কম খরচে সহজ উপায়ে জল পরিশোধনের পদ্ধতি জানাল আইআইটি খড়্গপুরে গ্রামীণ পানীয় জল প্রযুক্তি হেকাথন
By PIB Kolkata
কলকাতা, ১৫ মে, ২০১৯
আইআইটি খড়্গপুরের নকশা উদ্ভাবন কেন্দ্রের অধীনে গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্র, গ্রামীণ পানীয় জল প্রযুক্তির ওপর যে হেকাথনের আয়োজন করেছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ওয়াটার রিসোর্স টেকনলজি-র স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এবং গবেষণারত তিন পড়ুয়া সেখানে বিজয়ী হয়েছেন। দেবদাস চৌধুরি, সৌরভ কুমার বসাক এবং প্রিয়ব্রত মণ্ডল বাড়ি-পিছু মাত্র ২ হাজার টাকায় মর্চে পড়া পেরেক দিয়ে জলকে আর্সেনিক মুক্ত করার বিষয়ে জানিয়েছেন। তাঁদের পরীক্ষায় জল থেকে আর্সেনিক এবং ফ্লোরাইড – দুটিই অপসারণ করা যাচ্ছে।
এই হ্যাকাথনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ ভারতে পানীয় জল সমস্যায় কম খরচে বিভিন্ন উদ্ভাবনী সমাধান। আইআইটি খড়্গপুরের ডেপুটি ডিরেক্টর অধ্যাপক শ্রীমান কুমার ভট্টাচার্য পুরস্কার দেওয়ার সময় অংশগ্রহণকারীদের মনে করিয়ে দেন, সহজ এবং আর্থিক দিক দিয়ে সুবিধাজনক প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই হবে না, খেয়াল রাখতে হবে যে দূষিত পদার্থ যেন জলের উৎসে ফিরে না যায়।
এই হ্যাকাথনে পূর্ব ভারতের প্রথম সারির ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের থেকে ১৩টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। ভারত সরকারের ‘নকশা উদ্ভাবনের জাতীয় উদ্যোগ’ কর্মসূচির আওতায় এই হ্যাকাথনের আয়োজন করা হয়েছিল।
এই প্রতিযোগিতায় আইআইটি খড়্গপুরের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্রী ঊষা কুমারী দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি অ্যালুমিনার মধ্যে সালফিউরিক অ্যাসিড প্রয়োগ করে জল থেকে আর্সেনিক এবং ফ্লোরাইড দূরীকরণের একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন।
তৃতীয় পুরস্কার যৌথভাবে গেছে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এনআইটি ওয়ারাঙ্গলের পড়ুয়ারা আর্সেনিক দূরীকরণের ক্ষেত্রে গাছের ‘ফাইটোরেমেডিয়েশন’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। শিবপুর আইআইইএসটি-র ছাত্রছাত্রীরা আর্সেনিক দূরীকরণে ‘ইলেক্ট্রোকোয়াগুলেশন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন।
বিজয়ী দলগুলির উদ্ভাবন নিয়ে আইআইটি খড়্গপুরে ‘গ্রামীণ জলের মান এবং ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক কর্মশালায় আলোচনা হয়েছে। এই কর্মশালাটি আয়োজনে আইআইটি খড়্গপুরের সঙ্গে যৌথভাবে রয়েছে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়। বিজয়ী দলগুলি পুরস্কারবাবদ ৬০ হাজার টাকা নগদ অর্থ পেয়েছে। তারা তাদের চিন্তাভাবনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আইআইটি খড়্গপুরের সহযোগিতা পাবে।
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেট হিল বলেন, জল পরিশোধনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা দেখে তিনি অভিভূত। এখানে অংশগ্রহণকারীরা আর্থিক বিষয় এবং জলের সহজলভ্যতার বিষয়গুলিও বিবেচনা করেছেন। এই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নীল রবার্টসন উপস্থিত রয়েছেন। শ্রী রবার্টসনের দল ফটোক্যাটালিস্ট নিয়ে গবেষণার কাজ চালাচ্ছেন।
এই হ্যাকাথনে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেগুলির উপাদান সহজেই স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে, ধানের তুষ, কাঠের গুঁড়ো, লোহার পেরেক, নুড়ী এবং মাটির পাত্র। আইআইটি খড়্গপুরের গ্রামোন্নয়ন কেন্দ্রের অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষাল এই হ্যাকাথনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানান, বিচারকমণ্ডলী ৩০টি দলের আবেদনের থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৩টি দলকে বাছাই করেছিলেন। গ্রামীণ জলের মান এবং ব্যবস্থাপনার ওপর আয়োজিত আন্তর্জাতিক কর্মশালায় জলের পরিশোধন, জল দূষণ, জলকে দূষণমুক্ত করা, নিকাশি জলের শোধন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যৌথ গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া, এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।