বাংলার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আসামের পাশে

0
1588
Aalia University
Aalia University
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:13 Minute, 24 Second

বাংলার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আসামের পাশে

বিশেষ প্রতিবেদক

চল্লিশ লক্ষ মানুষ রাতারাতি রাষ্ট্রহীন, নিজের পাড়ায় নিজের বাড়িতে শরণার্থী। তাদের নাম নেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জিতে। তাঁরা কোথায় যাবেন, কোন দেশে যাবেন কেউ জানে না। এই ভয়ঙ্কর অমানবিক ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের জবাব দিতে হবে। এবার সময় হয়েছে পথে নামার। রাস্তাতেই একমাত্র রাস্তা। তাই রাস্তাতে নেমেই প্রতিবাদ জানাল কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। সোমবার, ১৩ আগস্ট তারা জানান দিল আসামের পাশে আছেন।

গত ১০ আগস্ট ২০১৮ বিকেল ৩ টেয় প্রেস ক্লাবে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল বাংলার নাগরিক সমাজ। প্রতিবাদ সভায় আগত সবাই মিলে আহ্বান জানিয়েছিলেন পথে নামার জন্য এবং আসামের নিজগৃহে গৃহহীন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যায়কে রুখে দেওয়ার।

আসামের পাশে বাংলার নাগরিক সমাজারর সঙ্গে এবার বাংলার ছাত্রসমাজ এগিয়ে এলো।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাংলার সচেতন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সুনাগরিকদের একটা অংশ প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন।

কবি সুবোধ সরকার লিখেছিলেন, “চল্লিশ লাখ হয়েছে, কাল হবে এক কোটি, ওরাই বলছে। কাল আমার নাম থাকবে না। আপনার নাম থাকবে না। হিটলারের সময়ে মাঝরাতে দরজায় নক করে বলা হত ‘ইউ ডু নট একজিস্ট ফ্রম টুমরো’। সেটা না করে, সুচতুর তালিকা তৈরী করে, সেই সময়টাকে ফিরিয়ে আনা হল দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে। পথে নামতেই হল। রাষ্ট্রপুুঞ্জ হতবাক। জার্মানির কাগজগুলোতে হেডলাইন। তাতে কী আসে যায় ওদের। ওরা বলেই চলেছেন গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন আমাদের। কী নির্মম, কী নিষ্ঠুর এদের চেহারা।”

‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও’ লিখেছেন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। বুদ্ধি, বিবেক ও সংবেদনশীল মনের কাছে এই আমাদের প্রার্থনা।

আজ অসম নিয়ে যে সঙ্কটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা সে সঙ্কট সারা দেশের, সারা ভারতের।

আসানসোলের পুত্রশোকে মুহ্যমান বাবা তবু মাথা তুলে উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, না কোন প্রতিহিংসা নয়। এই শোক ও সংকল্পের উদ্ভাসন থেকে শুরু হোক আমাদের তিমিরবিনাশের প্রণতি। আমরাও জীবনানন্দের মতো দু’দণ্ডের শান্তি চেয়েছিলাম। শান্তি চাই এবং সারাজীবন চাইব।

সম্প্রীতির পক্ষে, বিভাজনের বিরুদ্ধে এবং অস্তিত্ব রক্ষায় বিশিষ্টজনের সভা ও আলোচনা। দলমত নির্বিশেষে সবাই এসেছিলেন প্রেস ক্লাবে।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পথ দেখাল এবার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সদস্যার পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিকার করতে এগিয়ে আসুক।

এই মহতী সভায় লেখক, কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনেরাও উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানাতে এগিয়ে এসে জোরাল জবাব দিক।

বাংলার লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের মধ্যে বিভাস চক্রবর্তী, শুভাপ্রসন্ন, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, কল্যাণ রুদ্র, অভিরূপ সরকার, আবুল বাশার সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে বিশেষ বার্তা দিলেন।

প্রেস ক্লাবে সম্প্রীতির পক্ষে, আসমে নাগরিকদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিভাজনের বিরুদ্ধে এবং বেভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে বিশিষ্টজনেরা আলোচনা সভায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন।

এই বাংলায়, আসামে ও গোটা দেশে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবাইকে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী-গবেষক-শিক্ষক পথে নেমে মিছিল করে বিশাল আওয়াজ তুললেন এবং আসামের পাশে দাঁড়ালেন। পার্কসার্কাস ক্যাম্পাস থেকে মিছিল শুরু হয়।
আসামে জাতীয় নাগরিকপুঞ্জির নামে যেভাবে ৪০ লক্ষ দেশীয় নাগরিকে রাতারাতি রাষ্ট্রহীন করা হলো তার বিরুদ্ধে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- ছাত্রীদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়।
এই মিছিলে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো।
এই মিছিল থেকে আওয়াজ তোলা হয় ত্রুটিপূর্ণ নাগরিকপুঞ্জি বাতিল করতে হবে। ৪০ লক্ষ ভারতীয় নাগরিকদেট আসাম থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরর মহা মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা নাজমুল আরেফিন, সাজিদুর রহমান, আব্দুল কাহার, নুরুদ্দিন মোল্লা, রাকিবুল ইসলাম, কাজী মিনহাজ, মিজানুল হক প্রমুখ।

ভারতের আসমের ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) কার্যকর করে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবি জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তারা অবশ্য হিন্দু শরণার্থীদের বিতাড়নের কোনও প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছেন এবং তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পক্ষে সাফাই দিয়েছে।

সম্প্রতি সংগঠনটির রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে এনআরসি ছাড়াও ‘ঘর ওয়াপসি’, ‘লাভ জিহাদ’ ‘ল্যান্ড জিহাদ’ ইত্যাদি বিতর্কিত ইস্যুতে মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তাদের দাবি, রাজ্য সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, এভাবে তারা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরেও তারা পৌঁছে গেছে। রাজ্য সরকার আগুন নিয়ে খেলা করছে।

‘ঘর ওয়াপসি’ (বিভিন্ন কারণে যারা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদেরকে পুনরায় হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা) বা ‘ঘরে ফেরানো কর্মসূচি’ রূপায়ণের জন্য দুর্গাবাহিনী ও বজরং দলের সদস্যদের নিয়ে একটি মঞ্চ গঠন করা হবে। এর পাশাপাশি কাজে লাগানো হবে মঠ-মন্দির ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে।

তাদের অভিযোগ, এখানে হিন্দুদের দেবত্তর সম্পত্তি ও হিন্দুদের সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেয়া হচ্ছে এবং কম দামে কিনে নেয়ার মধ্য দিয়ে ‘ল্যান্ড জিহাদ’ চলছে।

অন্যদিকে, তারা কথিত ‘লাভ জিহাদ’ (হিন্দু নারীদের ভালবাসার ছলে ধর্মান্তরকরণ) রুখে দিতে মানুষজনকে বোঝাতে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাবে।

এইসব বিভাজন করে ভারতের ও বাংলার সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারবে না বিজেপি।

পশ্চিমবঙ্গে ওরা কখনও সফল হবে না, এসব প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের সহ অধিকর্তা ফারুক আহমেদ ১৩ আগস্ট সোমবার সংবসদ মাধ্যমকে বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে ওরা একবিন্দুও সফল হতে পারবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য ছোটখাট দাঙ্গার মধ্য দিয়ে মানুষকে বিভক্ত করার চক্রান্ত করেও ওরা চরমভাবেই বাংলায় ব্যর্থ হয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি করে সম্প্রীতির বাংলায় কখনও সফল হবে না বিজেপি। বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর। দেশের বৈধ নাগরিকদের অন্যায়ভাবে বিদেশি বানিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দেশবাসী সোচ্চার হচ্ছেন, এটাই আশার আলো। আমরা আগে দেখেছি বিজেপি সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছে। আসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে লাখ লাখ বৈধ নাগরিকদের নাম বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র কোন উদ্দেশ্যে তা আমরা বুঝতে পারছি। এভাবে আসম থেকে বাঙালি মুসলিম ও হিন্দুদের খেদিয়ে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না কেন্দ্র ও অসম সরকার।’

তিনি আরও বললেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ভারতকে ওরা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বানাতে পারবে না। ভারতের সংবিধান, ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান। সংবিধানকে কলঙ্কিত করার উদ্যোগ সুস্থ নাগরিকরা মেনে নেবেন না। মিশ্র সংস্কৃতির দেশ ভারত। ভারতীয় সংবিধানের অমর্যাদা প্রকৃত ভারতবাসীরা মেনে নেবে না। ভারতকে যারা অপবিত্র করছে তারা মানুষ নয়, মানুষ নামের অন্য কিছু। ভারত আমাদের মাতৃভূমি। যেভাবে ওরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিচ্ছে তাতে ভারত গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে অন্য দেশের থেকে।’   

ফারুক আহমেদ বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে কোনোরকমভাবে ওরা দাঁত ফোটাতে না পেরে এখন একেকটা ইস্যু তোলার চেষ্টা করছে। এখানে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদা সব ধর্ম, সব বর্ণের মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। যেজন্য গোটা ভারতের বিরোধীশক্তি মমতা বন্দোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন। সেই ভয়ে  বিজেপি এখন পশ্চিমবঙ্গে আশান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। মহান ভারতকে ওরা আর কত নীচে নামাবে!  আশা করি ভারতবাসী আগামী লোকসভা নির্বাচনে যোগ্য জবাব দেবেন।”

২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে দেশের সুনাগরিকরা বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করবেন বলেও মন্তব্য করেন ফারুক আহমেদ।

বাংলার প্রতি প্রান্তে নবচেতনা ফিররিয়ে সকল সম্প্রদায়ের সঙ্গে দলিত ও সংখ্যালঘুদের কল্যাণে ফারুক আহমেদরা নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করছেন।

ফারুক আহমেদ আরও বললেন, “বিজেপির পতন সুনিশ্চিত করতে পারবেন বিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমাতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দেশবাসীর কল্যাণে ২০১৯ সালেই আমাদের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমাতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই হোক দেশের প্রধানমন্ত্রী।”

About Post Author

Antara Tripathy

Chief Editor & CEO of IBG NEWS (09/Aug/2018-Present), Secretary of All Indian Reporter's Association,West Bengal State Committee. Earlier Vice President of IBG NEWS (01/Jan/ 2013-08/Aug/2018). She took over the charge from the Founder Editor of the Channel.
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here