মুখোশধরি সমাজের নগ্ন মুখ
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা , ০৪.০৮.২০২০:
“জোসেফ ডি মাইস্ত্রে বলেছিলেন যে ,সমাজ তার প্রাপ্য সরকার পায়। আজ উল্টোটাও বোধ হয় বাস্তব”
ইদানীং একটা বিষয় নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ,নেটিজেন এবং সোশ্যালাইটরা খুব চর্চা করছি।সেটা হলো করোনা মোকাবিলায় রাস্তায় বেরোনো সাধারণ মানুষ কোনো রকম বিধিনিষেধ মানছে না।আমরা ঠিকঠাক নিয়ম মেনে সঠিক মাস্ক পরছি না।সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছি না। এ ব্যাপারে সরকারকে দায়ী করে লাভ নেই।তাঁদের চেষ্টার কোনো খামতি নেই।ভিখারি থেকে শুরু করে সমাজের সব থেকে পয়সাবালা মানুষ,সবার হাতেই এখন মোবাইল ফোন আছে। সরকার সেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় মেসেজগুলি।মানুষ সব জানে,সব বোঝে কিন্তু তারা প্রতিজ্ঞা করে বসে আছে যে কোনো কথা শুনবে না।
তারা মাস্ক পরলে হয় নাকটা পুরো মাস্কের বাইরে বেরিয়ে থাকে,অথবা থুতনিতে ঝোলে।অনেকে আরো স্মার্ট।তাদের মাস্ক থাকে হয় পকেটে অথবা হাত ব্যাগে।
এতে অবশ্য বাহানার কোনো অভাব নেই।হাজির জবাব।মাস্ক পরলে শ্বাস নিতে অসুবিধে হয়।দমবন্ধ লাগে। মাস্ক পরলে শরীরে কম অক্সিজেন ঢোকে।যেখানে আশপাশে মানুষ নেই সেখানে মাস্ক পরে থাকার কোনো দরকার নেই এরকম হাজারটা ফিরিস্তি শুনতে শুনতে আপনার পাগল হতে বাকি থাকবে। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা? ধুর মশাই! আপনার দেখছি খেয়ে কাজ নেই।ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে গেছেন!
আমি অবশ্য একটা ব্যাপার বুঝতে পারি না, মানুষের এই অবাধ্যতা নিয়ে আমরা এত অবাক হই কেন? এ কি আগে ছিলো না? নাকি আমাদের মজ্জাতে এসব নেই?
আমরা কবে সামাজিক ও প্রশাসনিক নিয়মনীতি মানতাম ? ভেবে বলুন তো,আমরা কি সেই জাতি নই যারা রাস্তাঘাটে পাবলিক প্লেসে অবাধে ধূমপান বন্ধ করতে পারিনি?ভেবেই দেখি না এতে যারা ধূমপায়ী নয় তাদের অসুবিধে হতে পারে! আমরা কি শব্দদূষণ রোধের বিধি মেনে শুধুমাত্র নিজেদের আনন্দের জন্য উৎসব পার্বন নামাজে উচ্চঃস্বরে মাইক বাজানো বন্ধ করতে পেরেছি? আমরা কি বিন্দুমাত্র সামাজিক দায়িত্ব দেখিয়ে শব্দবাজির ব্যবহার বন্ধ করতে পেরেছি? আমরা কি রাস্তা আটকে পুজো করা,অনুষ্ঠান করা,মিটিং করা বন্ধ করতে পেরেছি? আমরা কি বাদামভাজা খেয়ে তার প্যাকেটটা, কোল্ডড্রিঙ্কস খেয়ে তার ফাঁকা বোতলটা রাজপথে গলিপথে ফেলি না?পুকুরে পুজোর ফুল সমেত প্লাস্টিক ফেলি না? আমরা কি অফিসের দেওয়াল ও লিফ্টের কোনে পানের পিক ফেলা বন্ধ করতে পেরেছি? আমরা কি ওভারব্রিজ আছে বলে ট্র্যাফিক আইন ভেঙে রাস্তা পার হই না? নাকি রেললাইন টপকাই না?
এসব নিয়ে মানুষকে বলতে যান!তারা আপনার কথা না শোনার ভান করবে, আপনাকে অবজ্ঞা করবে,অথবা উল্টে পাল্টা এ কথাও শুনিয়ে দিতে পারে, আপনার কি অসুবিধা মশাই?যেন নিয়ম ভাঙাটাই তাদের একটা মৌলিক অধিকার!
এবার ভেবে বলুন ,যে জাতি বা গোষ্ঠীর মজ্জায় বিশৃঙ্খলার বীজ তাদের আপনি রাতারাতি শৃঙ্খলার পাঠ দিতে গেলে তা তারা মানবে কেন?ব্যাপারটাতো সেই একই দাঁড়ালো তাই না?এতে মৃত্যুভয়,তা সে যতই বাস্তবোচিত হোক না কেন, দেখিয়ে লাভ নেই।
বরং এটা মেনে নেওয়া যাক সভ্যদেশ বা সভ্য জাতি হওয়ার ন্যূনতম গুন আমরা আয়ত্বে আনতে পারিনি,অর্থাৎ সুশৃঙ্খল হতে পারিনি। আমরা না ভালোবাসি সহ নাগরিকদের,না ভালোবাসি নিজের দেশকে।এমনকি ভ্রান্ত অধিকারবোধের ধারণায় আমরা সবথেকে বেশি ক্ষতি করি নিজেদেরই। নাক উঁচু নির্বোধের মতো সভ্য ও উন্নত দেশগুলোকে এক্ষেত্রেও নিন্দেমন্দ না করে, শৃঙ্খলার দিকটায় নজর দিলে বোধহয় অন্ততঃ তৈরি করা বা জিইয়ে রাখা সমস্যাগুলো থেকে নিস্তার পাওয়ার একটু হলেও সম্ভাবনা ছিলো।
●●●●●●●●●●●●
০৪.০৮.২০২০