বিভেদকামী শক্তির অবসান ঘটাতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমুহূর্তে দেশের ভরসা

0
1433
CM Mamata Banerjee with Faruque Ahamed
CM Mamata Banerjee with Faruque Ahamed
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:47 Minute, 48 Second

বিভেদকামী শক্তির অবসান ঘটাতে অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমুহূর্তে দেশের ভরসা

ফারুক আহমেদ

অনেক বছর পেরিয়ে গেল, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ভারত গড়ে তুলতে পারিনি দেশবাসী। দেশ জুড়ে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, সম্প্রীতির বন্ধন অগ্রাহ্য করে বেড়ে চলেছে হানাহানি। সংবাদমাধ্যমেও কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসব ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের খবর প্রচারের সময় সমদৃষ্টির পরিচয় দেখতে পাই না। এ এক ট্রাজেডি।

পশ্চিমবঙ্গে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। এই সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ঈদ। কিন্তু শারদ উৎসবের সংবাদ যেমন প্রচার পায় তার ছিটেফোঁটা সংবাদ ঈদ উৎসবকে ঘিরে হয় না। কেন? শারদ উৎসবকে ঘিরে যত শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয় তাতে চোখ রাখলে দেখতে পাই, ঈদ সংখ্যাগুলোতে সংখ্যাগুরুদের অবাধ প্রবেশ ঘটলেও শারদ সংখ্যাগুলোতে মুসলমান লেখক কবি সাহিত্যিকদের নাম প্রায় দেখতেই পাওয়া যায় না। ব্যতিক্রমী দু’এক জনের নাম মাত্র দেখতে পাই। সম্প্রীতির মেলবন্ধন জরুরি। পরিবর্তন চাই মননে ও কার্যক্ষেত্রে।

আমাদের মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর তোলার অশুভ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ব্যর্থ করতে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। নইলে যতই আমরা মুখে সম্প্রীতির বার্তা শোনাই না কেন, সব আয়োজন গঙ্গার ভাঙনের মতো তলিয়ে যাবে। আমরা ছদ্ম ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিতে চাই। প্রকৃত ধর্মবোধে যারা বলীয়ান তাদের স্বাগত জানিয়ে সকলে মিলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই। বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে সংখ্যাগুরু সমাজের মানুষদের উদার আহ্বান জানিয়ে গর্ববোধ করেছে  মুসলিম সমাজ। কিন্তু বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আজও  তাঁরা ব্রাত্যই থেকে গেল  কেন? বঞ্চনা  মানুষ চায় না। যে বঞ্চিত, সে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান হোক আর মুসলমান হোক, সে-ই দুঃখের সমভাগী।
চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অনিয়মকে একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাংলাকে নতুন জীবন দেওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ। সেই কঠিন কাজ নিপুণভাবে সামলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ।

তারই ফলশ্রুতি বিগত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, বিধানসভা, পৌরসভার  নির্বাচনে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। সন্ত্রাস, সারদাকাণ্ড, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড ইত্যাদি ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় নির্বাচনে পালটা চাল দেবেন। কিন্তু গ্রামবাংলার মানুষ কার্যত সেই আশায় জল ঢেলে মমতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন। পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও উপনির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত যে, সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে জানে এই সরকারই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম সরকারে আসেন তখন তাঁর সামনে যে-দুটি মূল সমস্যা হাজির হয়েছিল তা হল জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল  মাওবাদ। মাওবাদ দমনে দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জঙ্গলমহল ও পাহাড়। রাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মাওবাদ। মাওবাদ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন।

জঙ্গলমহলের জন্য তিনি আলাদা প্রকল্প ঘোষণা করেন। তাদের পূনবাসনের ব্যবস্থা নেন। জঙ্গল মহলের জন্য পৃথকভাবে পুলিশ ও হোমগার্ড নিয়োগ করেন। দুটাকা কিলো দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। জঙ্গলমহলের মানুষ স্বাভাবিক জীবন ফিরে এলেন। পাহাড়ের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করার জন্য আলাদা কমিটি গঠন করেন। পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন বাজেট। আবার তারা পৃথক রাজ্যের দাবি জানালে তা-ও কঠোর হাতে দমন করেছেন। নবান্ন ও মহাকরণ থেকে জেলায় প্রশাসনিক মহল সর্বত্র তিনি কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। যতই সমালোচনা হোক না কেন, তিনিই একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে বিডিও, এসডিও, ডিএম, জেলা সভাধিপতিদের মুখোমুখি বসে সমস্যার কথা শোনেন এবং সমাধানের পথ বাতলে দেন। সম্প্রতি কল্যাণীতে প্রশাসনিক বৈঠকের সময় দেখেছি এক খুদে শিশু আড়াই বছরের কণ্যা রাইসা নুরও বাবার কোল থেকেই দিদি ওই তো দিদি বলে ছুটে যেতে চাইছে দিদির কোলে। সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন আকাশ স্পর্শ করছে যেন। জনসভা মাঠ জনপ্লাবনে ভরে উঠছে। দেশের কল্যাণে তিনি নিবেদিত প্রাণ হয়ে মানুষের নিকট দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছেন।

রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চালু করেছেন বঙ্গসম্মান। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, তার জন্য তৎপর হয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নয়নের জন্য তিনি জেলায় জেলায় আরও হাসপাতাল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পিপিপি মডেল স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতাল খোলার উদ্যোগ রাজ্যের প্রথম। সখ্যালঘু উন্নয়নের প্রশ্নে বামশাসকেরা ছিলেন নির্বিকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু উদ্যোগী। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তিনি অনেক মুসলমান গোষ্ঠীকে ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত করেছেন। চাকরিক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষার সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন। ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ, কবরস্থান, ইদ্গাহ সংস্কারের জন্য ওয়াকফ বোর্ডকে সক্রিয় করে তুলেছেন। রাজ্যে হজ টাওয়ার ও হস্টল নির্মাণ করেছেন। সংখ্যালঘু সংকটে তিনি গুরুত্ব সহকারে বোঝার চেষ্টা করেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার এত সংখ্যালঘু রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন।

পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এত বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। ফলে সামগ্রিক বিচারে এই উন্নয়নকে সার্থক বলা যায় অনায়াসেই। যা চৌত্রিশ বছরে সম্ভব হয়নি, তা মাত্র কয়েক বছরে সম্ভব নয় কখনওই – এই বোধ আমাদের থাকা দরকার। বিরোধীদের অর্থনৈতিক জোট যে মানুষ বরদাস্ত করেনি, তার প্রমাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুনরায় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন। বামসরকারের রাজত্বে সংখ্যালঘুদের হাতে না মেরে ভাতে মারা হয়েছিল। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান- সবদিক থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছিল। মমতা-সরকার এই বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে। বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজিপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। কারণ সংখ্যালঘুদের ভোট যাদের দিকে যাবে তারাই সরকার গড়বে। বিগত চৌত্রিশ বছরে সংখ্যালঘুদের চাকরি, শিক্ষা, বাসস্থান ও সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোনও চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় সংখ্যালঘুদের সংকট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। জ্যোতি বসুর শাসনকালে মুসলিমদের জন্য চাকরি-বাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবি তুলেছিলেন জনাব হাসানুজ্জামান, তাতে জ্যোতি বসু বলেন, ‘জনাব হাসানুজ্জামান কি মুসলমানদের জন্য কারাগারেও সংরক্ষণ চাইছেন।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার জমানায় বলেছিলেন, ‘মাদ্রাসা-মক্তব হল সন্ত্রাসবাদ আখড়া।’ এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন।

মনে রাখতে হবে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতা সংখ্যালঘিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে বহুগুণে ধ্বংসাত্মক আর শক্তিশালী। সংখ্যাগরিষ্ঠের সাম্প্রদায়িকতাবাদী রাজনীতি মুসলমানদের অস্তিত্বকেই ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, জহরলাল নেহুরু একথা স্পষ্ট করে লিখেছিলেন। এর সত্যতা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে। সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে যারা জিতেছে লোকসভা ভোটে বা বিধানসভা ভোটে, ভাল কাজ করলেও তাদের অনেককেই প্রার্থী করা হয় না বা আসন বদল করা হয়। কখনও-বা ঠেলে দেওয়া হয় হেরে যাওয়া আসনগুলিতে। মুসলিম প্রার্থীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় সুচতুরভাবে। সাধারণ মানুষ কিন্তু রাজনীতির এসব প্যাঁচপয়জার বোঝে না। তারা চায় প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। যেমন মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবী দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন জেলার মানুষ। যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খানিকটা হলেও সে দিকে অগ্রসর হতে পেরেছেন। তাঁর দলের  মহাসচিব ও শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষাপ্রসারে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেকগুলি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও বেশ কয়েকটি নতুন কলেজ খুলেছেন। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপি মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কাছ থেকে প্রকৃত মর্যাদা পেয়েছেন। সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থন পেতে চাইবেন সব দল কারণ এই সংখ্যালঘুদের মন জয়ে সকল রাজনৈতিক দল নানা কৌশলে বাজিমাত করতে উঠেপড়ে লেগেছিল। বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস-এর দিকে থাকা মুসলিম ভোটে থাবা বসাতে চাইছিল, রাজ্যের মানুষের মুখে মুখে জোট নিয়ে জোর চর্চা চলছিল। বাম-কংগ্রেস নেতারা বারবার ছুটে যাচ্ছিলেন ফুরফুরাতে। কোন দল কতটা সমর্থন পাবে তা ভাবার বিষয় ছিল। বাংলার সংখ্যালঘুরা বোকা নয়, তারা এখন বুঝতে পারেন। কে বা কারা রাজ্যের মানুষের ও সংখ্যালঘুদের প্রকৃত কল্যাণ চান। বিগত ৩৪ বছর বাংলার মানুষ দেখেছেন সংখ্যালঘুদের সামাজিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের কোন চেষ্টাই করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার।

রাজ্যের ২৩টা জেলায় বামফ্রন্টের পার্টি সম্পাদক আছেন, কিন্তু কোনও মুসলিমকে আজও সম্পাদক পদে বসাতে পারেননি বাম কর্তারা। বামফ্রন্টের কর্তারা বলেন, তারা নাকি অন্যদের থেকে অসাম্প্রদায়িক। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কখনও মুসলিম আধিকারিককে বসাতে পারেননি, কেন এই প্রশ্ন ওঠা অমূলক নয়। এই কালো ইতিহাস বাংলার মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাবে না। এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কয়েকজনকে জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনেও বসিয়েছেন। বাম সরকার যা কখনও ভাবতেই পারেনি। বামফ্রন্টের কর্তারা শুধু ভোটের সময় ভোট লুঠ করতে আর লেঠেল বাহিনী করে মুসলিমদের এবং দলিতদের এগিয়ে দিয়েছে সুচতুরভাবে। মারছে মুসলিম, মরছে মুসলিম আর মরছে দলিতরা। বাংলার মানুষ ভুলে যায়নি তাদের চালাকি ও অত্যাচারের কথা। অপ্রত্যাশিত দেশভাগের ফলে সাবেক বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজ পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। মানসিক অস্বস্তিকাতরতায় আচ্ছন্ন মুসলমান জাতিসত্তা  এই প্রায় সাত দশকে কোন অবস্থানে?  

স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবাংলায় জীবন বিকাশের হরক্ষেত্রে  বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রশ্নে মুসলমানদের নানামতে বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের ‘গণতান্ত্রিক সাম্যতাহীন’ নির্লজ্জ স্বার্থসিদ্ধি আর নানাবিধ ধান্ধাবাজির সওয়ালে দাবার বড়ে হিসেবে ব্যবহার করেছে অর্থাৎ ‘ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে । এই নিঃসহায় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে মাদারি নাচের উপাদান করে তুলেছে।  হরেক কিসিমের কারসাজির উৎসকেন্দ্রকে এক নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখলে যা স্পষ্ট তা  খোলসা করে বলা দরকার। সত্য নির্মম, সেক্ষেত্রে কাউকে বেয়াত করার প্রশ্নই ওঠে না। সে সুযোগও নেই, কেননা কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী এই ধর্মবিশ্বাসী সমাজ ‘সিউডো সেক্যুলার’, নরম ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের সমস্ত রকমের ফন্দি আর ফিরিক অনুধাবনের পূর্ণ ক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশবিভাগের পর তারা অন্তবিহীন সমস্যায় আক্রান্ত, জর্জরিত এবং তারা রাজনৈতিক সমাধান কোন পদ্ধতিতে সম্ভব তার তত্ত্বগত, কৌশলগত আর পরিস্থিতি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও পারঙ্গম হয়ে উঠেছে। তার প্রমাণ তারা দিয়েছে বিগত দুই বিধানসভা ও ২০১৪ লোকসভা ভোটে।

কোনও ‘ললিপপ’ আজ তাদের তৃপ্ত করার জন্য যথেষ্ট নয়। অতলান্তিক সমস্যা আর অস্তিত্বের সংকটগুলো অতিক্রম করে কিভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকবে তার পূর্ণ একটি ছকও সংখ্যালঘু মনে ক্রিয়াশীল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছে। তাই বিরোধীরা এই বাংলায় সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।বিগত বাম শাসনের অহমিকা, ঔদ্ধত্য, ভণ্ডামি আর দুর্নীতির গহ্বরে নিমজ্জিত তস্কর শাসকগোষ্ঠীর বলির পাঁঠা হতে তারা আর আগ্রহী নয়। বাম জামানায় প্রশাসনিক বদমাইশি সম্পর্কে নিরন্তর প্রতিবাদী হয়ে ওঠা সমাজ এখনও সচেতন আছেন। তারা ভুলে যায়নি জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জামানায় সংখ্যালঘুদের সংকট বহুগুণ বেড়ে গিয়েছিল। সর্বদিক থেকে তাদের হাতে না মেরে ভাতে মারার সেই সুকৌশল আজও ভোলার নয়। এই চরম অপমানের বদলা বাংলার মানুষ ও সংখ্যালঘু সমাজ ভোটবাক্সে দিয়েছেন। যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- এর দল বিধান চন্দ্র রায়ের পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে সকলকেই চমকে দিয়ে ২১১টা আসনে জয়ী হয়েছিল। গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মিটিং-মিছিল করে জোটের মুখে ঝামা ঘসে ও চুন-কালী মাখিয়ে তাদের পতন সুনিশ্চিত করেছেন। 

সম্প্রতি ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী জোর আওয়াজ তুলেছিলেন সব দলগুলো সংখ্যা অনুপাতে ৩০ শতাংশ আসনে সংখ্যালঘু প্রার্থী দিক। সেই পথে কোনও দল হাটেনি অবশ্য। যেসব ওয়াকফ সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে তা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষ চান প্রত্যেক এলাকায় আধুনিক মানের সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠুক। রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় অবশ্য স্বর্ণযুগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বেশ কয়েটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও অনেকগুলো কলেজ খুলেছেন। 

রাজ্যের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিকদের মধ্যে অন্যতম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, সুব্রত বক্সীরা নিষ্ঠার সঙ্গে অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করে চলেছেন। আপদে-বিপদে রাজ্যের মানুষের পাশে সর্বদা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নগর উন্নয়নে ও কলকাতার মেয়র হিসেবে ফিরহাদ হাকিম এর শুভ উদ্যোগ প্রাণিত করেছে বাংলার মানুষকে। আশার কথা, মানবীয় চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মেধাজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সমাজ-রাষ্ট্রচিন্তক সর্বোপরি আম-জনতার মধ্যে থেকে সচেতন অংশটি বাম শাসনের প্রশাসনিক বদমাইশি সম্পর্কে নিরন্তন প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজ থেকে উদ্ভূত প্রতিনিধিস্থানীয় সমাজ-বেত্তা, প্রাবন্ধিকদের ভাবনাচিন্তাকেও তুলে ধরেছিলাম আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রবন্ধ সংকলন ‘কংগ্রেস ও বাম শাসনে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক’ গ্রন্থে। 

সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজের একটি অংশে যারা আজও উটপাখির মতো মরুবালিতে মুখ গুঁজে উপেক্ষিত অংশের জাগরণকে স্বীকার করতে দ্বিধান্বিত তাদের বোধদয় হবে এমন প্রত্যাশা করা যায়। যার ফলে বাম শাসনের অবসান ঘটাতে আমরাও এগিয়ে এসেছিলাম। পরন্তু সীমাহীন রাজকীয় ক্ষমতানির্ভর সুখে- স্বাচ্ছন্দ্যে ঘাড়ে-গর্দানে এক হয়ে যাওয়া বামফ্রন্টের রাজাবাবুরা এতদিনে যে সংখ্যালঘিষ্ঠ সমাজাংশের উপস্থিতিকেই স্বীকার করতো না, আজ তারাই বেমক্কা নির্লজ্জভাবে ছুটে যাচ্ছেন সংখ্যালঘুদের কাছে। সংখ্যালঘুরা চান সমদৃষ্টি সমাজবিকাশ। সময়ের বিচার করেছেন এবং বিলুপ্তভাবে জয় দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন মমতা সরকারকে। বাংলার অনেকেই মনে করছেন এবার ৪২ এর মধ্যে ৪২ না হলেও ৩৯ টা আসনে জয় আসবেই। লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে আছে তৃণমূল কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ ও মালদা জেলায় কংগ্রেস এর জেতা আসন এবার লড়াই দিয়ে ছিনিয়ে নেবে তৃণমূল। রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন বৈষম্য না করে উন্নয়ন করা যায়। তাই উন্নত, ঐক্যবদ্ধ, ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল ভারত গড়ার লক্ষ্যে বাংলার ৪২ টা লোকসভা কেন্দ্রে প্রকাশ্য জনসভা করছেন বাংলার নয়নের মণি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে ভোট প্রচারে তাঁর জনসভা গুলো জনসমুদ্রের আকার নিচ্ছে।

গণতন্ত্র ও সংবিধান আজ বহু রাজনৈতিক নেতাদের হাতে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচাতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের আরও সচেতন হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে হবে।  

বাংলায় বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নারী-শক্তির জয় জয়কার দেখে সবাই অবাক হয়েছিলেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৫০ শতাংশ সিটে মহিলা প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এবার লোকসভা নির্বাচনে ৪১ শতাংশ সিটে মহিলা প্রার্থী দিয়ে সকলকেই টেক্কা দিলেন তৃণমূল দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৭ জন মহিলাকে টিকিট দিয়েছেন, যা এই রাজ্য সহ গোটা ভারতের আর কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই নজির দেখাতে পারেন নি। 

এবার লোকসভা নির্বাচনে যত সংখ্যক মহিলা প্রার্থী হয়েছেন তা একটা রেকর্ড। সর্বোপরি যেভাবে মহিলা প্রার্থীরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। 
এটা ভারতের ইতিহাসে একটা ঐতিহাসিক ঘটনাও বটে।

লোকসভা নির্বাচনের পর ২৩ মে ফল বেরিয়ে গেলে তখন দেখা যাবে বাংলা থেকে সব থেকে বেশি মহিলা সাংসদ লোকসভার সদস্য হয়েছেন। মনে হয় সাংসদীয় রাজনীতিতে নারী শক্তির জয় হবে তৃণমূল দলের হাত ধরেই।

আসন্ন সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে মালদা লোকসভা কেন্দ্রে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছেন মৌসম বেনজির নূর, বশিরহাটে নুসরাত জাহান, যাদবপুরে মিমি চক্রবর্তী, আসানসোলে মুনমুন সেন, উলুবেড়িয়াতে সাজদা আহমেদ, কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্র, পূর্ব বর্ধমানে মোমতাজ সংঘমিত্রা, আরামবাগে অপরূপা পোদ্দার, বনগাঁয় মমতা বালা ঠাকুর, বালুরঘাটে অর্পিতা ঘোষ, রানাঘাটে রূপালী বিশ্বাস, বারাসাতে কাকলি ঘোষ দোস্তিদার, বীরভূমে শতাব্দী রায়, দক্ষিণ কলকাতায় মালা রায়, হুগলীতে রত্না দে নাগ সহ অন্যদের জয় আসলে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে।

বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুল ইসলাম সবসময়ই সমাজ প্রগতির লক্ষ্যে নারীর অবরোধ প্রথার বিলোপ এবং তাঁদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার জন্য গুরুত্ব দিয়ে  তাঁর লেখনিতে তুলে ধরেছেন। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমকালে নারী সমাজের মুক্তির লক্ষ্যে যারা একনিষ্ঠভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অগ্রণী ছিলেন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। 

নারীদের আরও বেশি করে  গণতন্ত্র  প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন—-
‘সাম্যের গান গাই,
আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই,
বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’

আশার কথা যে, সামাজিক পরিবর্তনের পাশাপাশি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে সর্বত্র। একবিংশ শতাব্দীর এই দিনে নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে হবে, আর তাহলেই কবির সার্থকতা প্রতীয়মান হবে।

নির্বাচনের ফলেও আমরা দেখবো নারী-শক্তির জয় জয়কার হবে বাংলা ও দেশ জুড়ে। বাংলার ইতিহাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশেষ জায়গা করে নিলেন, সমাজের কল্যাণে অফুরন্ত কাজ করে। তবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁকে আরও কঠোর হতেই হবে।   

আর্দশ ভারত গড়তে বিজেপিকে হটিয়ে ৪২ টি আসনেই তৃণমূল জিততে পারবে কি না তা সময় বলবে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ ইতিহাস তৈরি করতে পারেন। এই সুযোগ আ। তাই বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে এবং বিভেদকামী শক্তির অবসান ঘটাতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে একটা ভোটও বিজেপিকে দেওয়া উচিত হবে কি না তা দেশবাসীর ভাবার সময় এসেছে। এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ভারতীয় এগিয়ে আসুক। দেশ রক্ষার শপথ নিয়ে ভোট দিক। ধর্মীয় বিশ্বাসের আঘাত করবে না এবং গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষা করবে এমন কোনও রাজনৈতিক দলের প্রধানই হোক দেশের প্রধানমন্ত্রী।

দেশের মানুষের কল্যাণে  দলিত মুসলিমদের যৌথ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মহামিছিল ও জনসভা সফল করতে তরুণ তুর্কী নেতারা বড় দায়িত্ব পালন করছেন। আর্দশ ভারত গড়তে বিজেপি হটিয়ে ৪২ টি আসনেই তৃণমূল জিততে পারবে না। 

এই মুহূর্তে বাংলার ও দেশের সবথেকে জনপ্রিয় নেত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলার লড়াকু নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে দুই মেদিনীপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলা সহ বাংলার জেলায় জেলায় ভাল ফল করবে তৃণমূল। 

এবার বাংলার ইতিহাসে নতুন ইতিহাস রচনা করে সব থেকে বেশি সিটে জয় পাবে তৃণমূল।  
৪২ টা আসনেই প্রচারে একটিই মুখ তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল দলের আসন বাড়াতে কর্মীরা দৃঢ় প্রতীজ্ঞ। এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই শুভেন্দু অধিকারী ও তিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, চার ফিরহাদ হাকিম সহ অন্যরা জোর কদমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়।

এবার পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ আসে কি সেটাই দেখার। 

দলিত মুসলিমদেরই যৌথ উদ্যোগেই ঐতিহ্যময় ভারত গড়তে দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আদি ভারতবাসীদের নিজেদের মধ্যে লড়িয়ে দিয়ে কারা ক্ষমতায় আছেন এতো বছর? ভাবুন একবার আর জেগে উঠুন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করবেন না। ভাবুন একবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাবরী মসজিদ ভেগেছে বিভেদকামী শক্তি কি কারণে? স্রেফ বিভাজনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে বলে। বহুজন সমাজের মানুষ ও মুসলিমদের সজাগ থাকতে হবে ধর্মীয় আবেগের জন্য কোনো ভুল পথে পরিচালিত হলে বিভেদকামী শক্তির উত্থান রোখা যাবে না। কোথায় কখনও উস্কানিমূলক বক্তব্য শুনে প্রভাবিত হবেন না। প্রভাবিত হলে চলবে না বরং বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দেশ ভারতকে বিপদে চালিত করাদের হাত থেকে রক্ষা করুন। মনে রাখতে হবে দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ওপর যে চরম বৈষম্য ও বঞ্চিত করার চক্রান্ত চলছে তার প্রতিকার করতে হলে জোটবদ্ধ হতে হবে। 

৭২ বছর পেরিয়ে গেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে তবুও আদি ভারতবাসীর প্রকৃত কল্যাণে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তেমন ভালো কাজ করতে পারেননি। 

নিজেদের মধ্যে আর মারামারি নয় কোনও বিবাদ থাকলে তা এড়িয়ে চলুন। একটু বিচার ও বিশ্লেষণ করুন কে বা কারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই বিবাদ ও বিভাজনের রাজনীতির উত্থান ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ফায়দা লুটতে চাইছে কোন কৌশল অবলম্বন করে তা বুঝতে হবে। প্রতি নির্বাচনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাতে কাদের নাম উঠে এসেছে? দেখা যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলিম ও বহুজন সমাজের দলিত মানুষদের নাম। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা চলছে কে কতটা বেশি দলিত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ব্যবহার করতে পারবে এবং তাদের নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে সক্ষম হবে।

ভারতীয় ঐতিহ্যময় ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে জোটবদ্ধ হয়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে এবং হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে।

সকলেই অবগত আছেন বিভেদকামী শক্তি ভারতকে বিপদে চালিত করছে। তাই এখন আর কোনো বিভাজনের রাজনীতির উত্থানের পেছনে থাকলে চলবে না। বাংলার মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের মানুষের কল্যাণে বড় কাজ করছেন। বাংলা ও দেশকে বাঁচাতে তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী করার সুযোগ করে দিন। 

মোদী সরকারের পতন সুনিশ্চিত করতে হলে দলিত ও মুসলিমদের জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে বিভেদকামী শক্তির বিরুদ্ধে এবং ভোটবক্সে তাঁর যোগ্য জবাব দিতে হবে। 

২০১৯ লোকসভা ভোটে মোদী সরকারকে সরিয়ে প্রকৃত দেশ কল্যাণকারীদের হাতে দেশ চালানোর ভার তুলে দিতে হবে।

ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উপহার দিতেই হবে। 

দেশবাসীকে শান্তিতে বাঁচার আকাশ দেওয়াই হোক অগ্নিশপথ।

সম্প্রীতির পক্ষে, বিভাজনের বিরুদ্ধে এবং অস্তিত্ব রক্ষায় বিশিষ্টজনের সভা ও আলোচনার আয়োজন করতে হবে সর্বত্র। দলমত নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে রুখে দিতে হবে বিভেদকামী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে।

ভারতের আসমের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবি জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা অবশ্য হিন্দু শরণার্থীদের বিতাড়নের কোনও প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছেন এবং তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পক্ষে সাফাই দিয়েছে।

সম্প্রতি সংগঠনটির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এনআরসি ছাড়াও ‘ঘর ওয়াপসি’, ‘লাভ জিহাদ’ ‘ল্যান্ড জিহাদ’ ইত্যাদি বিতর্কিত ইস্যুতে মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

‘ঘর ওয়াপসি’ (বিভিন্ন কারণে যারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা) বা ‘ঘরে ফেরানো কর্মসূচি’ রূপায়ণের জন্য দুর্গাবাহিনী ও বজরং দলের সদস্যদের নিয়ে একটি মঞ্চ গঠন করা। এর পাশাপাশি কাজে লাগানো মঠ-মন্দির ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে। তাদের অভিযোগ, এখানে হিন্দুদের দেবত্তর সম্পত্তি ও হিন্দুদের সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া হচ্ছে এবং কম দামে কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘ল্যান্ড জিহাদ’ চলছে। অন্যদিকে, তারা কথিত ‘লাভ জিহাদ’ (হিন্দু নারীদের ভালবাসার ছলে ধর্মান্তরকরণ) রুখে দিতে মানুষজনকে বোঝাতে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছে। এইসব বিভাজন করে ভারতের ও বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না বিজেপি ও আরএএস।

পশ্চিমবঙ্গে ওরা কখনও সফল হবে না। পশ্চিমবঙ্গে ওরা একবিন্দুও সফল হতে পারবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য ছোটখাট দাঙ্গার মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভক্ত করার চক্রান্ত করেও ওরা চরমভাবেই বাংলায় ব্যর্থ হয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি করে সম্প্রীতির বাংলায় কখনও সফল হবে না বিজেপি। বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। দেশের বৈধ নাগরিকদের অন্যায়ভাবে বিদেশি বানিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশবাসী সোচ্চার হচ্ছেন, এটাই আশার আলো। আমরা আগে দেখেছি বিজেপি সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে।

আসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে লাখ লাখ বৈধ নাগরিকদের নাম বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র কোন উদ্দেশ্যে তা আমরা বুঝতে পারছি। এভাবে আসম থেকে বাঙালি মুসলিম ও হিন্দুদের খেদিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না কেন্দ্র ও অসম সরকার।

আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারতকে ওরা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বানাতে পারবে না। ভারতের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। সংবিধানকে কলঙ্কিত করার উদ্যোগ সুস্থ নাগরিকরা মেনে নেবেন না। মিশ্র সংস্কৃতিই আমাদের বৈভব। সম্প্রীতির দেশ ভারত।

ভারতীয় সংবিধানের অমর্যাদা প্রকৃত ভারতবাসীরা মেনে নিচ্ছে না। ভারতকে যারা অপবিত্র করছে তারা মানুষ নয়, মানুষ নামের অন্য কিছু। ভারত আমাদের মাতৃভূমি। যেভাবে ওরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ভারত গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে অন্য দেশের থেকে।

পশ্চিমবঙ্গে কোনোরকমভাবে ওরা দাঁত ফোটাতে না পেরে এখন একেকটা ইস্যু তোলার চেষ্টা করছে। এখানে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। যেজন্য গোটা ভারতের বিরোধীশক্তি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন। সেই ভয়ে  বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গে আশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মহান ভারতকে ওরা আর কত নীচে নামাবে!  আশা করি ভারতবাসী লোকসভা নির্বাচনে যোগ্য জবাব দেবেন।

এবার লোকসভা ভোটে দেশের সুনাগরিকরা বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবেন। 

বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে পারবেন বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী ও অন্য সব বিরোধী শক্তি।

ভারতের সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরার প্রয়াসে অনেক কিছু জানা যাবে। নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন হতে পারবো।

মৌলিক অধিকার
ভারতের সংবিধানের তৃতীয় অংশে ১২ থেকে ৩৫ নম্বর ধারায় ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি উল্লেখ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনো আইন ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি ক্ষুন্ন করতে পারে না। এই বৈশিষ্ট্য বিশ্বের খুব কম সংবিধানেই পরিলক্ষিত হয়। ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলি লিখিত ভাবে স্বীকৃতিদানের ফলে নাগরিকদের ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করেছে। এই অধিকারগুলির মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। মূল ভারতীয় সংবিধানে সাত প্রকারের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ থাকলেও ১৯৭৮ সালে ৪৪ তম সংশোধনীর দ্বারা সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সরকার অধিকার ভাঙলে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে তার প্রতিকার করা যায়।

বর্তমানে মৌলিক অধিকার ৬টি, নিম্নরূপ :

(১) সাম্যের অধিকার: জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রতি নাগরিকের সমান অধিকার।

(২) স্বাধীনতার অধিকার: বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইউনিয়ন গঠন, দেশের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার।

(৩) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার: বিনা বেতনে বেগার খাটানো, মানুষ ক্রয় বিক্রয়, ১৪ বছরের কম বয়সের শিশুদের কারখানা বা খনির কাজে লাগানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

(৪) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার: কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হতে পারেন এবং কোনো নাগরিককে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা যাবে না। ব্যক্তির ইচ্ছে অনুযায়ী ধর্ম পালন করার অধিকার আছে।

(৫) সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক অধিকার: নাগরিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকারের ভিতর ধরা হয়েছে।

(৬) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার: কোনো নাগরিক উপরিউক্ত অধিকারগুলি বা কোনো একটি অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, তিনি সুপ্রিম কোর্টে প্রতিকারের জন্য আবেদন করতে পারেন।

সংবিধানে নাগরিকদের কর্তব্যের কথাও বলা হয়েছে। যথা— সমাজের মঙ্গলের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থত্যাগ, আইন মেনে চলা, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রভৃতি। সংবিধানের নির্দেশক নীতি দ্বারা জনকল্যাণমূলক নির্দেশক নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। অধুনা এই নির্দেশক নীতিকে বাধ্যতামূলক করার প্রবণতা সংবিধানে দেখা যায়। ভারতের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ নয়। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিকারগুলির ওপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন:

(১) রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানো।

(২) আদালত অবমাননা।

(৩) অশালীনতা প্রভৃতি ঘটনা ঘটলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা যায়।

(৪) বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতরাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে সাময়িক ভাবে নিয়ন্ত্রিত বা খর্ব করতে পার।

(৫) দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলে ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করা যায়।

বাংলার মানুষের কল্যাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে। বাংলার সকল ধর্মের ও বর্ণের সচেতন মানুষ শান্তিময় জীবন অতিবাহিত করতে চান তাই বাংলাকে পবিত্র রাখতে তাঁরা বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করবেই। এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। পুলিশ ও প্রশাসনে কোনও আধিকারিক বিভেদকামী শক্তির হাতে পরিচালিত হলে তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। মোদির জামানার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ আবার নতুন করে স্বাধীন হবে এই আশায় সাধারণ মানুষ। 

ফারুক আহমেদ গবেষক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যাল, ইতিহাস বিভাগ, নদীয়া-৭৪১২৩৫, কথা: ৭০০৩৮২১২৯৮
লেখক, সম্পাদক উদার আকাশ।    

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here