ফারুক আহমেদ
ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জোট করে লাড়াই করলে আগামীতে মঙ্গল হতো এবং বিভেদকামী শক্তিকে বড় শক্তি নিয়ে রোখা যেতো। লোকসভা নির্বাচনে বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির উত্থান জরুরি গোটা দেশ জুড়ে। দেশবাসীকে বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত শিক্ষা দিতে এবং তাদের পতন সুনিশ্চিত করতে তদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধভাবে ভোট দিয়ে সম্প্রীতির ভারতকে রক্ষা করতে হবে।
বাংলার মানুষ ইতিহাস তৈরি করবেন এবার লোকসভা নির্বাচনে যে ভাবে নির্বাচন চলছে তাতে অনেক কিছু চোখে ধরা পড়েছে ইতিমধ্যে।
সোনার বাংলাসহ মহান ভারতের সর্বত্র সাম্প্রদায়িকতার যে চোরা স্রোত বইছে, তার বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, বহরমপুর থেকে আসানসোল, আসাম থেকে দিল্লি চষে বেড়াচ্ছেন, এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত। বহু নেতা কর্মী। সেই সঙ্গে চলছে পদযাত্রা। যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। ভোট প্রচারে ঝড় তুলেছেন অনেকেই। বাংলায় মমতার ধারে কাছে কেউ নেই। জনসভা আর পদযাত্রাই হোক, ভোট প্রচারের জন্য বাংলা এখন মমতাময়। আর সেই ভয়ে বিরোধী মুখ সব আতঙ্কে চুপসে গেছে। তাই এবারের ভোটেও যে রাজ্যে মমতার অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে না আসন কমে যাবে, তা ২৩ মে জানা যাবে ফলাফল দেখে। এখন অনেক মানুষের চোখ বাংলার দিকে কারণ তৃণমূলের জয়জয়কার দেখার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল দলের ভয় একটাই ঘর শত্রু বিভীষণরাই না সে পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন। এ দিকে নজর দেওয়ার দরকার নেত্রীর। নইলে ৪২-এ-৪২-এর স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে। নব্য তৃণমূলী অর্থাৎ পুরোনো সিপিএমরাই কলেজ সার্ভিস কমিশন ও পিএসসি’র মতো জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তাঁর সরকারের রাজত্বে। তাঁরাই সদস্য, চেয়ারম্যান হয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে চাকরিতে তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। সর্বত্র নব্য তৃণমূলী অর্থাৎ পুরাতন সিপিএমরাই দাদাগির দেখিয়ে তাঁরাই সব ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছেন। বাংলার আদি তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিকরা সর্বত্র বঞ্চিত ও অপমানিত হচ্ছেন। এর প্রতিকার না হলে বিরোধী দলের পতন সুনিশ্চিত করা অসম্ভব। এবং সিপিএমের বহু সদস্য তলে তেলে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে তাঁদের যুক্তি প্রথ রাম পরে বাম। এর ফলে তৃণমূল কংগ্রেস দলের জেতা আসন ধরে রাখতে পারাটাই বড় চ্যালেঞ্জ এখন।
চৌত্রিশ বছরের বাম শাসনের অনিয়মকে একধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে বাংলাকে নতুন জীবন দেওয়া এক দুঃসাধ্য কাজ। সেই কঠিন কাজ নিপুণভাবে সামলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মমতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে বিগত ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, বিধানসভা, পৌরসভার নির্বাচনে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কার। সন্ত্রাস, সারদাকাণ্ড, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড ইত্যাদি ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় নির্বাচনে পাল্টা চাল দেবেন। কিন্তু গ্রামবাংলার মানুষ কার্যত সেই আশায় জল ঢেলে মমতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন। পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও উপনির্বাচনের ফলেই প্রমাণিত যে, সাধারণ মানুষ মর্মে মর্মে জানে এই সরকারই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে।
ফারুক আহমেদ
সম্পাদক : উদার আকাশ, ঘটকপুকুর, ভাঙড়, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পিন ৭৪৩৫০২
কথা : ৯৭৩৩৯৭৪৪৯৮/৭০০৩৮২১২৯৮
লেখক, গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়।