আজ গিয়েছিলাম সুনীল মেলায়
মো: মনিরুল ইসলাম
দুই বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মভিটে মাদারীপুরের কালকীনি উপজেলার মাইজপাড়ায়। সুনীলের ৮৫ তম জন্মবার্ষিক উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের অায়োজনে এখানে ৫ দিনের এই সুনীল মেলার অাজ ছিল চতুর্থ দিন।
প্রায় ১৬ একর জমি নিয়ে সুনীলের এই জন্মভিটে। এখানেই ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লেখাপড়া, সাহিত্য ও জীবন-যাপন।
১৬ একর জমির সবটাই এখন জন্মভিটের দখলে নেই। এখানে সুনীল আকাশ নামে সাহিত্য চর্চা অার গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। রয়েছে মাঝারী অাকারের দীঘি। উচু-নিচু ঢিবিতে ভরা এলাকাটি মাদারীপুরের একেবারে প্রান্তিক এলাকায়। এখনো কাদামাটির সবুজ গ্রাম, সাহিত্যের পাতার মতো।
মেলা সফল করতে প্রশাসন অক্লান্ত চেষ্টা করেছে। এই কাদামাটির মধ্যেও প্রায় অর্ধশতের মতো প্রকাশনী স্টল বই নিয়ে বসেছে। এলাকার মানুষ ও অাগন্তুকরা এসব বই নেড়েচেড়ে দেখছে, কিনছে। ক’টা টিপ-চুড়ির দোকানও বসেছে, বসেছে খাবার দোকান। অাশপাশে নাগরদোলা, মুড়ি-মুড়কির দোকান মেলাকে পূর্ণতা দিয়েছে। দৃষ্টিনন্দন একাধিক তোরণ আয়োজন গাম্ভীর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । পুরো এলাকায় আলোক সজ্জা চোখে পড়ার মতো।
মূলমঞ্চে প্রতিদিন সাহিত্যসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন আছে । দেশের ও ভারতীয় সাহিত্যিকরা সেখানে অংশগ্রহণ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে।
কিছু খুটিনাটি সমস্যা ছাড়া মেলা জমজমাটই মনে হয়। এ রকম প্রান্তিক গ্রামীণ পর্যায়ে এ ধরণের মেলার অায়োজন করতে বুকের পাটা থাকতে হয় বটে! নিঃসন্দেহে অায়োজকরা তা দেখাতে পেরেছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ – ২৩ অক্টোবর ২০১২) বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসাবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্থ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় “নীললোহিত”, “সনাতন পাঠক”, “নীল উপাধ্যায়” ইত্যাদি ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।
জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪
মাদারীপুর মহকুমা, ফরিদপুর, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা মাদারীপুর জেলা, ঢাকা, বাংলাদেশ)।
মৃত্যু ২৩ অক্টোবর ২০১২ (বয়স ৭৮) কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
ছদ্মনাম নীললোহিত, সনাতন পাঠক, এবং নীল উপাধ্যায়।
পেশা লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি,প্রাবন্ধিক, সম্পাদক।
ভাষা বাংলা। জাতীয়তা ভারতীয়। নাগরিকত্ব ভারতীয়।
শিক্ষা এমএ (বাংলা সাহিত্য)।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৪) সময়কাল ১৯৫৩–২০১২।
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি প্রথম আলো, পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার আনন্দ পুরস্কার (১৯৭২, ১৯৮৯)।
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৫)।
দাম্পত্যসঙ্গী স্বাতী বন্দোপাধ্যায় (বি. ১৯৬৭–২০১৯)
সন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায় (জন্ম ১৯৬৭)।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। ১৯৫৩ সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি “কাকাবাবু-সন্তু” নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য অকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুনীলের কবিতা- ” না পাঠানো চিঠি”, আবৃত্তি- ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়- শুনে কতো রাত চোখ ভিজিয়েছি।