বিশ্বপ্রেমের সাহিত্য আকাশে এক আশ্চর্য উড়ানের নাম ফারুক আহমেদ
লালমিয়া মোল্লা
গ্রাম বাংলার বিরল প্রতিভাদের মধ্যে এক অন্যতম প্রতিভা ফারুক আহমেদ। মাটিতে জন্ম নিয়ে ধীরে-ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ইচ্ছে শক্তির জোরে একদিন আকাশ-ছোঁয়ার স্বপ্ন সত্যি করতে বহু সংগ্রাম করলেন ফারুক আহমেদ। অত্যন্ত কাছে থেকে সেই বেড়ে-ওঠা প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার, আর সেই গল্প শোনাবার অভিলাষ নিয়েই আজ কলম ধরলাম।
১৯৮৩ সালের ৭ মার্চ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার অবিভক্ত ভাঙড় (বর্তমান কাশীপুর) থানার পোলেরহাট অঞ্চলের নাটাপুকুর গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন ফারুক আহমেদ। গ্রামের মানুষের সাধারণ চিকিৎসক পিতা ডা: মো: আবেদ আলি ও মা ফজিলা বেগমের তিন সন্তানের কনিষ্ঠটির একদিন বিশ্ববরেণ্য অমর্ত্য সেনকে ছুঁয়ে দেখা ও ভারতের রাষ্ট্রপতি-ভবনে উপস্থিত হয়ে রাষ্ট্রপতির হাতে তাঁর লেখা বই ও সম্পাদিত পত্রিকা তুলে দেওয়ার মাঝের কাহিনী কম রোমাঞ্চকর নয়।
১৯৯৯ সাল। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী একটি ছেলের নামের বানান গরমিলের বিষয়ে রেজিষ্ট্রেশন দপ্তরের সঙ্গে মতবিরোধের ঘটনা বাংলার একটি লিডিং দৈনিকে লেখালেখি হলো এবং ছেলেটি সে-লড়াইতে জিতে গেল। সেই ছেলেটিই অতি সুদর্শন, জেদি-পড়ুয়া, সদাহাস্যমুখ এবং স্কুলের শিক্ষকদের ও স্থানীয় এলাকার অতি আদরের প্রাণচঞ্চল কিশোর আজকের ফারুক আহমেদ।
নাটাপুকুরের গ্রামের স্কুলের প্রাথমিক পাঠ শেষ করে ভাঙড় থানারই (তৎকালীন অবিভক্ত) ঘটকপুকুরে নতুন বাসস্থানের সুত্রে ঘটকপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কিশোর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন প্রথম বিভাগে। ২০০১ সালে ভাঙড় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে আবারও প্রথম বিভাগ। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ২০০৪ সালে ইংরেজিতে স্নাতক। বিদ্যা ও জ্ঞানার্জনের নেশা তাঁকে থামতে দেয় না। এম এস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার বিজ্ঞানে স্নাতক হন তিনি প্রথম বিভাগে। তারপর ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অনগ্রসরদের সামাজিক সমস্যা ও উত্তরণ’ এই বিষয়ে গবেষণায় ব্যস্ত ফারুক আহমেদ।
২০০৪ সালে বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল প্রকাশের পূর্বেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। বিষয়টি বেশ ঘটনাবহুল। ঘটকপুকুর নজরুল-সুকান্ত পাঠাগারে বসতো নিয়মিত সাহিত্য আড্ডা। মধ্যমনি ওই গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক রফিকুল ইসলাম। আমাদের সেই আড্ডার সর্ব কনিষ্ঠ সদস্যের নাম ফারুক আহমেদ। একটা গ্রন্থাগারের একসঙ্গে প্রচুর বই তাঁর হাতের নাগালে পেয়ে আর গ্রন্থাগারিক রফিকুল ইসলামের আদরে ফারুক আহমেদ সব সময় ওখানেই পড়ে থাকেন। এই সময় তাঁর হাতে আসে ড. নজরুল ইসলামের (আই পি এস) বেশ কয়েকটি প্রবন্ধগ্রন্থ এবং উপন্যাস ‘বকুল’। বিপুল উৎসাহে পড়ে মুগ্ধ ফারুক লেখকের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে ফোন করেন এবং সাক্ষাৎ করার আমন্ত্রণ পান। প্রথম সাক্ষাতেই রত্ন চিনতে ভুল করেননি প্রবল-প্রতাপ পুলিশ অফিসার ড. নজরুল ইসলাম। ফারুক আহমেদকে বেঁধে ফেলেন স্নেহের বাঁধনে। ২০০১ সালের কলকাতা বই-মেলায় বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
এরপর ২০০২ সাল। তরুণ ফারুক আহমেদ প্রথম পত্রিকা প্রকাশ করতে চাইলে তার নামকরণ করেন ‘উদার আকাশ’। এই সময় তাঁর প্রতিদিনের সঙ্গী আমি। দিনের একটা ভাগ কলেজ, কলকাতা হলে আর একটা ভাগ আমার কাছে। ভীষণ প্রাণচঞ্চল কিশোর। এই ভাঙড়ে তো ওই কলকাতায়। যেখানে আবৃত্তি বা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা সেখানেই ফারুক। আর ফারুক মানেই পুরস্কার।
এই সময় তাঁর সারাক্ষণের আর এক সঙ্গী ছিল প্রবল অর্থসঙ্কট। একদিন আমারই পরামর্শে ড. নজরুল ইসলামের কাছে একটা কাজ জোগাড় করে দেবার প্রার্থনা জানাতে বলি। পরদিনই, ২০০৪ সালের ২৯ জুলাই ফারুক আহমেদকে চাকরি দিলেন তাঁর স্বপ্নের শিক্ষা প্রসার তথা শিল্পক্ষেত্র বসন্তপুর, মুর্শিদাবাদে। ফারুক আহমেদকে করে দিলেন বসন্তপুর এডুকেশন সোসাইটির “অফিস সেক্রেটারি।” দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১১ বছর এখানে কাজ করার পর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের সহ-নির্দেশক হিসাবে যোগদান করেন ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে।
এই সময়কালের মধ্যে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ড. নজরুল ইসলাম তাঁর বন্ধু-কন্যা মৌসুমী বিশ্বাসের সঙ্গে বিবাহ দেন। বর্তমানে তাঁদের সাড়ে পাঁচ বছরের এক ফুটফুটে কন্যা-সন্তান আছে রাইসা নূর।
২০০২ সালে টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে প্রথম পত্রিকা প্রকাশ ‘উদার আকাশ’। বাংলার গ্রামে-গঞ্জে এমন ব্যাঙের ছাতার মতো বহু পত্রিকার জন্মের পর সুতিকা-গৃহেই মৃত্যু হয়। মূলত: অর্থাভাবে। কিন্তু এমন ব্যতিক্রম খুব কমই দেখা যায়। এত অর্থাভাবেও কেবল উদ্যমের জোরেই ‘উদার আকাশ’ আজ ডাগর-ডোগর ১৮ বছরের ঝকঝকে এক তরুণ। ‘উদার আকাশ’ এখন আন্তর্জাতিক। দুই বাংলা তথা বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি লেখক ও পাঠক-কুলের পৃষ্ঠপোষকতায় সমৃদ্ধ। ২০০৬ সালে ‘উদার আকাশ’-এ প্রকাশিত উপন্যাস-এর জন্য প্রখ্যাত সাহিত্যিক আফসার আমেদ বঙ্কিম পুরস্কার লাভ করেন। এই পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের জন্য ২০১০ সালে কলকাতার মর্যাদাপূর্ণ টাউন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাজিম আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম ‘বর্ণপরিচয়’ পুরস্কার লাভ করেন। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, ড. শেখ মকবুল ইসলামের জগন্নাথ দেবতার উপর একটি গবেষণাপত্র প্রথম প্রকাশিত হয় “উদার আকাশ” পত্রিকায় এবং পরে তিনি ওই গবেষণার জন্য ডি. লিট পান। অধ্যাপক ড. শেখ মকবুল ইসলামের আরও কয়েকটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেছে “উদার আকাশ।”
২০১৯ সালের ১১ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ ছোটো পত্রিকা সমন্বয় সমিতির উদ্যোগে ২০১ টি পত্রিকার মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করছে “উদার আকাশ” পত্রিকা। শ্রেষ্ঠ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা নির্বাচিত হয়। ২০১২ সালে লিটল ম্যাগাজিন বিভাগে “উদার আকাশ” “নতুন গতি পুরস্কার” পায়। অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন এণ্ড সোশাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন-এর মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ২০১৬ সালে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক ফারুক আহমেদকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বারাসাত রবীন্দ্রভবনে কথামালা আয়োজিত “ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসব ২০১৭”-র অনুষ্ঠানে ফারুক আহমেদকে ‘কথামালা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। অল ইন্ডিয়া এস সি এণ্ড এস টি রেলওয়ে এমপ্লয়িজ এসোসিয়েশন তাঁদের নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এনুয়াল জেনারেল মিটিং-এ ফারুক আহমেদকে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ২০১৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য সংসদ কবি ফারুক আহমেদকে ২০১৭ সালে “চর্যাপদ” পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করে। এছাড়াও ফারুক আহমেদ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলার স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ ফারুককে স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছেন। তাঁর প্রতিটি বিশেষ সংখ্যা সস্নেহে উদ্বোধন করেছেন ও মূল্যবান পরামর্শ দান করেছেন মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আবুল বাশার, জয় গোস্বামী, কবীর সুমন, মোস্তাক হোসেন, সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ।
তাঁকে স্নেহের বাঁধনে বেঁধেছেন সাহিত্যের আর এক পৃষ্ঠপোষক ও উদ্যোগপতি মোস্তাক হোসেন।
সাহিত্যের পৌরোহিত্য করার সাথে-সাথে একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে সমকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া নানান অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন জোরালো কলম ধরেছেন তেমনি জোরালো কন্ঠস্বরে প্রতিবাদও করেছেন ফারুক আহমেদ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের মিছিলে পা মিলিয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে ভাঙড় এলাকার কাশিপুর থানার অন্তর্গত শোনপুরে জলসা করার সময় শাসকদলের কর্মী দ্বারা আক্রান্ত হন ফুরফুরা শরীফের বড় পীর ইব্রাহিম সিদ্দিকী সহ আরও কয়েকজন। ফারুক আহমেদ-এর নেতৃত্বে ও আরও কয়েকটি সংগঠন মিলে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে স্মারকলিপি তুলে দেন। এই ডেপুটেশনের পর আলাদা সাক্ষাৎ করে ফারুক আহমেদ তাঁর হাতে ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা ও প্রকাশনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ তুলে দেন। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনী এবং দিলীপ বেঙ্গসরকার-এর হাতেও “উদার আকাশ প্রকাশন”-এর গ্রন্থ তুলে দিয়ে তাঁদেরকে সম্মানিত করেছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর হাতেও “উদার আকাশ” পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা “উদার ভারত নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” তুলে দিয়েছেন। রাজ্যের অনেক মন্ত্রী ও নেতারা তাঁর প্রকাশনায় কলম ধরেছেন। “উদার আকাশ” পত্রিকা ও প্রকাশনের গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন।
২০১৬ সালে বিখ্যাত তাজ হোটেলে ফারুক আহমেদ-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন-এর।
এরপর ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অমর্ত্য সেন প্রকাশ করেন পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের উপর গবেষণা মূলক একটি রিপোর্ট। ড. অমর্ত্য সেন-এর প্রতিষ্ঠিত প্রতিচি ট্রাস্ট, গাইডেন্স গিল্ড এবং স্ন্যাপ সংগঠনের উদ্যোগে কলকাতার গোর্কি সদনে (বই আকারে) ওই রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে আয়োজকদের মধ্যে ফারুক আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ফারুক আহমেদের সবচাইতে বড়ো গুণ, তিনি নিজে লেখার চাইতে অপরকে লেখাতে বেশি ভালবাসেন। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে অনেক প্রতিভা কুঁড়ে-ঘরের অন্ধকারে বসে নিরবে সাহিত্য-সাধনায় মগ্ম আছেন। শহরের নামজাদা পত্র-পত্রিকাগুলিতে তাঁদের স্থান হয় না। বলা ভালো পাত্তা মেলে না। ফারুক আহমেদ তাঁদের লেখাকে ‘উদার আকাশ’-এর পাতায় মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরছেন নিরন্তর। অন্যদিকে কারও-কারও ভালো লেখার হাত, কিন্তু লিখতে চান না। এঁদের বারংবার অনুরোধ করে সুন্দর লেখা বের করে আনার মতো পূণ্যের কাজ ফারুক আহমেদ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
এই চিন্তা-ভাবনা থেকেই তাঁর প্রকাশনার জগতে পা-রাখা। এ-বিষয়ে তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় জন্ম হয়েছে “উদার আকাশ” প্রকাশনার। এখানেও ইতিমধ্যেই মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন তিনি। দুই বাংলার লেখকদের ৭৭টি বই এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রকাশনায়। প্রতিটি বইয়ের বিষয়, ছাপার মান, কাগজ ইত্যাদি যে-কোনও বড়ো প্রকাশনার সঙ্গে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রকাশনার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো ‘পশ্চিমবাঙলার বাঙালি মুসলমান অন্তবিহীন সমস্যা’ – খাজিম আহমেদ, ‘জীবনশিল্পী রোকেয়া’ – মীরাতুন নাহার, ‘ইসলামের ভুবন’ এবং ‘মোদীর ভারত, গান্ধীর ভারত’ – গৌতম রায়, ‘মানুষ-মাটি-মা’ ও ‘জন্মভূমিশ্চ’ – মোশারফ হোসেন, ‘নজরুল সাহিত্যের দিগ্বলয়’ – নুরুল আমিন বিশ্বাস, ‘জলের কান্না’ – পলাশকুমার হালদার, ‘সাম্যবাদ : ভারতীয় বিক্ষণ’ আর ‘নজরুল নানামাত্রা’ – শেখ মকবুল ইসলাম, ‘পরিবর্তনের সন্ধানে মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলমান’ – সৌমেন্দ্রকুমার গুপ্ত, ‘মহাশ্বেতা দেবীর গল্পবিশ্ব : লৈঙ্গিক প্রতিরোধ’ – শিবুকান্ত বর্মন, ‘দ্য সেকুলার ভিশন অফ কাজী নজরুল ইসলাম’ – আবুল হোসেন বিশ্বাস, ‘নজরুল সাহিত্যে দেশকাল’ – সা’আদুল ইসলাম, ‘গৌরকিশোর ঘোষ মুসলিম জীবন ও অভিমানস’ – শেখ মুঈদুল ইসলাম প্রভৃতি।
ফারুক আহমেদের নিজের সম্পাদনার কাজেও তাঁর মুন্সিয়ানার ছাপ পরিলক্ষিত হয়েছে। তাঁর সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু’, ‘কংগ্রেস ও বাম-শাসনে মুসলিম ভোট-ব্যাঙ্ক’, ‘আত্মপরিচয়ের অন্বেষণ’, ‘পশ্চিমে সূর্যোদয় রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের উলটপূরাণ’, ‘প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়ন’, ‘মূল্যবোধের অবক্ষয়’ সহ বেশ কয়েটি গ্রন্থ।
আগেই বলেছি, নিজে লেখার চাইতে অন্যকে লেখাতে বেশি আনন্দ পান ফারুক আহমেদ। তবুও ধীর গতিতে হলেও নিজের মৌলিক লেখালেখি ও গবেষণার কাজ নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে গুণগ্রাহীদের চাপে তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বিশ্বপ্রেম’ প্রকাশিত হয়েছে ও তাঁর গল্পগ্রন্থ ‘বিনির্মাণ’ প্রকাশের পথে।
বাংলায় তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলের টক-শোতে চ্যানেলের আমন্ত্রণে উপস্থিত থেকেছেন। তাঁর মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরেছেন বাংলার কল্যাণের জন্য। ২০০৭ সাল থেকে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত সামাজিক ভাবে জনমত গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন আন্দোলন করছেন এবং সরকারের কাছে লিখিত ভাবে আবেদনও করেছেন।
একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামের মাটি থেকে তাঁর এই যে উড়ান, তা কেবল তাঁর একার প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই। বর্তমান সময়-কালে শহরের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলে কেউই ওড়ার সাহস দেখাতে পারেনা। খুব কাছ থেকে দেখেছি, তাই বলতে পারি, কেবল ইচ্ছে-ডানায় ভর করেই তাঁর এই উড়ান। এই মুহূর্তে ফারুক আহমেদ একাধারে জনপ্রিয় সম্পাদক, প্রকাশক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সমাজ-চিন্তাবিদ ও দক্ষ সংগঠক।
আগামী ১৩ নভেম্বর ২০১৯ তাঁরই উদ্যোগে কলকাতার আই সি সি আর সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘গঙ্গা-পদ্মা সাহিত্য-সৌহার্দ্য’ বড় মানের অনুষ্ঠান ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী-উৎসব–২০১৯’। দুই বাংলার সংস্কৃতি ও সাহিত্যি-জগতের মেলবন্ধনের মাধ্যমে দুই বাংলা একত্রিত থাকবে আজীবন, ফারুকদের এই কামনা একদিন যথার্থ হয়ে উঠবে, দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে, যেদিন থাকবে না কোনও লুকনো বিদ্বেষ, ভারতবাসী হিসেবে আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছি। সেই সুদিন, যা অনিবার্য এবং একদিন আসবেই।
বিশিষ্ট প্রবন্ধকার, লেখক, সাহিত্যিক, পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের অনুপ্রেরণা ফারুক আহমেদ এক আকাশ প্রেমিক মানুষ হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন সাহিত্য আকাশে। বহু মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় ও সর্বপরি তাঁর জীবনে উপস্থিত এক মূল্যবান তারা, এক পরীর মতো রাজকন্যার অফুরন্ত অনুপ্রেরণায় ফারুক আহমেদ বিশ্বের সাহিত্য আকাশে এক আশ্চর্য উড়ানের নাম হয়ে উঠছেন দ্রুত।