টি উৎসমূলে প্রেম। যেখানে প্রেম, সেখানেই সৃজনশীলতার উপস্থিতি, সুন্দরের সহাবস্থান। আব্দুল হাফিজের কখনো কখনো প্রেমভাবনা অনন্যসুন্দর শৈল্পিক সৌন্দর্য মেখে মনোহর হয়ে ওঠে। নিরাভরণ সেই সৌন্দর্য নদীরমতো অন্তরের ঐশ্বর্যে সচ্ছল।
‘আমি কবিতার নামে
তোমাকে লিখে যাই
অবিরাম অবিরত।
(প্রিয়তমা তোমাকে)
আব্দুল হাফিজ রাজনীতি সচেতন কবি তবে তার রাজনৈতিক চেতনা অপ্রত্যক্ষ এবং কবিতার শরীরে তার প্রবাহ অন্তঃসলিলা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশের কবিদের একটা বড়ো অংশ রাজনীতির মুগ্ধ অন্ধতায় একচক্ষু বিশিষ্ট প্রাণী এবং কবিতায় তাদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনে অশৈল্পিকতায় আকীর্ণ ও স্থূলতায় অশ্লীল। সাধারণত পরাধীন দেশের কবিদের অনেকেরই রাজনৈতিক চেতনা ধারালো কখনো-বা প্রগলভ হয়ে থাকে। সেটা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঘটে থাকে। কবি তার কবি হিসেবে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির পক্ষে সোচ্চার হোন কবিতার পঙক্তিতে ও উচ্চারণে। কাজী নজরুল ইসলাম তার সবচেয়ে বড়ো উদাহরণ। তিনি তাঁর সেই অবস্থানের ব্যাখ্যাও দিয়ে গেছেন নিজ কবিতায়:
‘পরোয়া করি না, বাঁচি না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথার উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লে খায় তাদের সর্বনাশ।’
(আমার কৈফিয়ৎ / কাজী নজরুল ইসলাম)
ভারতীয় উপমহাদেশের সকল মানুষ এখন স্বাধীন দেশের অধিবাসী। স্বাধীন দেশের কবিতা, কথাসাহিত্যে, নাটকে, সংগীতে রাজনৈতিক চেতনা থাকবে কিন্তু সেটা হতে হবে সৃষ্টির প্রয়োজনে –শৈল্পিক সৌন্দর্যের অনুকূলে। এটাই অপ্রিয় সত্য যে,– রাজনীতির সঙ্গে মহৎ কবি-শিল্পীদের নিবিড় প্রেম ছিলো না কোনোকালেই—কোনোদেশেই। কখনো-সখনো দুয়েকজন কবি রাজনীতির পক্ষাবলম্বন করেছেন কিন্তু অচিরেই ভুল ভেঙে যাওয়ায় সেখান থেকে সরে আসতে দেরি হয়নি তার। আমি দেখে আনন্দিত যে আব্দুল হাফিজ রাজনীতিসচেতন কবি কিন্তু তার কবিতায় রাজনৈতিক চেতনার ব্যবহার ঘটেছে শৈল্পিক উপকরণ বা কাব্যিক অলংকার হিসেবে।
‘প্রহসন করে অভুক্ত মানুষের সঙ্গে
রাজনৈতিক আচরণে পারদর্শী চাঁদ।’
(বিমূর্ত মায়া ও প্রহেলিকা)
অথবা
‘আর আমার কমরেড বন্ধুরা মরে গিয়ে বেঁচে গেছে।
কারণ—
আমার মুখ এখন কুলুপ দিয়ে এঁটে রেখেছে একদল হায়েনা।’
(সাত সকালের পদাবলি)
একটি খুবই উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে, আব্দুল হাফিজ একবিংশ শতাব্দীর গগনচুম্বী অট্টালিকা আর প্রযুক্তির দাপটে প্রগলভ হয়ে ওঠা সময়ে বসবাস করেও প্রকৃতিলগ্নতা ধরে রেখেছেন। তিনি আকাশ, নদী, সমুদ্র, বনভূমি এসব নিয়ে কবিতা রচেননি কিন্তু তার কবিতাকে সপ্রাণ সচ্ছলতায় সমৃদ্ধ করেছে প্রকৃতির উপকরণ। তিনি ভাবনায় অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত শহরবাসীর মতো থেকেছেন কিন্তু কোনো অতিলোভী পাণ্ডিত্যনির্ভর আধুনিক কবির পথে নিজ সৃষ্টিকে কংক্রিটময়তায় নিঃস্ব হতে দেননি। আণবিক বোমা আর আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপাণাস্ত্র শাসিত একুশ শতকের বারুদ প্রহরেও তিনি ষড়ঋতুর রূপ-রস-গন্ধ- রং মেখে নিয়েছেন চিন্ময় অস্তিত্বে । তার কবিতায় সেই রূপ-রস-গন্ধ- রং প্রায়শ চোখে পড়ে।
ক.
‘ঘণ্টাখানেক আগে মেঘ সেজেছিল সাদাকালো পোশাকে—
দুর্দান্ত গিত ছিল তার।
সেনাবাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল
রোদ পোড়া চৌচির জমিনে।’
(বর্ষার গান)
খ.
‘কার্তিকে জন্ম হলেও আমার রক্তে মিশে যায় মাঘ
হাড্ডিমজ্জায় ঢুকে আছে সে মাঘ
মাঘ আসলেই আমি নির্লিপ্ত হয়ে যাই
হয়ে যাই জড়সড়ো।’
(মাঘ ও আমার অস্তিত্ব)
গ.
‘শরতের মেঘ হাঁটে কাশফুলের ডাঁটায়।’
(শরতে দুঃসপ্ন)
ঘ.
‘অতঃপর বিকেলগুলো হাই তোলে
ঘুমঘোরে ডুবে যায়
আর রাতগুলো হয় নির্ঘুম
জোছনার সাথে মেলাই (মেলায়?) হাত।’
(শরতে দুঃস্বপ্ন)
আব্দুল হাফিজ ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ; তিনি কবিতার মূল ঐশ্বর্য– তার নান্দনিক সৌন্দর্য বিষয়ে ওয়াকিফহাল এবং সচেতন। তিনি কবিতার আঙ্গিক নির্মাণে সহজ-সাবলীলতার অনুসারী। খুব বেশি ঘোরপ্যাঁচ নেই তার কবিতায়। তেমনি নেই অক্ষমের কষ্টকল্পনার নিস্ফল বাহাদুরি। আবার নেই খুব বেশি সংখ্যক অভিনব চিত্রকল্প কিংবা অভূতপূর্ব ধরনের উপমার ব্যবহার । কিন্তু মাঝে মাঝে নতুন স্বাদের ও নতুন রঙের কাব্যালংকার তার কোনো কোনো কবিতাকে কিংবা কবিতাংশকে শৈল্পিক উজ্জ্বলতায় অনন্য করে তুলেছে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যায়:
১.
ভালোবাসার খোঁজে বহতা নদীর মতোই চঞ্চল ছিলাম একদিন
খরস্রোতের তোড়ে ভাসতে ভাসতে
তোমাকে পেলাম।’
(ভালাবাসার কাহন)
২.
‘কোনো এক তমসাচ্ছন্ন আঁধার আমাকে ঠ্যালা দিয়ে যাচ্ছে আলোর অভিমুখে।’
(মধ্যরাতের প্রলাপ)
৩.
‘রাতের পূর্ণিমা চাঁদের আলোতে
‘লকডাউন’ ঝলসে যায়।’
(দীর্ঘশ্বাস)
৪.
‘অতঃপর বৃহৎ আকৃতির রাস্তা
প্রিয়ার চুলের বিনুনির মতো সরু হয়ে গেল,
আমি ওই সরু রাস্তা দিয়ে হেঁটে দাপ্তরিক কাজে ছুটে গেলাম।’
(দীর্ঘশ্বাস)
৫.
‘স্বৈরাচারী চাঁদের আলোয় গাছগুলোকে ভৌতিক মনে হয়
যেন কোনো এক অদ্ভূত দৈত্য দাঁড়িয়ে আছে।’
(বিমূর্ত মায়া ও প্রহেলিকা)
৬.
‘সূর্যের কাছে ধার করা আলো নিয়ে
স্বৈরাচরী চাঁদ শুধু দেমাগ দেখায়।’
(বিমূর্ত মায়া ও প্রহেলিকা)
৭.
‘তোমাকে অনুভব করলেই
পৌষ শীতে কুঁকড়ে যাওয়া
সমস্ত শব্দ জটলা পাকিয়ে ছুটে আসে।’
(সৃষ্টির উল্লাস)
৮.
‘আমি মোটেও অবাক হব না
যদি হঠাৎ শুনি মৃত মানুষ
আরেকজনের টাকা নিয়ে দৌড়াচ্ছে কবরের দিকে।’
(যদি হঠাৎ শনি)
আব্দুল হাফিজের এটি দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পড়ার সুযোগ ঘটেনি এখনও। ফলে এই মুহূর্তে আমার পক্ষে বলার অবকাশ নেই– প্রথম কাব্য থেকে দ্বিতীয় কাব্যে এসে তার কবিতার কোনো মোড় পরিবর্তন ঘটেছে কি না অথবা কোনো উত্তরণ অথবা অবনমন ঘটেছে কি ঘটেনি। তবে দুয়েকটি বিষয় আমার নজরে এসেছে। তিনি কবিতায় কখনো কখনো অনেকবেশি খোলামেলা হতে লোভী হয়ে উঠেছেন। তিনি কবিতায় যে বার্তাটি পাঠককে দিতে চান সেটা বেশি পরিস্কার করে দিতে চেয়েছেন। এটা তার জীবন-দার্শনিকতার চাপ তাকে করতে প্ররোচিত করেছে বলে আমার মনে হয়েছে। অবশ্য সেটারও একধরনের ইতিবাচক তাৎপর্য আছে। কিন্তু কবিতা তো রাজনৈতিক ইশতেহার অথবা সাংবাদিকের প্রতিবেদন নয়। কবিতার পক্ষে রোদেলা দুপুর কিংবা তমসাচ্ছন্ন রাত কোনোটাই হওয়া সমীচীন নয়। বরং তার হওয়া প্রয়োজন আলো-আঁধারিমাখা জোছনারাত। কারণ আধুনিক কবিতা যতখানি প্রকাশের মাধ্যম, ততখানি আড়াল করার ছলনাও। আব্দুল হাফিজের দুয়েকটি কবিতা শুরুতে এবং মাঝপথ অবধি দুর্দান্ত শিল্পসুন্দর অবয়ব ও প্রাণ ধারণ করেছে। সেখানেই কবিতাটি শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু তারপরও কবিতায় একটি/দুটি স্তবক যোগ করা হয়েছে। এতে করে সেই বিশেষ কবিতাটির স্মার্টনেস মার খেয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। কবিতা রচনার সময় কবিতাটির আবৃত্তিযোগ্যতার কথাকে মগজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই সমীচীন বলে আমার মনে হয়। আমি সাহিত্যের অধ্যাপক নই। কেবলমাত্র দেশ-বিদেশের অজস্র কবিতা পাঠের অভ্যাসলব্ধ অভিজ্ঞান থেকে কথাগুলো শেয়ার করলাম। আমার সব কথার সঙ্গে সকলেই সহমত হবেন, এমনটা দাবি করার কোনো কারণ নেই, প্রয়োজন তো নেই-ই।
আব্দুল হাফিজ কবিতা-অন্তপ্রাণ মানুষ। কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও রচনা এই তিন উঠোনেই তিনি কবিতার ঘর-সংসার করে আসছেন। তার সেই সংসারটি একদিন সোনার সংসার হয়ে উঠবে– এটা আমাদের প্রত্যাশা ও প্রার্থনা।
—-০০—-
‘তবু অনন্ত জাগে’
আব্দুল হাফিজ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৪
প্রকাশক: পুথিপ্রকাশ
প্রচ্ছদ:টিটু বিপিএল
মূল্য: ২৮০/০০টাকা।