মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে?
ফারুক আহমেদ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় পঠনপাঠন শুরু হতে চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শেষ মুর্শিদাবাদ জেলা সফরের মহার্ত করে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এবছর নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় পঠনপাঠন শুরু হবে এবং ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হবে। কিন্তু আজও উপাচার্য নিয়োগ করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত নির্মাণ কর্মও শুরু করা গেল না।
দক্ষিন দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার, মুর্শিদাবাদ ও দার্জিলিং-এ চারটে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার। কয়েক বছর আগে বিধানসভায় এ কথা জানিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বাজেট বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা হবে। শিক্ষা ও গবেষণার গূণগত মান ও উচ্চশিক্ষার উৎকর্ষ স্থাপনে সরকার বদ্ধপরিকর। এই চার নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের (স্থাপনের) ঘোষণা উন্নয়নের বাতাবরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
মুর্শিদাবাদ রাজ্যের অন্যতম জনবহুল জেলা। শিক্ষায় বহু বছর ধরে অবহেলিত। তৃণমূলের আমলে উচ্চশিক্ষা প্রসারে নানা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হয়েছে। মুর্শিদাবাদে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা থাকলেও শিক্ষার প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। কিছু কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থাকলেও কোনও স্বয়ং সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় মুর্শিদাবাদে নেই। অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নয়নে দেশ জুড়ে নানা রকম বাধা আছে। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এর বিরুদ্ধে বরাবর সরব, সবসময় অনগ্রসের উন্নয়নের পক্ষে সামিল হয়েছেন। তাই মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ যোগ্য।
বর্তমান সরকারের আমলে যে দ্রুতগতিতে প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা এযাবৎ আমাদের ভাবনাতেও ছিল না।মুর্শিদাবাদ জেলাবাসীর লালিত দীর্ঘদিনের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বাসনা আজ আর স্বপ্ন মনে হচ্ছে না। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের মাধ্যমে জেলার মানুষের উচ্চশিক্ষার আকাঙ্খা পূরন হবে না। পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে যে সব ছাত্র-ছাত্রী কলেজে পড়তে আসেন, জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার কারণে তাঁরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অতএব, অসংখ্য মানুষের প্রত্যাশা পুরনের জন্যই জেলায় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি।
দ্বিতীয়ত অনগ্রসর জেলার তকমা ঝেড়ে ফেলে উন্নত মুর্শিদাবাদ ও উন্নত বাংলা গড়ার প্রয়োজনেই জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ দরকার। মাননীয়া মুখ্যন্ত্রীর অক্লান্ত প্রয়াসে আজ বাংলা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাকে বিশ্ব বাংলায় রূপান্তরিত করতে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে, তাঁর অভিভাবকত্বে মুর্শিদাবাদও শরিক। জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরন জননেত্রীর মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে এরকম প্রত্যাশা অহেতুক নয়।
তবু কিছু কিছু প্রশ্ন উঠছে, মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি উদ্যোগ আর চোখে পড়েছে না কেন? কেন জেলায় মুর্শিদাবাদ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়নি? মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগের ভাঁটা দেখে জেলাবাসি হতাশ।
বিধানসভায় মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার বিল পাস হয় ৩১.০৭.২০১৮ তে । রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক সমিতি (ওয়েবকুপা) ৩০.০৯.২০১৮ তে ‘মুর্শিদাবাদ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উদযাপন’ কর্মসূচি পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমর্থনে ওয়েবকুপার মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে যোগ দেন সমাজের বহুস্তরের নেতারা।
আমরা আশা করব মুর্শিদাবাদ বাসীর বহুলালিত স্বপ্নপূরণে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং অবিলম্বে প্রতিশ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেবেন। জানি নানা রকম বাধা আছে, গুজব বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দুঃসাহস আর প্রতিস্পর্ধার সামেন খড়কুটোর মতো বেসে যাবে।
লেখক: ফারুক আহমেদ, সম্পাদক উদার আকাশ। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন ফারুক আহমেদ। ২০০৭ সাল থেকেই সামাজিক আন্দোলন করছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে। বাংলার বিভিন্ন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন, দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমেও রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এবং এখনো করছেন।