Read Time:5 Minute, 36 Second
উন্নাও থেকে কাঠুয়া, ধর্ষণ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠল কলকাতা
গোলাম রাশিদ
রক্ষক যখন ভক্ষক তখন আমরা কার কাছে যাব? আজ কাঠুয়া, কাল উন্নাও,পরশু সুরাট কিংবা হরিয়ানা। সমাজের মাথারা ঘটিয়ে চলেছে একের পর এক ধর্ষণ-হত্যা। অদ্ভুত এক রেপ কালচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ।নারীর সম্মান ও মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে প্রত্যেক মূহুর্তে। সভ্য সমাজের অংশ হিসেবে নাগরিক সমাজ এসব দেখে চুপ করে বসে থাকতে পারে না। তখন প্রতিবাদই হয়ে ওঠে একমাত্র পথ। সেই প্রতিবাদেরই এক সংগঠিত ঝলক দেখা গেল শনিবার দুপুরে, ন্যাশনাল লাইব্রেরির ভাষাভবন অডিটোরিয়ামে।জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ নির্বিশেষে প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষের উপস্থিতি ও বিশিষ্ট বক্তাদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হল আপোস না-করার স্লোগান। সাক্ষী থাকল কলকাতা।
“এই দেশে ধর্মের নামে তলোয়ার মিছিল করে ঘৃণা ছড়ানো হয়। মানুষ কেন্দ্রের সরকারকে ভয় পায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেন শোলের গব্বর সিং। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এখানে বিভাজনের রাজনীতি করা হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হল আমাদের সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে,গণতন্ত্রকে মজবুত করলেই দেশে ফিরবে শান্তি ।” বক্তব্য দিতে এসে এ কথা ব্যক্ত করেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দৈনিক কলমের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই সভায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এঁদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংসদ মণীশ গুপ্ত, আহমদ হাসান ইমরান,কবি সুবোধ সরকার, ফাদার শ্যামল পাল,সর্দার সুখবিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া,খালিদ ইবাদুল্লাহ প্রমুখ। সবার বক্তব্যের মধ্যে মানসিকতা,পরিবার,সমাজ বদলের সুর ধ্বনিত হয়। পরিবারের মধ্যেই মেয়েরা অত্যাচারিত হচ্ছে।এসব পুলিশ দিয়ে রোখা যাবে না। সচেতন হতে হবে পরিবারের মানুষদের।জানান মণীশ গুপ্ত।
“গুজরাত দাঙ্গার সময় ভোটার লিস্ট ধরে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হয়েছে। এখনও সেভাবেই চলছে কেন্দ্রীয় সরকার পোষিত হিংসার রাজত্ব।কেন এই অরাজকতা? এর উত্তর আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে। আসিফার খুন শুধু আসিফার খুন নয়। এটা সহমর্মিতা, ভালোবাসারও খুন।”নিজের বক্তব্যে এ ভাবেই প্রতিবাদমুখর হন কবি সুবোধ সরকার।
উপস্থিত শ্রোতা ও অতিথিদের উদ্দেশে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন এই অনুষ্ঠানের আহবায়ক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান। সবাইকে এক বৃহত্তর প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহবান জানান। তাঁর মতে, জাতীয় পতাকা নিয়ে ধর্ষকদের সপক্ষে মিছিল জাতীয় পতাকার অপমান। সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার মতো এর বিরুদ্ধে কলকাতার নাগরিক সমাজও প্রতিবাদ করতে এগিয়ে এসেছে, এটা খুবই শুভ লক্ষণ বলে তিনি মন্তব্য করেন। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্থ সেনগুপ্ত,অরুন জ্যোতি ভিক্ষু, মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য উজমা আলম,নিলম গাযালা, যোধপুর মৌলানা আযাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুল ওয়াসি,আবদুল মুজিদ,রহিমা খাতুন,মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ,ড. পারভিন বানু প্রমুখ। এতদিন জানতাম মেয়েদের এগিয়ে এসে সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। অথচ সেই মেয়েদেরকেই ঘৃণ্য পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। এর প্রতিকার চাই, দাবি তোলেন রহিমা খাতুন। সভায় সংগীত পরিবেশন করেন পলাশ চৌধুরী ও নুপুর কাজী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান গাযালা ইয়াসমিন।তিন ঘন্টার এই অনুষ্ঠানে কলকাতার সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ নারী সমস্যা সমাধানে নতুন ভাবনা যোগাবে বলে তিনি জানান।
*** সংগ্রাহক : ফারুক আহমেদ
Advertisements