আবিষ্কৃত হল কোরোনার সৃজনাত্মক দিক
এম রাজশেখর (১৪ জুলাই ‘২০):- আবিষ্কৃত হলো কোরোনা-র কিছু সৃজনাত্মক দিক। ‘নভেল কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’ বিশ্ববাসীর কাছ থেকে যেমন দস্যুর মতো অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে, ঠিক তেমন চিকিৎসা পরিমণ্ডলে এমন কিছু জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অন্তত এই কারণে অবশ্যই ‘কোরোনা ভাইরাস’-কে সাধুবাদ দেওয়া উচিত।
এইটুকু পড়ে যে সমস্ত পাঠকদের খটকা লাগছে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দয়া করে একটু ধৈর্য্য ধরে পুরো লেখাটা পড়ুন; তাহলে নিজেরাই বুঝতে পারবেন।
‘কোরোনা ভাইরাস’ রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে পুরনো বিশ্বাস এবং ভরসা অনেকটা হলেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছে।
আগে চিকিৎসকেরা রোগীর রোগ সম্পর্কে কোনো ট্যারাব্যাঁকা মন্তব্য করলেই রোগী বা রোগীর পরিবার অন্য চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে প্রথম চিকিৎসকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর জ্ঞান বা যোগ্যতা বিচার করতে পিছপা হতেননা। এখন রোগী ও রোগীর পরিবারের এই মনোভাব কর্পূরের মতো পুরো উড়ে গেছে।
এখন কোনো চিকিৎসক যদি বলে থাকেন রোগীর ‘কোভিড ১৯’ হয়েছে, তাহলে বিশ্ববাসী সেই কথাকেই বেদ, বাইবেল, কোরান বা অন্য কোনো ধর্মপুস্তকের উল্লিখিত পবিত্র অকাট্য অখণ্ডনীয় বাক্য বলে বিবেচনা করতে শিখছে।
‘কোরোনা ভাইরাস’ রোগী ও রোগীর পরিবারকে স্থিরপ্রজ্ঞ হতে শিখিয়েছে, তাঁরা ভালো মতো বুঝতে শিখেছে- রাখলে হরি মারবে কে আর মারলে হরি রাখবে কে-র অন্তর্নিহিত মর্মার্থ।
তাই অযথা রোগীকে নিয়ে ভিনরাজ্য বা বিদেশে যাওয়ার প্রচেষ্টা বন্ধ করে যোগাভ্যাস ছাড়াই আপ্তকাম সিদ্ধযোগী হয়ে উঠছে।
আগে রোগীর পরিবার রোগীর কফ, রক্ত, মল, মূত্র এমনকি শরীরের অন্য পদার্থ যেকোনো পরীক্ষাগার থেকে পরীক্ষা করালে চিকিৎসকেরা চরম বিরক্ত হতেন, এমনকি রোগীকে তাঁর পছন্দ মতো পরীক্ষাগার থেকে রক্ত, মল, মূত্রাদি সকল বস্তু পুনরায় পরীক্ষা করাতে একপ্রকার বাধ্য করতেন। তখন চিকিৎসকেরা প্রায়শই বলতেন ওইসব পরীক্ষাগার ভুলভাল ফল দেয়, একমাত্র আমার নির্দেশিত পরীক্ষাগার একদম ঠিকঠাক ফল দেয়।
এখন চিকিৎসকেরা কতো সমঝদার হয়ে গেছেন, ওঁনারা বুঝতে শিখেছেন সব পরীক্ষাগার একই ফল দেয়, সামান্যতম হেরফেরও হয়না। আর এই জ্ঞানলাভ হওয়ার পর এখন কোনো চিকিৎসকই অযথা রোগীর পরিবারকে অর্থনষ্ট করার জন্য বারবার নিজের পছন্দসই পরীক্ষাগারে পাঠাতে চাইছেননা।
আগে অনেকসময় মুষ্টিমেয় কিছু চিকিৎসক চিকিৎসা করার আছিলায় অনেকসময় অনেক তরুণী, যুবতী বা গৃহবধূদের শরীরে বিনাকারণে হাত দিয়ে অযথা উত্যক্ত করতেন, এখন চিকিৎসকেরা পারতপক্ষে কোনো রোগীকে ছুঁয়েই দেখছেননা।
শুধু তাই নয় কিছুদিন আগেও বেশকিছু পুরুষ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মহিলাদের গর্ভপাত করাবার আগে বরিষ্ঠ চিকিৎসকদের নিষেধ সত্ত্বেও নিজেদের নগ্ন আঙুল মহিলাদের শরীরে ঢুকিয়ে অনেককিছু বুঝে নিতে চাইতেন, এখন সেইসব স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা হাতে তিন পর্যায়ে গ্লাভস পরেও পারতপক্ষে মহিলাদের ধারেকাছে আসছেননা, যোনীদেশে আঙুল দেওয়া তো স্বপ্নের কথা।
কিছুদিন আগেও অনেক চিকিৎসক নিজেদের অবস্থানকে ভগবানের উর্ধে ভাবতেন। এখন সেইসব চিকিৎসকেরা অনেকেই বুঝে গেছেন ‘ওই রোগে ওই ওই ওষুধ দিতে হয়’-এর মতো কিছু মুখস্ত বিদ্যা আয়ত্ত করা ছাড়া আসলে তাঁরা বিশেষ কিছুই শিখে উঠতে পারেননি বা জানেননা। তাই তাঁরা সৃষ্টিকর্তা বা ভগবানের সমকক্ষ তো নয়ই বরং তাঁরই এক সামান্য সৃষ্টি মাত্র।
ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে কবে পৃথিবী পুনরায় কোরোনা মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক হবে সেটা না হয় মহাকালের কালচক্রের হাতেই ছেড়ে দেওয়া গেল, কিন্তু চিকিৎসক রোগীর পবিত্র সম্পর্কটা আবার যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়ে এটাই একমাত্র প্রার্থনা।