আহাম্মক ও বুদ্ধিজীবী কালিদাসের এই দুই রূপে বাঙালী সমান পারদর্শী
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা , ৪ অক্টোবর ২০২০
আপনি আমাদের নগর সভ্যতার কোনো এক পাড়ার বাসিন্দা।আপনার পাড়ার পাশ দিয়ে চলে গেছে রাজপথ।চব্বিশ ঘন্টা ব্যস্ততা সে পথে।আপনার পাড়ায় ফ্ল্যাট,বাড়ি,বস্তি সবই আছে।সেখানে বিভিন্ন আর্থিক সঙ্গতির মানুষের বাস।আপনার পাড়ায় কিছু রাস্তা কাঁচা,কিছু রাস্তা পাকা।কাঁচা রাস্তায় বর্ষায় কাদা,শীতে ধুলো।পাকা রাস্তায় বিভিন্ন সাইজের গর্ত।রাস্তায় পড়ে থাকে পান মশলার প্যাকেট,কাগজের এঁটো থালা বাটি, সিগারেটের ফাঁকা প্যাকেট,এমন কি আপনার কপালে থাকলে ব্যবহৃত কন্ডম অথবা স্যানিটারি প্যাডেরও দর্শন মিলতে পারে।কুকুরে তা নিয়ে আনন্দে টানাটানি করে।পাড়ায় ভ্যাট নেই।
বাড়ির প্রতিদিনের আবর্জনা রাস্তার উপর।সঙ্গে এঁটোকাঁটার উপর মাছি মশা ভন ভন।রাস্তায় স্থান সঙ্কুলান না হলে অথবা গৃহকর্ত্রীর ইচ্ছে হলে সে সব বস্তু অমুক বাবুর প্রাচীর দিয়ে ঘেরা অব্যবহৃত নিচু জলা জমির মধ্যেও পড়ে লাগাতার।পড়ে পাহাড় হয় যেগুলো তোলা যায় না। কর্পোরেশন বা মিউনিসিপ্যালিটির একশো বছরের পুরনো গাড়ি কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে প্রবল শব্দে তাদের মর্জি মতো এক আধমাস পর পর আসে।ইচ্ছে মতো রাবিশ তোলে।তার পর গোটা রাস্তা ছড়াতে ছড়াতে ঔদ্ধত্য দেখিয়ে চলে যায়।নর্দমার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল।মজে হেজে জল চলাচল করে না।তাতে দুর্গন্ধ যুক্ত পাঁক থিক থিক করে।পোকা ওড়ে।ছমাসে একবার বেতনভুক সুইপার এসে লম্বা বাঁশ লাগানো কোদাল দিয়ে তা রাস্তায় তুলে কেকের মতো সাজিয়ে রেখে চলে যায়।পচা পাঁক শুকিয়ে উর্বর মাটি হয়।লোকে টবে ভরে ফুলগাছ লাগায় তাতে।রাস্তার মোড়ে মোড়ে একদা কর্মক্ষন এখন অবসরপ্রাপ্ত চাপাকল।
টাইম কল বেশির ভাগই ভাঙা।পাড়ার পুকুরে ভক্তদের ফেলা ফুলের প্লাস্টিক।রাতে স্ট্রিট লাইট জ্বলে না।যে রাস্তা দিয়ে আপনি যাতায়াত করবেন,হঠাৎ করে একদিন সকালে উঠে দেখলেন সে রাস্তা বন্ধ করে প্রমোটারের বিল্ডিং মেটিরিয়ালের টিলা।হেঁটে পার হওয়াই দুষ্কর।উৎসবের দিন গোটা রাত মাইকের আওয়াজে আপনি ভাজা ভাজা হয়ে যাবেন।রাস্তায় ভাঙা মদের বোতল গড়াগড়ি খাবে পরের দিন থেকে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত।কেউ হয়তো আপনার বাড়ির সামনে কোনোদিন ফেলে দিয়ে গেছে গাড়ি চাপা পড়া মরা জন্তু। সেটা সেখান থেকে আপনাকেই লোক ডেকে পয়সা দিয়ে সরাতে হবে।যে মানুষটিকে কাছের মানুষ, কাজের মানুষ ভেবে ভোট দিয়ে কমিশনার বা কাউন্সিলার বানিয়েছেন,আপনার অভাব অভিযোগ শুনতে তিনি আপনার পাড়ায় আসবেন না।আপনার ন্যায্য নাগরিক অধিকারের দাবি জানাতে দশবারের চেষ্টায় আপনি যখন তার বাতানুকূল অফিসে পৌঁছবেন,তখন তিনি আকাশের দিকে মুখ করে বলবেন,দেখছি।তারপর ঘুমিয়ে পড়বেন।যদি দৈবাৎ এক আধবার পাড়াতে আসেন,তার আগে সব কিছু গ্যাটিস মেরে সাফ করা হবে।ব্লিচিং পাউডারের গন্ধে আপনি টিকতে পারবেন না।
এসব তো নতুন বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়!আমাদের কর্ম সংস্কৃতির ট্র্যাডিশন।”শুধু পোশাকের রঙ বদলায়।দিন বদলায় না”।আমরা সব মুরগি।তাইতে গন্ডারের চামড়া ও চড়া পড়ে যাওয়া অনুভূতি নিয়ে নরক যন্ত্রণা ভোগ করি।বাবু বলে যান,স্বর্গসুখ।
●●●●●●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
০৪.১০.২০২০