মান এবং হুঁশ কোনটাই কি নাই
ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা,১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
আমি,আপনি,আমরা সবাই কখনো না কখনো নিজেদের পৃথিবীর সুশৃঙ্খল সমাজবদ্ধ, বুদ্ধিমান,ধৈর্য্যশীল এবং সহনশীল জীবগোষ্ঠী বলে দাবি করি। আপত্তি নেই সে দাবিতে।বরং তা নিজেদের দায়িত্ব নেওয়া আর সমাজ সচেতন হওয়ার বাসনাকেই প্রতিফলিত করে।কিন্তু সত্যিই কি আমরা সব ক্ষেত্রে এত কিছু দাবি করার যোগ্য?আমরা কি এতখানিই নিখুঁত যে আমাদের কোনো আত্মসমালোচনারই দরকার নেই?বর্তমান সংকটের প্রেক্ষিতে আমাদের দায় দায়িত্ব ও সে সবের প্ৰতি আমাদের উদাসীনতা,অনীহা নিয়ে বরং দু চার কথা বলি তাহলে আলোচনাটা প্রাসঙ্গিক হবে।
গোটা পৃথিবী এখন মিউট্যান্ট করোনা ভাইরাসের সংক্রমনে জবুথবু।কবে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তার কোনো দিশা নেই।হু এবং ইউনিসেফ গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছে কিভাবে এসব সামলে কাজকম্ম করতে হবে।সরকার প্রচার করে চলেছেন নাগরিক কর্তব্য।আমরা নিজেরা জানি ,স্কুল যেতে না পারার কারণে আমাদের শিশুদের মানসিক বিপন্নতা।এত সব জেনেও কি আমরা দায়িত্ব সচেতন নাগরিক হয়ে উঠতে পারছি?আমাদের বালখিল্য আচার আচরণে,আমাদের ছোট ছোট ব্যক্তিগত খুশি,হুল্লোড় ও জীবন উপভোগ করার বিনিময়ে আসলে নিজেদের আরো বেশি সর্বনাশ ডেকে আনছি না কি? ভাবুন।একটু ভাবুন। আমাদের হাত পরিস্কার রাখতে বলা হয়েছে।আমরা হাত ধুই না ঠিক মতো।স্যানিটাইজারের ব্যবহারও করিনা।
আমাদের বাইরে বেরিয়ে নাক মুখ ও চোখে হাত দিতে না করা হয়েছে।আমরা সেটাই করি।আমাদের রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে খাবার খেতে না করা হয়েছে।আমরা সে মানা কেবল যে মানিনা তাই ই নয়,এমনকি খাবার খেয়ে মহানন্দে আঙুলও চাটি।আমাদের বাইরে বেরোলেই মাস্ক পরতে বলা হয়েছে।আমরা মাস্কটা থুতনিতে ঝুলাই(শিক্ষিতেরা বেশি) অথবা আমাদের যে নাক আছে সেটা দেখাই সবাইকে।আমাদের বাড়িতে ফিরে স্নান করা উচিত।আমরা সবান্ধবে সোজা আমাদের বেডরুমের খাটে এসে বসে পড়ি।আমরা কারো বাড়ি গিয়ে প্রথমে মাস্কটা খুলে ফেলি।কারো সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্কটা মুখ থেকে নামিয়ে তার কাছাকাছি এসে শারীরিক দূরত্বের দফারফা করে ছাড়ি।বন্ধুর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হলে খালি মুখে ঘনিষ্ঠ সেলফি গ্রুফি তুলি।আমরা বাড়ির মানুষ আমাদের গতিবিধির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে তার সঙ্গে,স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে ঝগড়া করি।
একাকিত্বে ভোগা অসহায় বাচ্চাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করি।তাদের শাসন করি।আমরা মনে রাখি না,আমাদের বাড়িতে বৃদ্ধ বৃদ্ধা,অসুস্থ্য মানুষ আছেন,যাঁদের প্ৰতি মুহূর্তে আমরা জীবনহানির ঝুঁকিতে ফেলছি।এত সবের পরেও আমরা সরকারের নিয়মনীতির সমালোচনা করি,ব্যর্থতার দায় শুধুমাত্র তাদেরই ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে তাদের তুলোধোনা করি।দায় কি কেবলমাত্র সরকারের নাকি দায়িত্বশীল মানুষের?বাকিদের কি কাজ তবে?স্বাধীনতা আছে,জিভের ধার আছে বলে কি আমরা যা ইচ্ছে তাই করতে বলতে পারি?সভ্যতার সংকটে আমরা যদি মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য্য দেখাই ,তবে কিসের বড়াই আমাদের?