চেনা অচেনা পুষ্পেন্দু – সফর সুরে সুরের প্রথম ভাগ

0
1266
Pushpendu Chatterjee
Pushpendu Chatterjee
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:15 Minute, 29 Second

চেনা অচেনা পুষ্পেন্দু – সফর সুরে সুরের প্রথম ভাগ
অভিজিৎ পাল , কলকাতা , ২৯ অগাস্ট ২০২০

বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে বাউল, পদাবলী, কীর্তন.. কালিদাস থেকে তানসেন, স্বর্ণযুগ থেকে কলিযুগ সর্বত্র সংগীত বর্তমান….যুগে যুগে নাড়ির সাথে সম্পর্ক সঙ্গীত ও সংগীতকারদের.
যে কজন প্রতিভাবান মিউজিসিয়ান বর্তমানে বাংলায় কাজ করছেন তাদের মধ্যে “হাফ মেজর “ব্যান্ডের গিটারিস্ট, কম্পোজার ও গীতিকার পুষ্পেন্দু চ্যাটার্জি অন্যতম… মৃদুভাষী, নেপোটিজমবিরোধী, ব্যান্ড অন্তপ্রাণ ও নিত্যনতুন ভাবনায় নিজেকে আবদ্ধ করে রাখতে উৎসাহী পুষ্পেন্দু আজ আমাদের আড্ডার মুখোমুখি… কথায় কথায় এতো বিষয় ও আলাপচারিতা উঠে আসে যে পাঠকের কথা মাথায় রেখে আমরা এই দীর্ঘ আলাপ কে দুটি ভাগে বিভক্ত করলাম… এবং প্রতিষ্ঠানের তাঁবেদারি ছাড়াও যে শিল্পী হওয়া সম্ভব.. তার সম্যক ধারণা পেলাম নানান কথা বার্তায়..

আমি অভিজিৎ, আপনাদের হয়ে আজ নানান বিষয়ে আড্ডা মারবো পুষ্পেন্দু’র সাথে….

অভিজিৎ : মিউজিক তোমার কাছে কি? ফিলোসফি, সাইকোলজি নাকি অন্য কোনো দিক?

পুষ্পেন্দু : মিউজিক আমার কাছে ঠিক কি ! সাইকোলজি না ফিলোসফি জানিনা না… কিন্ত বরাবর এটা মনে হয় মিউজিক আমার কাছে একটা জার্নি, একটা নদী…একটা মূল ধারার নদীর যেমন অনেক উপনদী আর শাখানদী থাকে এরা বয়ে চলে নির্দিষ্ট একটি সীমানায় বা লক্ষ্যে ঠিক একদিন যেভাবে কোন বড় সমুদ্রে গিয়ে মিশবে…আমার কাছে মিউজিক এমনই একটা রিভার.. সমুদ্র সন্ধানী … আমি বলবো, বিভিন্ন বাঁক উপবাঁকের সাহায্যে দেশ পেরোনো কথা ,আমি বলবো, দশের সানিধ্যে আসার কথা, বলবো এতো জার্নির মধ্যে দিয়ে নিজেকে তৈরী করার সুযোগ পাওয়ার কথা .. এতো টার্ন আর টুইস্টের মধ্যে নিজের অনুশীলন ঘটানো এটাই আমার কাছে মিউজিক…মিউজিক আমার কাছে একতারা আমি সেই একতারার একটি মাত্র তার…যা আমাকে ধারণ করে রেখেছে

অভিজিৎ : কঠিন সময়ে গান বা সংগীত কি করার ক্ষমতা রাখে বলে তোমার মনে হয়?

পুষ্পেন্দু : সবথেকে দায়বদ্ধতার কাজটাই করে সঙ্গীত… আমরা স্বাধীনতার সময় থেকে দেখে এসেছি, যখন লেখা হয়েছিল “বন্দেমাতরম ” কিভাবে একটা সঙ্গীত মন্ত্র হয়ে উঠলো…হয়ে উঠলো গণসংগীত, কিভাবে একটা দেশ একটা রাষ্ট্র, একটা জাতিকে বেঁধে দিলো একটা সুতোয়… জাগিয়ে দিলো লক্ষ কোটি মানুষ কে, প্রান সঞ্চার করলো একটা ছাতার তলায় আসা জাতি ধর্ম নির্বিশেষের … গীতা,কোরান, বাইবেল মিশলো “বন্দেমাতরম “মন্ত্রে.. এটাই পারে সঙ্গীত… একসাথে বাঁচার প্রেরণা যেমন জোগায় তেমনই লড়াইয়ের শক্তি, তৈরী করে সঙ্গীত… বর্তমানে কোবিড আক্রান্ত বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার নার্স রা তাদের কাজের ফ্যাটিক পিরিয়ড টা কাটানোর জন্য সঙ্গীতে মেতে উঠেছেন… কোবিড আক্রান্তদেরও মিউজিক থেরাপির মাধ্যমে আনন্দ ও উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ….সঙ্গীত একটা সমাজ গঠনে সাহায্য করে.. মানবিক ঔদার্য স্থাপন করে… মহাকাশের ব্যাপ্তি নিয়ে মনের অন্ধকার, মনখারাপ, মনের দূষণ দূর করে সঙ্গীত…

অভিজিৎ : ইন্সট্রুমেন্ট একটা গানে কতোটা প্রান আনে?

পুষ্পেন্দু : খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন…প্রশ্নের মধ্যেই কিন্তু উত্তর .. যেমন ধরো আমরা যখন দেবী দুর্গার বা মা কালির আরাধনা করি হিন্দু মতে সেখানে যে মৃৎশিল্পীরা ঠাকুর গড়েন এবং মহালয়ার দিন চক্ষুদানের পর দেবী সজ্জিত হন…তখনও প্রান প্রতিষ্ঠা হয় না না যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘট স্থাপন হয় নিয়ম মেনে… তারপর দেবী জ্বাজল্যমান হয়ে ওঠেন.. হোয়েওঠেন মা চিন্ময়ী.. ঠিক এভাবেই ইনস্ট্রুমেন্ট একটা গানকে প্রান প্রতিষ্ঠা করে… তখনই সে হয়ে ওঠে শ্রুতিমধুর হৃদয়গ্রাহী

অভিজিৎ : কবে থেকে নিজেকে একজন মিউজিসিয়ান বলে আবিষ্কার করলে?

পুষ্পেন্দু : যেদিন কলকাতা হাইকোর্ট এর চাকরিটা ছেড়ে দিলাম সেদিনই ঠিক নিজেকে বুঝেছিলাম… চিনেছিলাম আর পাঁচটা ধরা বাঁধা জীবনের চাকুরে আমার পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়.. আমি যে চোখে নদীকে দেখি বা আকাশ কে দেখি..সেভাবে আমি দশ টা পাঁচটা কাজের জীবনে বাঁচতে পারবো না.. মন যখন দুভাগে ভাগ হলো বুঝলাম মিউজিকের পাল্লা ভারী.. আমি নিজেকে তারই পায়ে সমর্পিত করলাম

অভিজিৎ : দশ টা পাঁচটার জীবন ছেড়ে এই সমুদ্রে ডিঙি নৌকা নিয়ে নামতে ভয় করলো না? কেনো করলো না?

পুষ্পেন্দু : আমাকে জীবন যেদিকে নিয়ে যায় সেদিকেই যাই.. আমি মিউজিকের কাছে কোন দিন যায়নি কিন্তু অদ্ভুতভাবে মিউজিক আমার কাছে এসেছে… আমার চলার পথ তৈরী করেছে… আমার জার্নির এক একটা স্টেশন জুড়ে আছে মিউজিক.. যা পাচ্ছি সব গ্রহণ করছি… WBCS পড়তে পড়তে চাকরির সুযোগ সেসব ছেড়ে যখন মিউজিকের হাত ধরেছি, বিশ্বাস একদিন মোহনা ঠিক পেয়ে যাবো.. আর ওতো ভেবে ভাবনা চিন্তা করে জীবন তৈরী করা যায় না… আমি একটা কথায় খুব বিশ্বাস করি, অন্যের জীবন টুকে নিজের জীবন গড়া যায় না

অভিজিৎ : লকডাউন পুষ্পেন্দু চ্যাটার্জি কে কি শেখালো?

পুষ্পেন্দু : লকডাউন সে ভাবে কিছু আমাকে শেখায় নি.. আমি যেমন ভোর চারটেই উঠে রেয়াজএ বসতাম এখনও সেটাই করি..হ্যাঁ, এই লক ডাউন আমাকে ভোরবেলা ব্যায়াম করতে ইন্সপায়ার করেছে… রেস্তোরাঁ খাবার হ্যাবিট চলে গ্যাছে.. এবং এই জাঙ্ক ফুড ছাড়াও আমরা থাকতে পারি.. আমি বাড়ি ওরিয়েন্টেড একটা মানুষ..

অভিজিৎ : একুস্টিক ইনস্ট্রুমেন্ট কি কি তুমি বাজাতে পারো?

পুষ্পেন্দু : একুস্টিক ইনস্ট্রুমেন্ট বলতে তেমন কিছু আমি পারি না… গীটার টা বাজাই, খমোকা ও দোতারা টা আমি টুকটাক বাজাই.. আমি ইদানিং এস্রাজ শিখছি ….কেননা মিউজিকের এই দিকটাকেও আমি এক্সপ্লোর করতে চাই নিজেকে… এই শেখাটা আমাকে অন্য মাত্রা দেবে…

অভিজিৎ :নতুন কি কি কাজ করছো?

পুষ্পেন্দু : নতুন কাজ বলতে আমি আপাততঃ হাফমেজর এর সাথেই কাজ করছি… রিসেন্ট রিলিজ করেছে “মাইলফলক ” চোদ্দজন শিল্পীদের নিয়ে কাজ… আমারই লেখা, কম্পোজ করা.. লিখেছি ও সুর করেছি “শ্রেণীশত্রু 2”. আরও কিছু গান তৈরী করছি…. আমি যে স্টুডেন্টসদের শেখাই তাদের নিয়ে একটা ফেসবুক পেজ আছে “জেনারেটর ” সেখানে একটা কাজ করছি.. এখন বলবো না… এলে নিশ্চই জানাবো…আর কবি, গীতিকার অভিজিৎ পালের অনেক গুলো গানের মধ্যে তিনটি গানের কাজ আমি করছি…তার মধ্যে দুটি গান ইন্ডাস্ট্রির বিশেষ পরিচিত মুখ গাইছেন… সেটা এখনই রিভিল করছি না.. এর মধ্যে একজন তো খুবই পরিচিত..এই কাজগুলো আমাদের যৌথউদ্যোগে আসছে..

অভিজিৎ : বর্তমানে যে ক’জন কাজ করছেন তাদের মধ্যে কার কাজ তোমাকে টানে? এবং কেনো?

পুষ্পেন্দু : দুটো ব্যান্ড আমাকে অসম্ভব টানছে এই মুহূর্তে আমাকে…
একটি হলো SNF এর সৌম্যদীপ এর লেখা আর সুর.. ব্যান্ড হিসেবে SNF খুব ভালো কিন্তু তার মধ্যে সৌম্যদীপ কে বিশেষ করে ভালোলাগার কারণ আগেই বলেছি, ওর লেখা ও সুর.. যেমন “ঘুম পরীর ঠিকানা ” পুরো ফিল্মেটিক কাজ.. আরেকটা ব্যান্ড হলো A DOT IN THE SKY…. কিবোর্ডিস্ট সুদীপ্ত আছে আর আনি গাইছে…অসাধারণ ব্যান্ড আর তারসাথে মিলেমিশে একাকার আনি ‘র ভোকাল…সুদীপ্তর মিউজিক ভাবনা. এতো সুন্দর কাজ ওরা এই মুহূর্তে কলকাতায় কেউ এই জনারের মিউজিক করছে না..যে সাউন্ড ওরা তৈরী করছে তার জন্য একটু শিক্ষিত শ্রোতা না হলে রিলেট করতে একটু সময় লাগবে … যেমন হ্যাল্ফ্মেজর যে সাউন্ড ক্রিয়েট করে অনেকের কাছে সেটা বোধগম্য হয় না.. কারণ ঐ একটাই… একটু শিক্ষিত শ্রোতা না হলে এই জনারের মিউজিক রিচ করা মুশকিল..

অভিজিৎ : ফিল্ম না ইন্ডিপেনডেন্ট আর্টিস্ট, অর্থউপার্জন নাকি গভীর জ্ঞানসমুদ্রে ডুব…. কোন দিকটা টানে তোমায়?

পুষ্পেন্দু : আমার কাছে দুটোরই একসেপটান্স আছে… অর্থ উপার্জনও করতে চাই আবার গভীর জ্ঞান সমুদ্রে ডুবটাও দিতে চাই

অভিজিৎ : তুমি এখনো অন্যান্য ইনস্ট্রুমেন্ট মানে এস্রাজ শিখছো.. শিখতে গিয়ে কোথায় নিজেকে এবং কি ভাবে খুঁজে পেলে?

পুষ্পেন্দু : ভালোবাসার থেকে শেখার ইচ্ছে তৈরী হলো… এটা যেহুতে ভোকাল ইনস্ট্রুমেন্ট তাই আমি ভোকালিস্ট না হয়েও হয়তো অনেক কিছু এর মাধ্যমে বলতে পারবো… যদিও আমি শেখা শুরু করেছি.. তাই এখনও এই বিষয়ে বলা সম্ভব নয়

অভিজিৎ : তোমার শিক্ষাগুরু কে কে? তুমি কি ভাবে শেখাও তোমার স্টুডেন্টসদের?

পুষ্পেন্দু : আমার শিক্ষা গুরু আমার বাবা মা… আমার গন্ধ, চেনা, পাহাড়, গাছ, পাথর, পথ তো সবই আমার বাবা মা শিখিয়েছেন… আমার পড়াশোনার ক্ষেত্রে এবং বাইরে যেভাবে আমাকে তৈরী হতে সাহায্য করেছেন তিনি হলেন, S K D সুব্রত কুমার দাস.. তিনি স্কটিশ চার্চ কলিজিয়েট স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক.. এই মানুষটি আমার জীবনে বিরাট একটা প্রভাব ফেলেছেন..আমি ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ার অবধি ওনার কাছে পড়েছি.. এবং উনি শুধু আমাকে বই পড়াননি উনি আমাকে সম্যক জ্ঞান দিয়েছেন.. আদি পিতার মতো আমাকে পথ চলার কথা বলার জ্ঞান দিয়েছেন.. যা বর্তমানে আমাকে তৈরী হতে সমৃদ্ধ করেছে. তিনি অবশ্যই আমার বাবা মা এর পরেই রাখবো.. আমার গীটার শেখার শুরু আমার ভাইয়ের কাছ থেকে.. সে অর্থে সেও আমার গুরুর তালিকায় পড়েছে . এরপর আমার বন্ধু জজাতির কাছে শিখি, তারপর এলিয়ানস ব্যান্ডের গিটারিস্ট জয় দা তার কাছে এবং সর্বশেষ আমি যাই লিজেন্ডারি গিটারিস্ট অমিত দত্ত র কাছে…. এরমধ্যে একজনের নাম আমি বলিনি তিনি হলেন সায়ান ব্যানার্জী. কেনোনা আমি আজ যা, যা কিছু তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সায়ান ব্যানার্জি.. ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি আমাকে সাগ্রহে শেখাতেন… আমি নানান স্টুডেন্টস দের অবজার্ভ করতাম… শিখতাম.. কার কি সমস্যা হচ্ছে বসে দেখতাম নিজেকে শেখাতাম… আজ আমি যা বাজাই সে সব টেকনিক উনি আমাকে কিন্তু শেখাননি.. সেগুলো নিজের চেষ্টায় আমি রপ্ত করেছি বিশেষ করে যে মর্ডান মিউজিক আমি শেখায় সেগুলো উনি আমাকে শেখাননি কিন্তু এই মানুষটা মানে সায়ান ব্যানার্জি সব্বাই যাকে কিট্টু বলে চেনে সে না থাকলে আজ আমি অন্য কিছু হতাম… আজকের পুষ্পেন্দু হতে পারতাম না….তবুও মিউজিক আর ননমিউজিক ভাবে আমার জীবনে যাদের প্রভাব অনস্বীকার্য তারা হলেন সুব্রত কুমার দাস, সায়ান ব্যানার্জি এবং অমিত দত্ত..

আর আমি যখন স্টুডেন্টসদের শেখায় তখন তাদের সমস্যা গুলো পড়ার চেষ্টা করি এবং নিজেকে ঐ জায়গায় বসিয়ে দেখি আর সমাধানের পথ পেয়ে যাই…সবটাই আমাকে আজও সাহায্য করে সেদিনের সায়ান ব্যানার্জির কাছে আমার পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা বসে থেকে শেখা নানান স্টুডেন্টসদের সমস্যা গুলো এভাবেই চলছে পথ চলা…

(চলবে……. )

@অভিজিৎ পাল

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD